আজ মহাশিবরাত্রি (Maha Shivaratri)। সারা ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে পূজিত হচ্ছেন দেবাদিদেব মহাদেব।আমাদের হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী তিন মূল দেবতা হলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর বা মহাদেব। তিনি হলেন বিনাশের দেবতা। তবে তার মানে এই নয় যে তিনি সর্বদা ধ্বংসলীলাতেই মেতে থাকেন। কিন্তু কেউ তার সঙ্গে ছলনা করলে তিনি কুপিত হন। আর এখান থেকেই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের (12 Jyotirlingas) সূচনা। কীভাবে? আজ মহাশিবরাত্রির (Mahashivaratri) এই পুণ্য লগ্নে আমরা আপনাদের নিয়ে যাব সেই সব স্থানে যেখানে যেখানে আছে এই জ্যোতির্লিঙ্গ(12 Jyotirlingas)।
পুরাণ কী বলছে?
কীভাবে সৃষ্টি হল এই ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের, তার নেপথ্যে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনি। গল্পটা হল এইরকম। একবার ব্রহ্মা আর বিষ্ণুর মধ্যে জোর লড়াই বাঁধল। বিষ্ণু বললেন আমি শ্রেষ্ঠ আর ব্রহ্মা বললেন আমি। মীমাংসা করতে দুজনে গেলেন শিবের কাছে। শিব তখন স্বর্গ, মর্ত আর পাতাল ফুঁড়ে দেখা দিলেন এক আদি অনন্ত আগুনের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে। তিনি ব্রহ্মা আর বিষ্ণুকে বললেন যে এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের শুরু বা শেষ খুঁজে বের করতে পারবে, প্রমাণ হবে সেই শ্রেষ্ঠ।বিষ্ণু শুয়োর বা বরাহের রূপ ধারণ করে নীচের দিকে যেতে শুরু করলেন। আর ব্রহ্মা একটি হংসের রূপ ধারণ করে উপরের দিকে যেতে লাগ্লেন।বেশ কিছুটা নিচে যাওয়ার পর বিষ্ণু বুঝতে পারলেন এ শিবের ছলনা বৈ আর কিছু না। এই স্ফুলিঙ্গের তল পাওয়া অসম্ভব। ব্রহ্মাও বেশ কিছুটা উপরে যাওয়ার পর এই সত্য বুঝতে পারলেন। কিন্তু তিনি ভাবলেন বিষ্ণু যদি ইতিমধ্যে এই স্ফুলিঙ্গের শেষ খুঁজে পেয়ে যায় তাহলে তিনি হেরে যাবেন। সেই সময় উপর থেকে একটি চাঁপাফুল পড়ছিল। ব্রহ্মা চাঁপাফুলকে সাক্ষী দিতে বলায় সে রাজি হয়ে গেল। অবশেষে দুজনে গেলেন শিবের কাছে। বিষ্ণু তার পরাজয় স্বীকার করলেন। কিন্তু ব্রহ্মা বললেন তিনি এই জ্যোতির্লিঙ্গের শুরু খুঁজে পেয়েছেন যার সাক্ষী এই চাঁপাফুল। ক্রুদ্ধ শিব ব্রহ্মাকে অভিশাপ দিলেন যে সৃষ্টিকর্তা হওয়া সত্ত্বেও কোনও মন্দিরে তার পুজো হবে না। আর বর্ণ আর সুগন্ধ থাকা স্বত্ত্বেও চাঁপাফুল কোনও দেবতার পুজোয় লাগবে না।
কথিত আছে এই জ্যোতির্ময় লিঙ্গই মোট ৬৪টি জায়গায় ফুঁড়ে বেরিয়েছিল। যার মধ্যে ১২টি অত্যন্ত পবিত্র এবং এগুলোই হল দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ।
কোথায় কোথায় আছে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ
গুজরাতের সোমনাথ মন্দিরঃ কথায় বলে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের পরিক্রমা শুরু করলে এখান থেকেই করা উচিৎ।
অন্ধ্রপ্রদেশের মল্লিকার্জুনস্বামীঃ কুরনুল জেলার শ্রীশৈলম অঞ্চলে এই মন্দির অবস্থিত। এখানে শিবের সঙ্গে রয়েছে পার্বতীও। বাবা মাকে প্রদক্ষিণ করে গণেশের বিশ্ব ভ্রমণের গল্প জড়িত আছে এই মন্দিরের সঙ্গে।
মধ্যপ্রদেশের মহাকালেশ্বরঃ প্রাচীন শহর উজ্জয়নীতে অবস্থিত এই মন্দির।এখানে যে শিবলিঙ্গ আছে বলা হয় তা স্বয়ম্ভূ। অর্থাৎ নিজেই মাটি ফুঁড়ে উঠেছে। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটা একমাত্র লিঙ্গ যার মুখ দক্ষিণ দিকে।
মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বরঃ নর্মদা নদীর একটি দ্বীপে অবস্থিত এই মন্দির।
উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথঃ দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় এটি। একদা ঘটে যাওয়া মহাপ্রলয়ও পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের এখানে যাওয়া থেকে নিরস্ত করতে পারিনি। বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটি সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত এবং এটি শিবের বাসস্থান কৈলাস পর্বতের খুব কাছে। কেদারনাথ চারধামের (কেদার, বদ্রি, গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী) একটি অংশ।
মহারাষ্ট্রের ভীমাশঙ্করঃ ভীমাশঙ্করের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। কারণ এই নামে উড়িষ্যা, গুয়াহাটি ও উত্তরাখণ্ডেও মন্দির আছে।
বেনারসের কাশী বিশ্বনাথঃ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহরে অবস্থিত এই মন্দির আছে গঙ্গার পশ্চিম দিকে।
মহারাষ্ট্রের ত্র্যম্বকেশ্বরঃ গোদাবরী নদীর উৎপত্তির সঙ্গে জড়িত এই মন্দির অবস্থিত নাসিক জেলায়।
গুজরাতের নাগেশ্বরঃ জামনগরে অবস্থিত এই মন্দিরের দেবতা নাগেশ্বরের উল্লেখ আছে শিবপুরাণে।
ঝাড়খণ্ডের বৈদ্যনাথঃ দেওঘরে অবস্থিত এই মন্দির খুব জনপ্রিয়। কথিত আছে শিবভক্ত রাবণের চিকিৎসা করেছিলেন মহাদেব। তিনি হয়েছিলেন বৈদ্য। আর এখান থেকেই বৈদ্যনাথ নামের উৎপত্তি।
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমঃ দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটি সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থিত।
মহারাষ্ট্রের গৃশ্নেস্বরঃ এই মন্দিরের উল্লেখ আছে শিব পুরাণে।
মনে রাখবেনঃ
অনেকে এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে হিমাচলপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের বৈজনাথ মন্দিরকেও রাখেন। তবে এই নিয়ে পুরাণবিদ ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে।
Picture Courtsey: Facebook
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!