বেশ কয়েক মাস ধরে পিরিয়ডস (periods) মিস করছে সেঁজুতি। তার উপর নানান রকম সমস্যা। শেষে সহকর্মীদের কথায় সে ডাক্তারের কাছে গেল। সেখানে জানতে পারল, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে (পিসিওডি বা পিসিওএস) (PCOD) আক্রান্ত সে। প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিল। তার পর ওর ডাক্তার বুঝিয়ে বলায় কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হয় সেঁজুতি। আসলে আজকাল বেশির ভাগ মহিলাদের (women) মধ্যেই এই রোগ দেখা যায়। ওভারিতে (ovary) ছোট ছোট সিস্ট (cyst) হয়। তার ফলে মহিলাদের শরীরে হরমোন (hormone) লেভেলের উপর প্রভাব ফেলে। আর সিস্টের (cyst) ফলে মহিলা হরমোনের বদলে পুরুষ হরমোন তৈরি করে। এর প্রভাব পড়ে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলে (menstrual cycle)। কিন্তু কী কী দেখে বুঝবেন যে আপনার পিসিওডি (PCOD) হয়েছে।
১। অনিয়মিত পিরিয়ডস (periods)
২। লোমের বৃদ্ধি
৩। চুল পড়া
৪। অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া
৫। মাথা ধরা
৬। অ্যাকনে বা ব্রণ
৭। কনসিভ করতে সমস্যা
পিসিওডি-র (PCOD) অনেক ওষুধ রয়েছে ঠিকই, তবে ঘরোয়া উপায়েও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এই সমস্যা। সবার আগে বলে দেওয়া সমস্যায় পেটে মেদ জমতে দেওয়া চলবে না। তার জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে এক্সারসাইজ করতে হবে। তা ছাড়াও জেনে নিন, এর প্রতিকারের ঘরোয়া উপায়গুলো।
খাদ্যাভ্যাসে বদল
পিসিওডি (PCOD) নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবার আগে যেটা প্রয়োজন, সেটা হল ঠিকঠাক ডায়েট। খাদ্যাভ্যাসে একটু পরিবর্তন আনলে তা আপনার হরমোনের মাত্রা কন্ট্রোল করবে। আর মেনস্ট্রুয়াল সাইকলও (menstrual cycle) ঠিকঠাক করবে। ডায়েট-প্ল্যানে তাজা ফল, শাকসবজি, শস্য, বাদাম জাতীয় খাবার বেশি করে যোগ করুন। আর ডায়েটে রাখুন করলা-পটলের মতো সবজিও। আর যতটা সম্ভব প্রসেসড ফুড-ফাস্ট ফুড এড়িয়েই চলুন। এগুলো আপনার স্বাস্থ্যের উপরেও প্রভাব ফেলে। প্রয়োজনে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।
ভিটামিন ডি
মহিলাদের রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেমকে ঠিকঠাক রাখার জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার পিসিওডি-র সমস্যা ধরা পড়ে, তা হলে আপনার শরীরের ভিটামিন ডি-এর লেভেল পরীক্ষা করে নেবেন। আর শরীরে যদি ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হয়, তা হলে সেটা পূরণ করার অনেক উপায় রয়েছে। ভিটামিন ডি সাপলমেন্টস নিতে পারেন। অথবা যে সব খাবারে ভিটামিন ডি রয়েছে, সেগুলোও খেতে পারেন। যেমন- মাশরুম, ফ্যাটি ফিশ, ডিমের কুসুম খেতে পারেন। পাশাপাশি, সূর্যের আলোয় কিছুক্ষণ থাকুন।
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার
স্বাস্থ্যের জন্য অ্যাপল সাইডার ভিনিগার খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটা শরীরের ইনসুলিনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে পিসিওডি-র (PCOD) মতো সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ছাড়াও দেহের ph লেভেলকেও ব্যালান্স করতে সাহায্য করে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার খেতে পারেন। গরম জলে ২ টেবিলচামচ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করলে পিসিওডি কন্ট্রোলে থাকবে। এ ছাড়া আপনার ওজনও কমবে।
গ্রিন টি
গ্রিন টি অ্যান্টি অক্সিড্যান্টসে সমৃদ্ধ থাকে। যে সব হরমোনের জন্য ওভারিতে (ovary) সিস্ট (cyst) হয়, সেই সব হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি, গ্রিন টি ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
মেথিবীজ
যাঁদের PCOD থাকে তাদের অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন হরমোন দেহের কোষে কার্যকর ভাবে ব্যবহৃত হতে পারেন না। ফলে ওজন বাড়তে থাকে এবং টেস্টোস্টেরন হরমোনের (hormone) উৎপাদনও বাড়ে। তাই মেথিশাক বা বীজ খাওয়ার ফলে তা ইনসুলিন হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়। তিন চা-চামচ মেথি বীজ ভালো করে ধুয়ে সারা রাত দেড় কাপ জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন তিন বারে সেটি খান, সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এবং দুপুরে ও রাতে খাওয়ার ৫ মিনিট আগে। এ ছাড়া খেতে পারেন মেথি শাকও।
দারচিনি
ডায়াবিটিস বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি টাইপ-২ ডায়াবিটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখার ক্ষমতা। তাই মিল্কশেক বা দইয়ে দারুচিনি মিশিয়ে খেতে পারেন, কেক বা মাফিন তৈরিতে ব্যবহার করতে পারেন বা চায়ের সাথে সামান্য কিছু দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়েও খেতে পারেন। আর এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম তাই ওজন বাড়বে না।
তুলসি পাতা
তুলসি পাতাও পিসিওডিতে (PCOD) দারুণ ওষুধ। এটি একটি চমৎকার অ্যান্টি অক্সিড্যান্টও। সকালে খালি পেটে ১০টি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া তুলসি পাতা দিয়ে সেদ্ধ করা জল খেতে পারেন নিয়মিত।
ছবি সৌজন্যে: পেক্সেলস, ইউটিউব
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলাতেও!