আগামী বৈশাখে সুলেখার বিয়ে। কয়েকটা জিনিস ছাড়া বিয়ের কেনাকাটা মোটামুটি সবই হয়ে গেছে, তবে হানিমুনে কি কি ড্রেস (Honeymoon Dresses) নিয়ে যাবে, সেটা এখনও অবধি ঠিক করে উঠতে পারেনি। শাড়ি পরতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নয় ও। অবশ্য শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাকাপড় পরার ব্যাপারে খুব একটা বাধানিষেধ নেই। কিন্তু হানিমুনে যে ড্রেসগুলো পরবে সেগুলো তো একটু অন্যরকম হতেই হবে তাই না?
আসলে মধুচন্দ্রিমা বা হানিমুন ব্যাপারটা নিয়ে কিন্তু বর এবং কনে দুজনেরই এক্সাইটমেন্টের অন্ত থাকেনা। যাদের অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ হয়, হানিমুন তাঁদের কাছে আরও বেশি এক্সাইটিং হয়, কারণ একে অন্যকে ভালোভাবে জানবার সুযোগ প্রথমবার মধুচন্দ্রিমায় গিয়েই পাওয়া যায়। তাছাড়া বেড়াতে যাওয়ার একটা সুযোগও পাওয়া যায়, আর ফ্যাশন করার কোনও সুযোগই কি মিস করা যায়! তবে হানিমুনে যাবার ড্রেস কি হবে (Hot Dresses For Honeymoon) এবং কোন ধরনের জামাকাপড় নিয়ে যাবেন সেটাও কিন্তু একটা ভাবার বিষয়। আপনার কোন ঋতুতে বিয়ে হচ্ছে, হানিমুনে কোথায় যাচ্ছেন, লেটেস্ট ফ্যাশন ট্রেন্ড কি – এরকম অনেকগুলো ব্যাপারই কিন্তু মাথায় রাখতে হবে প্যাকিং করার আগে।
আরো পড়ুনঃ কম খরচে মধুচন্দ্রিমা এই ৫টি জায়গায়
সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠান মোটামুটি চার-পাঁচ দিন ধরে চলে। আর যতদিনে বিয়ে-বৌভাত-অস্টমঙ্গলা এসব অনুষ্ঠান শেষ হয়, ততদিনে বর এবং কনে থেকে আরম্ভ করে দু’বাড়ির সব লোকজনই বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কাজেই সব থেকে ভালো হয় যদি বিয়ের আগেই হানিমুনের জন্য প্যাকিং করে নেন।
হানিমুনে কোথায় যাবেন সেটা হবু বর এবং কনে দু’জনে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। একে অন্যের পছন্দের সম্মান করে, বাজেট দেখে আর সময় দেখেই হানিমুন ডেস্টিনেশন বাছা উচিত। দেশের মধ্যে যাবেন নাকি দেশের বাইরে, সমুদ্রে যাবেন নাকি পাহাড়ে, শীতের জায়গায় যাবেন নাকি কোনও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে – এসব ব্যাপারেই একটু আলোচনা করে তারপর হানিমুনের জন্য ড্রেস (Dresses For Honeymoon) কেনাটা ভালো। কারণ, ধরুন আপনি কোনও বিচ-ড্রেস কিনলেন আর বেড়াতে গেলেন পাহাড়ে – তখন তো ওই ড্রেসটা আর পরা হবে না হানিমুনে!
জীবনে অন্তত একবার বরের সাথে হাত ধরে সমুদ্রের পাড়ে হাঁটব, ভেজা বালিতে আমাদের পায়ের ছাপ পড়বে, সমুদ্রের নোনা জল এসে আমাদের পা ধুইয়ে দেবে আর আমরা একে অন্যের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে রোম্যান্টিক কথা বলব – এই ইচ্ছেটা কিন্তু কম বেশি সব মেয়েরই থাকে। যদি আপনিও হানিমুনে গোয়া, বালি, মরিশাস কিংবা মলডিভস যাবেন বলে প্ল্যান করেন, তাহলে সেই হিসেবে জামাকাপড় গোছান। যদি দিনের বেশিরভাগ সময়ে পুলসাইডে থাকেন, কিংবা সমুদ্রে স্নান করবেন ভাবেন তাহলে এমন কিছু জামাকাপড় নিন যাতে সানট্যান না হয়। এমন কোনও ফ্যাব্রিকের ড্রেস প্যাকিং (Honeymoon Outfits) করার সময় নিয়ে নেবেন যেগুলো তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। কয়েকটা টু-পিস বেডিং স্যুট নিতে পারেন এবং মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে সেগুলো হানিমুনে পরতে পারেন।
কয়েকটা টপ, স্পোরস্ট ব্রা, হালকা শর্টস আর সানগ্লাস নিলেই যদি মনে হয় যে খুব ফ্যাশানেবল (fashion) ড্রেস নিয়েছেন হানিমুনের জন্য, বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনি ভুল ভাবছেন। ধরুন আপনি সমুদ্রে স্নান করে নিলেন কিন্তু রিসোর্ট অবধি যাবেন কি করে? কিম্বা আপনার মনে হল স্নান করার পরেও আরেকটু সময় আপনি আপনার বরের সাথে বিচে ঘুরবেন, তাহলে কিন্তু একটা কোন ‘কভার আপ’ ড্রেস নিয়ে নেবেন। যেমন ধরুন একটা লং শ্রাগ কিম্বা লং জ্যাকেট বা বয়ফ্রেন্ড শার্ট পরে নিতে পারেন এরকম সময়ের জন্য। যদি আপনি বিকিনি পরতে স্বচ্ছন্দ হন তাহলে তার সাথে স্যরং নিয়ে নিতে পারেন। আর অবশ্যই বেশ কালারফুল বিচ ব্যাগ নিতে ভুলবেন না। এতে আপনি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন সানস্ক্রিন, সানগ্লাস ইত্যাদি রাখতে পারেন।
অনেক হোটেল বা রিসোর্টে হানিমুন কাপলদের জন্য পার্টির আয়োজন করা হয়। সেই পার্টিতে অংশগ্রহন করার জন্য কিছু ড্রেস নিতে ভুলবেন না। অথবা ধরুন আপনার বর আপনাকে নিয়ে একটা স্পেস্যাল ক্যান্ডেল লাইট ডিনার ডেটে যেতে চান, তাহলে সেখানে পরার মতো কিছু জামাকাপড় (Dresses For Honeymoon) নিয়ে নিন। অনেক সুন্দর ডিজাইনের গাউন পাওয়া যায়। একটা কিনে নিতে পারেন হানিমুনের জন্য। আবার আপনি যদি লিটল ব্ল্যাক ড্রেস পরতে ভালোবাসেন তাহলে সেটাও প্যাক করতে পারেন। অনেকেই দেশের মধ্যে গোয়াকে হানিমুন ডেস্টিনেশন বলে মনে করেন। আর যদি মধুচন্দ্রিমা করতে গোয়ায় যান তাহলে যে অন্তত একবার নাইট ক্লাবে যাবেন সেটা তো নিশ্চিত। কিছু ফাঙ্কি টপ, ডেনিম ইত্যাদি নিতে পারেন পার্টিওয়্যার হিসেবে।
বিয়ের পরে সবাই একবার না একবার মন্দিরে যায়েই। আর হানিমুনে গিয়েও অনেকসময়েই দেখা যায় যে নবদম্পতি সেই জায়গার লোকাল মন্দিরে নতুন জীবনের জন্য আশীর্বাদ নিতে যান। আপনাদের দু’জনেরও যদি এরকম কোনও প্ল্যান থাকে, তাহলে একটা কুর্তি বা শাড়ি অথবা চুড়িদার রেখে দিন হানিমুনের প্যাকিং লিস্টে। আপনি যদি কুর্তি নেন তাহলে সেটা জিন্স অথবা পালাজোর সাথে টিম আপ করে পরতে পারেন, এতে যাতায়াতের সময় কমফোর্টেবল ফীল করবেন।
যদি শাড়ি নিতে হয়, তাহলে বিয়েতে পাওয়া ভারি ভারি শাড়িগুলো না নিয়ে হালকা কোনও শাড়ি নিন। ভারি এবং কাজকরা শাড়ি তো আপনি ঘরোয়া কোনও অনুষ্ঠান কিংবা অন্য কারও বিয়েতে পরে পরার সুযোগ পাবেন, কিন্তু বেড়াতে গিয়ে যদি স্বচ্ছন্দবোধ না করেন তাহলে কিন্তু বেড়ানোর আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।
আপনি হানিমুনে যাচ্ছেন, আর নতুন সংসার আরম্ভ করার আগে আপনার বরকে ইম্প্রেস করার এটা বেশ ভালো সুযোগ। যখন হানিমুনের জন্য প্যাকিং করবেন, ব্যাগে এমন কিছু ড্রেস অবশ্যই রাখুন যেগুলো লেটেস্ট ফ্যাশন ট্রেন্ডে রয়েছে। এতে আপনার বর বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারবেন যে আপনি ফ্যাশন সম্বন্ধে কতটা আপ টু ডেট! অবশ্য এক্ষেত্রে একটা বিষয় কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, ফ্যাশন করতে গিয়ে যেন আপনি অসচ্ছন্দবোধ না করেন সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এমন যেন না হয় যে ড্রেসটা (Honeymoon Outfits) আপনি পরলেন ঠিকই কিন্তু এতটাই অসচ্ছন্দবোধ করলেন যে আপনার হাজব্যান্ডের সামনে সহজ হতে পারলেন না।
বেশিরভাগ মেয়েদের আলমারিতেই নানা ধরনের স্কার্ট থাকে – শর্ট স্কার্ট, মিডিয়াম লেন্থ স্কার্ট, লং স্কার্ট, এ-লাইন স্কার্ট আরও না জানি কতো কি! আপনি যদি এমন কোন আউটফিট আপনার হানিমুনে নিয়ে যেতে চান, যাতে আপনি বেশ স্টাইলও করতে পারবেন আবার অসচ্ছন্দবোধও করবেন না, তাহলে কিন্তু প্যাকিং করার সময়ে স্কার্ট নিতে পারেন। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী স্কার্ট কিনে নিতে পারেন আবার আগে পরা কোনও স্কার্টও নিয়ে যেতে পারেন। ম্যাচিং অথবা কনট্রাস্ট করে টপ বা ব্লাউজ দিয়ে টিম আপ করে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন যে টপ কিংবা ব্লাউজ যেন বেশি টাইট ফিটিং না হয়। যদি আপনার গরমকালে বিয়ে হয় এবং হানিমুনেও আপনি গরম কোনও জায়গাতেই যান, তাহলে কিন্তু একটু ঢিলেঢালা জামাকাপড় (Best Honeymoon Dresses) নিলে আপনি আরাম পাবেন। সন্ধেবেলা যদি মনে করেন যে স্কার্ট পরবেন, তাহলে তার সাথে হিলওয়ালা জুতো নিতে কিন্তু ভুলবেন না।
অনেকেই আছেন যারা ড্রেস, স্কার্ট অথবা জিন্স পরতে ঠিক ভালোবাসেন না। তাঁরা কিন্তু পালাজো আর কুর্তি পরতে পারেন। তবে শুধু যে কুর্তির সাথেই আপনি পালাজো প্যান্টস পরতে পারবেন এমন কোনও কথা নেই। আপনি চাইলে ট্যাঙ্ক টপ, রাফল্ড টপ, ব্লাউজ, টিশার্ট অথবা লেসওয়ালা টপ দিয়েও পালাজো পরতে পারেন। হানিমুনে গেলে যে সব সময়ে একদম ফিটফাট হয়ে সেজেগুজে ফ্যাশন করতে হবে তা কিন্তু না। মাঝেমাঝে একটু ক্যাসুয়াল লুকও কিন্তু বেশ ভালো লাগে। তবে যদি আপনার মনে হয় যে আপনার লুক একটু বেশিই ক্যাসুয়াল হয়ে গেছে কিংবা ম্যাড়ম্যাড়ে লাগছে, তাহলে জাঙ্ক জুয়েলারি দিয়ে আপনার আউটফিট টীম আপ করুন আর কেয়ারফুলি ক্যাসুয়াল লুক দিন নিজেকে।
হানিমুনেই কিন্তু বর আর কনে একে অন্যের সবচেয়ে কাছে আসার সুযোগ পায় কারণ এসময়ে তাঁরা দু’জন বাদে অন্য কেউ আর তাঁদেরকে বিরক্ত করার জন্য থাকে না। এই সুযোগে কিন্তু আপনি নিজের ওয়াইল্ড দিকটা আপনার পার্টনারকে দেখাতেই পারেন। যখন হানিমুনের জন্য প্যাকিং করবেন, তখন ব্যাগে কিছু সেক্সি নাইট ড্রেস (Sexy Dress For Honeymoon) নিয়ে নিতে একদম ভুলবেন না কিন্তু! সিল্ক, স্যাটিন কিংবা শিয়ার ফ্যাব্রিকের রোবও কিন্তু আপনাদের নটি নাইটের জন্য প্লেফুল অপশন হতে পারে। লেসের নাইটি, নেটের লঞ্জারি, বেবিডল ড্রেস, সারপ্রাইজ ড্রেস – নানা ভ্যারাইটি আছে লঞ্জারির। আপনার পছন্দমত যেকোনোটা বেছে নিন আর আপনার হাজব্যান্ডকে সারপ্রাইজ দিন।
হতে পারে হয়ত আপনি গরমকালে বিয়ে করছেন, কিন্তু যদি শীতের জায়গায় বেড়াতে যান তাহলে কিন্তু প্যাকিংটা অন্যভাবে করতে হবে। সেক্ষেত্রে বেশি করে শীতের জামাকাপড় নেবেন। কিছু টাইটস রেখে দিন ব্যাগে যেগুলো আপনি অ্যাঙ্কল বুটস কিম্বা নি-লেন্থ বুটস-এর সাথে আরামসে পরতে পারবেন। সোয়েটার ড্রেস, শাল, কারডিগান, পঞ্চো কিম্বা জ্যাকেট (Best Honeymoon Dresses) নিতে ভুলবেন না। আপনি চাইলে এগুলো সব না নিয়ে নিজের পছন্দমত কিছু কিছু শীতের পোশাক নিতে পারেন।
যদি মধুচন্দ্রিমায় সমুদ্রে বেড়াতে যান এবং সেটাও গরমকালে, তাই একটা বড় স্ট্র-হ্যাট নেওয়া আবশ্যিক। আপনি নিশ্চই চাইবেন না যে বিয়ের পরপরই রোদ লেগে আপনার মুখে ট্যান পড়ে যাক! আর তাছাড়া একটা ওভারসাইজড স্ট্র-হ্যাট সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির থেকেও আপনার মুখের ত্বককে রক্ষা করবে।
যদি আপনার বিয়ে গরমকালে হয় আর হানিমুনেও যান গরমকালে আর তাও আবার গরমের জায়গাতেই, তাহলে জেনে রাখুন দিনের বেলা অতিরিক্ত সাজগোজ করার কোন মানে হয়না। মনে করে নিজের স্কিন টাইপ অনুসারে সানস্ক্রিন নেবেন, সাথে নিন ওয়াটার প্রুফ মাস্কারা এবং হালকা লিপগ্লস। ব্যস, দিনেরবেলার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।
মধুচন্দ্রিমায় যদি সমুদ্রে যান তাহলে হিলস পরার কোন মানেই হয়না। তার চেয়ে বরং বেশ কালারফুল দেখে একজোড়া ফ্লিপ-ফ্লপ কিনে নিন, বালুকাবেলায় হাঁটতে সুবিধে হবে। আর জল লাগলেও জুতো নষ্ট হবার কোন চান্সই নেই।
নতুন বিয়ে হয়েছে, হানিমুনে (honeymoon) যাবার মজা, নতুন জায়গা দেখার এক্সাইটমেন্ট – সব ঠিক আছে, কিন্তু সেই আনন্দে কিন্তু জরুরি কাগজপত্র যেমন পাসপোর্ট (যদি বিদেশে যান মধুচন্দ্রিমা কাটাতে), ট্র্যাভেল ইন্সস্যুরেন্স, পরিচয়পত্র, যাতায়াতের টিকিট, হোটেল বুকিং স্লিপ এবং ওষুধের বাক্স নিতে ভুলবেন না।
ছবি সৌজন্যে – অ্যামাজন, নাইকা, ইন্সটাগ্রাম
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!