শরীরকে চাঙ্গা রাখতে এক দল যেখানে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতেই বেশি পছন্দ করেন, সেখানে বেশিরভাগই খাওয়াদাওয়া ছেড়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় লেগে পড়েন। কেউ-কেউ তো আবার ইন্টারনেটে পাওয়া যাওয়া নানা ডায়েট চার্টের উপর ভরসা রেখে ‘জিরো ফিগার’ পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাতে কতটা উপকার মেলে জানা নেই, কিন্তু শরীরের যে নানা ক্ষতি হয়ে যায়, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, প্রত্যেকেরই শরীরের গঠন আলাদা, আলাদা তাঁদের জীবনযাত্রাও। তাই তো ইন্টারনেটে যে সব সহজ ডায়েট চার্ট পাওয়া যায়, তা সকলের ক্ষেত্রেই যে সমানভাবে কাজে আসবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই চোখ বন্ধ করে কিটো বা লিকুইড ডায়েট অনুসরণ করার আগে দয়া করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না যেন! তাতে শরীরের বড় রকমের কোনও ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমবে! কিন্তু এখানে প্রশ্ন হল, শুধুমাত্র ডায়েট চার্ট ফলো করেই কী ফিট থাকা যায়, নাকি খাওয়া-দাওয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ আনার পাশাপাশি অল্পবিস্তর শরীরচর্চা করারও প্রয়োজন রয়েছে?
মাথায় রাখতে হবে এই বিষয়গুলি
শরীরকে ফিট রাখতে এবং ওজন কমাতে শরীরচর্চা বেশি কাজে আসে, না ডায়েটিং, সে বিষয়ে জানার আগে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। যেমন ধরুন…
১. প্রতিটা মানুষের শরীরের চাহিদা যেমন আলাদা, তেমনই গঠনেও রয়েছে বৈচিত্র। তাই একথা মাথায় রাখা জরুরি যে লিকুইড ডায়েট (Diet) অনুসরণ করে করিনা কপূর জিরো ফিগার পেয়েছেন বলে আপনিও সেই ডায়েট চার্ট মানলে সমান উপকার পাবেন, এমন নয়! কারণ, শরীর বুঝে ডায়েট চার্ট তৈরি না করলে কোনও উপকারই মেলে না। উল্টে নানা রোগ ঘাড়ে চেপে বসার আশঙ্কা থাকে। তাই অন্ধের মতো কারও ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা উচিত নয়। বরং এক্ষেত্রে কোনও একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতোই ডায়েট চার্ট তৈরি করুন!
২. Fad diets বা ক্র্যাশ ডায়েটের জনপ্রিয়তা আজ তুঙ্গে। তবে জেনে রাখা ভাল যে, ঠিক-ঠিক নিয়ম না মেনে এমন ডায়েট অনুসরণ করলে মেটাবলিজম রেট খুব কমে যায়, যে কারণে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
৩. ডায়েটিং করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে ঠিকই। কিন্তু নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা তো কমেই, সেই সঙ্গে মানসিক অবসাদ, অ্যাংজাইটি এবং স্ট্রেসের মাত্রা কমে চোখে পড়ার মতো। তা হলে কি একথাই ঠিক যে ফিট থাকতে শরীরচর্চার কোনও বিকল্প হয় না?
‘দ্য ৮০/২০ রুল’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নাকি ডায়েটিং-এর ভূমিকা ৮০ শতাংশ। যেখানে শরীরচর্চার অবদান মাত্র ২০ শতাংশ। অর্থাৎ চটজলদি ওজন কমাতে চাইলে কেমন ধরনের খাবার খাচ্ছেন, কখন খাচ্ছেন এবং কতটা পরিমাণে খাচ্ছেন, তার উপর নজর রাখাটা জরুরি। বিশেষত, যে পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম করছেন, সেই অনুপাতে ক্যালরি শরীরে প্রবেশ করছে, নাকি বেশি পরিমাণে, সেদিকেও কড়া নজর রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। কারণ, চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণ ক্যালরির প্রবেশ ঘটলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তো ফিট থাকতে ডায়েট চার্ট মেনে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে সপ্তাহে যদি দিনচারেক শরীরচর্চা করা যায়, তা হলে তো কথাই নেই!
তার মানে এক্সারসাইজ বন্ধ করে শুধু ডায়েটিং করলেই ফল মিলবে?
খাওয়াদাওয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ এনে ওজন কমিয়ে ফেলা যায় ঠিকই। কিন্তু ওজন কমার পাশাপাশি muscle mass কমতে শুরু করে, যে কারণে মেটাবলিক রেট তো কমে যায়ই, সেই সঙ্গে পেশিতে উপস্থিত mitochondria নামক একটি উপাদানের মাত্রাও কমতে শুরু করে, যা glucose-কে এনার্জিতে রূপান্তরিত করে। তাই তো mitochondria-এর মাত্রা কমতে শুরু করলে এনার্জির ঘাটতি দেখা দেয়, যে কারণে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার মতো সমস্যা যেমন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তেমনি আরও নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। আর ঠিক এই কারণেই ডায়েটিং করার পাশাপাশি শরীরচর্চার দিকে নজর ফেরানোরও প্রয়োজন রয়েছে। এমন কেন? কারণ, একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে ডায়েটিংয়ের পাশাপাশি সপ্তাহে দিনতিনেক স্ট্রেংথ এক্সারসাইজ এবং দিনদুয়েক কার্ডিও এক্সারসাইজ যদি করা যায়, তা হলে muscle mass কমে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না। ফলে শরীরের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকে না।
তা হলে জিতল কে?
এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, দ্রুত ওজন কমাতে ডায়েটিংয়ের কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু সেই সঙ্গে শরীরচর্চারও প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, ডায়েটিং এবং এক্সরসাইজ হল একে অপরের পরিপূরক। অর্থাৎ শুধুমাত্র ডায়েটিং করলে যেমন ফল মিলবে না, তেমনই কবজি ঢুবিয়ে খেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমে ঘাম ঝরালেও কোনও উপকার হবে না। তাই ডায়েটিং এবং শরীরচর্চা, এই দুয়ের মধ্য়ে ৮০/২০-এর ভারসাম্য রাখাটা জরুরি।
তবে আবারও বলছি, কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে এবং নিজে এই কম্বিনেশন শুরু করার আগে একবার বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!