বুঝুন ঠেলা! এতদিন জানতাম, দুর্গা ঠাকুর কৈলাসে যাওয়ার পর আবার মর্ত্যে ফিরে আসেন জগদ্ধাত্রী (Jagadhatri) রূপে। তখন তাঁর চারটি হাত, তিনি সিংহবাহিনী হলেও, তাঁর পদতলে থাকে হাতিরূপী কোনও এক অসুর। একটুআধটু ইতিহাস জানেন যাঁরা, তাঁরা এটাও জানেন যে, এখন চন্দননগরে এই পুজোর ধুম হলেও আসলে এই পুজো প্রথম শুরু করেছিলেন কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দে। পরে চন্দননগরে এই পুজো ধুমধাম করে করা হয়, তার পিছনে পৌরাণিক (mythological) বা ঐতিহাসিক কোনও ভিত্তি নেই, আছে নিতান্তই বাণিজ্যিক কারণ। আসলে দুর্গাপুজোয় সারা বাংলার জন্য তৈরি আলোকসজ্জা বাকি বছরটা পুরো ঘরের কোণে অবহেলায় পড়ে থাকবে, এই ভাবনা থেকেই চন্দননগরে শুরু হয় এই পুজোর (Puja) ধুম। এখন তো এটি ধুমধামে প্রায় কলকাতার দুর্গাপুজোরই আকার নিয়েছে! কিন্তু এই সম্বন্ধে স্টোরি লিখতে গিয়ে এখন দেখছি যে, জগদ্ধাত্রীর গুরুত্ব সম্পূর্ণরূপে আলাদা। আর তাতে কৃষ্ণচন্দ্র, অসুর, চন্দননগর, কোনও কিছুরই কোনও উল্লেখ পর্যন্ত নেই! তা হলে দেবী জগদ্ধাত্রী কে? কাকেই বা বধ করেন তিনি? সেই সব গল্পই (Story) আজ বলছি এখানে…
দেবী জগদ্ধাত্রীর পৌরাণিক গল্প
এই দেবী আসলে কোনও বিশেষ দেবী নন, ইনি পরম ব্রহ্মের জাগতিক রূপমাত্র! একটু বিশদে বুঝিয়ে বলা যাক। মহিষাসুরকে দেবী দুর্গা বধ করার পর দেবতারা শান্তি পেয়ে ভেবেছিলেন এবার আর তাঁদের কোনও সমস্যা রইল না। তাই তাঁরা আবার পুরনো গর্বে অভিভূত অবতারে ফিরে গেলেন। মানে, তাঁরাই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, তাঁরা ছাড়া আর কারও কোনও শক্তিই নেই আর কী! এই দেখে ভারী খেপে যান ব্রহ্মা। তিনি যক্ষরূপ ধারণ করে চ্যালেঞ্জ করেন দেবতাদের। প্রথমে ডেকে পাঠান পবনদেবকে, বলেন, একটি ঘাসকে হাওয়া দিয়ে নাড়িয়ে দেখাতে। শত চেষ্টা করেও সফল হন না পবনদেব। একই অবস্থা হয় বরুণদেবের। তিনিও একটিমাত্র ঘাসকে ভেজাতে সক্ষম হন না। অগ্নিদেবও একটি মাত্র ঘাসকে পোড়াতে পারেন না। এদিকে তাঁরা অত শক্তিশালী সব দেবতা, দরকার পড়লে সারা বিশ্বে প্রলয় এনে দিতে পারেন! তখন ব্রহ্মা নিজ রূপ ধারণ করে তাঁদের বোঝান যে, আসলে সবার উপরে পরম ব্রহ্মই সত্য এবং দেবতাই হোন কিংবা মানব অথবা দৈত্য, এই জগতে সবচেয়ে বড় একটি অসুরের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই করতে হবে আর সেটি হল তাঁদের মানসিক অহংয়ের অসুর। আর এই অসুরকে বধ করতেই পরম ব্রহ্ম যে দেবীর রূপ নেন, তিনিই জগদ্ধাত্রী।
জগদ্ধাত্রী দেবীর চার হাত, চার হাতে আছে শঙ্খ, চক্র, তির-ধনুক। দেবী বধ করছেন হস্তীরূপী করিন্দ্রাসুরকে, যা আসলে আমাদের ভিতরে বসবাসকারী অহংয়ের মূর্ত রূপমাত্র। তাই মা আমাদের সকলের মধ্যেই থাকেন, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমায় তাঁকে পূজা করা হয় মাত্র। দেবীকে নিয়ে একটিই মাত্র শ্লোকের উল্লেখ পাওয়া যায়, শ্রী ললিতা সহস্রনাম-এর ১৭৩তম শ্লোকে দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীকেই জগদ্ধাত্রী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই শ্লোকটি হল, বিশ্বমাতা জগদ্ধাত্রী, বিশালাক্ষী, বিরাগিণী/প্রগলভা পরমোদরা, পরামোদা মানময়ী…
দেবী জগদ্ধাত্রীর ঐতিহাসিক গল্প
শুনতে অবাক লাগলেও, দেবীর ঐতিহাসিক গল্পের সঙ্গে চন্দননগরের কোনও যোগ নেই, বরং আছে কৃষ্ণনগরের! নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগে বন্দি হতে হয়েছিল কৃষ্ণনগরের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ও তাঁর ছেলে কুমার শিবচন্দ্রকে। নবাব জানতেন যে, মনেপ্রাণে দুর্গাভক্ত কৃষ্ণচন্দ্রকে যদি তিনি দুর্গাপুজোর সময়ে বন্দি বানিয়ে রাখতে পারেন, তা হলেই রাজা নবাবের পায়ে নিজের রাজ্যটি সমর্পণ করবেন। সেই মতো তাঁকে বহুদিন কারাগারে বন্দি রেখে অবশেষে ছেড়ে দেওয়া হল দুর্গাপুজোর নবমীর দিন। রাজা ব্যাকুল হয়ে খালি পায়ে ছুট লাগালেন তাঁর রাজ্যের দিকে। যদি সময়ে পৌঁছে দেবীর আরাধনা করা যায়। কিন্তু ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত রাজা কিছুদূর গিয়ে রুকুনপুর বলে একটি জায়গায় পৌঁছে অজ্ঞান হয়ে যান। ভক্তের এই করুণ অবস্থা দেখে দেবী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং বলেন যে, দেবীর পুজো শরতে করতে না পারার দুঃখ রাজা ভুলতে পারবেন আগামী কার্তিক মাসের শুক্লা অষ্টমীতে জগদ্ধাত্রী রূপে দেবীর পুজো করলে। জ্ঞান ফিরলে ঘোরের মধ্যে রাজা পৌঁছন নিজ রাজ্যে। সেখানে পণ্ডিতদের ডেকে তিনি তাঁর স্বপ্নের কথা খুলে বলেন এবং জানতে চান তাঁর স্বপ্নে দেখা সেই দেবী আসলে কে? পণ্ডিতেরা তাঁর কথা শুনে বলেন যে, তিনি দেবী জগদ্ধাত্রীকে দেখেছেন, যাঁকে এককালে পুজো করতেন দ্রাবিড়েরা। সেই মতো ১৭৫৪ সালে কৃষ্ণনগরে বাংলার প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন তিনি, যা এখনও চলে আসছে।
রাজার পরম মিত্র ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী তাঁকে দেখে নিজ বাসস্থান চন্দননগরে শুরু করেন এই পুজোর, ১৭৫৫ সালে!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo-র স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…