home / লাইফস্টাইল
বস্তির দারিদ্র আর মৃগী রোগ জয় করেই ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কলকাতার আয়েশা নূর

বস্তির দারিদ্র আর মৃগী রোগ জয় করেই ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কলকাতার আয়েশা নূর

কলকাতার (Kolkata) বেনিয়াপুকুর অঞ্চলের মফিদুল ইসলাম লেন। নাম শুনেছেন? না শুনে থাকাটাই স্বাভাবিক। ঘুপচি অন্ধকার একটা গলি। অসহনীয় দারিদ্রে ভরা একটি সংসার। আর সেখান থেকেই সমস্ত অন্ধকার পেরিয়ে অদম্য জেদ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন আয়েশা। আয়েশা নূর (Ayesha Noor)। বছর একুশের আয়েশাকে এই অঞ্চলে সবাই একডাকে ক্যারাটে (karate) কিড বলে চেনে। জন্ম থেকে মৃগী রোগে আক্রান্ত আয়েশা। অনেক ছোট বয়সে মারা যান আয়েশার বাবা। তিনি ট্যাক্সি চালাতেন। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন আয়েশার মা শাকিলা খাতুন। দিদি সদ্য কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছে তখন। আর ভাই সদ্য কলেজে ঢুকেছে। সংসারের হাল ধরতে এগিয়ে এল দাদা তনবির। তার ছোট্ট একটা ব্যবসা আর শাকিলার সেলাইয়ের কাজ। কোনওমতে জোড়াতালি  দিয়ে চালানো একটা নড়বরে সংসার। 

আয়েশা প্রায়ই অজ্ঞান হয়ে যেত। এখন কিছুটা সুস্থ হলেও মাঝে মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যাওয়া তার লেগেই থাকে। কিন্তু বুকের মধ্যে আগুন নিয়ে যারা জন্মায় তাঁদের কি আর এত সহজে দমিয়ে রাখা সম্ভব? খুব ছোটবেলায় দাদা তনবিরকে ক্যারাটে শিখতে দেখেছিলেন আয়েশা। তখন তারও ইচ্ছে করত হু হা করে হাত পা ছুঁড়তে। শরীরে যুৎ থাকত না কিন্তু মনের অসীম জোরে তিনি ক্যারাটে শিখতে শুরু করেন। আয়েশার বাড়ির পাশেই লেডিজ পার্ক। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ক্যারাটে শেখাচ্ছেন এম এ আলি। আলি বুঝতে পেরেছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা স্বত্তেও আয়েশা পারবে। ও ঠিক পারবে। আয়েশা পেরেছে। আলি স্যারের প্রশিক্ষণে একের পর এক বাধা পার হয়ে নিয়ে এসেছেন মেডেল। পেয়েছেন অসংখ্য সম্মান। বছর খানেক আগেই দিল্লিতে মার্কিন সেন্টার থেকে তাঁকে দেওয়া হয়েছে ‘হিরো অব জেন্ডার ইকুয়ালিটি’র সম্মান। তবে শুধু নিজে ক্যারাটে শিখেই ক্ষান্ত হননি। ২০১২ সালে ‘নির্ভয়া কাণ্ড’ তাঁকে আমূল নাড়িয়ে দেয়। আয়েশা বুঝতে পারেন আত্মরক্ষা না করতে পারলে মেয়েদের সামনে সমূহ বিপদ। সেই শুরু। এখনও সপ্তাহে দুদিন ৯০০ জন কিশোরীকে বিনা পয়সায় ক্যারাটের প্রশিক্ষণ দেন আয়েশা নূর।

মুম্বাই, সিঙ্গাপুর, আবুধাবি সর্বত্র জয়ের নিশান উড়িয়ে এসেছেন তিনি। তবে তার মধ্যেই মাঝে মাঝে আলি স্যারের আফসোস হয়। শরীর খারাপ থাকায় অনেক সুযোগ হাতছাড়াও হয়েছে আয়েশার। একবার ইংল্যান্ড যাওয়ার কথা হয়েছিল, অসুস্থতার কারণে যেতে পারেননি। মা আয়েশা জানেন ছোটবেলা থেকেই মৃগীর সঙ্গে লড়ছে আয়েশা। মা হয়ে সব কিছু চোখের সামনে দেখা ছাড়া তাঁর আর কিছু করার নেই। কারণ আয়েশার চিকিৎসা করানোর মতো সঙ্গতি এই পরিবারের নেই। তার মধ্যেও কেউ কেউ সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে দেন। প্রতি মাসে আয়েশার কিছু ওষুধ লাগে। সেগুলো কিনে দিয়ে যান বাগুইআটি অঞ্চলের এক শিক্ষক। এছাড়া আলি স্যারের আশীর্বাদ তো আছেই। কিছুদিনের মধ্যে থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক স্পোর্টস মিটে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন আয়েশা। ঈশ্বর এই আলোর দিশারির জয় নিশ্চিত করবেন বলেই আশায় বুক বাঁধছে বেনিয়াপুকুরের এক ঘুপচি গলির বাসিন্দারা। 

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

ADVERTISEMENT

আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!

  

08 Aug 2019

Read More

read more articles like this
good points

Read More

read more articles like this
good points logo

good points text