ওরা লড়ছে (hunger strike)। বিগত ২৫ দিন ধরে সব কিছু ভুলে দাঁতে দাঁত চিপে লড়ছে ওরা। ওরা সবাই এসএসসি (SSC) বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের (School Service Commission) কাছে চাকরিপ্রার্থী। ওরা হবু শিক্ষক, মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ অমানুষের মতো আচরণ করা হচ্ছে ওদের সাথে। মেয়ো রোডের প্রেস ক্লাবের সামনে প্রায় সারে চারশো ছেলে মেয়ে ফুটপাথের উপরে অনশনে (Hunger strike) বসেছে। সেনাবাহিনীর এলাকা বলে এখানে ছাউনি তৈরি করার নিষেধ আছে। তাই এতদিন খোলা আকাশের নিচেই ওরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে এবং তারও আগে পরপর কালবৈশাখী আর ঝড় বৃষ্টিতে বড় রকমের বিপর্যয় দেখা যায়। আমরা টিভিতে সেই ভয়াবহ ফুটেজ দেখেছি। দেখেছি যে কীভাবে একটা তেরপল আর প্লাস্টিকের ছাউনি নিজেরাই হাত দিয়ে ধরে মাথা বাঁচিয়েছেন তারা।
তবে ঝড়, বৃষ্টি ওদেরকে আটকে রাখতে পারেনি। কারণ এদের মধ্যে অনেকেই হারিয়েছেন এর চেয়ে অনেক অনেক বড় কিছু। একজন মহিলার গর্ভস্থ ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গেছে দীর্ঘদিন অনশন করার জন্য। আরও একজন গর্ভবতী মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। সেখানে তার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে গর্ভপাত করাতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। এখানেই গল্পটা শেষ নয়। ওরা ফিরে এসে আবার অনশনে বসেছে। সঙ্গে এসেছে একজন মহিলার স্বামী। বলেছেন এখন এটা সম্মানের প্রশ্ন। যার জন্য নিজের সন্তানকে হারিয়েছে একজন মা, তিনি এখন প্রতিবাদের মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।একজন প্রার্থী ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে প্রথম দিন থেকে অনশন করছেন। তিনি শিশুকে স্তন্যপান করান।
অনশনকারীরা জানিয়েছেন এখানে প্রচণ্ড মশা। তাই অনেকেই ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় ৮৩ জনকে ভর্তি করতে হয়েছে হাসপাতালে। অনেকেরই খোলা আকাশের নীচে থাকার জন্য চর্মরোগ ধরা পড়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেডিকেল ক্যাম্প করে এদের চিকিৎসা করছেন। যেহেতু এখানে কোনও শৌচাগার নেই তাই খুবই অসুবিধে হচ্ছে সবার। বিশেষ করে মহিলাদের এর জন্য সংক্রমণের সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক মহলের অনেকেই।
অনেক আগেই ওদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। তিনি নিজে একজন শিক্ষক বলেই অনশনকারীদের সমস্যা বুঝতে পেরেছেন আরও গভীরভাবে। তিনি একটি খোলা চিঠিতে সরকারকে এই বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বললেও অনশনের ২৫ দিনেও কোনও কিছু করা সম্ভব হয়নি। যদিও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন প্যানেলে নাম থাকা আর ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকা এক বিষয় নয়। ওরা অনেকদিন ধরে না খেয়ে রয়েছে। আমরা ওদের প্রতি সমব্যথী কিন্তু আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয় সরকারের পক্ষে। ইতিমধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনিও একটি চিঠিতে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।সৌমিত্রবাবু নিজেও অসুস্থ তাই ইচ্ছে থাকলেও ধর্নামঞ্চে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। কিন্তু সেখানে পৌঁছে গেছেন বিশিষ্ট কবি মন্দাক্রান্তা সেন। মন্দাক্রান্তা নিজেও ওদের সাথে অনশন শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন সরকার এত কিছু দেখেও অন্ধ ও বধির হয়ে বসে আছে। এতগুলো ছেলেমেয়ে কোথায় যাবে? ওরা ন্যায্য অধিকারের দাবীতে লড়াই করছে আর এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী তিনি। আন্দোলনকারীরা বলেছেন বহু শূন্য পদ থাকার পরেও চাকরি পাচ্ছেন না তারা তাই কোনও লিখিত আশ্বাস না পেলে এই অনশন জারি থাকবে।
ব্যাস্ত কলকাতা। ব্যাস্ত রাজপথ। কিছুদিন আগেই হয়ে গেছে দোল আর হোলি। কিন্তু ওদের জীবন এখনও বর্ণহীন। প্রচণ্ড রোদে ওরা ঠায় বসে আছে। অভুক্ত অসুস্থ শরীরে। ওদের জন্য কি একটাও মোমবাতি মিছিল হবে না এই শহরে?
Picture Courtsey: Account of Mandakranta Sen and Youtube
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!