পাঠককুলের কাছে আগেই করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chattopadhyay) অন্ধ ভক্ত। ডাই হার্ড ফ্যান যাকে বলেন আপনারা।ফেলুদার চরিত্রে ওঁকে ছাড়া আর কাউকে আমি ভাবতেই পারিনা। তাই এই লেখা লিখতে গিয়ে আমি একটু আধটু আবেগপ্রবণ হয়ে উঠতেই পারি। এটুকু আপনারা মেনে নেবেন আশা করি। সৌমিত্রবাবুকে প্রথম দেখি নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে। সবুজ পাঞ্জাবি আর ধুতি পরা। উনি কবিতা পাঠ করতে মঞ্চে উঠেছিলেন। তার ঠিক পরেই ছিল বম্বের এক নামী শিল্পির গান। স্বভাবতই দর্শকদের উসখুস করার কথা। অথচ এমনই সৌমিত্রবাবুর ব্যক্তিত্ব, এমনই তার ভরাট কণ্ঠ, টানা দু ঘণ্টা মোহিত হয়ে দর্শক শুনল ‘আমারি চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ…” চারদিকে ঘুরে শ্রোতাদের প্রণাম জানালেন তিনি। তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজ যিনি পা দিলেন পঁচাশিতে(Happy Birthday Soumitra Chattopadhyay)। সেই দিনটা আজও ভুলিনি। হাঁ করে গিলছিলাম ফেলুদাকে। প্রখর অন্তর্দৃষ্টি আর ক্ষুরধার মগজাস্ত্রের মালিক ফেলুদা।আমার কাছে আজও দুটি স্বত্তা এক।সৌমিত্রবাবু মানেই ফেলুদা আর ফেলুদা মানেই সৌমিত্রবাবু। তখন অবশ্য মনে হয়েছিল, ইস ফেলুদা কবিতাও পড়তে পারে? এর পরে যখন ওঁকে দেখি তখন অনেকটা বড় হয়ে গেছি। এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অতিথি হয়ে। তখনও সেই চিরন্তন ধুতি পাঞ্জাবি। তবে পাঞ্জাবির রঙটা সবুজই। সম্ভবত এটা ওঁর প্রিয় রঙ। হবে নাই বা কেন? মানুষটার বাইরে পঁচাশি তো কী? ভিতরটা যে আজও সবুজ চিরসবুজ।
মঞ্চে এবং পর্দায় ওঁর অভিনয় নিয়ে আমি কী বলব? আমার সে যোগ্যতাই নেই। তিনি অপু হয়েও অসাধারণ আবার মঞ্চে রাজা লিয়র সেজেও তিনি হিরের দ্যুতি ছড়িয়ে যান। কবিতা পড়তে ভালোবাসি। তাই ওঁর লেখা কবিতা শুনি, পড়ি। তবে এত কিছু করেও মানুষটা এঁকে ফেললেন দারুণ কিছু ছবি। ভাবা যায়? আর সেই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে উদ্যোগ নিয়েছিল পিসি চন্দ্র গ্রুপ। মাধবী মুখোপাধ্যায়, চলচ্চিত্র সমালোচক শমিক বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবি ও ছায়া’র মুখবন্ধ লিখেছেন শমিক) পরিচালক অতনু ঘোষ এবং অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্তের উপস্থিতিতে প্রকাশ পেল সৌমিত্রবাবুর আঁকা ছবির বই ‘ছবি ও ছায়া’।বইটির প্রকাশক দে’জ পাবলিশিং। কবিতা লেখার জন্য তো আগেই কলম ধরেছিলেন ময়ূরবাহন। এবার রঙ তুলিও হাতে তুলে নিলেন। ‘ছবি ও ছায়া’ তে তিনি শুধু ছবিই আঁকেননি, প্রত্যেকটা ছবির নীচে সেই ছবিটির সঙ্গে জড়িত এবং ছবিটির পিছনে তাঁর ভাবনাও ছোট করে লিখে দিয়েছেন। কাজের প্রতি কতটা ডেডিকেশান থাকলে তবেই একজন শিল্পী এতটা নিখুঁত কাজ করতে পারেন। উনি পারেন। উনি যে রাজা। রাজা লিয়র। শুনেছি যখন ‘চারুলতা’ করছিলেন, তখন সত্যজিৎ রায়ের কথায় পাল্টে ফেলেছিলেন নিজের হাতের লেখার স্টাইল। মানিকবাবু বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই রবীন্দ্রপূর্ব সময়ের কথা লিখেছেন ‘নষ্টনীড়’ গল্পে। আর তখনকার মানুষ যেভাবে বাংলা লিখতেন তার নমুনা তিনি তুলে দেন সৌমিত্রবাবুর হাতে। দিনরাত পরিশ্রম করে সেই লেখা রপ্ত করেছিলেন মানিকবাবুর প্রিয় নায়ক। নাহ! এতটা ডেডিকেশান সত্যিই ভাবা যায় না।আর তাই তো তাঁকে সম্মানিত করতে পেরে আপ্লুত হয়েছেন পিসি চন্দ্র গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শ্রী এ কে চন্দ্র। তিনি বললেন, “২০০৩ সালে সৌমিত্রবাবু পিসি চন্দ্র সম্মান পেয়েছেন। ওঁর মতো বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক শিল্পীকে আবার সম্মান জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।পিসি চন্দ্র গ্রুপের রূপকার প্রয়াত শ্রী পূর্ণচন্দ্র চন্দ্রের ১২৫ তম জন্ম বার্ষিকী পালন এর চেয়ে ভালোভাবে আর হত না।”
সত্যি বলতে কী, আমাকে যদি কেউ হাজার হাজার লাইনও লিখতে দেয় সৌমিত্রবাবুর বিষয়ে, আমার ক্লান্তি আসবে না। ওই যে আগেই বললাম আমি ওঁর বিষয়ে আমি ঈষৎ আবেগপ্রবণ। বাঙালির শয়নে, স্বপনে উত্তমকুমার আছেন থাকবেন, কিন্তু বাঙালির মননে উজ্জ্বল ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
আমাদের শ্রদ্ধা, প্রণাম ও ভালোবাসা এবং জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা (Happy Birthday) জানাই এই লেজেন্ডকে। সিধু জ্যাঠা থাকলে নিশ্চয়ই আজও বলতেন, “জিতে রহো বাচ্চে!
ছবি সৌজন্য ও বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ পি সি চন্দ্র গ্রুপ (PC Chandra Group) এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!