একটি বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করে সুচরিতা। আর ওর বর অবিনাশ একটি নামকরা মিডিয়া হাউসের চিফ রিপোর্টার। ফলে দু’জনের সময়ের কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। এমনকি উইকেন্ডেও সে ভাবে সময় থাকে না ওদের। যার জন্য অসুবিধায় পড়ে ওদের সাত বছরের মেয়ে ঝিমলি। ও ওর বাবা-মাকে পায় না। আর একসঙ্গে পেলেও হয়তো বছরে এক-আধ বার। এমনকি পুজো-অনুষ্ঠান- সব কিছুতে একই ছবি। বাবার ব্যস্ততা তখন তুঙ্গে। ঝিমলি লক্ষ্য করেছে, পেরেন্ট-টিচার মিটিংয়ে সবার বাবা-মা আসে, আর বাবা-মা যেতে না পারলেও বাড়ির কেউ না কেউ আসেন। কিন্তু ওর বাবা-মা কেউ আসে না। বাবা স্কুলে ফোন করে সবটা জেনে নেয়। স্বাভাবিক ভাবেই ওর মনটা খারাপ হয়ে যায়। ওর তো ঠাম্মা-ঠাকুরদা আর দিম্মা-দাদু কেউ কলকাতায় থাকেন না। ফলে ও-কে সঙ্গ দেওয়ার কেউ নেই। ওর ন্যানি রয়েছে, তিনিই দেখভাল করেন। ব্যস! ওইটুকুই। ঝিমলির আর রূপকথার গল্প শুনে ওঠা হয় না। খুবই একা লাগে ওর। অবশ্য একমাত্র মেয়ের মনের হদিস পায় না অবিনাশ-সুচরিতা। তারা ভাবে, কোনও কিছুরই তো অভাব রাখেনি ঝিমলির। দামী দামী খেলনা, দামী জামাকাপড়। আর কী চাই! কিন্তু ওই দম্পতি বুঝে উঠতে পারে না যে, ঝিমলি শুধু বাবা-মাকেই চায়। দামী খেলনা-দামী চকলেট চায় না। এ ভাবে চলতে চলতে ভয়ঙ্কর ডিপ্রেশনের শিকার হয় ঝিমলি। এটা শুধু ঝিমলির গল্প নয়। আরও অনেকেই এরকম একাকীত্বে ভুগছে। একে বাবা-মায়ের চাকরি আর নিউক্লিয়ার পরিবার (Nuclear Family), তার উপর পড়াশুনার চাপ। এ ভাবেই অনেক সম্ভাবনাময় কুঁড়িই বিকশিত হওয়ার আগেই ডিপ্রেশনের অতলে তলিয়ে যায়। আবার অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। তাই সন্তানকে ভালোভাবে বড় করতে মা বাবার কোন জিনিস গুলো মাথায় রাখা উচিত আজকের এই প্রতিবেদনে রইল কয়েকটি সেরকমই টিপস।
আরও পড়ুনঃ পরিবার নিয়ে কিছু ভালবাসার কোটস
নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে ছেলেমেয়েদের বড় করাটা (Benefits Of A Nuclear Family) যেন একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে বাবা-মায়েদের কাছে। তার জন্য কয়েকটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রেখে চলতে হবে –
সব সময় একটা বিষয় মনে রাখবেন, আপনার সন্তানের (Children) সব থেকে আগে প্রয়োজন আপনাকেই। তাই কেরিয়ারের থেকে সময় বাঁচিয়ে হলেও সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। খবর নিতে হবে ছেলেমেয়ের পড়াশুনার বিষয়েও। ছুটির দিনগুলোতে সন্তানকে নিয়ে বেড়িয়ে আসুন কাছেপিঠে কোথাও। আজকাল প্রায় সবই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি (Nuclear Family)। তাই দাদু-ঠাকুরমাদের সে ভাবে পায় না বাচ্চারা। ফলে আরও একাকীত্বে ভোগে। তাই সময় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদের মনের কথা জানতে হবে। বয়ঃসন্ধির সময় ওদের মনে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসবে। আর আপনাকে জিজ্ঞেস করলে কোনও রকম রাখঢাক না করেই সন্তানের প্রশ্নের জবাব দিন।
আজকাল তো পড়াশোনার চাপ আছেই। তার সঙ্গে তো রয়েছে এক্সট্রা ক্যারিকুলামও। যার জেরে বাচ্চাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। খেলার সময় তো নেইই। স্কুলের বাইরেও যাতে ওরা ওদের সমবয়সিদের সঙ্গে খেলাধুলো করতে পারে, সেই দিকটাও দেখতে হবে। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা করলেই তো ওদের একাকীত্বও কাটবে আর ওদের মানসিক বিকাশও সম্ভব হবে।
আপনি তো সব সময় ল্যাপটপে ব্যস্ত। বাড়িতে থাকলেও অফিসের কাজ, ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপ চলতেই থাকে। সেই বিষয়টাও কিন্তু আপনার বাচ্চার উপরও প্রভাব ফেলে। যার ফলে একাকীত্ব কাটাতে ওরাও মোবাইল আর ইন্টারনেটে অ্যাডিক্টেড হয়ে যায়। আজকাল প্রায় সব বাচ্চাই ফোনে গেম খেলতে ভালবাসে আর ইউটিউবে নানা রকম ভিডিও দেখতে ভালবাসে। সেখান থেকেও অনেক সময় প্রভাব পড়ে ওদের মনের উপর। তাই ওদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যেস তৈরি করতে হবে। আর ছোট থেকে আপনিও ওকে নানা রকম গল্প শুনিয়ে বড় করুন। তাতে ওরও গল্পের বই পড়ার অভ্যেস তৈরি হবে। ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস সে ভাবে ওদের হাতে না দেওয়াই ভাল! নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে (Nuclear Family) তা-ও যদি দাদু-ঠাম্মারা থাকেন, তা হলে কিছুটা হলেও একাকীত্ব কাটে ওদের।
আপনি হয়তো সন্তানকে সময় দিতে পারছেন না। আর সেই অভাবটা পূরণ করতে আপনি সন্তানের বায়না ও অন্যায় আবদারগুলো মেনে নিচ্ছেন। অথবা না-চাইতেই দামী দামী গিফট এনে হাজির করছেন। এতে কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে আপনার সন্তানটির (Children)। তাই সন্তানের অন্যায় আবদার বা জেদ মেনে না নিয়ে যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই দেওয়ার চেষ্টা করুন।
গোটা ব্যাপারটাই আসলে ব্যালান্সের খেলা। মা-বাবাকে সবসময় চেষ্টা করে যেতে হবে যাতে নিজের কেরিয়ার, সংসার এবং বাচ্চা – এই তিনটি জিনিসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে। মনে রাখবেন, সন্তান মানুষ করাটাও কিন্তু আপনারই আরেকটা পরীক্ষা আর এই পরীক্ষায় আপনাকে উত্তীর্ণ হতেই হবে!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন