আমার বাচ্চা এমনিতে খুব শান্ত, তবে খুব জেদি। অনেক মা-বাবাকেই এই ধরণের কথা বলতে শুনে থাকবেন। প্রথম দিকে বাচ্চার জেদকে প্রশ্রয় দিলেও দিনে দিনে জেদ বাড়তে বাড়তে এমন একটা পর্যায়ে পৌছে যায়, যে তখন সামলে ওঠা মুশকিল হয়। বাচ্চা জেদি, বাচ্চা কথা শোনে না, বাচ্চা একগুঁয়ে – এমন নানা ধরণের অভিযোগ নিয়ে অনেক মা-বাবাই অন্য কারও থেকে সাহাজ্য চান। জেদি বাচ্চাকে কিভাবে সামলাবেন, সে বিষয়ে ইন্টারনেটেও নানা তথ্য খুঁজে বেড়ান। তবে আসল কাজটা অনেকেই করেন না। বাচ্চার জেদের কারন খুঁজে বার করা।
না, প্লিজ বাচ্চা বলে তাকে তুচ্ছ ভাববেন না। তারও মন আছে, তাতে আবেগ আছে। ‘ও তো বাচ্চা, কিছু বোঝে না’ ভেবে থাকলে সবচেয়ে বড় ভুল আপনিই করছেন। কারন, বাচ্চারা আমার বা আপনার থেকে অনেক বেশি সেনসিটিভ হয়। কাজেই, বাচ্চাকে জেদি, রাগী, একগুঁয়ে ইত্যাদি বিশেষণে বিদ্ধ করার আগে তার জেদের বা রাগের আসল কারনটা খুঁজে বার করুন। তাতে আপনারই সুবিধে হবে। চলুন, আমরাই না হয় আপনাকে একটু সাহাজ্য করি
বাচ্চাকে যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন কি?
বাচ্চার জেদ করার পিছনে এটি একটি বড় কারন হতে পারে। আজকাল বেশিরভাগ পরিবারই নিউক্লিয়ার এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরি করেন। ফলে বাচ্চা সারাদিনের অনেকটা সময়েই একা থাকে। সেখান থেকে একটা দুঃখ তৈরি হয়, এবং দুঃখ কবে যে রাগ ও জেদে পরিবর্তিত হয় তা বুঝে ওঠার আগেই অনেক সময়ে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।
সন্তান একাকীত্বে ভুগছে না তো?
অনেকক্ষেত্রে অবশ্য বাড়িতে অন্যান্য লোকজন থাকলেও বাচ্চার মধ্যে জেদের প্রকাশ দেখা যায়। হয়ত আপনি গৃহবধু বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করেন। ফলে বাচ্চার কাছে থাকতে পারেন। আবার অনেক সময়ে বাড়িতে দাদু-ঠাকুমা বা অন্যান্য সদস্যরাও থাকেন। ফলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে যে এত লোকের সঙ্গে থাকার পরেও কেন বাচ্চার মধ্যে জেদ বা রাগ তৈরি হচ্ছে। একটু ভেবে দেখবেন তো,আপনারা ইমোশনালি বাচ্চার কাছে অ্যাভেলেবল তো? অর্থাৎ যে মুহূর্তে বাচ্চার কাউকে প্রয়োজন, সেই মুহূর্তে সে তাকে পাচ্ছে তো? নাকি বড়রা ল্যাপটপ, টেলিভিশন বা মোবাইলেই ব্যস্ত!
শারিরিক কোনও সমস্যা হচ্ছে কি?
অনেক সময়ে খুব ছোট বাচ্চাদের নানা রকমের শারিরিক সমস্যা হতে পারে। যেমন পেট ব্যথা করা বা অন্য কোনও সমস্যা। অথচ সে সময়ে তাদের এই সমস্যাগুলো গুছিয়ে বোঝানোর ক্ষমতা থাকে না। ফলে মা-বাবা অথবা অন্য কেউ ঠিক বুঝতে পারে না যে কোনও একটা ক্রমাগত শারিরিক সমস্যা বা অসুবিধের কারণে বাচ্চাটি খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে এবং রেগে যাচ্ছে।
সব সময়ে অন্যের সঙ্গে তুলনা করছেন না তো?
অনেক সময়ে বাড়ির অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে বা পাড়া কিংবা স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে টেনে আনা তুলনাও বাচ্চাকে জেদি করে তোলে। অবিভাবক হিসেবে এটা আপনাদের দায়িত্ব, বাচ্চা যাতে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে। সবাই সব ধরণের গুণ নিয়ে জন্মায় না। অন্য কেউ হয়ত পড়াশুনোয় তুখোর, অথচ আপনার মেয়ে হয়ত দারুন নাচে বা আপনার ছেলে হয়ত ফুটবল নিয়ে দারুন ড্রিবল করে। আপনার বাচ্চার গুণটাকে বড় করে দেখুন। তাকে উৎসাহ দিন। দেখবেন ধীরে ধীরে সে-ও আপনার কথা শুনতে শুরু করেছে।
বাচ্চাকে স্বাধীনতার অর্থ বোঝানো হয়েছে?
বাচ্চাদের জত বেশি নিজের হাতের মুঠোয় রাখার চেষ্টা করবেন, একটা সময়ে মুঠো খুলে দেখবেন আপনার সন্তান অনেক দিন আগেই আপনার হাতের বাইরে চলে গেছে। মনে রাখবেন, ডিসিপ্লিন শেখানো আর অন্যকে কন্ট্রোল করার মধ্যে তফাৎ রয়েছে। আপনার বা বাড়ির অন্য কারও এই ধরণের স্বভাবও কিন্তু একটা সময়ে বাচ্চাকে জেদি করে তুলতে পারে।
বাইরে কোনও সমস্যা হচ্ছে না তো?
অনেক বাচ্চা বাইরে বড্ড বেশি ‘বুলি’ হয়। হয়ত পাড়ায় বয়সে তার চেয়ে বড় কারও কাছে অথবা স্কুলে অন্য বন্ধু বা সিনিয়রদের কাছে, এমনকি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছেও অনেক বাচ্চা ‘বুলি’র শিকার হয়। ফলে একাধারে বাচ্চা নিজেকে গুটিয়ে নেয় এবং বাইরে যেতে ভয় পায়। অথচ বাড়ির কেউ সে’কথা বোঝার বদলে জোরজবরদস্তি করেন। সেক্ষেত্রে ছোট বাচ্চা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে রাগ বা জেদকে বেছে নেয়।
মূল ছবি সৌজন্য – কড়ি খেলা (জি ফাইভ)
ছবি সৌজন্য – আ থারস ডে (হটস্টার) এবং ফ্যামিলি ম্যান (অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও)
POPxo এখন চারটে ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন। শেখার জন্য জয়েন করুন #POPxoLive, যেখানে আপনি সরাসরি আমাদের অনেক ট্যালেন্ডেট হোস্টের থেকে নতুন নতুন বিষয় চট করে শিখে ফেলতে পারবেন। POPxo App আজই ডাউনলোড করুন আর জীবনকে আরও একটু পপ আপ করে ফেলুন!