আমরা প্রত্যেকেই চাই আমাদের সুন্দর দেখাক।আমাদের মুখমণ্ডলে সবচেয়ে সুন্দর আর উজ্জ্বল প্রত্যঙ্গ হল আমাদের চোখ। অনেক সময় আমাদের মনের অনেক না বলা কথা আমাদের চোখের ভাষায় ফুটে ওঠে।তাই আমাদের এই দুই চোখ যদি সুন্দর হয় তাহলে মুখের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। আর চোখ সুন্দর করে তুলতে কাজলের (Kajal) চেয়ে ভালো কিছু হয় না।কবি সেইজন্যই বলেছিলেন, “দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ!” সত্যি হরিণের মতো কাজল নয়না হয়ে উঠতে আমরা সবাই যে ভালোবাসি, এ কথা অস্বীকার করে লাভ নেই। তাই চোখের মেকআপ নিয়ে কথা উথলেও সবার আগে কাজলের (Kajal) নাম আসে। আর এটা আজ থেকে নয়, মহিলারা যুগ যুগ ধরে চোখে কাজল লাগিয়ে আসছেন।ভারতীয় নারীদের চোখ এমনিতেই সুন্দর। আর এই সুন্দর চোখে অন্য মাত্রা এনে দেয় কাজলের ব্যবহার। ভারতীয় শাস্ত্র অনুযায়ী ষোল শৃঙ্গারের মধ্যে একটি হল কাজল। প্রাচীন যুগে শুধু মহিলারাই নন, পুরুষরাও চোখে কাজল লাগাতেন।সেই সময় প্রতি বাড়িতে প্রসাধনী হিসেবে বাড়িতে (Home) কাজল (Kajal) তৈরি করা হত। কাজলের চাহিদা এখনও কমেনি।বাজারে যে কাজল পাওয়া যায় তাতে বেশিরভাগ সময় ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে, যা চোখের ক্ষতি করে। তাই আমাদের উচিৎ বাড়িতে তৈরি কাজল ব্যবহার (Kajal at Home) করা। এটা একদমই অরগ্যানিক, তাই এটা চোখে লাগানোর অনেক উপকারিতা আছে। আসুন জেনে নিই বাড়িতে কীভাবে কাজল তৈরি করবেন (How To Make Kajal at Home In Bengali) আর কাজলের কী কী উপকারিতা আছে।
চোখে সঠিকভাবে কাজল লাগানোর স্টেপ বাই স্টেপ গাইড
বাড়িতে তৈরি কাজল বিষয়ে কয়েকটি দরকারি প্রশ্ন ও তার উত্তর
মনে করা হয় চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে কাজলের কোনও বিকল্প নেই। বিশেষ করে বাড়িতে তৈরি কাজল তো আরও ভালো। আপনি যখন এর উপকারিতা জানতে পারবেন তখন আপনি নিজেই এটা বিশ্বাস করবেন। আসুন জেনে নিই বাড়িতে তৈরি করা কাজলের (How To Make Kajal at Home) কী কী উপকারিতা আছে।
১। একসময় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচার জন্য সানগ্লাস নয় কাজল বা সুরমা লাগানো হত। কারণ কাজল আমাদের চোখকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচায়।
২। বড় বড় চোখ কার না ভালো লাগে। ছোট চোখ হলেও সেটা কাজল দিয়ে সুন্দর আর আকর্ষণীয় দেখানো যায়। আপনিও যদি চান আপনার চোখ বড় আর সুন্দর দেখাক তাহলে চোখে অবশ্যই কাজল লাগাবেন।
৩। আপনি যদি প্রতিদিন বাড়িতে তৈরি কাজল (Kajal) চোখে লাগান তাহলে আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তিরও উন্নতি হবে।
৪। চোখের অনেক সমস্যা থেকে বাঁচায় কাজল। চোখের ছানি পড়া, রাতকানা রোগ ইত্যাদির জন্য কাজল খুব কার্যকরী।
৫। সূর্যের উত্তাপ আর অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করার জন্য আমাদের চোখ জ্বালা করে। কাজল (Kajal) লাগালে চোখ ঠাণ্ডা হয় আর আমাদের চোখে আরাম হয়।
৬। কাজল (Benefits of Applying Kajal) আমাদের চোখ পোকা মাকড়ের হাত থেকেও বাঁচায়। পোকা কামড়ালে চোখে কাজল লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
৭। চোখে কাজল লাগালে চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় আর নতুন এক লুক আসে। আর আপনাকে দেখতেও অনেক আকর্ষণীয় আর সুন্দর লাগে।
কাজল ছাড়া আমাদের মেকআপ অসম্পূর্ণ। চোখ হাইলাইট করতে এবং আকর্ষণীয় দেখাতে আজকাল সবাই চোখে কাজল লাগায়। আপনি যদি আপনার সুন্দর চোখ নষ্ট করতে না চান তাহলে চোখে বাড়িতে তৈরি কাজল (Homemade Kajal) লাগান।বাড়িতে তৈরি কাজলকে অরগ্যানিক কাজলও বলা হয় কারণ এই কাজল তৈরি করার সময় কোনও রাসায়নিকের ব্যবহার করা হয় না। এটা চোখের জন্য পুরোপুরি সুরক্ষিত। আর এটা বাড়িতে খুব সহজেই তৈরি করা যায়। শুধু এটা তৈরি করার জন্য আপনাকে কয়েকটি সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
প্রথমে একটা গভির মাটির প্রদীপ নিন আর সেটা মাটিতে রাখুন। মনে রাখবেন প্রদীপে তেল দেবেন, ঘি নয়। এবার এই প্রদীপের উপর থালা এমনভাবে রাখুন যাতে প্রদীপ নিভে না যায়। এবার এই থালার উপর কয়েকটি বাদাম রাখুন (একেকবার ১টা বা ২টো) আর বাদামগুলোকে জ্বলতে দিন। বাদাম পুরো জ্বলে গেলে ৩ থেকে ৪ মিনিট পর বাদাম সরিয়ে নিন। এই পদ্ধতি বাকি বাদাম দিয়েও করুন। এই কৌশল ততক্ষন করুন যতক্ষণ না সব বাদাম জ্বলে যায়। সব বাদাম জ্বলে গেলে ছুরি দিয়ে এর কালি চেঁচে নিন আর বাদাম থেকে তৈরি কাজল (Almond Kajal) কৌটোয় ভোরে রাখুন।
প্রথমে একটা ল্যাম্প বা প্রদীপ নিন আর তাতে ঘি বা তেল দিন। এবার ঘিয়ে ভেজানো তুলোর সলতে প্রদীপে রাখুন আর জ্বালিয়ে দিন।এবার দুদিক থেকে প্রদীপ কিছু একটা দিয়ে ঢেকে দিন। প্রদীপের উপর তাড়াতাড়ি একটা প্লেট রাখুন। এমনভাবে প্লেট রাখবেন যেন প্রদীপের শিখা প্লেট স্পর্শ করে।এই প্রদীপ যেন সারারাত জ্বলে যাতে প্লেটের উপর অনেকটা কালি জমা হয়। প্রদীপ নিভে গেলে প্লেট সরিয়ে নিন। এবার প্লেট থেকে প্রদীপের ভুষো কালি বা কার্বন কোটিং জমা করে একটা পরিষ্কার কৌটোয় রাখুন। এই কাজল স্মুদ করতে এর মধ্যে কয়েক ফোঁটা ঘি ঢেলে দিন। কৌটোর ঢাকা বন্ধ করে দু ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন। এর পরে এটি (Ghee Kajal) ব্যবহার করা যাবে। চার মাসে একবার এই কাজল আপনি বাড়িতে তৈরি করতে পারবেন।
কর্পূর থেকে কাজল তৈরি করার পদ্ধতি খুব পুরনো আর কার্যকরী। কর্পূরের দু তিন টুকরো নিয়ে নিন। কর্পূরের টুকরো প্লেটের মাঝামাঝি রেখে দিন। এবার দু দিকে দুটো ছোট পাত্র রাখুন।এবার কর্পূর জ্বালিয়ে দিন আর পুরোটা জ্বলতে দিন।যখন বেশ ঘন হয়ে কালি পড়বে সেটা ছুরি দিয়ে চেঁচে নিয়ে কৌটোয় রেখে দিন। কর্পূর থেকে তৈরি কাজল (Camphor Kajal) চোখের জন্য খুব ভালো। এটা চোখে আরাম দেয়। চোখের মধ্যে ধূলিকণাও বের করে দেয় এই কাজল। শুধু খেয়াল রাখবেন যেন কর্পূর পুরোপুরি জ্বলে যায়।
সবার আগে সুতির কাপড় কে পাকিয়ে রোল করে পাতলা সলতে বানিয়ে নিন। তারপর মাটির প্রদীপে তিসি বা ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে সেটা জ্বালিয়ে দিন। রসুনের রস মাখানো পেতলের থালা দিয়ে এই প্রদীপ ঢেকে দিন। এটা করা উচিৎ কারণ এতে প্রদীপ অক্সিজেন পাবে আর জ্বলতেও সুবিধে হবে। সারা রাত এই অবস্থায় রেখে দিন। পরের দিন পিতলের থালা থেকে কার্বন পাউডার অর্থাৎ প্রদীপের কালি সরিয়ে নিয়ে একটা কৌটোয় রেখে দিন। এর মধ্যে কয়েক ফোঁটা ঘি বা ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে দিন যাতে কাজলে তেলতেলে ভাব বজায় থাকে। এই কাজল (Castor Oil Kajal) বেশ কয়েকদিন রেখে দেওয়া যায় এবং ব্যবহার করা যায়।
একটা মাটির প্রদীপ নিন আর সেটা ক্যাস্টর তেল দিয়ে ভরে দিন। এবার একটা প্লেটে অ্যালোভেরা জেল মাখিয়ে প্লেট এমনভাবে প্রদীপের উপর রাখুন যাতে প্রদীপের শিখা অ্যালোভেরায় লাগে এবং সেটা জ্বলতে থাকে। যতক্ষণ না অ্যালোভেরা জেল পুরোপুরি জ্বলছে ততক্ষণ অপেক্ষা করুন।এবার যখন জেল পুরোপুরি জ্বলে যাবে ছুরি দিয়ে কাজল (Aloe Vera Kajal) চেঁচে নিয়ে কৌটোয় রেখে দিন। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ করতে ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে।অ্যালোভেরা এমনিতেই বহু গুণ সমৃদ্ধ। অ্যালভেরা জেল এমনিতেই অনেকে চোখে লাগান আরাম পাওয়ার জন্য। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে অ্যালোভেরা জেল থেকে কাজল তৈরি করলে সেটাও চোখের জন্য যথেষ্ট লাভজনক হবে। অ্যালোভেরা জেল থেকে তৈরি এই কাজল চোখ ঠাণ্ডা রাখবে আর আরাম দেবে।
কাজল লাগানোর আগে জল দিয়ে ভালো করে চোখ ধুয়ে নিন তারপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন।কারণ চোখে যদি ময়লা থাকে তাহলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে তাছাড়া অপরিষ্কার চোখে কাজল ভালো করে ফুটে উঠবে না।
যদি মনে হয় আপনার কাজল বেশি তরল হয়ে গেছে তাহলে চোখের নীচে একটু পাউডার লাগিয়ে নিন। এতে চোখের আশেপাশের অঞ্চল তেলমুক্ত হয়ে যায়।বাড়িতে তৈরি কাজল হলে সেটা সব সময় ভালো করে বসে না, ফলে একটু পাতলা হতেই পারে। অবশ্য ফ্রিজে রেখে দিলে সেটা জমে যায়। তরল কাজল (Kajal) চোখে লাগালে সেটা ধেবড়ে যেতে পারে। সেইজন্যই পাউডার লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হল আপনাদের। চোখের নিচের অংশ অনেকেরই তৈলাক্ত থাকে। তখন কাজল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি থাকে। পাউডার অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়।
কাজল সব সময় চোখের বাইরের দিক থেকে লাগাতে শুরু করবেন এবং ভিতরের দিকে লাগাবেন।চোখের ভিতরের দিকে এবং তার আশেপাশে কাজল সব সময় সরু লাইন হিসেবে লাগাবেন। পরে যদি প্রয়োজন হয় লাইন একটু মোটা করে দেবেন।
এবার একদম প্রথমে চোখের নীচে যে পাউডার লাগিয়ে ছিলেন সেটা একটা মেকআপ ব্রাশ দিয়ে মুছে দিন। ফাইনাল টাচ দেওয়ার জন্য আপনি চোখে কাজলের সাথে আইলাইনারও লাগিয়ে নেবেন।এর জন্য একটা কাজল পেন্সিল নিয়ে সেটা আইলাইনারে ডুবিয়ে নিন। তারপর চোখের বর্ডার লাইনে লাগিয়ে নিন। এতে আপনার চোখের কাজল ঘেঁটে বা ছড়িয়ে যাবে না। আর আপনিও পেয়ে যাবেন ডার্ক আর বোল্ড লুক।
উত্তরঃ অবশ্যই বাড়িতে তৈরি কাজল (Kajal at Home)। কারণ বাজারে যে কাজল কিনতে পাওয়া যায় সেগুলোতে নানা রাসায়নিক মেশানো থাকে। এই জাতীয় রাসায়নিক চোখের জন্য একদম ভালো নয়।বাজারে বিক্রি হওয়া কাজলের বিজ্ঞাপন বা তার সুন্দর প্যাকেজিং দেখে আপনি প্রলোভিত হতেই পারেন। তবে সেই কাজল চোখের জন্যে একদমই ভালো নয়। এমনকি চিকিৎসকরাও বাজারে বিক্রি হওয়া কাজল ব্যবহার করতে বারণ করে থাকেন।
উত্তরঃ এমনিতে বাড়িতে তৈরি কাজলে (Homemade Kajal) কোনও রাসায়নিক থাকে না বলে এতে কোনও চোখের ক্ষতি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু চোখে বিশেষ কোনও সমস্যা থাকলে বা কোনও সংক্রমণ থাকলে কাজল না ব্যবহার করাই ভালো। চোখে সমস্যা থাকলে একবার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিৎ আপনি আদৌ কাজল ব্যবহার করতে পারবেন কিনা।অনেকের আবার চোখে সেরকম কোনও সমস্যা না থাকলেও, চোখে কাজল লাগানো মাত্রই চোখ জলে ভোরে যায়। আপনার এরকম কোনও সমস্যা থাকলে বুঝতে হবে আপনার চোখে কাজল সহ্য হয় না।
উত্তরঃ কাজল বাড়িতে তৈরি হলেও সেটা আসলে কার্বন। আর কার্বন শিশুর চোখে না লাগানোই ভালো বলে মনে করছি আমরা। কারণ ছোট শিশুদের চোখ ও ত্বক এমনিতেই কোমল হয়। সুতরাং কার্বন দিলে তার প্রভাব চোখের উপর পড়তে পারে। তাছাড়া বেশিরভাগ মা হাতের আঙুল দিয়ে সন্তানের চোখে কাজল (Homemade Kajal) পড়িয়ে দেন। মায়ের হাত যদি পরিষ্কার না থাকে তাহলে সেখান থেকেও শিশুর চোখে সংক্রমণ হতে পারে।তবে ভারতীয় প্রথা অনুযায়ী শিশুদের চোখে কাজল দেওয়া হয় যাতে তাদের উপর কারো কুনজর না পড়ে। সেক্ষেত্রে কপালের এক দিকে ছোট্ট করে একটা কাজলের ফোঁটা আপনি আপনার সন্তানকে রক্ষা করার জন্য দিতেই পারেন।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!