পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা হল ঘটি (ghoti) আর পূর্ববঙ্গের বাঙালিরা হল বাঙাল (bangal)। এপার বাংলা আর ওপার বাংলার দুই বাঙালিদের মোটা দাগ দিয়ে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে বহু আগে। এই ঘটি (ghoti) এবং বাঙালরা (bangal) নাকি ধর্মে, কর্মে, আচারে, বিচারে মোদ্দা কথা সব ব্যাপারেই এতটা আলাদা যে ঘটি (ghoti) বনাম বাঙালের (bangal) ঝগড়া চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। আবিশ্যি এখন ঘটি বাড়ির মেয়ে বাঙাল বাড়ির বউ হয়ে বা বাঙাল বাড়ির ছেলে ঘটিদের জামাই হওয়ার ফলে বিভেদ অনেকটাই মিটে গেছে। তবে একটা জায়গা নিয়ে এখনও দু পক্ষ লড়ে যাচ্ছে। আর তা হল কাদের রান্না ভালো। ঘটিরা বলে বাঙালরা এক গাদা ঝাল দেয় রান্নায়, ইলিশ ছাড়া কোনও মাছ ভালো করে রাঁধতে পারে না, অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসে এমন শুঁটকি মাছ রাঁধে! বাঙালরা কি ছেড়ে কথা বলবে? তারা বলে ঘটিরা আবার রান্না নিয়ে কথা বলে কোন মুখে? তারা তো পোস্ত ছাড়া কিছু রাঁধতেই জানে না। আর সব রান্নাতেই আছে বস্তা বস্তা চিনি!আরে রাখুন না মশাই। আমরা খেতে ভালোবাসি। রাঁধব, খাব আর খাওয়াব, ব্যাস গল্প শেষ! ঘটি আর বনাম দু পক্ষেরই খাস রেসিপি পেশ করলাম আপনাদের সামনে। তর্ক না করে খেয়ে দেখুন!
ঘটি বাড়ির খাস রান্নার রেসিপি
ভাজা মুগের ডাল টমেটো দিয়ে
এমনিতে যেভাবে ডাল তৈরি করা হয় বাঙালি বাড়িতে সেভাবেই করবেন। তবে মুগ ডাল আগে ভেজে নিয়ে সেটা হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করবেন। মুগ ডালে একটা সুন্দর গন্ধ থাকে। ভেজে নিয়ে সেদ্ধ করলে সেই গন্ধ থেকে যায়। এবার সাদা তেলে জিরে আর তেজপাতা দিয়ে নাড়তে থাকুন। যখন একটা সুন্দর গন্ধ বেরোবে তার মধ্যে টমেটো দিন। এমনভাবে নাড়ুন যাতে টমেটো গলে মিশে যায়। এবার এর মধ্যে সেদ্ধ করা ডাল দিয়ে দিন। তার মধ্যে আন্দাজমতো নুন, মিষ্টি ও সামান্য আদাবাটা দিন। একটু ফুটলে নামিয়ে নিন। উপরে সামান্য ঘি ছড়িয়ে দিন।
চিংড়ির মালাইকারি
এ হচ্ছে যাকে বলে ঘটিদের খাসমহল। বাঙালরা যতই ইলিশ ইলিশ করে চেঁচাক চিংড়ি হল নাপিত মাছ। যে রান্নাই করুন একদম সুপার ডুপার হিট। তেল ঘি মিশিয়ে সেটা গরম করুন এবং তার মধ্যে গরম মশলা ফোড়ন দিন। আদা বাটা ও নুন দিয়ে ভালো করে কষুন। সামান্য হলুদ আর লঙ্কা গুঁড়ো আগে থেকে জলে গুলে একটা মিশ্রণ তৈরি করে রাখবেন এবার সেটা কড়াইতে দিয়ে দিন। চিংড়িমাছ (বাগদা) আগে থেকে ধুয়ে পরিষ্কার করে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখবেন। মশলা সব মিশে গেলে তার মধ্যে চিংড়ি মাছ দিন। মালাইকারি একটু মিষ্টি স্বাদেরই হয়। তাই কাজুবাদাম বাটা ও সামান্য চিনি দিন। নারকেলের দুধ ঢালুন। মিনিট দশেক সিমে রেখে অল্প ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
বাঙাল বাড়ির রান্না
নারকেল কুমড়ি
গ্রেটারে চালকুমড়ো ছেঁচে রাখুন বিনা জলে চালকুমড়ো ভাপিয়ে নেবেন। কারণ এই সবজি থেকে এমনিই জল বেরোয়। যে জল বেরোবে সেই জল জেন শুকিয়ে যায়। তেলে বড়ি ভেজে রাখুন। সেই তেলেই কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে চালকুমড়ো দিয়ে দিন। জল মরে এলে আদা বাটা, নুন আর আগে থেকে কুড়ে রাখা নারকেল দিন। নামাবার আগে আরও একটু নারকেল আর কাঁচালঙ্কা ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। চাইলে অল্প ঘি দেবেন।
শুঁটকি চচ্চড়ি
শুঁটকি মাছ গরম জলে ভিজিয়ে রেখে ভালো করে ধুয়ে জলটা ফেলে দিন। বারবার ধোবেন। তারপর কড়াইতে দিয়ে আদা, রসুন, টমেটো, কাঁচালঙ্কা আর নুন হলুদ দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন।যতক্ষণ না মছের গন্ধ পুরোপুরি যাচ্ছে আর জল মরে যাচ্ছে ভালো করে নাড়ুন। ঝুরো ঝুরো হলে নামিয়ে নিন।
Picture Courtsey: Instagram
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!