স্নান করার সময় তো বটেই, সেই সঙ্গে চুল আঁচড়ালেই মুঠো মুঠো চুল উঠছে নাকি (Hair Fall)? তাহলে তো সময় থাকতে থাকতে সাবধান হতে হবে, না হলে ময়দান ফাঁকা হয়ে যেতে যে সময় লাগবে না, তা তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু প্রশ্ন হল হেয়ার ফল কমাবেন কীভাবে?
এক্ষেত্রে প্রথমেই জেনে নিতে হবে হেয়ার ফলের কারণ কী। যদি দেখেন কোনও রোগের কারণে বা ওষুধের কারণে এমনটা হচ্ছে, তাহলে সেই মতো ব্যবস্থা নিলেই চলবে। আর যদি কোনও কারণ ছাড়াই চুল পড়তে থাকে, তাহলে নজর ফেরাতে হবে শ্যাম্পুর (Shampoo) দিকে। কারণ কী ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করছেন, তার উপর কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করে থাকে। এই যেমন এই প্রবন্ধে যে যে অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পু গুলি (Best Anti Hair Fall Shampoo) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলির কোনওটি যদি ব্যবহার করা শুরু করেন, তাহলে যে উপকার পাবেই পাবেন, তা হলফ করে বলতে পারি। তাই তো বলি, বাকি অনেকের মতো আপনিও যদি মাত্রাতিরিক্ত হেয়ার ফলের কারণে চিন্তায় থাকেন, তাহলে ঝটপট এই লেখাটা পড়ে ফেলতে দেরি করবেন না যেন!
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে আমলা, রিঠা ও শিকাকাই এর যাদু স্পর্শ
শ্যাম্পু নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর
মাত্রাতিরিক্ত হারে চুল পড়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন ধরুন…
অনেক সময় জেনেটিক কারণেও কিন্তু চুল পড়তে শুরু করে। এক্ষেত্রে চুল পড়া আটকানোর তেমন কোনও উপায় নেই বটে, তবে অ্যান্টি হেয়ার ফল শ্যাম্পু ব্যবহার করার পাশাপাশি যদি ঠিক মতো চুলের যত্ন নেওয়া যায়, তাহলে চুল পড়ার হার একটু হলেও কমবে বৈকি!
চুলের গ্রোথ কেমন হবে, সেটা যেমন নানাবিধ হরমোনের উপর নির্ভর করে, তেমনি চুলের সৌন্দর্য বাড়বে না কমবে অথবা কেমন হারে চুল পড়বে, তাও কিন্তু বেশ কিছু হরমোন ঠিক মতো ক্ষরণ হচ্ছে কিনা, তার উপর নির্ভর করে থাকে। তাই কোনও কারণে যদি নির্দিষ্ট কিছু হরমোনের ক্ষরণ ঠিক মতো না হয়, তাহলে সেই কারণেও কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হারে হেয়ার ফল হতে পারে। তাই এমন ঘটনা ঘটলে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না যেন!
আজকের দিনে কম-বেশি সবাই আমরা স্ট্রেসের শিকার। আর এই কারণেও কিন্তু চুল পড়ার হার বেড়ে যেতে পারে। আসলে মানসিক চিন্তা বাড়তে থাকলে শরীরের ভিতরে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যেতে শুরু করে, যার প্রভাবে হেয়ার ফলের মাত্রা যায় বেড়ে। তাছাড়া স্ট্রেসের কারণে অনেক সময় হজম ক্ষমতাও কমে যেতে শুরু করে, যে কারণেও কিন্তু চুলের ক্ষতি হয়।
কোনও কারণে শরীরে যদি আয়রনের মাত্রা কমতে শুরু করে, তাহলে তার সরাসরি প্রভাব পরে চুলের উপরে। এক্ষেত্রে চুলের গোড়া এতটাই দুর্বল হয়ে যায় যে মাত্রাতিরিক্ত হার চুল পড়তে শুরু করে। তাই যদি লক্ষ্য করেন বেশ কয়েক দিন ধরে স্বাভাবিকের থেকে বেশি মাত্রায় চুল উঠছে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে একবার রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নেবেন শরীরে আয়রনের মাত্রা ঠিক আছে না। সেই সঙ্গে বিনস, ডাল, কাজু এবং সবুজ শাক-সবজির মতো আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। তাতে উপকার পাবেন বৈকি!
শরীরে এই বিশেষ ভিটামিনটির ঘাটতি দেখা দিলে একদিকে যেমন শরীরিক ক্ষমতা কমতে শুরু করে, তেমনি চুলের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে হেয়ার ফলের মাত্রাও বাড়তে শুরু করে। তাই এমন ঘটনা ঘটলে একবার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ভিটামিন বি ১২ সাপ্লিমেন্ট যেমন নিতে পারেন, তেমনি ডায়েটে মাছ-মাংসের পরিমাণ বাড়ালেও কিন্তু সমান উপকার মিলবে।
নির্দিষ্ট কোনও রোগ বা শারীরিক সমস্যার কারণ ছাড়াই যদি হেয়ার ফলের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, তাহলে চুলের যত্নে যে যে শ্যাম্পুগুলিকে কাজে লাগানো উচিত, সেগুলি হল…
এই শ্যাম্পুটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা একদিকে যেমন চুলের গোড়াকে শক্তপোক্ত করে, তেমনি চুলের সৌন্দর্যও বাড়ায় চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে চুলের গোড়া ফেটে যাওয়া এবং চুলে জট পাকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই শ্যাম্পু ব্যবহার করার পরে চুল থেকে খুব সুন্দর একটা গন্ধও বেরোয়। তাই একথা বলা যেতেই পারে যে সব মিলিয়ে এই শ্যাম্পুটি কিন্তু বেশ ভালোই। এই হেয়ার প্রডাক্টটির দাম ৬২-৪৮৭ টাকা।
চটজলদি হেয়ার ফলের মাত্রা কমে যাক, এমনটা যদি চান, তাহলে এই শ্যাম্পুটি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ বিশেষ কিছু তেল এবং নানাবিধ উপকারী উপাদান দিয়ে তৈরি প্যান্টিনের এই অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পুটি প্রায় দিন যদি ব্যবহার করা যায়, তাহলে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে। ফলে চুল পড়ার মাত্রা কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে স্ক্যাল্পে জমে থাকা ময়লা এবং ক্ষতিকর জীবণুরাও ধুয়ে যায়। ফলে কোনও ধরনের স্কিন প্রবলেন হওয়ার আশঙ্কা কমে। শুধু তাই নয়, মেলে আরও কিছু উপকার। যেমন ধরুন- চুলের গ্রোথ আরও বেশি মাত্রায় হয়, সেই সঙ্গে চুলের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরে আসে এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। শ্যাম্পুটির দাম ২৮০-৪০২ টাকা।
চুল পড়ার হার কমানোর পাশাপাশি চুলের গোড়ায় পুষ্টির ঘাটতি দূর করতেও এই শ্যাম্পুটি (himalaya anti hair fall shampoo) বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, চুলের গোড়া ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যা দূর করতে এবং হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতাকে ফিরিয়ে আনতেও সাহায্য করে। আসলে এই শ্যাম্পুটিতে রয়েছে একাধিক প্রাকৃতিক উপাদান, যা চুলের যত্নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো বলি, অল্প সময়েই চুল সুন্দর এবং মজবুত হয়ে উঠুক, এমনটা যদি চান, তাহলে হিমালয়া অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পুটি ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন! শ্যাম্পুটির দাম ৬২ টাকা থেকে ৩৯২ টাকা।
নানা কারণে চুলের হাল কি বেহাল? তাহলে আজ থেকেই এই শ্যাম্পুটি ব্যবহার করা শুরু করুন, দেখবেন উপকার পাবেই পাবেন। কারণ ডাভ কোম্পানির দাবী এই শ্যাম্পুটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা হেয়ার ফলের মাত্রা প্রায় ৯৮ শতাংশ কমিয়ে ফেলে, সেই সঙ্গে ফেটে যাওয়া চুলের গোড়ার চিকিৎসায় এবং ড্রাই হেয়ারের মতো প্রবলেম দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই অল্প সময়েই হেয়ার ফলের মাত্রা কমে যাক, সেই সঙ্গে চুলের সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাক, এমনটা যদি চান, তাহলে নিয়মিত চুলের যত্নে এই শ্যাম্পুটি ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন! ডাভ শ্যাম্পুর দাম ১৪১ টাকা থেকে ৩৫৮ টাকা।
পিপারমেন্ট তেল, পুদিনা পাতার রস, ভৃঙ্গরাজ এবং রিঠা সহযোগে তৈরি এই শ্যাম্পুটি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের গোড়ায় পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। ফলে চুল এতটাই শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে যে হেয়ার ফলের মাত্রা কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে স্ক্যাল্পের ড্রাইনেস যেমন দূর হয়, তেমনি চুলের জেল্লাও বৃদ্ধি পায় একেবারে কম সময়ে। শ্যাম্পুটির দাম ১০৩-২৬৯ টাকা।
হেয়ার ফলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি চুলের যত্নে এই শ্যাম্পুটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তবে এখানেই শষ নয়, লরিয়াল প্যারিস অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পুটি আরও নানা ভাবে চুলের উপকারে লেগে থাকে। যেমন ধরুন- প্রায় দিনই যদি এই শ্যাম্পুটি দিয়ে চুল ধোয়া শুরু করেন, তাহলে চুল শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে, পুষ্টির ঘাটতি দূর হয় এবং স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। আর একসঙ্গে যখন এত উপকার মিলতে শুরু করে, তখন চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। তাই তো বলি, পরিবেশ দূষণ এবং আরও নানা কারণে প্রতিদিন যেখানে চুলের এত মাত্রায় ক্ষতি হচ্ছে, সেখানে চুলের সৌন্দর্যকে ধরে রখতে এই শ্যাম্পুকে কাজে লাগাতে ভুলো না যেন! শ্যাম্পুটির দাম ৬০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা।
এই শ্যাম্পুতে রয়েছে রোজমেরি তেল, আমলা, শিকাকাই, লেবু, হেনা এবং ভৃঙ্গরাজ। তাই তো চুলের পরিচর্যায় এই শ্যাম্পুটিকে কাজে লাগালে স্ক্যাল্প এবং চুলে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। আর এমনটা হওয়া মাত্র চুলের গোড়া এতটাই শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে যে চুল পড়ার হার করতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে স্ক্যাল্পে চুলকানি হওয়া এবং আর্দ্রতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও দূর হয়। তাছাড়া নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ার কারণে এই শ্যাম্পুটিতে কেমিকাল প্রায় নেই বললেই চলে। তাই তো প্রতিদিন এই হেয়ার প্রডাক্টটি ব্যবহার করলে চুলের কোন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। শ্যাম্পুটির দাম ৩৯৯-৪৪৯ টাকা।
পেঁয়াজে উপস্থিত প্রতিটি উপকারী উপাদান মজুত রয়েছে এই শ্যাম্পুটিতে, যার অন্যতম হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং সালফার, যা চুলের যত্নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে স্ক্যাল্পে উপস্থিত ক্ষতিকর জীবাণুরাও মারা পরে। ফলে হেয়ার ফলের মাত্রা তো কমেই, সেই সঙ্গে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতেও সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, অসময়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে। শ্যাম্পুটির দাম ৩৯৫ টাকা।
হেয়ার ফল কমানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে চুলের যত্ন নিতে এই শ্য়াম্পুটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ শিকাকাই, মেহেন্দি, নিম, রিঠা এবং হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি এই বিশেষ শ্যাম্পুটি সপ্তাহে কয়েকদিন ব্যবহার করা শুরু করলে চুল পড়ার হার যেমন কমবে, তেমনি স্ক্যাল্পে জমে থাকা ময়লা এবং ক্ষতিকর উপাদানগুলিও ধুয়ে যাবে। ফলে কোনও ধরনের ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যাবে কমে। শুধু তাই নয়, টানা কয়েকদিন এই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের জেল্লা বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে চুলের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতাও ফিরে আসবে। শ্য়াম্পুটির দাম ৩৫-৯৫ টাকা।
এত দূর পড়ার পরেও নিশ্চয় মনে কিছু প্রশ্ন থেকে গেছে। তাহলে চলুন তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক…
১। কোন ধরনের শ্যাম্পু হেয়ার ফল কমাতে দারুন কার্যকরী?
উ: যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে উপরে আলোচিত প্রতিটি শ্যাম্পুই হেয়ার ফল কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই আপনার বাজেট অনুযায়ী কোনও একটি কিনে ব্যবহার করা শুরু করলেই দেখবেন উপকার মিলতে শুরু করেছে। আর যদি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে মন চায়, তাহলে তাও করতে পারেন।
২। হিমালয়া কোম্পানির শ্যাম্পু কি সত্যিই উপকারী?
অবশ্যই! কারণ নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদানকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হিমালয়া কোম্পানির অ্যান্টি হেয়ার ফল শ্যাম্পু, চুলের যত্নে বাস্তবিকই বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩। অ্যান্টি হেয়ার ফল শ্যাম্পু ব্যবহার করলেই কি চুল পড়ার হার কমে যাবে?
কোনও বিশেষ কারণে যদি হেয়ার ফল না হয়ে যাকে, তাহলে অ্যান্টি হেয়ার ফল শ্যাম্পু ব্যবহার করলে কিন্তু উপকার মিলবে।
ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকার: youTube, instagram
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!