গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে যে টানাপড়েন চলছিল, অবশেষে তার একটা ফয়সালা হল। ভুতেরা শেষ পর্যন্ত সঠিক বিচার পেল। কি বলছি বুঝতে পারছেন না? তাহলে খোলসা করেই বলি, গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১১ই এপ্রিল, ২০১৯-এ সুপ্রিম কোর্ট থেকে রায় দেওয়া হল যে ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর ওপরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে ‘ভারচুয়াল ব্যান’ লাগিয়েছিল, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই সিনেমার প্রযোজক কল্যানময় বিলি চ্যাটার্জিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। আদালতের রায়ে এটাও বলা হয়েছে যে মমতা ব্যানারজির সরকারের তরফ থেকেও ১ লক্ষ টাকা ‘ফাইন’ হিসেবে দিতে হবে।
গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি ‘ভবিষ্যতের ভূত’ মুক্তি পায় শহরের নানা সিঙ্গেলস্ক্রিন এবং মাল্টিপ্লেক্সে। কিন্তু পরের দিনই বিনা নোটিশে হঠাত করে সিনেমাটি ব্যান করে দেওয়া হয়। যদিও কোনোকিছুই অফিসিয়ালভাবে করা হয়নি। যাঁদের টিকিট কাটা ছিল, তাঁদেরকে টিকিটের টাকাও ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। এরপরে গত ১৫ই মার্চ আদালত থেকে আদেশ দেওয়া হয় যাতে সিনেমাটি বিনা বাধায় শহরে মুক্তি পায় এবং তা নিয়ে যাতে কোনরকম সমস্যা না হয়। জাস্টিস ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং হেমন্ত গুপ্তা এ ব্যাপারে বলেন, “সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সারটিফিকেশন যখন কোনও সিনেমাকে সার্টিফিকেট দিয়ে দেন, তখন সেই সিনেমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কেউ কোনও বাধা দিতে পারেন না।”
গত ২৬শে মার্চ আদালতের তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রিন্সিপাল সেক্রেটরি অত্রি ভট্টাচার্য এবং পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল বিরেন্দ্রকে আদেশ দেওয়া হয় যাতে যে সব সিনেমা হলে এই ছবিটিকে ব্যান করা হয়েছিল, সেখান থেকে তা সরিয়ে নেওয়া হয়।
আগাম কোনও নোটিশ এবং কারণ না দেখিয়ে যখন অনিক দত্তর ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর ওপরে ব্যান লাগানো হয়েছিল, তখন শুধুমাত্র এই সিনেমার কলাকুশলীরাই না, সিনেমা জগতের বহু মানুষই এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সঙ্গে থেকেছিলেন সাধারণ মানুষও। শুধুমাত্র যে শহরের আনাচে কানাচে এই আন্দোলন হয়েছিল তা নয়, সোশ্যাল মিডিয়াও প্রতিবাদে সরব হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে জানানো হয়েছে যে ‘ফ্রিডম অফ স্পিচ’ ছিল, এবং থাকবে, সেটা কোনদিনই কারও চোখ রাঙ্গানিতে বন্ধ করা যায় না। যতদূর শোনা যাচ্ছে, ‘ভবিষ্যতের ভূত’ সিনেমাটিতে নাকি নানা রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে যার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং কম্যুনিস্ট পার্টিও রয়েছে; যদিঅ সমালোচনাটি অত্যন্ত হাস্যরসের সাথেই করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এর আগে অনিক দত্ত আমাদেরকে ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ এবং ‘আশ্চর্য প্রদীপ’-এর মতো পলিটিক্যাল স্যাটায়ার উপহার দিয়েছেন। এই সিনেমাগুলিতেও রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অরথনৈতিক সমস্যাকে তুলে ধরেছিলেন পরিচালক, তবে তা কমেডির ছলে যাতে দর্শকের সিনেমাগুলো দেখতে বোর না লাগে আবার সিনেমার মধ্য দিয়ে সামাজিক বার্তাটিও মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। কিন্তু এর আগের সিনেমাগুলিতে কোনও ব্যান লাগেনি, তবে এবারে কেন? সেটা জানতে হলে তো ‘ভবিষ্যতের ভূত’ bhobishyoter bhut দেখতে হবে! সিনামটি গত ৫ই এপ্রিল শহরের নানা সিঙ্গেলস্ক্রিন এবং মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে।
ছবি সৌজন্যেঃ YouTube
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!