“কখনও ভুল ট্রেনও আমাদের সঠিক গন্তব্যে নিয়ে যায়।” এই সংলাপ তাঁদের খুবই চেনা, যাঁরা আমার মতোই ইরফান অনুরাগী। সময়ের কী আশ্চর্য বিচার! কখনও এক বছরও কত বেশি সময় মনে হয়। কখনও আবার চোখের পলকেই একটা বছর পার হয়ে যায়। অভিনেতা ইরফান খানের মৃত্যু সময়কেই আবার প্রশ্ন করেছে। ২০২০-এর ২৯শে এপ্রিল যে নিস্তব্ধতা তৈরি হয়েছিল এখনও সেই ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। আজ ইরফানের মৃত্যুর এক বছর (irrfan khan death anniversary)। যদিও আমি ভেবেই নিয়েছি, ইরফান কোনও ভুল ট্রেনে সওয়ারি করছেন, যা তাঁকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে।
শুধু ভারতীয় ছবিতে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও বারবার প্রশংসিত হয়েছেন ইরফান খান। এক অভিনেতা। ভারতীয় ছবিতে অভিনয়ের শৈলীকে ভেঙেচুরে নিজের মতো করে গড়ে নেওয়া অভিনেতা। ভারতীয় মূলধারার ছবি, বিশেষত হিন্দি ছবি ‘নায়ক’-এর যে সংজ্ঞা শতাব্দীভর প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেই সংজ্ঞাকে ভেঙে মুখ্যচরিত্রে বারবার জ্বলে ওঠা এক ফিনিক্স। যিনি বড়পর্দায় সংলাপ বললে, বারবার মনে হয়েছে…ব্যাকলাইটের সামনে দাঁড়ানো লো অ্যাঙ্গল শটে এই নায়ককে দেখতে হয় না। কখনও মধ্যবিত্তের অন্দরমহলে, কখনও বা একাকিত্বের বিষাদে এই নায়ক ভালবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁর প্রতিটি ছবির চিত্রনাট্যে। এই নায়ক মনের কাছে থাকেন(irrfan khan death anniversary), তাই তাঁর চিরবিদায়ে চোখের জল থাকে আমাদের অন্তরমহলে।
“একসঙ্গে যেতে পারতাম বাবা, হাতে হাত রেখে…”
ইরফানের ছেলে বাবিল আজ তাঁর বাবার উদ্দেশে সোশ্য়াল মিডিয়ায় কয়েকটি কথা লিখেছেন। বাবিল লিখছেন, “কেমো তোমাকে ভিতর থেকে পুড়িয়ে দিচ্ছিল, তাই তুমি সাধারণ বিষয়ে আনন্দ খুঁজেছিলে, যেমন নিজের টেবিল বানানো বা নিজের জার্নাল লেখা। একটি স্বচ্ছতা আছে, যা আমি এখনও খুঁজে পাইনি। আমার বাবাকে কেউ রিপ্লেস করতে পারে না, কখনও কেউ পারবেন না। আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধু, সঙ্গী, ভাই, বাবা; তার প্রতি। আমি তোমায় খুব ভালবাসি। তোমায় মিস করি, শাহ-জাহান/মুমতাজের থেকেও অনেক বেশি; আমি মহাকাশে একটা স্মৃতিসৌধ তৈরি করব যা আমাদের ব্ল্যাকহোলের একাকিত্বের সেই দূরের অংশে পৌঁছে দেবে, যা নিয়ে তুমি সব সময়ে আগ্রহী ছিলে। কিন্তু আমি সেখানে তোমার সঙ্গে থাকতে পারতাম বাবা, এবং আমরা একসঙ্গেই সেখানে যেতে পারতাম, হাতে হাত রেখে।”
তাঁর অভিনীত একাধিক ছবি বারবার জাতীয় স্তর ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা পেয়েছে। দ্য নেমসেক, পান সিং তোমর, মকবুল, দ্য লাঞ্চবক্সের মতো ছবি উপহার দিয়েছেন ইরফান। একটা প্রশ্ন নিয়ে বারবার আলোচনা করা হয়, একটি ছবির জনপ্রিয়তা কোথায়? ছবির অভিনেতার সূত্র ধরেই না কি ছবির পরিচালক জনপ্রিয়তা তৈরি করেন? সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময়ে যদি ইরফানকে চোখের সামনে দেখতে পাই, বলতে ইচ্ছে করে অভিনেতার নাম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকির ‘ডুব’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৭ সালে। ছবির প্রথম দৃশ্যে জনমানবহীন সমুদ্রতটে নৌকা বাঁধা, আর বার বার ঢেউ এসে ফিরে যাচ্ছে। দুটি ঢেউয়ের মাঝে যে সময়ের ব্যবধান, সেই সময়টুকুই জীবন…’আহারে জীবন’। ওঁর মৃত্যুদৃশ্যে কান্না এসেছিল তখন। তবু মনে হয়েছিল, বড় পর্দার ওপারেই রিয়েল টাইমে অভিনেতা এখনও জীবন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন, রিল টাইমেই তাঁর মৃত্যু। যা আসলে সত্যি নয় (irrfan khan death anniversary)। ভাবতে পারি না ইরফানের মৃত্যুর এক বছর হয়ে গিয়েছে।
জানি না সেরকমই কোনও জনমানবহীন সমুদ্রতটে কিংবা পাহাড়ের ধারে বসে ইরফান নিজের লেখা বা নিজের সৃষ্টি সব শূন্যে মিলিয়ে দিতে চাইলেন কি না। যে সৃষ্টি আমাদের কাছে আরও কয়েক বছর থাকলে আমরা সিনেমা অনুরাগীরা আত্মিক বন্ধনে হয়তো ইরফানকে বেঁধে রাখতে পারতাম। জানি না আজ আমরা যখন তাঁর ‘দ্য লঞ্চ বক্সের’ দৃশ্যে মনোযোগী, তখন তিনি দূর থেকে আমাদের দেখে নিয়ে সরে গেলেন কি না। হয়তো পরবর্তীতে তাঁর প্রেয়সীর কাছে চিঠি পাঠালেন। তবু মনে হয়, “যদি পারতাম, আঙুলগুলো ছুঁয়ে থাকতাম।”
মিঠুন চক্রবর্তীর মতো হেয়ারস্টাইল চাইতেন ইরফান
ইরফান, আপনি হয়তো ভুল ট্রেনে সওয়ারি করছেন। কিংবা মৃত তারাদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। যে তারাদের কক্ষপথ এই পৃথিবীর কক্ষপথের থেকে অনেক অনেক আলোকবর্ষ দূরে…
মূল ছবি – ইনস্টাগ্রাম
POPxo এখন চারটে ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন। শেখার জন্য জয়েন করুন #POPxoLive, যেখানে আপনি সরাসরি আমাদের অনেক ট্যালেন্ডেট হোস্টের থেকে নতুন নতুন বিষয় চট করে শিখে ফেলতে পারবেন। POPxo App আজই ডাউনলোড করুন আর জীবনকে আরও একটু পপ আপ করে ফেলুন!