বছরের শেষ আর শুরু যদি মৃত্যু দিয়ে হয়, তাহলে মনটা ভারী খারাপ হয়ে যায়। বছরের শেষে বিদায় নিয়েছেন মৃণাল সেন। সেই শোকের রেশ কাটতে না কাটতেই খবর এল চিরবিদায় নিয়েছেন কাদের খান (Kader Khan)। সবার আদরের কাদের ভাই। অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। নানা ব্যাধির কাছে হার মানছিল প্রাণশক্তি। দেখা দিচ্ছিল বিস্মৃতি। ডিসেম্বরের গোড়ায় অসুস্থতার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন কানাডার হাসপাতালে। দুতিন দিন আগেই খবর এসেছিল ভেনটিলেশানে রাখা হয়েছে তাঁকে। অবশেষে সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বলিউডের প্রবীণ অভিনেতা (actor)। বয়স (age) হয়েছিল ৮১ বছর। তাঁর ছেলে সরফরাজ খান মিডিয়ার কাছে বাবার মৃত্যু সংবাদ জানিয়েছেন। (Actor Kader Khan Passed away).
অভিনেতা (actor) বলছি বটে, কিন্তু কাদের খানের আসল পরিচয় তাঁর কলমে। বহু জনপ্রিয় ছবির সংলাপ (dialogue) এবং চিত্রনাট্য (screenplay) লিখেছেন তিনি। আবার যখন অভিনয় করেছেন পর্দা কাঁপিয়ে দিয়েছেন। বহু জনপ্রিয় নায়কের পাশেও তাঁর উপস্থিতি ছিল অসম্ভব উজ্জ্বল। যে কোনও ছবির টাইটেলে তাঁর নাম থাকলে দর্শকদের প্রত্যাশা আর দ্বিগুন হয়ে যেত। আর সেই ছবি যদি কমেডি হয়, তাহলে তো কথাই নেই। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরাতে পারতেন, আবার খলনায়ক হয়ে বুকে রীতিমতো কাঁপন ধরিয়ে দিতেন। সেই কাদের খানই যখন সামাজিক ছবি করেছেন, দর্শকদের চোখের কোণে জল চিকচিক করেছে।
১৯৩১ সালে আফগানিস্থানের কাবুলে জন্ম হয় কাদের খানের। রাজেশ খান্না অভিনীত ‘দাগ’ ছবিতে প্রথমবার আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে করতেই নজরে আসেন বড় পরিচালকদের। বাড়তে থাকে তার চরিত্রের দৈর্ঘ্য। প্রথমে খলনায়কের চরিত্র তারপর কমেডি চরিত্রে একসময় কাদের খান ছাড়া কাউকে ভাবাই যেত না। বিশেষ করে গোবিন্দার সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল সুপারহিট। মজার বিষয় হল দুই ধারার অভিনয়েই অসম্ভব দক্ষ ছিলেন কাদের খান।
রাজেশ খান্নার সঙ্গে ছিল তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব। রাজেশই প্রথমবার তাঁর ছবি ‘রোটি’ তে সংলাপ লিখতে অনুরোধ করেন। তারপর থেকে শুরু হল কাদের খানের জীবনের সাফল্যের আরএক অধ্যায়। একের পর এক হিট ছবির সংলাপ তখন লোকের মুখে মুখে ঘুরত। কাদের খানের অনেক ভক্ত জানতেনই না যে ছবিতে তাদের প্রিয় কাদের ভাইয়ের মুখে সংলাপ শুনে তারা তালি বাজিয়েছেন, তার স্রষ্টা স্বয়ং কাদের খান। হিম্মতওয়ালা, ছ্যায়লা বাবু, তোফার মতো হিট ছবির সংলাপ লিখেছেন তিনি। আবার চিত্রনাট্য লিখেছেন কুলি, অমর আকবর অ্যান্টনির মতো সুপারহিট ছবিতে। অমিতাভ বচ্চন ছাড়া তিনিই একমাত্র শিল্পী যিনি প্রকাশ মেহেরা আর মনমোহন দেশাইয়ের দুই যুযুধান ক্যাম্পে কাজ করেছেন।
কাদের খানের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন অমিতাভ বচ্চন, অনুপম খের, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অক্ষয় কুমার, বরুণ ধাওয়ান প্রমুখ। অমিতাভ বচ্চন বলেছেন, বছরের শুরুতেই এরকম খবরে তিনি স্তম্ভিত। কাদের খান একজন অসামান্য অভিনেতা এবং একজন গণিতজ্ঞ! হ্যাঁ, ঠিক পড়েছেন। অভিনয় জীবনে আসার আগে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ছিলেন কাদের ভাই।
বহুদিন আগে টিভিতে ‘হাসনা মানা হ্যায়’ বলে একটি কমেডি শো করতেন কাদের খান। সত্যিই যেন সবার মুখের হাসি নিয়ে চলে গেলেন তিনি।
ছবি সৌজন্যঃ ফেসবুক
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!