ত্বকের যে একাধিক স্তরের মধ্যে অন্যতম হল “ডার্মাল লেয়ার”, যা কোনও কারণে যদি প্রসারিত হয়ে যায়, তাহলেই স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Marks) প্রকাশ পেতে শুরু করে। আর এমন হলে সৌন্দর্য কমতে যে একেবারেই সময় লাগে না তা তো বলাই বাহুল্য। তাছাড়া কোমর, থাই,লোয়ার ব্যাক এবং হিপ সহ শরীরের নানা জায়গায় এমন দাগ প্রকাশ পেতে শুরু করলে কারই বা ভালো লাগে বলো! তার উপর কোনওভাবে যাতে লোক সমাজে এমন সব দাগ প্রকাশ পেয়ে না যায়, সেই ভয়ও তো থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন অনেকে। কিন্তু প্রশ্ন হল এমন ধরনের দাগ প্রকাশ পায় কেন?
আরো পড়ুনঃ অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করার পদ্ধতি
ঘরোয়া উপায়ে স্ট্রেচ মার্ক দূর করুন
স্ট্রেচ মার্ক নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর
স্কিনের ডার্মিস লেয়ার যখন প্রসারিত হয়ে যায় তখন ধীরে ধীরে ব্লাড ভেসেল প্রকাশ পেতে শুরু করে। তাই তো প্রথম দিকে স্ট্রেচ মার্কে এর (Stretch Mark) রং লাল বা বেগুনী রঙের হয়ে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে ব্লাড ভেসেল যখন ছোট হতে শুরু করে, তখন রং বদলে যায় এবং মোটা দাগ প্রকাশ পায়। আর তখনই দেখতে বেশ খারাপ লাগে।
সাধারণত যে যে কারণে স্ট্রেচ মার্ক (Causes Of Stretch Mark) প্রকাশ পেয়ে থাকে, সেই কারণগুলি হল…
গর্ভাবস্থাতেই (Pregnancy) সাধারণত বেশিরভাগ মহিলার শরীরে স্ট্রেচ মার্ক প্রকাশ পেতে শুরু করে। কারণ গর্ভ ধারণের কারণে স্বাভাবিকভাবেই পেটের আশেপাশের অংশ এতটাই প্রসারিত হয়ে যায় যে পেট, থাই এবং ব্রেস্টের আশেপাশে স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Mark) প্রকাশ পেতে শুরু করে, যা প্রসবের পরেও কমে না।
শরীরের ইতিউতি মেদ জমতে শুরু করলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিন স্ট্রেচ হতে শুরু করে। ফলে দাগ প্রকাশ পেতে সময় লাগে না। তবে ওজন বাড়ার (Weight Gain) কারণেই যে সব সময় স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Mark) দেখা দেয়, তা নয়। অনেক সময় ডায়েট করার কারণে হঠাৎ করে মেদ ঝরতে শুরু করে, যে কারণেও অনেক সময় সারা শরীরে এমন ধরনের দাগ প্রকাশ পায়।
বাবা-মায়ের যদি স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Mark) থাকে, তাহলে জিনগত কারণেও অনেক সময় বাচ্চাদের শরীরে এমন ধরনের দাগ দেখা দেয়।
নিয়মিত শরীরচর্চা (Regular Exercise) করলেও কিন্তু স্ট্রেচ মার্ক প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। কারণ এক্সারসাইজ করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই দেহের গঠনে পরিবর্তন আসতে শুরু করে, আর এমনটা হলে স্কিন স্ট্রেচ হয়। ফলে স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Mark) প্রকাশ পেতে সময় লাগে না।
এখন প্রশ্ন হল এমন দাগ দূর করার কোনও উপায় আছে নাকি? আছে বৈকি! তবে তার জন্য কতগুলি ঘরোয়া টোটকার (Home Remedies) উপর ভরসা রাখতে হবে, যে সম্পর্কে বাকি প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। তাই তো বলি, একই সমস্যার কারণে যদি আপনিও চিন্তায় থাকেন, তাহলে বাকি লেখাটা পড়ে ফেলতে দেরি করবেন না যেন!
চটজলদি স্ট্রেচ মার্ক মিলিয়ে যাক এমনটা যদি চান, তাহলে যে যে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলিকে (Stretch Mark Home Remedies) কাজে লাগাতে হবে, সেগুলি হল…
স্ট্রেচ মার্ক দূর করার উপায় (Stretch Mark) অ্যালো ভেরা জেলের (Aloe Vera Gel) কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো অ্যালো ভেরা জেল নিয়ে তাতে ৫ টা ভিটামিন এ ক্যাপসুলে থাকা তেল এবং ১০ টা ভিটামিন ই ক্যাপসুলে থাকা তেল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই পেস্টটি স্ট্রেচ মার্ক এর (Stretch Mark) উপরে লাগিয়ে ততক্ষণ মাসাজ করতে হবে, যতক্ষণ না মিশ্রণটি একেবারে শুকিয়ে যায়। নিয়মিত এইভাবে ত্বকের পরিচর্যা করলে ত্বকের ভিতরে কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যায়, যে কারণে এমন দাগ মিলিয়ে যেতে সময় লাগে না।
আরও পড়ুনঃ ত্বক ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা
হাফ কাপ কেকো বাটারের সঙ্গে ১ চামচ ভিটামিন ই অয়েল মিশিয়ে তৈরি পেস্ট, স্ট্রেচ মার্ক এর (Stretch Mark) উপর লাগিয়ে নিয়মিত মাসাজ করা শুরু করলে ফল মিলতে সময় লাগে না। কারণ কোকো বাটার (Cocoa Butter) একদিকে যেমন ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতাকে ফিরিয়ে আনে, তেমনি ড্য়ামেজ স্কিন সেলের চিকিৎসাও শুরু করে দেয়। ফলে স্কিন সুন্দর হয়ে উঠতে সময় লাগে না।
এখন প্রশ্ন হল এমন সব উপকার পেতে কতবার এই মিশ্রণ লাগাতে হবে? বিশেষজ্ঞদের মতে দিনে ২-৩ বার যদি এই পেস্ট, স্ট্রেচ মার্ক এর (Stretch Mark) উপর লাগানো যায়, তাহলে উপকার পেতে সময় লাগে না।
লেবুতে উপস্থিত অ্যাসিড একদিকে যেমন ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত কোষের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে, তেমনি অন্যদিকে শসার রস ত্বককে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তাই তো স্ট্রেচ মার্ক এর (Stretch Mark) চিকিৎসায় এই দুই প্রাকৃতিক উপাদানকে কাজে না লাগালেই নয়! এক্ষেত্রে সম পরিমাণে শসার রস এবং লেবুর রস নিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। তার সেই মিশ্রণটি তুলোর সাহায্যে ধীরে ধীরে লাগিয়ে ফেলতে হবে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ পাওয়া নানা দাগের উপরে। তারপর ১০ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে দেখবেন ফল মিলবে একেবারে হাতে-নাতে!
চটজলদি স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Mark) মিলিয়ে যাক এমনটা যদি চান, তাহলে ত্বকের পরিচর্যায় বাদাম তেল এবং নারকেল তেলের মিশ্রণ লাগাতে ভুলবেন না যেন! এক্ষেত্রে সম পরিমাণে বাদাম এবং নারকেল নিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেটা ত্বকের উপর লাগিয়ে ভালো করে মাসাজ করতে হবে। এমনটা নিয়মিত করলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!
এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে রয়েছে বিশেষ কিছু উপকারী অ্যাসিড, যা ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করা মাত্র স্কিন সেলের উৎপাদন বাড়তে শুরু করে। ফলে শুধু স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Mark Removal Oil) নয়, যে কোনও ধরনের দাগ মিলিয়ে যেতেই সময় লাগে না। এখন প্রশ্ন হল, এমন উপকার পেতে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে রেড়ির তেলকে (Castor Oil)?
এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো তেলটি নিয়ে তা হালকা গরম করে স্ট্রেচ মার্ক এর (Stretch Mark) উপর লাগিয়ে ভালো করে মাসাজ করতে হবে। প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে যদি এইভাবে তেল মালিশ করতে পারেন, তাহলে ফল মিলতে দেখবেন একেবারেই সময় লাগবে না।
এই সবজিটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় উপকারী স্টার্চ এবং এনজাইম, যা ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করা মাত্র এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে প্রায় সব ধরনের দাগ মিলিয়ে যেতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে স্কিন টোনের উন্নতিও ঘটে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো আলুর রস (Home Remedies) নিয়ে শরীরের যেখানে যেখানে দাগ রয়েছে সেখানে নিয়মিত লাগিয়ে মাসাজ করতে হবে। ততক্ষণ মালিশ করতে হবে, যতক্ষণ না আলুর রসটা একেবারে শুকিয়ে যায়। এমনটা করলেই দেখবেন উপকার মিলছে।
এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বককে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর ত্বক যখন ভিতর থেকে সুন্দর হয়ে ওঠে, তখন যে কোনও কোনও ধরনের দাগই মিলিয়ে যায়।
এখন প্রশ্ন হল স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Mark Removal Oil) দূর করতে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে অলিভ অয়েলকে? এমন উপকার পেতে প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে অল্প করে অলিভ অয়েল নিয়ে তা হালকা গরম করে নিতে হবে। তারপর সেই তেল, স্ট্রেচ মার্কের উপর লাগিয়ে ভালো করা মাসাজ করতে হবে যাতে তেলটা ত্বকের একেবারে ভিতর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। স্ট্রেচ মার্ক দূর করার উপায় গুলির মধ্যে এটি বেস্ট। এইভাবে নিয়মিত দিনে দুবার মাসাজ (Home Remedies) করলেই ফল মিলবে একেবারে হাতে-নাতে!
পরিমাণ মতো কফি গুঁড়ো নিয়ে তাতে জল মিশিয়ে একটা থকথকে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্ট, স্ট্রেচ মার্ক এর (Stretch Mark) উপর লাগিয়ে ধীরে ধীরে ঘোষতে হবে। কম করে ৩ মিনিট মাসাজ করার পর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে পেস্ট। এইভাবে নিয়মিত যদি এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারো, তাহলে স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Mark) মিলিয়ে যেতে একেবারেই বেশি সময় লাগবে না। আসলে কফিতে (Coffee) রয়েছে ক্যাফিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করা মাত্র রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়, যে কারণে দাগ মিলিয়ে যায় নিমেষে।
স্ট্রেচ মার্ক এর (Stretch Mark) কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে ত্বকের পরিচর্যায় বাদাম তেলকে (Almond Oil) কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন! আসলে এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই, যা স্কিন সেলের মেরামতি করার মধ্যে একদিকে যেমন ত্বককে সুন্দর করে তোলে, তেমনি যে কোনও ধরনের দাগও মিলিয়ে যায়। সেই সঙ্গে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটে চোখে পড়ার মতো।
এমন সব উপকার পেতে পরিমাণ মতো বাদাম তেল নিয়ে তাতে নিজের পছন্দের যে কোনও এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিন। তারপর সেটি হালকা গরম করে স্ট্রেচ মার্ক এর (Stretch Mark) উপর লাগিয়ে কিছু সময় মাসাজ করুন। এমনটা দিনে দুবার করলেই দেখবেন উপকার মিলতে শুরু করেছে।
১ চামচ চিনির সঙ্গে কয়েক ড্রপ বাদাম তেল এবং অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট (Home Remedies) বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণ, শরীরের যেখানে যেখানে দাগ রয়েছে, সেখানে লাগিয়ে কম করে ৮-১০ মিনিট ঘষতে হবে হবে। সময় হয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে মিশ্রণটা। এইভাবে প্রত্যেক দিন ত্বকের পরিচর্যা করলেই ত্বকের উপরি অংশে জমতে থাকা মৃত কেষের স্তর সরে যাবে। সেই সঙ্গে শরীরের এই বিশেষ অংশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ এতটাই বেড়ে যাবে যে স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Mark) দূর হবে নিমেষে।
চটজলদি মিলিয়ে যাক স্ট্রেচ মার্ক (Stretch Mark), এমনটা যদি চান, তাহলে ২ টো ডিমের কুসুম নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো লেবুর রস, ২ চামচ ওটসমিল, ২ চামচ বাদামের পেস্ট এবং পরিমাণ মতো দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেই মিশ্রণটি ধীরে ধীরে স্ট্রেচ মার্কের উপর লাগিয়ে ততক্ষণ অপেক্ষা করুন, যতক্ষণ না তা একেবারে শুকিয়ে যায়। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। একদিন অন্তর একদিন এই স্কিন মাস্কটি (Skin Mask) ব্যবহার করা শুরু করলে দেখবেন উপকার মিলতে একেবারে সময়ই লাগবে না।
১| প্রেগন্যান্সির কারণে হওয়া স্ট্রেচ মার্ক কি বাকি স্ট্রেচ মার্কের থেকে আলাদা হয়?
উ: আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্ট অনুসারে বাকি স্ট্রেচ মার্কের থেকে প্রেগন্যান্সির কারণে হওয়া স্ট্রেচ মার্ক একটু অন্য ধরনের হয়। তাছাড়া গর্ভাবস্থার কারণে মূলত পেট, কোমরের আশেপাশে এবং ব্রেস্টে স্ট্রেচ মার্ক প্রকাশ পেয়ে থাকে।
২| কখন স্ট্রেচ মার্ক প্রকাশ পায়?
উ: যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে ত্বকের ডার্মিস লেয়ার যখন হঠাৎ করে প্রসারিত হতে শুরু করে, তখনই মূলত এমন ধরনের দাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে।
৩| লাল,সাদা এবং বেগুনী স্ট্রেচ মার্কের মধ্যে পার্থক্য কী?
উ: আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রেচ মার্কের রং বদলে যেতে শুরু করে। প্রথম দিকে এমন ধরনের দাগ লাল রঙের হয়। তারপর ধীরে ধীরে রং বদলে কখনও সাদা, তো কখনও বেগুনী রং নেয়।
ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকার: YouTube,Wikipedia
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!