দেবী (goddess) দুর্গার (durga) উল্লেখা পাওয়া যায় নানা পুরাণ ও গ্রন্থে। অসুরের বিনাশ করতে তাঁর উদ্ভব নিয়েও প্রচলিত আছে নানা কাহিনি। আপনারা জানেন মা দুর্গার আছে নয়টি রূপ। যাঁদেরকে একত্রে বলা হয় নবদুর্গা। সেই কাহিনি আমরা অন্য আর একদিন বলব। পুজোর আর বেশিদিন বাকি নেই। তাই তার আগেই শুনে নিন মায়ের অষ্টশক্তি (ashtashakti) কথা। আসলে আমাদের দেশে দেবী দুর্গাকে নানা ভাবে নানা রূপে পুজো করা হয়। কখনও মা রূপে, কখনও মেয়ে রূপে আবার কখনও শক্তিরূপে। দুর্গামন্ত্রেও তাই উচ্চারিত হয় “শক্তিরূপে সনাতনী।”
অসম্ভব বলশালী এক অসুরের সঙ্গে যখন সম্মুখ সমরে আর পেরে উঠছিল না দেবতাকূল, তখন সব দেবতারা একত্রিত হয়ে সৃষ্টি করেন মা দুর্গার। বেদ বেদান্তে মা দুর্গাকে কল্পনা করা হয়েছে ব্রহ্মস্বরূপা হিসেবে। আবার তন্ত্রমতে দেবী হলেন আদ্যাশক্তি মহামায়া। তাঁর মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রচণ্ড শক্তির ভাণ্ডার। তিনি অসুরদলনী। অন্ধকারকে দূর করে সমস্ত মানবজাতিকে তিনি পথ দেখান। যখনই অশুভ শক্তির কাছে শুভ শক্তির পরাজয় ঘটবে তখনই মা দুর্গার আবির্ভাব হবে। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন সম্ভবামি যুগে যুগে। অর্থাৎ পৃথিবীতে অন্যায় দেখলেই আমি যুগাবতার হয়ে জন্মগ্রহণ করে মানবের পাপমুক্তি ঘটাব। একই কথা কিন্তু স্বয়ং মা দুর্গাও বলেছেন। চণ্ডী পুরাণের একাদশ অধ্যায়ে মা দুর্গা স্বকণ্ঠে বলছেন, “ইত্থং যদা যদা বাধাদান বোত্থা ভবিষ্যতি/ তদা তদাবতীর্যাহং করিষ্যাম্যরি সংক্ষয়ম”। এর অর্থ হল যখনই দানবদের অত্যাচারে অনাচার দেখা দেবে, তখনই আমি আবির্ভূতা হয়ে দেবতাদের শত্রুকে বিনাশ করব। দুটি আলাদা পরিপ্রেক্ষিতে এই কথা বলা হলেও আসলে দুটি কথার অর্থ একই।
অসুর রাজ শুম্ভের সঙ্গে শুরু হল দেবীর লড়াই। যুদ্ধে দেবীর জয় হল এবং পরাজিত ও আহত হলেন অসুররাজ শুম্ভ। অসুরেরা যখন দেখল দেবীকে এইভাবে পরাজিত করা সম্ভব নয়, তখন তাঁরা ছলনার আশ্রয় নিল। তাঁরা দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে পাঠাল রক্তবীজ নামের এক অসুরকে। রক্তবীজের শরীর থেকে এক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়লেই তার থেকে জন্ম নেয় আরও একশো অসুর। তাই তাকে কাবু করা এত সহজ নয়। এই রক্তবীজকে শায়েস্তা করতেই যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হল দেবীর অষ্টশক্তি। এই অষ্টশক্তি হল ইন্দ্রাণী, বরাহী, ব্রহ্মাণী, বৈষ্ণবী, নরসিংহী, মাহেশ্বরী, কৌমারী ও চণ্ডিকা। এঁরা রক্তবীজের একটা ফোঁটা রক্তও মাটিতে পড়তে দিল না। রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই সেটা তাঁরা চেটে খেয়ে নিচ্ছিল। এই দেখে দেবীকে অসুররাজ শুম্ভ পরিহাস করলেন। তিনি বললেন, এই যুদ্ধ তো দেবীর একা লড়া উচিত। অথচ তিনি এক জনের সঙ্গে লড়াই করতে আটজন হয়ে লড়ছেন। দেবী এই কথায় ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন, একৈবাহয়ং জগৎত্র দ্বিতীয় কা মমাপরা। অর্থাৎ তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। এঁরা সবাই তাঁর শরীরের বিভূতি থেকে জন্মেছে। রক্তবীজের পরাজয়ের পর অষ্টশক্তি আবার দেবীর মধ্যে বিলীন হয়ে গেল। দেবী দুর্গার ধ্যানমন্ত্রেই আছে যে এই অষ্টশক্তি হল উগ্রচণ্ডা। অর্থাৎ অসম্ভব শক্তির আধার সম্পূর্ণ ভয়ঙ্কর করাল এক রূপ। যিনি জগতের জননী, যিনি সবার মা প্রয়োজন পড়লে তিনি যে কত ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারেন, অষ্টশক্তির উত্থান সেটাই প্রমাণ করে।
Featured Image: photo_kipathshala and KomalIndian
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!