ADVERTISEMENT
home / Festival
পুজোর নস্ট্যালজিয়া: ঐতিহ্য আর সাবেকিয়ানা, কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো যেন ইতিহাসের দলিল

পুজোর নস্ট্যালজিয়া: ঐতিহ্য আর সাবেকিয়ানা, কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো যেন ইতিহাসের দলিল

জোরে জোরে ঢাক বাজছে মা দুর্গার (durga) সামনে। আর ভিরু সন্ত্রস্ত চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে নিরীহ ছাগলটি। একটু পরেই যে তাকে বলি দেওয়া হবে! আচমকা দড়ি ছিঁড়ে ছাগলটা চলে এল বাড়ির কর্তার কাছে। অসহায় অবলা প্রাণীটির চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না তিনি। মুক্তি দেওয়া হল তাকে আর চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে গেল বলি। এ হল বিখ্যাত ছাতুবাবু আর লাটুবাবুর বাড়ির ঘটনা। যে কর্তার কথা বলা হচ্ছে তিনি হলেন ছাতু আর লাটুবাবুর বাবা রামদুলাল দে। কলকাতায় বনেদি (aristrocrat) বাড়ির সংখ্যা নেহাত কম নয়। এর বেশিরভাগ বাড়িই উত্তর কলকাতায়। আর একেকটি বাড়ির পুজো (puja) যেন একেকটি জীবন্ত ঐতিহাসিক দলিল। নানা গল্প, কিংবদন্তী আর ইতিহাস মণি মুক্তোর মতো প্রতিটি বনেদি (bonedi) বাড়ির অলিন্দে ছড়িয়ে আছে। সেইরকমই কিছু মণিমুক্তো তুলে আনলাম আপনাদের জন্য। 

ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়ি: দেবীর সঙ্গে পূজিতা হন তাঁর দুই সখী জয়া ও বিজয়া

প্রতিমার হাতে কোনও অস্ত্র থাকেনা এই বাড়ির পুজোয়

রথের দিন কাঠামো পুজো হয় এখানে। প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত শালগ্রাম শিলা পুজো করে তৃতীয়াতে দেবীকে বসানো হয় আসনে।শাক্ত, শৈব ও বৈষ্ণব এই তিন মতেই পুজো করা হয় এখানে। তবে এই পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এখানে দেবী দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মী ও সরস্বতী থাকেন না। তার পরিবর্তে দেখা যায় পদ্মের উপর বসে আছেন দুর্গার দুই সখী জয়া ও বিজয়া। এক সময় জোড়া নৌকোয় এই বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন হত। দুটি নৌকোর মাঝখানে দেবীকে দোলনার মধ্যে করে নিয়ে যাওয়া হত তারপর মাঝ গঙ্গায় দড়ি আলগা করে দেওয়া হত। দশমীর ঘট বিসর্জনের পর দেবী পূজিতা হন অপরাজিতা রূপে। 

ADVERTISEMENT

জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়ি:একসময় জার্মানি থেকে আনা হত চালচিত্রের বর্ডার

এই বাড়ির দেবী সিংহাসনে বসেন রাজরানির মতো

দাঁ বাড়ির পুজো শুরু হয়েছিল ১৮৪০ সালে। শোনা যায় এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা শিবকৃষ্ণ দাঁ ফ্রান্স থেকে অর্ডার দিয়ে দেবীর অলঙ্কার আনিয়েছিলেন। সেই গয়না এতই সুন্দর ছিল যে, কলকাতার লোকেরা বলত মা দুর্গা মর্তে এসে আগে দাঁ বাড়ির গয়না পরেন, তবেই তাঁর পুজো শুরু হয়। রথের দিন গরানকাঠ পুজো করে প্রতিমা তৈরি শুরু হয়। জন্মাষ্টমীর দিন বসানো হয় দুর্গার মস্তক। দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় দেওয়া হয় তেরোটি করে শাড়ি ও কাঁসার পাত্র। তবে দাঁ বাড়ির পুজো নিয়ে সবচেয়ে বেশি মজার কাহিনি জড়িয়ে আছে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে রেষারেষি নিয়ে। বিসর্জনের দিন দাঁ বাড়ির কর্তারা হুকুম দিতেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সামনে গিয়ে জোরে জোরে ঢাক বাজিয়ে দেবীকে ওখানে বেশ কিছুবার প্রদক্ষিণ করে তবেই গঙ্গায় যেতে! 

হাটখোলার দত্তবাড়ি: কুমারী পুজোর সঙ্গে হয় সধবা পুজোও!

ADVERTISEMENT

বিসর্জনের পর বাছুরের লেজ ধরে ঘুরে বলা হয় বৈতরণী পার করো

দত্তবাড়ির পুজো হয় মঠচৌড়ি পদ্ধতিতে। অর্থাৎ ঠাকুরের মাথায় থাকে তিনটি করে চালা। দত্তবাড়ির দুর্গা প্রতিমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল দেবীকে শাড়ি না পরিয়ে তাঁর গায়েই তুলি দিয়ে অপূর্ব কায়দায় শাড়ি এঁকে দেওয়া হয়। নারায়ণের আশীর্বাদ নিয়ে তবেই শুরু হয় পুজো। প্রাচীন রীতি মেনে এখানে দশমীর দিন কোনও সিঁদুরখেলা হয়না। এই খেলা হয় অষ্টমীর দিন। বিসর্জনের পর বাড়ির সদস্যরা দেশাত্মবোধক গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফেরেন। তারপর ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ গানটি গাইতে গাইতে শুরু হয় বিজয়ার প্রণাম ও কোলাকুলি পর্ব। 

বাগবাজারের হালদার বাড়ি: উড়িষ্যা থেকে পাওয়া গিয়েছিল দেবীর কষ্টিপাথরের মূর্তি

হালদার বাড়িতে নবপত্রিকা স্নানে নিয়ে যাওয়া হয় মস্ত বড় ছাতার তলায়

ADVERTISEMENT

হালদার পরিবারের এক পূর্বপুরুষ বালেশ্বরে বেড়াতে গিয়ে স্বপ্নাদেশ পান। দেবী তাঁকে আদেশ দেন যে এক মুসলমান জেলে পরিবারের বাড়ির ১৪ ফুট গভীরে দেবীকে উল্টো করে শায়িত করা আছে। তাঁকে যেন সেখান থেকে মুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজও পুজো হয় সেই কষ্টিপাথরের দেবী মূর্তির। দেবীর মুখ থাকে দক্ষিণে। কারণ উত্তর বা কৈলাস থেকে দেবী দক্ষিণে মুখ করেই মর্ত্যে আসেন। বহু বছরের প্রথা মেনে এই বাড়ির বউরা দুর্গা ষষ্ঠী পালন করেন না। তাঁরা মাছ খেয়ে পান মুখে দিয়ে জলের ফোঁটা দিয়ে ঢাক বরণ করেন। বোধনের দিন রেড়ির তেলে জ্বালানো হয় ‘জাগ প্রদীপ’। বিসর্জনের আগে পর্যন্ত এই প্রদীপ নেভানো হয়না। 

শীলবাড়ির পুজো: পুজোর পর অনুষ্ঠিত হত জনপ্রিয় যাত্রাপালা ‘নিমাই সন্ন্যাস’

পঞ্চমী পর্যন্ত সাবেকি রীতি মেনে দেবী রূপে পূজিতা হন বেলগাছ

শীলবাড়ির প্রাণপুরুষ মতিলাল শীল ছিলেন নামজাদা ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী। শোভাবাজার রাজবাড়িতে পুজোর সময় সাহেব আর উচ্চবর্ণের মানুষ ছাড়া একসময় কেউ ঢোকার অনুমতি পেতনা। এই শুনে মতিলাল শীল তাঁর বাড়িতে দুর্গা পুজো শুরু করেন এবং তাঁর পুজোয় সবার প্রবেশের অনুমতি ছিল। শীলবাড়ির পুজোর নৈবেদ্য দেখার মতো। প্রতিদিন ২৮ কেজি করে নৈবেদ্য দেওয়া হয় দেবীকে। শীল বাড়ির বউ হলে পুজোর সময় পড়তেই হবে বিশেষ ডিজাইনের মল ও নথ। 

ADVERTISEMENT

শোভাবাজার রাজবাড়ি: হাতির পিঠে চেপে ঠাকুর দেখতে এলেন লর্ড ক্লাইভ

শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিমা দেখতে এসেছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস

বর্তমানে শোভাবাজারের দেব পরিবারে দুটো পুজো হয়। দুটি প্রতিমাই হয় একচালার। যেহেতু রাজা নবকৃষ্ণ দেব কায়স্থ ছিলেন তাই এই পুজোয় কোনও অন্নভোগ হয় না। পরিবারের কোনও সদস্য পুজোর কোনও কাজে অংশগ্রহণ করেন না। উৎকল ব্রাহ্মণরা এই পুজোর যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করেন। বলি দেওয়া এখানে বন্ধ হয়ে গেলেও শাক্ত প্রথা মেনে একটু রক্ত প্রয়োজন হয়। তাই নবমীতে বলি হয় মাগুর মাছ। একসময় সন্ধিপুজোর সময় কামান দাগা হত। এখন আর তা হয়না তবে প্রথা মেনে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হয়। 

লাহাবাড়ির পুজো: দেবী দুর্গা বসেন স্বামী শিব ঠাকুরের কোলে

ADVERTISEMENT

সন্ধিপুজোর সময় মহিলাদের দুই হাতে ও মাথায় মাটির সরাতে ধুনো জ্বালিয়ে বসতে হয়

লাহা বাড়ির দুর্গা প্রতিমা একদমই অন্যরকম। এখানে শিব ঠাকুরের কোলে দুর্গা ঠাকুর বসে থাকেন। দেবীর হাতে থাকেনা কোনও অস্ত্র, পায়ের কাছে থাকেন না মহিষাসুরও। কারণ লাহা বাড়িতে মহিষাসুরমর্দিনীরূপে দেবী পূজিতা হন না। এখানে তিনি অভয়া বা হরগৌরী রূপে পূজিতা। দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে পূজিত হন লাহাবাড়ির কূলদেবী জয়জয় মা। যেটি একটি অষ্টধাতুর সিংহবাহিনী মূর্তি। আরও একটি প্রথা চালু আছে এই বাড়িতে। দুর্গা প্রতিমা তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় একটি ছোট্ট গণেশ। যতদিন না প্রতিমা সম্পূর্ণ হচ্ছে এই গণেশের পুজো হয়। বড় গণেশ তৈরি হলে তাঁর পেটে ছোট গণেশ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নবমীর দিন মাকে ‘কোল হাঁড়ি’ দেওয়া হয়। এটি খই, মুড়কি আর মিষ্টি ভরা ছোট্ট একটা হাঁড়ি। নিরঞ্জনের জন্য প্রতিমা বাড়ির বাইরে গেলেই মেয়েরা দরজা বন্ধ করে দেন। বিসর্জন দিয়ে বাড়ি ফিরে পুরুষরা তিনবার জিগ্যেস করেন, “মা আছেন ঘরে?” মেয়েরা বলেন “হ্যাঁ, মা আছেন ঘরে।” তারপর খোলা হয় দরজা। 

পাথুরিয়াঘাটার ঘোষবাড়ি: বড়ে গোলাম আলি, গহরজানকে নিয়ে পুজোয় বসত মজলিশ

মহালয়ার পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে হয় দেবীর বোধন

ADVERTISEMENT

এই বাড়িতে নিয়ম মেনে কাঠামো পুজো হয় উল্টোরথের দিন আর ষষ্ঠীতে হয় চক্ষুদান। শোনা যায় ইংরেজ আমলে বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংস সস্ত্রীক ঘোষবাড়ির পুজো দেখতে আসতেন। অঞ্জলি দেওয়ার সময় এই বাড়িতে এক অদ্ভুত প্রথা মানা হয়। মেয়েরা সার দিয়ে দাঁড়ান ডানদিকে আর পুরুষ সদস্যরা বাঁদিকে। 

মিত্রবাড়ির পুজো: পদ্মফুল নয় এই বাড়িতে পুজো হয় ১০৮ অপরাজিতা দিয়ে

দেবীকে নৈবেদ্যর সঙ্গে দেওয়া হয় মাখন

উনিশ শতকের বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন নীলমণি মিত্র। এটি তাঁর বাড়ির পুজো। এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমা যাতে সারাজীবন একরকম থাকে তাই দেবী প্রতিমার ছাঁচ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। বিসর্জনের আগে মায়ের মূর্তি নিয়ে যাওয়া হয় সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে। মিত্রবাড়ির বহুদিনের একটি প্রথা আজও বর্তমান। ভাসান দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বাড়ির চৌকাঠে পা দেওয়ার আগে প্রণাম করতে হয় গয়লাদের কোনও স্ত্রীকে। 

ADVERTISEMENT

সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো: দেবীর গায়ের রং হবে শিউলি ফুলের বোঁটার মতো

আমিষ ভোগের প্রচলন আছে এই বাড়িতে

১৬১০ সালে শুরু হয় এই বাড়ির পুজো। বিদ্যাপতি রচিত ‘ দুর্গাভক্তি তরঙ্গিণী’ মেনে অর্থাৎ তন্ত্রমতে দেবীর পুজো হয় এখানে। বৈষ্ণব মত অনুযায়ী দেবীর বাহন সিংহের মুখ হয় ঘোড়ার মতো। তন্ত্রমতে পুজো হয় বলেই এখানে দেবীর সঙ্গে থাকেন ছিন্নমস্তা, বগলা ও মাতঙ্গী সহ দশমহাবিদ্যা। মহালয়ার পরের দিন বেদী করে সেখানে বসানো হয় পঞ্চঘট। সাবর্ণ বাড়িতে অষ্টমী ও নবমীর দিন এক বিশেষ প্রথা আছে। একে বলা হয় ‘মাস ভক্ত বলি।’ ১৮০টা খুড়িতে মাসকলাই ও দই দিয়ে তুষ্ট করা হয় অপদেবতা আর উপদেবতাদের।  

 

ADVERTISEMENT

Featured Images: Orange Wayfarer, love_thy_camera, bongmitaofficial

 

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo Shop-এর স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…

ADVERTISEMENT
27 Sep 2019

Read More

read more articles like this
good points

Read More

read more articles like this
ADVERTISEMENT