অক্সিজেন এবং জল ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, বুদ্ধি এবং মেধার বলে আমরা চাঁদ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছি ঠিকই। কিন্তু প্রতিনিয়ত অবুঝের মতো গাছ কেটে অক্সিজেনের ঘাটতির মাত্রা যেমন বাড়াচ্ছি, তেমনই অকারণ জলের অপচয় বাড়ার কারণে মাটির নিচে যে জলের মাত্রা ক্রমশ কমছে, তাও আমাদের গোচরে রয়েছে। তবু যে কেন জলের ঘাটতি মেটানোর কোনও প্রয়াস আমরা করছি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কারণ, পরিস্থিতি দিনে-দিনে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। একাধিক সমীক্ষার পরে একথা জলের (Water) মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এখন থেকেই যদি জলের খরচ বাঁচানোর দিকে নজর ফেরানো না হয়, তাহলে আগামী কয়েক বছরে মারাত্মক জলের ঘটতি দেখা দেবে। তখন হাজার-হাজার টাকা খরচ করেও কিন্তু জলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। তাই সাবধান হতে হবে এখন থেকেই। কীভাবে জলের অপচয় কম (How To Conserve Water) করবেন, তাই ভাঁবছেন নাকি? চিন্তা নেই বন্ধু! এক্ষেত্রে সহজ কিছু টিপস নিয়মিত মেনে চলতে হবে, তা হলেই দেখবেন সমস্যার সমাধান হতে সময় লাগবে না। তাই তো বলি, পরের প্রজন্ম যাতে জলের কষ্টে না ভোগে, তা যদি সুনিশ্চিত করতে হয়, তা হলে এখানে বলে দেওয়া টিপস (How To Save Water At Home) মেনে জলের অপচয় বন্ধ করুন।
জলের অপচয় কমানো প্রয়োজন কেন? (Why Water Conservation Is Important?)
১| জল (Water) ছাড়া জীবনের কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল মিষ্টি জলের যোগান যে হারে কমছে, তার থেকে দ্রুত হারে বাড়ছে জনসংখ্যা। ফলে যোগানের তুলনায় চাহিদা যে কয়েক গুণে বাড়ছে, তা আর বলার আপেক্ষা রাখে না। তাই তো এখন থেকেই যদি জলের অপচয় বন্ধ করা না যায়, তাহলে আগামী দিনে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে আমাদের। এই কারণেই সময় থাকতে থাকতে সাবধান হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
২| জল ছাড়া যেমন আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, তেমনই একই অবস্থা হবে বাকি প্রাণীদেরও। কমতে থাকবে বিরল প্রাণীর সংখ্যাও। তখন ইকো-সিস্টেমের উপর যে মারাত্মক খারাপ প্রভাব পড়বে, সে কারণে কিন্তু আমাদের জীবনযাত্রাও ব্যাহত হবে। তাই বুঝতেই পারছেন, জলের খরচ বাঁচানোর দিকে নজর ফেরানোটা কতটা প্রয়োজন।
৩| বিদ্যুতের খরচ কমবে। কারণ, জলের খরচ কমালে বারে বারে পাম্প চালানোর প্রয়োজন পড়বে না। ফলে ইলেকট্রিসিটি বাঁচবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে শহরাঞ্চলের প্রায় সিংহভাগ বাড়িতেই মোট যে পরিমাণ ইলেকট্রিসিটি খরচ হয়, তার প্রায় ৬.৫ শতাংশই খরচ হয়ে থাকে পাম্পের পিছনে। তাই জলের খরচ কমালে সেভিংস যে বাড়বে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
৪| চাষবাস করতেও জলের প্রয়োজন হয়। তাই জলের ঘাটতি বাড়তে থাকলে ঠিক মতো শস্যের উৎপাদন হবে না। ফলে চাহিদার তুলনায় খাবারের যোগান ঠিক মতো না হওয়ার কারণে বহু মানুষেরই যে প্রাণ যাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই বৃহত্তর স্বার্থে একটু সচেনত না হয়ে যে কোনও উপায় নেই বন্ধু!
জলের ঘাটতি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান (Water Scarcity In India)
১| ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের করা এক স্টাডিতে দেখা গেছে আমাদের দেশে প্রতি মুহূর্তে যেমন জলের অপচয় হয়, তেমনই নির্ধিধায় বহু মানুষ নদী এবং পুকুরের জল নোংরা করে থাকেন। ফলে সেই অপরিষ্কার জল খাওয়ার কারণে প্রতিদিন প্রায় কয়েকশো বাচ্চা ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। তাই বুঝতেই পারছেন, আমরা শুধু মিষ্টি জলের ঘাটতির মাত্রা বাড়াচ্ছি না, সেই সঙ্গে যেটুকু মিষ্টি জল (Water) মজুত রয়েছে সেই জলকে নোংরা করে পরিস্থিতিকে আরও ভয়ানক করে তুলছি। তাই নিজেদের স্বার্থে এবার থেকে নদী এবং পুকুরেরর জলকে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন, না হলে এমন দিন আসবে, যখন জলের অভাবে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না।
২| বিশেষজ্ঞদের মতে ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১.৬ বিলিয়ানে গিয়ে ঠেকবে, যে কারণে জলের ঘাটতির মাত্রা এতটাই বাড়বে যে সামাজিক অশান্তি দেখা দেবে। এমনকী, পানীয় জল সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে আগামী সময় Political Conflict দেখা দেওয়ার আশঙ্কাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাই যতটা সম্ভব পানীয় জলের অপচয় কম করুন।
৩| আমাদের দেশে মিষ্টি জলের ঘাটতি কতটা মিটবে, তা আনেকাংশেই নির্ভর করে বৃষ্টির উপরে। কারণ বৃষ্টি বেশি হলে নদীনালা জলে ভরে ওঠে। সেই সঙ্গে মাটির তলাতেও জলের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হয় গত দু’বছরে আমাদের দেশের বেশিরভাগ জায়গাতেই ভাল রকম বৃষ্টি হয়নি, যে কারণে দেশের প্রায় ৩৩০ মিলিয়ান মানুষ খরার খপ্পরে পরেছিলেন। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালে নীতি উদ্যোগের প্রকাশ করা The Composite Water Management Index অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ সহ এ দেশের প্রায় ২১ টা শহরে মাটির নিচের জলের মাত্রা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকবে, যার কুপ্রভাব পড়বে কম-বেশি প্রায় ১০০ মিলিয়ান ভারতবাসীর উপরে। তাই সময় থাকতে থাকতে সাবধান না হলে কিন্তু বিপদ!
৪| ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশ করা এক রিপোর্ট অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ জনে মধ্যে মাত্র এক জন মানুষ পরিষ্কার জল পান করতে পারেন। যার পিছনে মূল কারণ হল জলের ঘাটতি। আমাদের রাজ্যের বহু জেলাতেই জলস্তর যে বিপদ সীমার নিচে নেমে গেছে, সে প্রমাণও মিলেছে এই রিপোর্টে। শুধু তাই নয়, একই স্টাডিতে দেখা গেছে পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলে বসবাসরত মাত্র ৫৬ শতাংশ মানুষই পরিষ্কার জল (Drinking Water Nutrition Facts) খাওয়ার সুযোগ পান। দিনে দিনে পরিস্থিতি যে ভাবে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরে আমাদের যে কী হাল হবে, তা নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ার সময় এসে গেছে।
জল শক্তি অভিযান (Expedition Of Water)
দেশের প্রায় ২৫৬ টা জেলার প্রায় ১৫৯২ টা ব্লকে পরিষ্কার পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই বিশেষ উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে এই পরিকল্পনায় পাঁচটি বিষয়ে উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। যার অন্যতম হল, মিষ্টি জলের যোগান সুনিশ্চিত করতে গ্রামে গ্রামে নতুন করে পুকুর খোড়া হবে। সেই সঙ্গে Rainwater Harvesting-এর উপরও জোর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। শুধু তাই নয়, দেশের যে যে নদীগুলি পানীয় জলের চাহিদা মেটায়, সেই সব নদীর গভীরতা বাড়ানো এবং তাদের জল যাতে পরিষ্কার থাকে, সেদিকেও নজর (How To Conserve Water) দেওয়া হবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ গ্রামেই শৌচালয় নেই, যে কারণে নদী এব পুকুরের জল নোংরা হতে সময় লাগে না। এই বিষয়টিকেও জল শক্তি অভিযানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া এই পরিকল্পনাগুলি যদি সফল হয়, তাহলে যে সত্যিই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু যতদিন না সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন, ততদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র সরকারী উদ্যোগে কিন্তু সমস্যার একশো শাতংশ সমাধান মিলবে না। তাই সরকারের সঙ্গে আমাদেরও হাত মেলাতে হবে। সেই সঙ্গে জলের অপচয় বন্ধের উদ্দেশ্যে আরও সচেতন হতে হবে। তবেই কিন্তু বিপদ কাটবে।
জলের খরচ কমানোর নানা উপায় (Best Ways To Save Water)
সহজ কিছু টিপস (জলের অপচয় ও তার প্রতিকার) মেনে চললেই কিন্তু প্রচুর পরিমাণে জলের খরচ কমানো সম্ভব। তাই যাঁদের বাড়িতে প্রতিদিন ঠিক মতো জলের সাপ্লাই হয়, তাঁরা এই বিষয়গুলি মাথায় রাখতে ভুলবেন না যেন!
বাথরুমে জল খরচ করার সময় এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখুন (Tips To Save Water In The Bathroom)
১| স্নান করার সময় বালতিতে জল নিয়ে নিন –
চট করে শাওয়ার চালিয়ে স্নান সেরে নেওয়ার অভ্যাস অনেকেরই রয়েছে, যা র কারণ। কেন জানেন? কারণ, বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে শাওয়ার চালিয়ে স্নান করলে অনেক বেশি মাত্রায় জলের খরচ হয়। পরিবর্তে এক বালতি জলে স্নান সারলে কিন্তু জলের আপচয় কম মাত্রায় হয়। তাই কম পরিমাণে জল খরচ (How To Save Water) করতে যদি চান, তাহলে প্রথমেই শাওয়ার ছেড়ে বালতিতে জল (Water) নিয়ে স্নান করার অভ্যাস করুন।
২| ব্রাশ করার সময় কল বন্ধ রাখুন –
ব্রাশ করার সময় অকারণে কল খুলে রাখবেন না। তাতে বেশি মাত্রায় জল খরচ হবে। বরং ব্রাশ করা হয়ে গেলে তারপর কল খুলে মুখ ধুয়ে নিন। বাকি সময় যখন মুখ ধোবেন, তখনও একই নিয়ম মানার চেষ্টা করুন। তাতে জলের অপচয় একটু কম হবে।
৩| লিকেজ সারিয়ে নিন –
বাথরুমের কোন পাইপ বা কল থেকে টিপ টিপ করে জল পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তা সারিয়ে নিতে ভুলবেন না যেন! কারণ, বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে সামান্য লিকেজের কারণে সপ্তাহে প্রায় ১০৫ গ্যালন এবং বছরে প্রায় ৫৪৭৫ গ্যালন জল নষ্ট হতে পারে। একবার ভাবুন তো আপনার বাড়িতেই যদি বছরে এই পরিমাণ জল অকারণে নষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে সারা রাজ্যে কত পরিমাণ জল অপচয় হচ্ছে। তাই জলের ঘাটতি মেটানোর এই যুদ্ধে যদি আপনিও শরিক হতে চান, তাহলে ছোট ছোট লিকেজের দিকে নজর রাখতে ভুলবেন না যেন!
৪| ‘High-Efficiency’ টয়লেট ব্যবহার করুন –
হাই ফ্রিকুয়েন্সি টয়লেটে প্রতিটি ফ্লাশে কম-বেশি ১.২৮ গ্যালন জল খরচ হয়, যেখানে সাধারণ টয়েলেটে এর থেকে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি জল অপচয় হয়ে থাকে। কারণ, সাধরণ টয়েলেটের প্রতিটি ফ্লাশে ৩.৫ থেকে ৭ গ্যালন জল খরচ হয়। তাই জলের অপচয় বন্ধ করতে যদি চান, তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব পুরানো টয়লেট বদলে ফেলবেন।
৫| কম সময় স্নান করুন –
সমীক্ষা বলছে স্নান করার সময় প্রতি মিনিটে আমরা প্রায় ৭ গ্যালন জল খরচ করে থাকি। তাই আপনিই হিসেব করে দেখুন মিনিট দশেক স্নান করলে কত পরামণ জলের অপচয় হয়।
৬| টয়লেটকে ওয়েস্ট বাকেট হিসেবে ব্যবহার করাটা বোকামি –
অনেকেরই কমোডে সিগারেটের টুকরো বা নোংরা জিনিস ফেলে ফ্লাশ করার অভ্যাস রয়েছে, যা ত্যাগ করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ, কমোডকে যদি ওয়েস্ট বাকেট হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে বারে বারে ফ্লাশ করতে হবে। তাতে জলের খরচ বাড়বে বই কী!
৭| অত্যাধুনিক Faucet Aerator-এর ব্যবহার শুরু করুন –
এটা এমন এক ধরনের যন্ত্র, যা কলের মুখে লাগিয়ে দিলে অনেক পরিমাণে জল বেরবে না, তাতে জলের সাশ্রয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কল খোলা মাত্র প্রতি মিনিটে যেখানে ৩-৭ গ্যালন জল অকারণে খরচ হয়, সেখানে কলের মুখে Faucet Aerator লাগালে মিনিটে মাত্র ১.৫ গ্যালন জল খরচ হয়ে থাকে।
৮| বাথটবের ব্যবহার বন্ধ করুন –
গরমের দিনে বাথটবে চুবে থাকতে মন্দ লাগে না ঠিকই। কিন্তু কত পরিমাণ জল খরচ হয় জানেন? বেশ কিছু সমীক্ষা অনুসারে প্রায় ১০ মিনিট স্নান করলে যেখানে কম-বেশি ২৫ গ্যালন জল খরচ হয়, সেখানে বাথটব ভরাতে প্রায় ৩৫-৫০ গ্যালন জল অপচয় হয়।
রান্না ঘরে জলের অপচয় বন্ধের টিপস (Tips To Save Water In The Kitchen)
১| বাসন ধোয়ার সময় কল চালিয়ে রাখবেন না –
জলের অপচয় কিভাবে হয় জানেন? কল খুলে বাসন ধুলে প্রতি মিনিটে প্রায় ৪ গ্যালন জল খরচ হয়। সাবান দিয়ে প্রতিটা বাসন ভালো করে মাজা হয়ে গেলে এক বালতি পরিষ্কার জল নিয়ে তা দিয়ে বাসনগুলি ধুয়ে নিন। তাতে জল খরচ অনেকটাই কম হবে। তাই জলের অপচয় কমাতে (How To Save Water) চাইলে এমন বদঅভ্যাস ত্যাগ করাটা জরুরি।
২| একই জল বারে বারে ব্যবহার করুন –
অনেকের মতো আপনিও নিশ্চয় কল খুলে ফল-সবজি ধুয়ে থাকেন? এবার থেকে এমন ভুল আর করবেন না। বরং একটা বড় বাটিতে জল (Water) নিয়ে কাজটা সেরে ফেলুন। আর ফল-সবজি ধোয়া হয়ে গেলে সেই জলটা গাছের গোড়ায় ঢেলে দিন। তাতে গার্ডেনিং-এর সময় জল একটু কম খরচ হবে। সঙ্গে কমবে ইলেকট্রিসিটির বিলও।
৩| ভেবে-চিন্তে ডিশ ওয়াশার ব্যবহার করুন –
বাড়িতে কি ডিশ ওয়াশার রয়েছে? তাহলে একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। কী বিষয়? এক-দুটো বাসন ডিশওয়াশারে ধোবেন না। বরং যতক্ষণ না পর্যন্ত ডিশওয়া মেশিনটা বাসনে ভরে যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তাতে জল কম পরিমাণে খরচ হবে, সেই সঙ্গে ইলেকট্রিসিটি এবং ডিটারজেন্টের খরচও বাঁচবে।
৪| পাস্তা আর নুডলস রান্নার পরে জলটা ফেলে দেবেন না –
পরিবারে যদি চার-পাঁচ সদস্য থাকেন, তাহলে সবার জন্য় নুডলস বা পাস্তা তৈরির সময় বড় বাটির এক-দু’বাটি জল তো লাগবেই। এই পরিমাণ জল ফেলে না দিয়ে বরং ঠান্ডা করে গার্ডেনিং-এর কাজে যেমন লাগাতে পারেন, তেমনই বাসন ধোয়ার কাজে লাগালেও মন্দ হয় না। তাতে অকারণে জল খরচ হওয়ার আশঙ্কা একটু হলেও কমে।
৫| খাবার Defrost করার নিয়ম –
খেয়াল করে দেখবেন অনেকেই ডিপ ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে কল চালিয়ে তার নিচে রেখে দেন। তাতে নাকি defrost তাড়াতাড়ি হয়। এমন ধরণা কিন্তু এক্কেবারে ভিত্তিহীন। বরং এইভাবে defrost করলে কাজের কাজ তো কিছু হবেই না, উল্টে প্রচুর জল খরচ হয়ে যাবে। এবার থেকে তাই বড় একটা বাটিতে ঠান্ডা জল নিয়ে তাতে খাবারটা চুবিয়ে রাখুন। দেখবেন, তাড়াতাড়ি ডিফ্রস্ট হয়ে যাবে। আর যদি সে সময়টাও হাতে না থাকে, তাহলে মাইক্রোওয়েভেও ডিপ্রস্ট করতে পারেন। আজকাল বেশ কিছু অত্যাধুনিক মাইক্রোওয়েভে খাবার ডিফ্রস্টের ব্যবস্থাও রয়েছে।
৬| রান্নার সময় বেশি বাসন ব্যবহার করা কমান –
কারণ-অকারণে অনেকেই রান্নার সময় একাধিক বাসন ব্যবহার করে থাকেন। ফলে সেই সব বাসন ধুতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অনেক পরিমাণ জল খরচ হয়ে যায়। তাই জলের সাশ্রয় করতে চাইলে রান্নার সময় যতটা সম্ভব কম বাসন ব্যবহার করে কীভাবে অনেক পদ রান্না করা যায়, সেই নিয়ে একটু মাথা খাটানো উচিত।
৭| লিকেজ বন্ধ করুন –
রান্না ঘরের জলের পাইপে কোনও লিকেজ হলে বা কল থেকে টিপ টিপ করে জল পড়তে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে প্লাম্বারকে খবর দিন। কারণ, এইভাবে জলের লিকেজ হতে থাকলে বছরে কম-বেশি প্রায় ৩০০০ গ্যালন জল নষ্ট হয়।
৮| Motion-Sensor কল লাগাতে পারেন –
রান্না ঘরে এমন কল লাগালে এককালীন কিছু টাকা খরচ হয়ে যাবে ঠিকই। কিন্তু জলের অপচয়ও কমবে (How To Save Water At Home)। কারণ, সেন্সার থাকার কারণে কলের নিচ থেকে হাত সরিয়ে নিলেই জল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে অকারণে জল খরচ হওয়ার আশঙ্কা আর থাকবে না।
কাপড় কাচার সময় জল সাশ্রয় করুন এই টিপসগুলি মেনে (Save Water While Washing Clothes)
১| পুরানো ওয়াশিং মেশিন বদলে ফেলুন –
আজকাল এমন সব ওয়াশিং মেশিন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, যা অল্প জল এবং ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার করেই কাজ সেরে ফেলে। ফলে জল সাশ্রয় তো হয়ই (Ways To Save Water), সঙ্গে কারেন্ট বিল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও আর থাকে না। তাই তো বলি, প্রসঙ্গটা যখন জলের খরচ বাঁচানো, তখন টাকার কথা ভেবে নতুন ওয়াশিং মেশিন না কেনাটা যে বোকামি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!
২| ওয়াশিং মেশিন পুরো ভরা না পর্যন্ত চালাবেন না –
অল্প অল্প করে কাপড় কাচলে জলের খরচ তো বাড়বেই, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে ইলেকট্রিসিটি এবং ডিটারজেন্টের খরচও। তাই এই ভুল কাজটা না করে, সপ্তাহে এক দিন কাচাকুচি করুন। তাতে সব দিক থেকে সুফল মিলবে।
৩| রানিং ওয়াটার নয়, বালতি ব্যবহার করুন –
হাতে কাচার সময় কাপড়ে সাবান লাগানোর পরে কল চালিয়ে না ধুয়ে বরং দু’বলতি জল ভরে নিন। এক বালতি জলে (Water) ডিটারজেন্ট গুলে নিয়ে তাতে কিছুক্ষণ পোশাকগুলি চুবিয়ে রেখে ব্রাশ দিয়ে ঘষে নিয়ে আরেকটা বালতিতে রাখা পরিষ্কার জলে চুবিয়ে মেলে দিন। এইভাবে কাপড় কাচলে দেখবেন জলের সাশ্রয় হবে (জল অপচয় বন্ধ করার উপায়)।
৪| পোশাকে কোনও দাগ থাকলে ভাল করে ধুয়ে নিন –
দাগ লাগা পোশাক সরাসরি ওয়াশিং মেশিনে না দিয়ে বরং আগে একবার হাতে ঘষে কেচে নিয়ে তারপর ওয়াশিং মেশিনে ফেলে আরেকবার ধুয়ে নিন। এমনটা করলে দাগ উঠে যাবে। ফলে বারে বারে জল খরচ করে ধোয়ার প্রয়োজন আর পরবে না। তাতে ইলেকট্রিসিটি এবং জল, দুই সাশ্রয় হবে।
৫| ওয়াশিং মেশিনের জল অন্য কাজে লাগান –
কাপড় ধোয়া হয়ে গেলে সাবান জল ওয়াশিং মেশিন থেকে বেরিয়ে যায়। সেই জল একটা বালিতে সংগ্রহ করে বাড়ি-ঘর ধোয়ার কাজে লাগানো যেতে পারে। এমনকী এই জল দিয়ে গড়িও ধুতে পারেন। মোট কথা বুদ্ধি খাটিয়ে অল্প পরিমাণ জল নিয়ে তা যদি একইসঙ্গে নানা কাজে লাগানো যায়, তাহলে সারা দেশে জলের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা কিছুটা হলেও কমে।
৬| ওয়াশিং মেশিনের Load Sizes একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর –
কত পরিমাণে কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিয়েছেন, তার উপর নির্ভর করে জলের মাত্রা। তাই ঠিক ঠিক Load Size দিলে অতিরক্তি জল খরচ হওয়ার আশঙ্কা কমে (জল বাঁচানোর উপায়)। তাই এবার থেকে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় কাচার সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখতে ভুলবেন না যেন!
৭| একটা পোশাক কম করে দিন দুয়েক পরুন –
প্রতিদিন নিত্য নতুন পোশাক পরলে সপ্তাহে দিন তিনেক কাপড় কাচতেই হবে। ফলে জলের খরচ বড়বে। তাই জল সাশ্রয় করার ইচ্ছা থাকলে প্রতিটা পোশাক কম করে দিন দুয়েক পরুন। আর সপ্তাহে একবারের বেশি কাপড় না কাচার চেষ্টা করুন, তাতে সবারই মঙ্গল।
৮| ভেবে-চিন্তে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন –
বেশ কিছু সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে প্রয়োজন অতিরিক্ত ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে তা ধুতে গিয়ে বেশি পরিমাণ জল খরচ করতে হয়। তাই জলের অপচয় বন্ধ করার ইচ্ছা থাকলে যেটুকু প্রয়োজন, তার থেকে বেশি পরিমাণ ডিটারজেন্ট (জল অপচয় বন্ধ করার উপায়) ভুলেও ব্যবহার করবেন না যেন!
জল সাশ্রয়ের আরও কিছু টিপস (More Tips To Save Water)
১| জল রিসাইকেল করা একান্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ সবজি বা ফল ধোয়ার পরে সেই জল গাছের গোড়ায় ডেলে দিতে পারেন। আবার ওয়াশিং মেশিনের জল দিয়ে গাড়ি ধুলেও মন্দ হয় না। অর্থাৎ জল রিসাইকেল করলে প্রয়োজন যেমন মিটবে, তেমনই জলের সাশ্রয়ও হবে (Ways To Save Water)।
২| সকালের দিকে গাছে জল দিন। তখন গাছের পাতা আর্দ্র থাকে। ফলে কম জল দিলেই গাছের প্রয়োজন মিটে যায়। তাতে অতিরিক্ত জল খরচের আশঙ্কা আর থাকে না।
৩| বাগানে sprinkler ব্যবহার করলে সেগুলি এমন জায়গায় লাগান, যাতে অকারণে জল নষ্ট না হয়। কারণ, বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে ঠিক ঠিক জায়গায় sprinkler না লাগালে প্রতিবার কম করে প্রায় ১২-১৫ গ্যালন জল নষ্ট হয়।
৪| আপনার বাগানে থাকা গাছগুলিকে কত পরিমাণে জল দেওয়া উচিত, সে সম্পর্কে জেনে নিন। তাতে গাছের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমবে, তেমনই জলের সাশ্রয়ও হবে।
৫| রান্না বা কাপড় কাচার সময় ব্যবহৃত জল দিয়ে বাড়ি-ঘর ধোয়া যেতে পারে। এমন ধরনের কাজে ভুলেও পরিষ্কার জল ব্যবহার করা উচিত নয়। তাতে কম করে প্রায় ২৫-১০০ গ্যালন জলের সাশ্রয় হয়।
৬| বাড়িতে সুইমিং পুল থাকলে তা ঢেকে রাখুন। তাতে বহুদিন জল পরিষ্কার থাকবে। ফলে বারে বারে জল বদলানোর প্রয়োজন পড়বে না।
জল সংরক্ষণের নানা উপায় (Different Ways To Conserve Water)
আরও বেশ কিছু পদ্ধতিতে জলের সাশ্রয় (Ways To Save Water) সম্ভব। যেমন ধরুন…
১| রেনওয়াটার হার্ভেস্টিং (Rain Water Harvesting)
বৃষ্টির সময় বাড়ির বাইরে খান দুয়েক ড্রাম এবং বালতি রেখে দিন। এটি একটি শ্রেষ্ঠ জল সংরক্ষণের উপায় আপনি বলতে পারেন। তাতে যে জল জমবে, সেই জল ফুটিয়ে পানীয় জল হিসেবে যেমন ব্যবহার করতে পারেন, তেমনই বাসন মাজা, গাড়ি ধোয়া, ঘর পরিষ্কার করা এবং কাপড় কাচার সময়ও কাজে লাগাতে পারেন বৃষ্টির জলকে। তাতে করে মিষ্টি জলের অপচয় বন্ধ হবে।
২| পুকুর (Conserving Water In Ponds)
কেন্দ্রীয় সরকার দেশের বেশিরভাগ গ্রামেই নতুন করে পুকুর তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। কারণ, পানীয় জলের ঘাটতি মেটাতে এর থেকে কার্যকরী জল সংরক্ষণের উপায় আর কিছু আছে বলে তো মনে হয় না। এক্ষেত্রে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, তা হল ভুলেও পুকুরের জল নোংরা করা চলবে না। কারণ, অপরিষ্কার জল খেলে একাধিক মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর (FAQs)
১| জলের থেকে যে সব রোগ হয় সেগুলি থেকে দূরে থাকার কোনও উপায় আছে?
অবশ্যই আছে। এক তো পানীয় জল ফুটিয়ে খাওয়া শুরু করুন। তাতে রোগ ভোগের আশঙ্কা কমবে। দ্বিতীয়ত, নদী এবং পুকুরের জলই মূলত পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই সেই জল যাতে কোনও ভাবেই নোংরা না হয়, সে বিষয়ে আশে পাশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। তাহলেই দেখবেন রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগবে না।
২| Water-Saving Device লাগালে কি উপকার মিলবে?
আলবাত মিলবে। বিশেষ করে রান্নাঘরের কলে tap shower head লাগালে জলের খরচ যেমন কম হবে, তেমনই বাড়ির অন্যান্য কলে low-flow aerator লাগালেও জলের সাশ্রয় হবে বই কী!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!