সাবান তৈরি হবে, তাও আবার বাড়িতে! এমনটা আদৌ সম্ভব নাকি? আলবাত সম্ভব! কারণ সাবান তৈরি মোটেও ঘাম ঝরানো কাজ নয়। বরং সঠিক পদ্ধতি মেনে ঘন্টা খানেক সময় খরচ করলেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন নানা রকমের সুগন্ধি সাবান। তাছাড়া প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরির কারণে ত্বককে নানা ক্যামিকেলর মারও সহ্য করতে হবে না। ফলে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি তো ঘটবেই, সঙ্গে প্রাকৃতিক উপাদানের গুণে সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে। এই সব পড়ে কি ভাবছেন এখনই সাবান তৈরির কাজে লেগে পড়বেন? যদি চেষ্টা করেন, তাহলে মন্দ হয় না। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। কী বিষয়? বেশ কিছু সাবান তৈরির সময় ‘লাই’ (lye) নামে এক ধরনের ক্ষারজাতীয় উপাদন ব্যবহার করতে হয়। এতে alkali-এর মাত্রা একটু বেশি থাকে। তাই এই উপাদানটি ব্যবহারের সময় অতিরিক্ত সাবধান থাকতে হবে। না হলে কিন্তু বিপদ ঘটে যেতে পারে। তবে যদি ইচ্ছা হয়, তাহলে এই উপাদান ব্যবহার না করেও কিন্তু সাবান তৈরি করতে পারেন। তাহলে আর সময় নষ্ট করে কাজ নেই! চলুন সাবান (homemade soap) তৈরির বেশ কিছু শর্টকাট ফর্মুলা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
Table of Contents
সাবান ব্যবহারের সত্যিই কি কোনও প্রয়োজন রয়েছে? (Do We Really Need to Use Soap?)
ইচ্ছা হলে নাও করতে পারেন, তাতে আপনারই ক্ষতি হবে। কী কী ক্ষতি হতে পারে, তাই ভাবছেন নাকি? তাহলে জেনে রাখুন, প্রতি মুহূর্তে মৃত স্কিন সেল জমছে ত্বকের উপরে। সেখানে ঘর বাঁধছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুও। তাই তো ঠিক সময়ে মৃত কোষের স্তর ধুয়ে ফেলার পাশাপাশি জীবাণুদের যদি মেরে ফেলা না যায়, তাহলেই সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে। সঙ্গে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে আরও হাজার রকমের ত্বকের রোগ। তাই তো প্রায় দিনই স্নান করার সময় সাবান মাখা একান্ত প্রয়োজন। আর যদি গ্লিসারিন অথবা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি সাবান ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে তো কোনও কথাই নেই! সেক্ষেত্রে আরও বেশি উপকার মিলবে। বিশেষ করে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। ফলে সৌন্দর্যও বাড়বে। সেই সঙ্গে নানা প্রাকৃতিক উপাদানের গুণে নানা ত্বকের রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও কমবে। তাই বুঝতেই পারছেন, বাড়িতে সাবান তৈরি করে তা ব্যবহার করলে, বহু উপকার মেলে। আর যদি বাড়িতে সাবান তৈরি করতে না পারেন, তাহলে বাজার চলতি গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন!
বাড়িতে সাবান তৈরির সহজ কিছু ফর্মুলা (Easy Homemade Soap Recipes)
কোনও এক ছুটির দিনে একবার চেষ্টা করে দেখুনই না। হতে তো পারে যে প্রথমবারেই দারুন একটা সাবান তৈরি করে ফেললেন। আর সে সাবান যে যেমন-তেমন হবে না, সে গ্যারান্টি আমাদের। কারণ, এবার যে ফর্মুলাগুলি জানাতে চলেছি, সেগুলির প্রত্যেকটিই ‘এক সে বাঢ়কর এক’!
১| দুধ এবং মধু দিয়ে তৈরি সাবান (Milk and Honey Soap)
যে কোনও ধরনের সাবান তৈরির জন্যই সাবানের বেস বা soap base-এর প্রয়োজন পড়ে। কী ধরনের সাবান তৈরি করছেন, তার উপর নির্ভর করে সাবানের বেস। এক্ষেত্রে দুধ দিয়ে তৈরি সাবানের বেস ব্যবহার করতে হবে। একটা পাত্রে অর্ধেক ব্লক দুধের সাবানের বেস ঢেলে নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে ধীমে আঁচে সেগুলি গলিয়ে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে ইচ্ছা হলে মাইক্রোওয়েভও ব্যবহার করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, সাবানের বেসটা যখন গলতে শুরু করবে, তখন বারে বারে নাড়াতে ভুলবেন না যেন! সাবানটা (soaps) একেবারে গলে যাওয়ার পরে তাতে চামচ তিনেক মধু এবং কয়েক ড্রপ yellow soap colorant বা রং মেশাতে হবে। ইচ্ছা হলে হলুদ রঙের সঙ্গে কয়েক ড্রপ লাল রঙও মেশাতে পারেন। এবার সাবানের মিশ্রণটা পছন্দসই ছাঁচে ঢেলে নিয়ে রেখে দিন। যখন দেখবেন মিশ্রণটা ঠান্ডা হয়ে জমে গেছে, তখন ধীরে ধীরে ছাঁচ থেকে সাবানগুলি বের করে নিন। এবার ব্যবহারের পালা।
২| অ্যালা ভেরা সাবান (Aloe Vera Soap)
বড় পাত্রে ২০০ এম এল মিনারেল ওয়াটার নিয়ে তাতে কম বেশি ৯০ এম এল ‘লাই’ (lye) মিশিয়ে ধীরে ধীরে নাড়াতে থাকুন। এই সময় তাড়াহুড়ো করলে কিন্তু বিপদ। কারণ, আগেই বলেছি ‘লাই’ হল ক্ষার জাতীয়। তাই কোনও ভাবে যদি এই উপাদানটি ত্বকের সংস্পর্শে আসে, তাহলে জায়গাটা পুড়ে যেতে পারে। এই কারণেই আস্তে ধীরে কাজটা সারতে হবে। এবার আরেকটা পাত্রে চামচ চারেক ভার্জিন অলিভ নিয়ে একটু গরম করে তাতে এক চামচ beeswax মিশিয়ে মিনিটপাঁচেক নাড়িয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটা প্রথমে তৈরি করে নেওয়া লাইয়ের মিশ্রণের সঙ্গে মিশিয়ে মিনিপনেরো নাড়ান। যখন দেখবেন মিশ্রণটা থকথকে হয়ে গেছে, তখন তাতে চামচ চারেক অ্যালো ভেরা জেল এবং কয়েক ড্রপ পছন্দের যে কোনও এসেনশিয়াল তেল মিলিয়ে মিনিটদুয়েক নাড়িয়ে ছাঁচে ঢেলে নিন। এবার ছাঁচটা ঢেকে দিয়ে দিন দুয়েক রেখে দিন। দু’দিন পরে ঢাকাটা সরিয়ে নিয়ে আরও একদিন রেখে দিন। সময় হয়ে গেলে ছাঁচ থেকে সাবানগুলি বের করে ব্যবহার করতে পারেন।
POPxo Recommends: WOW SKIN SCIENCE 99% Pure Aloe Vera Gel
৩| ওটসমিল সোপ (Oatmeal Soap)
বলেন কি, ওটসমিল দিয়েও সাবান তৈরি করা যায়? আলবাত যায়! তবে এই সাবানটি তৈরি করতে ওটসমিলের পাশাপাশি দুধ দিয়ে তৈরি সাবানের বেস, মধু, ভিটামিন ই তেল এবং পছন্দের যে কোনও ধরনের এসেনশিয়াল তেলের প্রয়োজন পড়বে। এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে তৈরি করতে হবে সাবানটি? কাঁচের বাটিতে ২৮০ গ্রাম সাবানের বেস নিয়ে হলকা আঁচে গলিয়ে নিন। এই সময় বারে বারে নাড়াতে ভুলবেন না যেন! এবার তরল সাবানে ছোট বাটির এক বাটি ওটস, কয়েক ড্রপ এসেনশিয়াল তেল, চামচ চারেক মধু এবং দুটো ভিটামিন ই ক্যাপসুল থেকে সংগ্রহ করা তেল মিশিয়ে ভাল করে নাড়াতে থাকুন। মিনিটপাঁচেক নাড়ানোর পরে মিশ্রণটা ছাঁচে ঢেলে নিন। মিশ্রণটা জমে গেলেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার ওটসমিল সাবান।
৪| চকলেট সাবান (Chocolate Soap)
এই সাবানটি তৈরি করতে প্রয়োজন পড়বে চামচ চারেক অলিভ অয়েল, সম পরিমাণ নারকেল তেল এবং পাম তেলের। সেই সঙ্গে হাতের কাছে রাখতে হবে এক চামচ কোকো বাটার, ৩৪০ গ্রাম চকলেট এবং দুধ মিশিয়ে তৈরি সাবানের বেস আর ১২০ গ্রাম লাই (Lye)। সবকটি উপাদান জোগাড় করে নেওয়ার পরে সাবানের বেসটা ছোট ছোট টুকরো করে নিয়ে একটা কাঁচের বাটিতে সংগ্রহ করে গলিয়ে ফেলুন। সাবানের বেসটা গলানোর সময় মিনিটদুয়েক বাদে বাদে নাড়াতে হবে। সাবানটা গলে যাওয়ার পরে তাতে এক এক করে অলিভ অয়েল, নারকেল তেল এবং পাম তেল মিশিয়ে মিনিটপাঁচেক নাড়িয়ে নেওয়ার পরে তাতে পরিমাণ মতো লাই মিশিয়ে আরও একবার ভাল করে নাড়াতে হবে। ইচ্ছা হলে সাবানটা গলিয়ে নেওয়ার পরেও লাই মেশাতে পারেন। মিশ্রণটা ভাল করে নাড়িয়ে নেওয়ার পরে তা ছাঁচে ঢেলে কম করে এক দিন রেখে দিন। যখন দেখবেন মিশ্রণটা ঠিক মতো জমে গেছে, তখন ছাঁচ থেকে বের করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
৫| দারচিনি দিয়ে তৈরি সাবান (Cinnamon Soap)
এক্ষেত্রে কম বেশি ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি সাবানের বেসের প্রয়োজন পড়বে। পরিমাণ মতো সাবানের বেস নিয়ে সেটি ছোট ছোট টুকরো করে একটা কাঁচের বাটিতে সংগ্রহ করে নিন। এবার মধ্যম আঁচে সাবানের বেসটা গলিয়ে ফেলুন। এই সময় প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর সাবানটা নাড়াতে হবে। যখন দেখবেন সাবানের বেসটা তরলে পরিণত হয়েছে, তখন আঁচটা বন্ধ করে দিয়ে তাতে কয়েক ড্রপ এসেনশিয়াল তেল, ছোট বাটির এক বাটি দারচিনি গুঁড়ো এবং সম পরিমাণ কফির গুঁড়ো মিশিয়ে ক্রমাগত নাড়াতে হবে। মিনিটদশেক নাড়ানোর পরে মিশ্রণটা ছাঁচে ঢেলে নিয়ে কম করে দু’দিন রেখে দিন। সময় হয়ে গেলে ছাঁচ থেকে সাবানগুলি সংগ্রহ করে নিয়ে ব্যবহার শুরু করে দিন।
৬| গ্লিসারিন সাবান (Glycerin Soap)
ত্বকের যত্নে গ্লিসারিন সাবানের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আর সবথেকে মজার বিষয় হল, ইচ্ছা থাকলে বাড়িতেই এমন সাবান তৈরি করে ফেলা সম্ভব। এক্ষেত্রে ২০০-৩০০ গ্রাম গ্লিসারিন সাবানের বেস, একটা কাঁচের বাটিতে নিয়ে গলিয়ে ফেলে তাতে কয়েক ড্রপ এসেনশিয়াল তেল এবং অল্প করে রং মিশিয়ে মিনিটদশেক ভাল করে নাড়াতে হবে। সবকটি উপাদান ভাল করে মিশে যাওয়ার পরে তা ছাঁচে ঢেলে নিয়ে কম করে ঘন্টা দুয়েক রেখে দেওয়ার পরে যখন দেখবেন মিশ্রণটা ঠিক মতো জমে গেছে, তখন ছাঁচ থেকে সাবানগুলি বের করে নিতে হবে।
POPxo Recommends: Soapy Twist Glycerine Ultra White Melt And Pour Soap Base
৭| ওটসমিল এবং কলা দিয়ে তৈরি সাবান (Banana Oatmeal Soap)
এক্কেবারে ঠিক শুনেছেন! কলা এবং ওটসমিল মিশিয়েও সাবান তৈরি করা সম্ভব। এই দুটি উপাদানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল, যা নানা ভাবে ত্বকের উপকারে লেগে থাকে। তাহলে আর আপেক্ষা কেন, চলুন সাবানটা তৈরির শর্টকাট পদ্ধতিটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। একটা বড় বাটিতে ২৫ গ্রাম সাবানের বেস নিয়ে গলিয়ে নিন। তারপর এর সঙ্গে চামচ দশেক আলিভ অয়েল, চামচ সাতেক নারকেল তেল, পাঁচ চামচ পাম তেল এবং চামচ দশেক rice bran oil মিশিয়ে সেই মিশ্রণে চামচ আটেক shea butter এবং পরিমাণ মতো মিনারেল ওয়াটার যোগ করে মিনিট পাঁচেক নাড়িয়ে নিন। ভাল করে নাড়িয়ে নেওয়ার পরে এই মিশ্রণে একটা পাকা কলা এবং হাফ কাপ ওটস মিশিয়ে ভাল করে চটকে নিতে হবে, যাতে প্রতিটি উপাদান ঠিক মতো মিশে যাওয়ার সুযোগ পায়। এবার মিশ্রণটি ছাঁচে ঢেলে নিয়ে কম করে ২৪ ঘন্টা রেখে দিন। সময় হওয়া মাত্র ছাঁচ থেকে সাবানগুলি সংগ্রহ করে নিতে ভুলবেন না যেন!
৮| হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট দিয়ে তৈরি করুন সাবান (Himalayan Pink Salt Soap)
একটা বড় কাঁচের বাটিতে ৪০০ গ্রাম সাবানের বেস নিয়ে তা গলিয়ে নিন। তারপর তাতে ২০ ড্রপ Grapefruit essential oil মিশিয়ে মিনিটদশেক নাড়াতে হবে, যাতে দুটি উপাদানই ঠিক মতো মিশে যেতে পারে। এবার তাতে হাফ কাপ পিঙ্ক হিমালয়ান সল্ট মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেই মিশ্রণটি ছাঁচে ঢেলে নিয়ে ঘন্টা দুয়েক রেখে দিলেই সাবান তৈরি হয়ে যাবে।
POPxo Recommends: Urban Platter Pink Himalayan Rock Salt Powder Jar
৯| পোস্ত দিয়ে তৈরি করে ফেলুন সাবান (Poppy Seed Soap)
যে পোস্ত দিয়ে বড়া বা তরকারি রান্না করেন, সেই একই পোস্ত দিয়ে সাবান তৈরি করে ফেলাও সম্ভব। তবে পোস্তোর সঙ্গে মনে করে Lavender এবং লেমন এসেনসিয়াল তেল মেশাতে ভুলবেন না যেন! কীভাবে তৈরি করতে হবে এই সাবানটি? ৯০০ গ্রাম দুধ দিয়ে তৈরি সাবানের বেস থেকে ৪৫০ গ্রাম নিয়ে প্রথমে গলিয়ে নিন। এবার তাতে দশ-পনেরো ড্রপ lavender essential oil এবং ১ চামচ পোস্ত মিশিয়ে ভাল করে নাড়িয়ে নিয়ে ছাঁচে ঢেলে ফেলুন। এক ঘন্টা পরে বাকি ৪৫০ গ্রাম সাবানের বেস একই ভাবে গলিয়ে নিয়ে তাতে দশ ড্রপ lemon essential oil মিশিয়ে ভাল করে নাড়িয়ে নিয়ে সেই মিশ্রণটি, ল্যাভেন্ডার তেল এবং পোস্ত মিশিয়ে তৈরি মিশ্রণের উপর ঢেলে নিন। এবার ছাঁচটা ঘন্টা দুয়েক ঠান্ডা জায়গায় রেখে দিতে হবে। সময় হয়ে গেলে ছাঁচ থেকে সাবনগুলি সংগ্রহ করে ব্যবহার করুন।
১০| টি-ট্রি তেল এবং চারকোল দিয়ে তৈরি সাবান (Charcoal and Tea Tree Oil Soap)
এই সাবানটি তৈরি করতে প্রয়োজন পড়বে চামচ চারেক রেড়ির তেল, চামচ দশেক নারকেল তেল, কুড়ি চামচ অলিভ অয়েল, চামচ দশেক পাম তেল, চামচ আটেক লাই (Lye), কুড়ি চামচ মিনারেল ওয়াটার, চামচ তিনেক টি-ট্রি তেল এবং চামচ দুয়েক অ্যাকটিভেটেড চারকোল। সবকটি উপাদান হাতের কাছে নিয়ে আসার পরে একটা বাটিতে পরিমাণ মতো জল নিয়ে তাতে লাইটা মিশিয়ে মিনিট খানেক ভাল করে নাড়াতে হবে, যাতে লাইটা জলের সঙ্গে ঠিক মতো মিশে যেতে পারে। এবার আরেকটা বাটিতে প্রতিটা তেল মিশিয়ে নিয়ে সেই মিশ্রণটি লাইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে ততক্ষণ নাড়াতে হবে, যতক্ষণ না মিশ্রণটি থকথকে হচ্ছে। এমনটা হওয়া মাত্র তাতে চামচ দুয়েক চারকোল মিশিয়ে ক্রমাগত নাড়াতে থাকুন, যাতে করে চারকোলটা ঠিক মতো মিশে যাওয়ার সুয়োগ পায়। এবার পরিমাণ মতো টি-ট্রি তেল মিশিয়ে মিনিট দেড়েক নাড়িয়ে নিয়ে মিশ্রণটি ছাঁচে ঢেলে দিন তিনেক রেখে দিতে হবে। যখন দেখবেন মিশ্রণটা ঠিক মতো জমে গেছে, তখন ছাঁচ থেকে বের করে নিতে পারেন।
POPxo Recommends: Old Tree Tea Tree Essential Oil
১১| সানফ্লাওয়ার অয়েল সোপ (Sunflower Oil Soap)
একটা পাত্রে দশ চামচ মিনারেল ওয়াটার নিয়ে তার সঙ্গে চামচ পাঁচেক লাই (lye) মিশিয়ে ধীরে ধীরে মিনিটপাঁচেক নাড়াতে হবে, যাতে লাইটা জলের সঙ্গে ঠিক মতো মিশে যেতে পারে। এবার এই মিশ্রণটা মিনিটকুড়ি রেখে দেওয়ার পরে তাতে এক চামচ পাতিলেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে মিনিট দেড়েক নাড়িয়ে সেই মিশ্রণটি আলদা করে রেখে দিন। এর পরের ধাপে একটা পাত্রে ৫০-৬০ গ্রাম কোকো বাটার নিয়ে ধিমে আঁচে গলিয়ে নেওয়ার পরে তাতে দশ চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে কয়েক মিনিট রেখে দেওয়ার পরে তাতে এক এক করে চামচ দশেক অলিভ অয়েল, চার চামচ Rice Bran Oil, চামচ পাঁচেক সানফ্লাওয়ার অয়েল মিশিয়ে ভাল করে নাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর এই তেলের মিশ্রণে আগে থেকে তৈরি করে রাখা লাইয়ের মিশ্রণটি মিশিয়ে মিনিট দেড়েক নাড়াতে হবে, তাতে করে প্রতিটি উপাদান ঠিক মতো মিশে যাবে। এবার কয়েক ড্রপ এসেনশিয়াল তেল মেশানোর পরে মিশ্রণটি ছাঁচে ঢেলে নিয়ে ঢাকা দিয়ে দিতে ভুলবেন না। এক দিন পরে ঢাকাটা সরিয়ে আরও দিন তিনেক রেখে দিন। তারপর ছাঁচ থেকে সাবানগুলি সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে পারেন।
১২| টি সোপ (Tea Soap)
এক্কেবারে ঠিক শুনেছেন। চা দিয়েও কিন্তু সাবান তৈরি করা যায়। আর তার জন্য প্রয়োজন পড়বে দুটো টি ব্যাগ, সঙ্গে ২৫০ গ্রাম সাবানের বেস, ১ চামচ পছন্দের এসেনশিয়াল তেল এবং হাফ চামচ orange essential তেলের। সবকটি উপাদান সংগ্রহ করার পরে সাবানের বেসটা ছোট ছোট টুকরো করে নিয়ে সেগুলি একটা কাঁচের বাটিতে নিয়ে চড়া আঁচে গলিয়ে ফেলতে হবে। এই সময় প্রতি তিরিশ সেকেন্ড অন্তর অন্তর সাবানের বেসটা নাড়াতে ভুলবেন না যেন! যখন দেখবেন সাবানের বেসটা পুরোপুরি গলে গেছে, তখন এক এক করে এসেনশিয়াল তেলগুলি মিশিয়ে ভাল করে নাড়াতে হবে। মিনিটদশেক নাড়ানোর পরে দুটো টি ব্যাগ থেকে সংগ্রহ করা চা পাতা মিশিয়ে আরেকবার ভাল ভাবে নাড়াতে হবে। মিনিটপাঁচেক নাড়িয়ে নিয়ে মিশ্রণটি ছাঁচে ঢেলে নিয়ে অল্প করে চা পাতা ছড়িয়ে দিতে ভুলবেন না যেন! এই অবস্থায় মিশ্রণটি দিন দুয়েক রেখে দিতে হবে। যখন দেখবেন মিশ্রণটা একেবারে জমে গেছে, তখন জানবেন আপনার সাবান তৈরি হয়ে গেছে।
১৩| লেমন গ্রিন টি সোপ (Lemon Green Tea Soap)
সাবনটা তৈরি করতে প্রয়োজন পড়বে ৪০০ গ্রাম গ্লিসারিন সোপ বেস, ২ চামচ গ্রিন টি এবং ৩/৪ চামচ লেমন এসেনশিয়াল তেলের। একেবারে প্রথমেই সাবানের বেসটা ছোট ছোট টুকরো করে নিয়ে গলিয়ে ফেলতে হবে। এই সময় প্রতি তিরিশ সেকেন্ড অন্তর অন্তর সাবানের বেসটা নাড়াতে ভুলবেন না যেন! যখন দেখবেন সাবানটা একেবারে তরলে পরিণত হয়েছে, তখন তাতে পরিমাণ মতো গ্রিন টি এবং lemon essential oil মিশিয়ে মিনিটদশেক নাড়াতে হবে। ভাল করে নাড়িয়ে নেওয়ার পরে মিশ্রণটি ছাঁচে ঢেলে নিয়ে ততক্ষণ রেখে দিতে হবে, যতক্ষণ না তা ঠিক মতো জমে যাচ্ছে।
১৪| ভ্যানিলা সোপ (Vanilla Soap)
২০০-২৫০ গ্রাম দুধের সোপ বেস নিয়ে তা ছোট ছোট টুকরো করে ধীমে আঁচে গলিয়ে নিয়ে তাতে কয়েক ড্রপ vanilla essential oil এবং হাফ কাপ কফি মিশিয়ে ভাল করে নাড়িয়ে নিন। এই সময় অল্প করে কফি পাউডারও যোগ করতে পারেন। এবার মিশ্রণটা ছাঁচে ফেলে ঘন্টা খানেক রেখে দিলেই সাবান তৈরি হয়ে যাবে।
১৫| লেমন সোপ (Lemon Soap)
সাবানের বেসের খান দশেক টুকরো একটা বড় বাটিতে নিয়ে গলিয়ে নিন। এই সময় ১০-১৫ সেকেন্ড অন্তর অন্তর নাড়াতে হবে কিন্তু! যখন দেখবেন সাবানের বেসটা পুরোপুরি গলে গেছে, তখন আঁচটা বন্ধ করে দিয়ে তাতে কয়েক ড্রপ lemon essential oil এবং চামচ চারেক লেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে মিনিটপাঁচেক নাড়িয়ে নিতে হবে। প্রতিটি উপাদান ভাল করে মিশে যাওয়ার পরে মিশ্রণটা ছাঁচে ফেলে এক ঘন্টা রেখে দিলেই সাবান তৈরি হয়ে যাবে।
১৬| পিপারমেন্ট সোপ (Peppermint Soap)
এই সাবানটি তৈরি করতে প্রয়োজন পড়বে ৩০০ গ্রাম দুধ দিয়ে তৈরি সাবানের বেস, চামচ তিনেক পিপারমেন্ট এসেনশিয়াল তেল এবং রঙের। প্রতিটি উপাদান জোগাড় করার পরে সাবানের বেসটা ছোট ছোট টুকরো করে নিয়ে ধীমে আঁচে গলিয়ে নিন। এই সময় তিরিশ সেকেন্ড অন্তর অন্তর সাবানটা নাড়াতে ভুলবেন না যেন! যখন বুঝবেন সাবানের বেসটা ঠিক মতো গলে গেছে, তখন তাতে ১৫-২০ ড্রপ peppermint essential oil এবং অল্প করে রং মিশিয়ে ভাল করে নাড়িয়ে থাকুন। মিনিট দেড়েক নাড়িয়ে নেওয়ার পরে মিশ্রণটা ছাঁচে ঢেলে নিয়ে ডিপ ফ্রিজে মিনিটকুড়ি রেখে দিন। তারপর ছাঁচ থেকে সাবানগুলি সংগ্রহ করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
১৭| সাইট্রাস সোপ (Citrus Soap)
‘সাইট্রাস’ সোপটা কী জিনিস? পাতিলেবু, কমলা লেবু এবং মৌসম্বি লেবু হল সাইট্রাস ফল। এই ফলগুলির কোনও একটি দিয়েও সাবান তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে যে কোনও একটা ফল কয়েক টুকরো করে ভাল করে শুকিয়ে নিন। তারপর ২৫০-৩০০ গ্রাম সাবানের বেস গলিয়ে নিয়ে তাতে অল্প করে citrus essential oil মিশিয়ে নিন। এবার ছাঁচের মধ্যে শুকিয়ে যাওয়া ফলের টুকরোগুলো রেখে তার উপরে মিশ্রণটা ঢেলে নিয়ে ছাঁচটা ঘন্টা খানেক রেখে দিন। যখন দেখবেন মিশ্রণটা ঠিক মতো শুকিয়ে গেছে, তখন সাবানগুলি ছাঁচ থেকে বের করে ব্যবহার করতে পারেন।
১৮| মাল্টি কালার সোপ (Multicolor Soap)
একটা পাত্রে চামচ ছয়েক মিনারেল ওয়াটার নিয়ে তাতে ৮৪ গ্রাম লাই (lye) মিশিয়ে ভাল করে নাড়িয়ে নিন, যাতে লাইটা জলের সঙ্গে ঠিক মতো মিশে যেতে পারে। এবার আরেকটা পাত্রে ১৮০ গ্রাম নারকেল তেল, ১২০ গ্রাম shea butter, ২৬ গ্রাম রেড়ির তেল এবং ৩০ গ্রাম তিল তেল মিশিয়ে হলকা আঁচে মিনিট খানেক গরম করে নিন। যখন দেখবেন কোকো বাটারটা পুরোপুরি গলে গেছে, তখন আঁচটা বন্ধ করে মিশ্রণটা ঠান্ডা করে নিয়ে সেটা লাইয়ের মিশ্রণের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলুন। এর মিনিটপাঁচেক বাদে পছন্দের যে কোনও এসেনশিয়াল তেল মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি ছাঁচে ঢেলে এক দিন রেখে দিন, তাহলেই সাবান তৈরি হয়ে যাবে।
১৯| নানা ধরনের তেল দিয়ে তৈরি সাবান (Soap Using Different Types of Oils)
এই সাবানটা তৈরি করতে প্রয়োজন পড়বে আড়াই কাপ নারকেল তেল, কাপ দুয়েক অলিভ অয়েল, চামচ দশেক Rice bran oil, সম পরিমাণ অ্যাভোকাডো তেল, চামচ আটেক রেড়ির তেল, দশ চামচ Shea butter, সম পরিমাণ বাদাম তেল, চামচ দশেক লাই (Lye) এবং আড়াই কাপ ঠান্ডা দুধ। এখন প্রশ্ন হল, সাবানটা তৈরি করতে হবে কীভাবে? একটা পাত্রে দুধ, লাই, অল্প পরিমাণ জল এবং পরিমাণ মতো বরফের টুকরো নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার আরেকটা পাত্রে তেলগুলো নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে সেই মিশ্রণটা লাইয়ের মিশ্রণের সঙ্গে মিশিয়ে আরও মিনিটদশেক ভাল করে নাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণটা ছাঁচে ঢেলে নিয়ে দিন দুয়েক রেখে দেওয়ার পরে ছাঁচ থেকে সাবানগুলি বের করে নিতে ভুলবেন না।
২০| লাই ফ্রি সোপ (Lye Free Soap)
ইচ্ছা হলে ক্ষার জাতীয় কোনও উপাদান না মিশিয়েও সাবান তৈরি করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি কোনও সাবান গ্রেট করে নিয়ে সেই টুকরোগুলো একটা বাটিতে সংগ্রহ করে, তাতে চামচ পাঁচেক জল মিশিয়ে হালকা আঁচে জলটা গরম করতে হবে। তাতে করে সাবানটা একেবারে গলে যাবে। এবার আঁচটা বন্ধ করে সেই মিশ্রণে পছন্দ মতো যে কোনও একটা এসেনসিয়াল তেল মিশিয়ে মিনিটপাঁচেক নাড়িয়ে নিয়ে মিশ্রণটি ছাঁচে ঢেলে নিয়ে কম করে এক দিন রেখে দিতে হবে, তাহলেই সাবান তৈরি হয়ে যাবে।
এই নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর (FAQs)
১| সাবান তৈরির সময় কি যে কোনও ধরনের এসেনসিয়াল তেল ব্যবহার করা যায়?
অবশ্যই করতে পারেন। তরল সাবানের বেসে নিজের পছন্দ মতো যে কোনও ধরনের এসেনশিয়াল তেল মিশিয়ে সাবান তৈরি করতে পারেন। ইচ্ছা হলে একসঙ্গে একাধিক তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে।
২| সাবান তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানগুলি কোথায় কিনতে পাওয়া যাবে?
ইচ্ছা হলে অনলাইন স্টোর থেকে যেমন কিনতে পারেন, তেমনই যে কোনও সুপার মার্কেটে গেলেও খোঁজ পেয়ে যাবেন।
৩| শুনেছি ছাগলের দুধও নাকি সাবান তৈরি করা যায়?
এক্কেবারে ঠিক শুনেছেন। ছাগলের দুধ বা এই দুধ ব্যবহার করে তৈরি সাবানের বেসকে কাজে লাগিয়ে দারুন সব সাবান তৈরি করা সম্ভব।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo-র স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…