বয়সের কারণে চুল সাদা হয়ে যাওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু চিন্তাটা ঘাড়ে চেপে বসে তখনই, যখন অসময়ে একের পর চুল পাকতে শুরু করে। আসলে এমনটা হলে যে দেখতে বেজায় খারাপ লাগে। ফলে আর কোনও উপায় না পেয়ে বাজার চলতি ডাই ব্যবহার করতে হয় তখন। আর ক্যামিকেল ভর্তি এই সব ডাই দিনের দিন ব্যবহার করার কারণে চুলের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে সময় লাগে না। তাই তো আপনিও যদি এমন সমস্যার শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে চুল কালো করতে দয়া করে বাজার চলতি ডাই ব্যবহার করা বন্ধ করুন। পরিবর্তে এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে (How To Turn Grey Hair Into Black Permanently) যদি কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে নিমেষেই সাদা চুল তো কালো হয়ে যাবেই, সেই সঙ্গে চুলের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
অনেক কারণে এমনটা হতে পারে। যেমন ধরুন…
অসময়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অনেক সময় পরিবারের বাকিদের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার কিছু করার নেই। বরং কীভাবে সাদা চুলকে ঝটপট কালো করে ফেলা যায়, সেই চেষ্টায় লেগে পরাই ভালো!
অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যানিমিয়া এবং থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যার কারণেও অসময়ে চুল পেকে যেতে পারে। বিশেষত, দীর্ঘদিন ধরে হাইপারথাইরয়েডিজমের মতো রোগে ভুগলেও কিন্তু এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সময় থাকতে থাকতে এই সব রোগের চিকিৎসা করাটা একান্ত প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে দিনের বেশিরভাগ সময় রোদে কাটালে যেমন চুল সাদা হতে শুরু করে, তেমনি মাত্রাতিরিক্ত হারে ক্যামিকেল ভর্তি কসমেটিক্স ব্যবহার করলেও কিন্তু একই ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।
ভীষণ মানসিক চাপে থাকলে শরীরের ভিতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে ভিটামিন বি-এর মাত্রা কমতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে চুল পাকতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরেরও মারাত্মত ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে।
যে যে প্রাকৃতিক উপাদানগুলি (how to turn grey hair into black permanently naturally) এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল…
একটা প্লাস্টিকের বাটিতে ১ কাপ হেনার পেস্ট, ৩ চামচ আমলকি পাউডার, ১ কাপ কফি পাউডার এবং অল্প পরিমাণে জল মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে। এবার একটা গ্লাভস পরে নিয়ে সেই পেস্টটা থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে চুলে লাগিয়ে ফেলতে হবে। সারা মাথায় লাগানোর পরে কম করে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। যখন দেখবেন মিশ্রণটা ধীরে ধীরে শুকতে শুরু করেছে, তখন কোনও সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
মাসে একবার করে এইভাবে চুলের যত্ন নিলে পুষ্টির ঘাটতি দূর হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। ফলে মাত্রিরিক্ত হারে হেয়ার ফল হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি চুলের জেল্লাও বাড়ে চোখে পড়ার মতো।
চটজলদি চুল কালো করতে এই ঘরোয়া টোটকাটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই আসময়ে চুল পেকে যাওয়ার কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে আজ থেকেই চুলের পরিচর্যায় হেনাকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন! এক্ষেত্রে ৪ চামচ হেনা পাউডার, ২ চামচ চায়ের পাতা এবং ১ চামচ আমলকি পাউডারের প্রয়োজন পড়বে।
সবকটি উপাদান হাতের কাছে নিয়ে আসার পরে এক কাপ জলে কম করে ৮ ঘন্টা হেনার পাউডারটা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সময় হয়ে গেলে হেনার পেস্টের সঙ্গে এক কাপ লাল চা মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর মেশাতে হবে আমলকির পাউডার। এবার সবকটি উপাদান ভালো করে মিশিয়ে নেওয়ার পরে পেস্টটা ধীরে ধীরে চুলে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে ব্রাশও ব্যবহার করতে পারেন। সারা চুলে মিশ্রণটি লাগানোর পরে এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে শ্যাম্পুর সাহায্যে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে চুল। মাসে একবার করে এই মিশ্রণটি চুলে লাগালেই দেখবেন কেল্লা ফতে!
সাদা চুলকে কালো করতে এর আগে নিশ্চয় আনেক রকমের ডাই ব্যবহার করেছেন? কিন্তু একথা জানা আছে কি চুলকে কালো করতে লাল চায়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে (black tea for grey hair)। এক্ষেত্রে এক কাপ জল নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো চায়ের পাতা ভিজিয়ে জলটা কিছু সময়ের জন্য ফুটিয়ে নিতে হবে।
লাল চা বানানো হয়ে গেলে তা কিছুক্ষণ ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিতে হবে। যখন দেখবেন চা একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে, তখন তা দিয়ে ধীয়ে ধীরে চুল ধুতে হবে। এরপর কম করে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে আরেকবার ধুয়ে নিতে হবে চুল। এইভাবে সপ্তাহে একবার করে চুলের পরিচর্যা করলে দেখবেন ফল মিলতে সময় লাগবে না।
সপ্তাহে ২ বার, ২ চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে ভালো করে মাসাজ করতে হবে। তারপর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে চুলের যত্ন নিতে শুরু করলে দেখবেন অল্প দিনেই সাদা চুল তো কালো হয়ে যাবেই, সেই সঙ্গে নারকেল তেল এবং লেবুতে উপস্থিত নানাবিধ উপকারী উপাদানের কারণে চুলের স্বাস্থ্য উন্নতি ঘটতেও সময় লাগবে না।
শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে কারি পাতার যেমন কোনও বিকল্প হয় না, তেমনি চুলের পরিচর্যাতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে কারি পাতায় উপস্থিত নানা উপকারী উপাদানের কারণে চুলের ভিতরে মেলানিনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাবে পাকা চুল কালো হতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, হেয়ার ফলের মাত্রা কমে।
এক্ষেত্রে এক বাটি নারকেল তেল নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো কারি পাতা ফেলে তেলটা একটু গরম করে নিতে হবে। তারপর তেলটা একটু ঠান্ডা করে নিয়ে তা চুলে এবং স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ভালো করে মাসাজ করতে হবে। তবে মাসাজ করার পর পরই যেন চুল ধুয়ে নেবেন না! বরং কম করে এক ঘন্টা অপেক্ষা করে তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুল।
একেবারেই ঠিক শুনেছেন! বাস্তবিকই চুলের যত্নে আলুর খোসা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে একটা পাত্রে ২ কাপ জল নিয়ে তাতে ছটা আলু থেকে সংগ্রহ করা খোসা ফেলে জলটা কিছু সময় ফুটিয়ে নিতে হবে। ৪-৫ মিনিট জলটা ফোটানোর পরে আলুর খোসাগুলি ছেঁকে নিয়ে জলটা একটু ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর সেই জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে চুল। সপ্তাহে ১-২ বার এই ভাবে চুলের যত্ন নিলে সব সাদা চুল তো গায়েব হয়ে যাবেই, সেই সঙ্গে চুলের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে চোখে পড়ার মতো (how to make hair black naturally without dye)।
কড়া করে এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে একটু ঠান্ডা করে নিন। তারপর কফিটা দিয়ে ধীরে ধীরে ধুয়ে ফেলুন চুল। এরপর কম করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পরে ঠান্ডা জল দিয়ে চুলটা আরেক বার ধুয়ে নিন। তবে ভুলেও শ্যাম্পু করবেন না যেন! সপ্তাহে ২ বার করে এই ভাবে কফির সাহায্যে চুল ধোওয়া শুরু করলে ধীরে ধীরে সব সাদা চুল খয়েরি রং নিতে শুরু করবে। ফলে চুলের সৌন্দর্য বাড়বে চোখে পড়ার মতো।
এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা চুলের ভিতরে মেলানিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সাদা চুল উধাও হয়ে যেতে সময় লাগে না। তাই মাথায় একটাও সাদা চুল না থাকুক, এমনটা যদি চান, তাহলে একটা পাত্রে ৩ চামচ নারকেল তেল নিয়ে তাতে ১ চামচ আমলকি পাউডার মিশিয়ে তেলটা একটু গরম করে নিন। কিছু সময় গরম করার পরে আঁচটা বন্ধ করে তেলটা একটু ঠান্ডা করে নিয়ে সারা মাথায় লাগিয়ে ভালো করে মাসাজ করুন, যাতে স্ক্যাল্পের গভীর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ পায় এই মিশ্রণটি। এরপর এক ঘন্টা অপেক্ষা করে ভালো কোনও শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে চুল।
একেবারেই ঠিক শুনেছেন! সাদা চুলকে চটজলদি কালো করতে বাস্তবিকই গোলমরিচ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত নানাবিধ পুষ্টিকর উপাদান, চুলের ভিতরে প্রবেশ করে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। সেই সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতিও ঘটায়। ফলে সাদা চুল ধীরে ধীরে গায়েব হতে শুরু করে।
এমন উপকার পেতে ১ কাপ দইয়ে ২ গ্রাম গোলমরিচ মিশিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছু সময় মাসাজ করতে হবে। তারপর এক ঘন্টা অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুল। এইভাবে সপ্তাহে তিন দিন চুলের যত্ন নিলে দেখবেন ফল মিলবে একেবারে হাতে-নাতে!
২ কাপ জলে ২ চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি দিয়ে চুল ধুতে হবে। আর তার ২০ মিনিট পরে সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে আরেকবার চুল ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে একবার করে এই ঘরোয়া টোটকাটিকে কাজে লাগাতে শুরু করলে দেখবেন সাদা চুল তো গায়েব হয়ে যাবেই, সেই সঙ্গে স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটার কারণে হেয়ার ফল বা অন্য কোনও ধরনের ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
ঘরোটা টোটকা (Home Remedies) গুলিকে কাজে লাগানোার পাশাপাশি যদি এই টিপসগুলিও মেনে চলা যায়, তাহলে কিন্তু দ্রুত উপকার মেলার সম্ভাবনা বাড়ে। এক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা জরুরি, সেগুলি হল…
১| ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। কারণ শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হলে অসময়ে চুল পেকে যাওয়ার আশঙ্কাও কমবে।
২| শরীরে যেন জলের ঘাটতি দেখা না দেয়। তাই দিনে কম করে ৩-৪ লিটার জল পান মাস্ট!
৩| ধূমপান ছাড়তে হবে। আসলে এই ধরনের নেশার কারণেও কিন্তু অসময়ে চুল সাদা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৪| চুলের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটুক, এমনটা যদি না চান, তাহলে বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে ভুলবেন না যেন! কারণ এই উপাদানটি চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে যেমন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমনি অসময়ে যাতে চুল পেকে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখে।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!