একটি শিশুর জীবন শুরু হয় মাতৃগর্ভে। একজন শিশুকে ন’মাস গর্ভে রেখে তাকে জন্ম দিতে কতটা কষ্ট একজন মা সহ্য করেন, সেটা ভাষায় বলে বোঝানো সম্ভব নয়। শিশু প্রথম শব্দই তো উচ্চারণ করে ‘মা’ বলে। আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস মানে শুধুই মাকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়া বা তাঁকে উপহার দেওয়া নয়। মাতৃ দিবস হল মাতৃত্বের উদযাপন। শ্রী মা বলতেন, “আমি সতেরও মা, অসতেরও মা।” সন্তান যেমনই হোক, তাকে বুকে আগলে রেখে সব ঝড়ঝাপটা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন যিনি, তাঁকে সম্মান দেওয়ার জন্য একটা দিন তো বেছে নেওয়া যেতেই পারে।
মা দিবস বা মাতৃ দিবস (Mothers Day) হল একটি সম্মান প্রদর্শন জনক অনুষ্ঠান যা মায়ের সন্মানে এবং মাতৃত্ব, মাতৃক ঋণপত্র, এবং সমাজে মায়েদের প্রভাবের জন্য উদযাপন করা হয়। এটি বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে উদযাপন করা হয়। বিশ্বের সর্বত্র মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখা যায়। এ গুলোর অনেকই প্রাচীন উৎসবের সামান্য প্রামাণিক সাক্ষ্য, যেমন, সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান, হিলারিয়ার রোমান উত্সব যা গ্রিকের সিবেল থেকে আসে, অথবা সিবেল এবং হিলারিয়া থেকে আসা খ্রিস্টান মাদারিং সানডে অনুষ্ঠান উদযাপন। কিন্তু, আধুনিক ছুটির দিন হল একটি আমেরিকান উদ্ভাবন যা সরাসরি সেই সব অনুষ্ঠান থেকে আসেনি। তা সত্ত্বেও, কিছু দেশে মা দিবস সেই সব পুরোনো ঐতিহ্যের সমার্থক হয়ে গেছে। ছুটির দিনটি ক্রমে এত বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়ে যে এটির স্রষ্টা আনা জার্ভিস এটিকে একটি “হলমার্ক হলিডে” অর্থাৎ যে দিনটির বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা অভিভূত করার মতো, সেই রকম একটি দিন হিসাবে বিবেচিত করেন। তিনি শেষে নিজেরই প্রবর্তিত ছুটির দিনটির নিজেই বিরোধিতা করা শুরু করেন।
একটি গোষ্ঠীর মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হত। মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য (Mothers Day) একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হত। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও “প্রধান গির্জার” সম্মানে।
আগামী ১০ মে মাতৃ দিবস। মা দিবসের আগে মাকে নিয়ে বিখ্যাত উক্তি (Mothers Day Quotes In Bengali), শুভেচ্ছা, মা দিবসের কবিতা দিয়ে সাজানো হল এই প্রতিবেদন। আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে সব মায়েদের আমাদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।
মাকে নিয়ে উক্তি (Mothers Day Quotes In Bengali)
১| আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল – জর্জ ওয়াশিংটন (Mothers Day Quotes In Bengali)।
২| যার মা আছে, সে কখনই গরীব নয় – আব্রাহাম লিঙ্কন।
৩| কোনও একটা বিষয় মায়েদেরকে দুবার ভাবতে হয়। একবার তার সন্তানের জন্য, আর একবার নিজের জন্য – সোফিয়া লরেন।
৪| আমাদের পরিবারে মায়ের ভালবাসা সবসময় সবচেয়ে বড় শক্তি। আর তার একাগ্রতা, মমতা আর বুদ্ধিমত্তা আমাদের মধ্যে দেখে আনন্দিত হই – মিশেল ওবামা।
৫| আমার মা বিস্ময়কর আর আমার কাছে উৎকর্ষতার আরেক নাম – মাইকেল জ্যাকসন।
৬| দুনিয়ায় সব কিছু বদলে যেতে পারে, কিন্তু মায়ের ভালোবাসা কখনও বদলায় না (মাকে নিয়ে উক্তি)।
৭| ইশ্বর সব জায়গায় নিজে উপস্থিত থাকতে পারেন না, তাই তিনি ‘মা’ সৃষ্টি করেছেন – রাডইয়ার্ড কিপ্লিং।
৮| আমার জীবন শুরু হয়েছিল মাতৃগর্ভে আর আমার দিন শুরু হয় মায়ের পবিত্র মুখ দেখে – জর্জ এলিয়ট।
৯| কোনও বিপদে পড়লে প্রথমেই যাঁর কথা মনে পড়ে, তিনি হলেন মা! (মাকে নিয়ে উক্তি)।
১০| ভালবাসা থেকেই আমাদের জন্ম, আর ভালবাসা মানে হল মা – রুমি।
১১| আমার জীবনের শুরু তোমাকে দিয়ে মা, আমার প্রথম শেখা শব্দ হল মা, স্বর্গ আমি দেখিনি, কিন্তু স্বর্গের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর তুমি মা। হ্যাপি মাদার্স ডে (বিশ্ব মা দিবস)
১২| একটি শিশুর কাছে ভগবান মানেই হল ‘মা’ – উইলিয়াম ম্যাকপিস ঠাকরে।
১৩| তুমি যখন তোমার মায়ের চোখের দিকে তাকাও, তখনই বোঝা যায় খাঁটি ভালবাসার কাকে বলে – মিচ অ্যালবম।
১৪| সূর্য ছাড়া যেমন পৃথিবী অন্ধকার, জল ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না, কলম ছাড়া যেমন লেখক লিখতে পারে না, তুমিও আমার কাছে ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ মা। হ্যাপি মাদার্স ডে (Mothers Day)।
১৫| জীবন কোনও নিয়মাবলী দিয়ে শুরু হয় না, জীবন শুরু হয় মাতৃগর্ভে।
১৬| প্রথমবারে যদি কোনও কাজে সফল না হতে পার, চিন্তা কোরো না। মায়ের সাহায্য নাও। তিনিই তোমায় সঠিক পথ দেখাবেন (বিশ্ব মা দিবস)।
১৭| মায়ের আদরে যে আরাম, ভরসা আছে, তা আর পৃথিবীর কারও আদরে নেই – প্রিন্সেস ডায়না।
১৮| তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি মা, অনেক সময় না বুঝে না জেনে তোমায় কষ্ট দিয়েছি। আই অ্যাম সরি। লাভ ইউ মা। হ্যাপি মাদার্স ডে।
১৯| মাতৃত্ব, ভালবাসার শুরু আর শেষ এখানেই – রবার্ট ব্রাউনিং।
২০| মা, যে আমার সমস্ত না বলা কথা চট করে বুঝে যায়! হ্যাপি মাদার্স ডে (মাকে নিয়ে উক্তি)।
মা দিবসের শুভেচ্ছা (Mother’s Day Wishes In Bengali)
১| মায়ের কথা পড়লে মনে আকুল হয়ে কাঁদি, মা যে আমার আশীর্বাদের দিব্য প্রদীপ ভাতী। মা দিবসের শুভেচ্ছা।
২| মা যে আমার স্বপ্নমাখা, রাত জোছনার গান, আধার পথের একটু আলো, নীল জোনাকী প্রাণ। মা দিবসের শুভেচ্ছা বানী।
৩| মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভূবনে নাই। আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে শুভেচ্ছা।
৪| প্রথম স্পর্শ মা, প্রথম পাওয়া মা, প্রথম শব্দ মা, প্রথম দেখা মা ,আমার পৃথিবী তুমি মা। মা দিবসের শুভেচ্ছা।
৫| মাগো তুমি ইদানিং আসো রোজ স্বপ্নেই বুকে বড় ব্যাথা নিয়ে ‘মাগো’ ডাক জপ নেই দূর দেশে থেকে তোমার ছোঁয়াটুকু পাই না তুমিও তো নিজ দেশে কাঁদো রোজ তাই না? (মা দিবসের বানী)।
৬| পৃথিবীর কাছে যেমন সূর্যের প্রয়োজনীয়তা, মাছের কাছে যেমন জলের প্রয়োজনীয়তা, কবির কাছে যেমন কলমের প্রয়োজনীয়তা, সন্তানের কাছে তেমন প্রয়োজনীয়তা মায়ের। আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে শুভেচ্ছা।
৭| প্রিয় মা, তুমি আমার চারপাশে তোমার স্নেহের আর যত্নের হাত রেখে আমায় কখনো কোনো কষ্ট পেতে দাও নি… চেয়েছ আমি যেন সবসময় ভালো থাকি… তোমার ঋণ শোধ করা কখনো সম্ভব নয় আমি জানি, সেই চেষ্টাও আমি করি না কখনো… শুধু চাই তুমি যেন চিরকাল আমার মাথায় তোমার আশীর্বাদের হাতটা একইভাবে রেখে দাও… লাভ ইউ মা। মা দিবসের শুভেচ্ছা।
৮| পৃথিবীটা অনেক কঠিন, সবাই সবাইকে ছেড়ে যায়, সবাই সবাই কে ভুলে যায়, শুধু একজন যে ছেড়ে যায় না ভুলেও যায় না। আর সারা জীবন থাকবে। সে মানুষটি হচ্ছে, আমার মা। মা দিবসের শুভেচ্ছা বানী।
৯| দূরে যখন থাকি, তার ছবি আঁকি। বিপদ যখন আসে, সে থাকে পাশে। অসুখ যখন হয় সে রাত জেগে রয়। পৃথিবীর যেখানেই যাই, তার তুলনা নাই (মা দিবসের বানী)। সে হল আমার মা! আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে শুভেচ্ছা।
১০| দুনিয়ার সব কিছুই বদলাতে পারে,কিন্তু মায়ের ভালবাসা কখনো বদলাবার নয়। মা দিবসের শুভেচ্ছা।
১১| তোমার প্রথম মাদার্স ডে যেন তোমার জীবনে বয়ে আনে সুখের ঘনঘটা… মনের অনাচ-কানাচ ভরে ওঠে স্বর্গীয় মমতার আনন্দে। আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে শুভেচ্ছা (Mothers Day Quotes In Bengali) ।
১২| মায়ের মতন অমন শক্তিশালী কেউই হয় না… যিনি নিজের সন্তানকে শত কষ্ট সত্ত্বেও আগলে রাখেন, আর ভালবাসেন নিজের চেয়েও বেশি! কখনও মাকে কষ্ট দিও না, তাহলে জীবনে কোনও দিনই সুখী হতে পারবে না। মা দিবসের শুভেচ্ছা।
১৩| যিনি তোমাকে জন্ম দিয়েছেন…তাঁর কোনও কথায় কখনো রাগ করো না..কারণ তিনি তোমার ভাল ছাড়া কখনও খারাপ চাইবেন না (মা দিবসের বানী)।
১৪| যার ললাটের ঐ সিঁদুর নিয়ে ভোরের রবি ওঠে .. আলতা রাঙ্গা পায়ের ছোঁয়ায় রক্ত কোমল ফোটে। সেই যে আমার মা, যার হয় না তুলনা।
১৫| যখন আমরা কিছুই বলতে পারতাম না..মা আমাদের সব মনের কথা বুঝে যেত..আজ আমরা কত কিছু বলি আর তার শেষে বলি, এসব তুমি বুঝবে না, সত্যি কি তাই? সকল সন্তানের কাছে অনুরোধ, মায়ের সম্মান করো.. কখনও তাঁকে কষ্ট দিও না।
১৬| যতই ঝগড়া হোক, রাগ হোক তোমার শাসনে, কষ্ট হোক তোমার বকুনিতে, তবু তোমাকে ছাড়া একদিনও চলে না আমার.. লাভ ইউ মা (Mothers Day Quotes In Bengali)।
১৭| ছোটবেলায় যখন তুমি আমার চোখের আড়াল (Mothers Day) হতে আমি ব্যাকুল হয়ে উঠতাম, ভয় লাগত খুব। তোমায় জড়িয়ে ধরেই যেন কমত মনের ধুকপুকানি। আজও তেমনই যে কোনও বিপদেই তোমার কথা সবার আগে মাথায় আসে।
১৮| ওপরে যার শেষ নেই তা হল আকাশ (মা দিবসের বানী)। আর পৃথিবীতে যার শেষ নেই তাকে আমরা মা বলি।
১৯| একমাত্র মা সেটা বুঝতে পারে, যেটা তার সন্তান কখনই বলে উঠতে পারে না।
২০| আমি অনেক বোকা হতে পারি, অনেক খারাপ ছাত্র হতে পারি, আমি অনেকের কাছে খারাপও হতে পারি, কিন্তু আমার মায়ের কাছে আমি তার শ্রেষ্ঠ সন্তান।
মা নিয়ে কবিতা (Mothers Day Poem In Bengali)
১| কবিতার নাম – মা
কবি – কাজী নজরুল ইসলাম
যেখানেতে দেখি যাহা মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত আদর সোহাগ সে তো আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!
হেরিলে মায়ের মুখ দূরে যায় সব দুখ, মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে সকল যাতনা ভোলে কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।
কত করি উৎপাত আবদার দিন রাত, সব স’ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে নিজে র’ন নাহি খেয়ে, শত দোষী তবু মা তো তাজে না।
ছিনু খোকা এতটুকু, একটুতে ছোট বুক যখন ভাঙিয়া যেতো,
মা-ই সে তখন বুকে করে নিশিদিন আরাম-বিরাম-হীন দোলা দেয় শুধাতেন, ‘কি হোলো খোকন?’
আহা সে কতই রাতি শিয়রে জ্বালায়ে বাতি একটু আসুখ হলে জাগেন মাতা,
সব-কিছু ভুলে গিয়ে কেবল আমায়ের নিয়ে কত আকুলতা যেন জাগন্মাতা।
যখন জন্ম নিনু কত আসহায় ছিনু, কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোন কিছু,
ওঠা বসা দূরে থাক- মুখে নাহি ছিল বাক, চাহনি ফিরিত শুধু আর পিছু পিছু।
তখন সে মা আমার চুমু খেয়ে বারবার চাপিতেন বুকে,
শুধু একটি চাওয়ায় বুঝিয়া নিতেন যত আমার কি ব্যথা হোতো,
বল কে ওমন স্নেহে বুকটি ছাওয়ায়। (মা দিবসের কবিতা)
তারপর কত দুখে আমারে ধরিয়া বুকে করিয়া তুলেছে মাতা দেখো কত বড়,
কত না সে সুন্দর এ দেহে এ অন্তর সব মোর ভাই বোন হেথা যত পড়।
পাঠশালা হ’তে যবে ঘরে ফিরি যাব সবে, কত না আদরে কোলে তুলি’ নেবে মাতা,
খাবার ধরিয়া মুখে শুধাবেন কত সুখে কত আজ লেখা হোলো, পড়া কত পাতা?’
পড়া লেখা ভাল হ’লে দেখেছ সে কত ছলে ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে। বলে, ‘মোর খোকামনি! হীরা-মানিকের খনি, এমনটি নাই কারো!’ শুনে বুক ভরে।
গা’টি গরম হলে মা সে চোখের জলে ভেসে বলে, ‘ওরে যাদু কি হয়েছে বল’।
কত দেবতার ‘থানে’ পীরে মা মানত মানে- মাতা ছাড়া নাই কারো চোখে এত জল।
যখন ঘুমায়ে থাকি জাগে রে কাহার আঁখি আমার শিয়রে, আহা কিসে হবে ঘুম।
তাই কত ছড়া গানে ঘুম-পাড়ানীরে আনে, বলে, ‘ঘুম! দিয়ে যা রে খুকু-চোখে চুম’।
দিবানিশি ভাবনা কিসে ক্লেশ পাব না, কিসে সে মানুষ হব, বড় হব কিসে;
বুক ভ’রে ওঠে মা’র ছেলেরি গরবে তাঁর, সব দুখ হয় মায়ের আশিসে।
আয় তবে ভাই বোন, আয় সবে আয় শোন গাই গান, পদধূলি শিরে লয়ে মা’র;
মা’র বড় কেহ নাই- কেউ নাই কেউ নাই! নত করি বল সবে ‘মা আমার! মা আমার!
২| কবিতার নাম – কখনো আমার মাকে
কবি – শামসুর রাহমান
কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি।
সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে
আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না।
যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি,
যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানো
বয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গান
লতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়,
পাছে গুরুজনদের কানে যায়। এবং স্বামীর
সংসারেও এসেও মা আমার সারাক্ষণ
ছিলেন নিশ্চুপ বড়ো, বড়ো বেশি নেপথ্যচারিণী। যতদূর
জানা আছে, টপ্পা কি খেয়াল তাঁকে করেনি দখল
কোনোদিন। মাছ কোটা কিংবা হলুদ বাটার ফাঁকে
অথবা বিকেলবেলা নিকিয়ে উঠোন
ধুয়ে মুছে বাসন-কোসন (মা দিবসের কবিতা)
সেলাইয়ের কলে ঝুঁকে, আলনায় ঝুলিয়ে কাপড়,
ছেঁড়া শার্টে রিফু কর্মে মেতে
আমাকে খেলার মাঠে পাঠিয়ে আদরে
অবসরে চুল বাঁধবার ছলে কোনো গান গেয়েছেন কি না
এতকাল কাছাকাছি আছি তবু জানতে পারিনি।
যেন তিনি সব গান দুঃখ-জাগানিয়া কোনো কাঠের সিন্দুকে
রেখেছেন বন্ধ ক’রে আজীবন, কালেভদ্রে সুর নয়, শুধু
ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসে!
৩| কবিতার নাম – জননী জন্মভূমি
কবি – সুভাষ মখোপাধ্যায়
আমি ভীষণ ভালবাসতাম আমার মা-কে –
কখনও মুখ ফুটে বলি নি।
টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে (মা দিবসের কবিতা)
কখনও কখনও কিনে আনতাম কমলালেবু –
শুয়ে শুয়ে মা-র চোখ জলে ভ’রে উঠত
আমার ভালাবাসার কথা
মা-কে কখনও আমি মুখ ফুটে বলতে পারি নি।
হে দেশ, হে আমার জননী-
কেমন ক’রে তোমাকে আমি বলি।
৪| কবিতার নাম – বীরপুরুষ
কবি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।
তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ’ড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক’রে,
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ‘পরে
টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।
রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে
রাঙা ধূলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।
সন্ধ্যে হল, সূর্য নামে পাটে,
লেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে।
ধূ ধূ করে যে দিক-পানে চাই,
কোনোখানে জনমানব নাই,
তুমি যেন আপন-মনে তাই ভয় পেয়েছ-ভাবছ, ‘এলেম কোথা।’
আমি বলছি, ‘ভয় কোরো না মা গো,
ওই দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা।’
চোরকাঁটাতে পথ গিয়েছে ঢেকে
মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে
গরু বাছুর নেইকো কোনওখানে
সন্ধে হতেই গেছে গাঁয়ের পানে
আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে-
অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো।
তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,
‘দিঘির ধারে ওই-যে কিসের আলো!’
এমন সময় ‘হারে রে রে রে রে’
ওই – যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে!
তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে
ঠাকুর-দেবতা স্মরণ করছ মনে,
বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে
আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,
‘আমি আছি, ভয় কেন, মা, করো!’
তুমি বললে, ‘যাস নে খোকা ওরে,’
আমি বলি, ‘দেখো-নাচুপ করে।’
ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,
ঢাল তলোয়ার ঝনঝনিয়ে বাজে
কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে
শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।
কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,
কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।।
এত লোকের সঙ্গে লড়াই ক’রে,
ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।
আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে বলছি এসে,
‘লড়াই গেছে থেমে,’ (মা নিয়ে কবিতা)
তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে
চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে
বলছ, ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল’ কী দুর্দশাই হত তা না হলে!’
৫| কবিতার নাম – নোলক
কবি – আল মাহমুদ
আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।
নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে?
হাত দিওনা আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।
বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণ বেড়ের বাঁকে
শাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছড়িয়ে থাকে।
জল ছাড়িয়ে দল হারিয়ে গেলাম বনের দিক
সবুজ বনের হরিৎ টিয়ে করে রে ঝিকমিক
বনের কাছে এই মিনতি, ফিরিয়ে দেবে ভাই,
আমার মায়ের গয়না নিয়ে ঘরকে যেতে চাই।
৬| কবিতার নাম – কোন এক মাকে
কবি – আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
“কুমড়ো ফুলে-ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গ্যাছে গাছটা
আর, আমি ডালের বড়ি
শুকিয়ে রেখেছি,
খোকা তুই কবে আসবি।
কবে ছুটি?” (মা নিয়ে কবিতা)
চিঠিটা তার পকেটে ছিলো,
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।
“মাগো, ওরা বলে,
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো মা, তাই কি হয়?
তাই তো দেরি হচ্ছে।
তোমার জন্যে কথার ঝুড়ি নিয়ে
তবেই না ফিরবো।
লক্ষী মা রাগ ক’রো না,
মাত্র তো কটা দিন।”
৭| কবিতার নাম – মা তোমায় ভালোবাসি
কবি – শ্রাবন্তী মজুমদার
‘মা গো এমন হয়না কেন
ছোট্ট দাঁড়ের বুলবুলিটি যেন
ভোরবেলা রোজ মিষ্টি সুরে
ফুল ফোটানোর মত (মা নিয়ে কবিতা)
ঘুমটি আমায় ভাঙিয়ে দিতে সোহাগ ভরে কত
চোখটি মেলে খুঁজলে আমায় শিস দিতাম তখনো’
৮| কবিতার নাম – মাগো তোমার ডাকে
কবি – অজয় চক্রবর্তী
‘মা গো তোমার ডাকে দেব সারা
তাইতো আমি জাগি
মাগো আমি জানি তুমি তন্দ্রা হারা
জাগো আমার লাগি
তাইতো আমি জাগি’
৯| কবিতার নাম – মায়ের হাতের শুকনো মুড়ি
কবি – শ্যামল মিত্র
‘মায়ের হাতের শুকনো মুড়ি
হার মানে পোলাও লুচি
তোমার পায়ের ধুলো মাগো
ধুলো নয়তো হীরের কুচি’
১০| কবিতার নাম – ছেলেবেলায় আমায় যখন
কবি – মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
ছেলেবেলায় আমায় যখন গান গেয়ে মা ঘুম পাড়াত,
মায়ের দু’টি চোখের পাতা জলে তখন কে ভেজাত?
কি কারণে কাঁদে যে মা, বুঝিনিতো!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এটিও পড়ুন :
Womens Day Quotes in Hindi
Mothers Day Wishes in Hindi
Happy Mothers Day Quotes in Hindi
Poetry on Mothers Day in Hindi