কিছুদিন আগেই আমরা আপনাদের নিয়ে গিয়েছিলাম কলকাতার বনেদি (aristrocrat) বাড়ির পুজোতে (puja)। সেই জৌলুস এখন আর না থাকলেও, রীতি-রেওয়াজে আজও কোনও খামতি নেই। তবে আমাদের রাজ্যের বনেদিয়ানার বহর কিন্তু শুধু কলকাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও রয়েছে অসংখ্য বনেদি বাড়ি। জেলার কিছুটা আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আসুন, তা হলে আমাদের জেলা (districts) সফর শুরু করা যাক।
বাঁকুড়ার মালিয়াড়া রাজবাড়ি
কনৌজের ব্রাহ্মণ পরিবার পাঁচশ বছর আগে এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এখানে প্রতিমা অষ্টধাতুর। সেই জমিদারি গরিমা আজ আর না থাকলেও সন্ধি পুজোর সময় বন্দুক দাগা হয় নিয়ম করেই।
এছাড়াও এই জেলার আরও একটি বিখ্যাত পুজো হল বাউরি বাড়ির পুজো। মাঠে চাষ করার সময় একটি তিন চোখের আদলে শিলাখণ্ড পাওয়া যায়। এখনও সেটাই পুজো হয়।
বর্ধমান রাজবাড়ির দেবী পটেশ্বরী
বর্ধমানের রাজার একবার খুব সাধ হল দুর্গা পুজো করার। কিন্তু তাঁর কুলপুরোহিত বললেন বাড়িতে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা করা দেবী চণ্ডিকা আছেন। তাই অন্য মূর্তি আনলে তিনি কুপিত হবেন। তবে উপায় একটা আছে। সেটাই বেছে নিয়ে পটের উপর দেবী মূর্তি এঁকে পুজো শুরু করলেন রাজা মহতাব চাঁদ। এখনও এই পুজো হয় লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর মন্দিরে। বারো বছর অন্তর নতুন রং করা হয় পটে।
এছাড়াও বর্ধমানের আরও দুটি বিখ্যাত পুজো হল আমাদপুরের চৌধুরী বাড়ির পুজো এবং কোলসাড়ার ঘোষাল বাড়ির পুজো। চৌধুরী বাড়ির একটি বিশেষ রীতি হল এখানে পুজোর আগে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাল ডাল সংগ্রহ করা হয়। পরে সেগুলো বেটে আল্পনা দেওয়া হয়।
বারুইপুরের রায়চৌধুরীদের পুজো
ভিটে প্রায় ভেঙে পড়েছে, জমেছে শ্যাওলা। তবু এই পরিবারে পুজোর সময় ভালই রোশনাই দেখা যায়। তিনশ বছর ধরে সব রকমের রীতি মেনেই চলে আসছে পুজো। শোনা যায় একসময় স্বয়ং সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করতেন এই পুজোর। আজও সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে
বনগাঁর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার
বিখ্যাত ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো এটি। এই পুজোর বৈশিষ্ট্য হল এখানকার দুর্গাকে বলা হয় বিড়ালহাতি দুর্গা। কারণ প্রতিমা এখানে দুই হাতে অসুর বধ করছেন এবং বাকি আটখানা হাত ছোট।
আসানসোলের ধাদকা গ্রামের পুজো
পুজোর বয়স প্রায় তিনশ বছর। নিয়ম আছে পুজোর পাঁচদিন গ্রামের সবাই নিরামিষ খাবেন। দশমী হয়ে গেলে তবেই সবাই আমিষে হাত দেন।
মেদিনীপুরের পরমানন্দ ঘোষ বাড়ির পুজো
এই বাড়ির গৃহদেবী রঙ্কিণী মাতার মন্দিরে ঘটে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে দুর্গা পুজো হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা গ্রামের ঘোষ বাড়িতে এই রীতি চলে আসছে বহু বছর ধরে। ষষ্ঠীতে এখানে হয় বেলবরণ। অর্থাৎ একটি বেলগাছকে দেবী রূপে পুজো করা হয়।
জনাইয়ের মিত্রবাড়ি
একসময় মিত্রদের সাতটি শাখা ছিল। আর এই সাত তরফেই ধুমধাম করে পুজো হত। এখন এই পুজো একজনের বাড়িতেই হয়। বাড়ির গৃহদেবতা রঘুনাথজিউ হলেও পুজো হয় শাক্তমতে। মিত্রবাড়ির মূল আয় ছিল কৃষি। তাই বোধন শুরু হওয়ার সময় ঠাকুরদালানে শস্যের বীজ ফেলা হয়। পুজোর সময় সেই বীজ থেকে অঙ্কুর বেরোলে তার উপর চৌকি পেতে পুজো হয়।
আন্দুলের দত্তচৌধুরী বাড়ি
দক্ষিণ ভারত থেকে সেন বংশের রাজারা যখন বঙ্গে আসেন তখন তাঁদের সঙ্গে এসেছিলেন পাঁচ ক্ষত্রিয়। এই দত্তচৌধুরীরা সেই পাঁচজনের মধ্যে একজনের বংশধর। নানা রকম নিয়ম মেনে পুজো হয়। মা এখানে ঘরের মেয়ে উমা হিসেবে পূজিত হন। ষষ্ঠীর দিন সবুজ আর দশমীর দিন মাকে দেওয়া হয় লাল ওড়না। বাড়ির নিরামিষ ভোগ রান্নার সময় বলতে হয় ‘রামশরনের কড়াই ধর!” শরিকি বিবাদে একবার নিঃস্ব হয়েছিল এই পরিবার। তারপর থেকে এই রীতি। সবচেয়ে অদ্ভুত নিয়ম হল এখানে নবমীর দিন ২৮টা প্রদীপের আরতি করে তারপর সেটা উল্টে নিভিয়ে দেওয়া হয়। একে বলে ‘কালি প্রদীপের আরতি।’ এতে অশুভ শক্তি দূর হয় বলে বিশ্বাস।
যেগুলোর সন্ধান দিলাম সেগুলো ছাড়াও আমাদের প্রতিটি জেলায় আরও অসংখ্য বনেদি বাড়ির পুজো আছে। সবগুলো বলতে গেলে রীতিমতো ইতিহাস হয়ে যাবে। তাই শুধু একটি সামান্য ঝলক দিলাম আপানদের। আশা করি সামনের বছর আমাদের এই মানস ভ্রমণ আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে।
Featured Images: PriyoMajumder, abhiphotography,
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo Shop-এর স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…