সাবধান: কিবোর্ডে যে ঘর বেঁধেছে ক্ষতিকর সব ব্যাকটেরিয়া! (keyboard has 400 times more germs than a toilet seat)
রান্নাঘর, বাথরুম সহ বাড়ির প্রতিটি কোনাকে জীবাণু মুক্ত রাখতে আমাদের চেষ্টায় কোনও খামতি নেই। তবু বারে বারে নানাবিধ সংক্রমণ আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে কেন জানো? কারণ আজকের দিনে কম-বেশি আমরা সবাই কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি। আর গবেষণা বলছে কম্পিউটার কিবোর্ডে (germs on keyboard) প্রতিদিন এসে জড়ো হয় ভয়ঙ্কর সব ব্যাকটেরিয়া, যা হাত হয়ে একবার মুখে পৌঁছে গেলেই কেলো! কারণ এমন পরিস্থিতিতেই সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি এইসব জীবাণুদের কারণে নানাবিধ রোগের খপ্পরে পড়তেও সময় লাগে না।
তবে এখানেই শেষ নয়, পরিস্থিতি যে কতটা ভয়ঙ্কর, তার প্রমাণ মেলে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা এক স্টাডির দিকে নজর ফেরালেই। সেই পরীক্ষায় দেখা গেছে একটি টয়লেট সিটের তুলনায় প্রায় ৪০০ গুণ বেশি জীবাণু থাকে কিবোর্ডে (keyboard has 400 times more germs than a toilet seat,bacteria)। শুধু তাই নয়, এই গবেষণায় একথাও প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের কম্পিউটার কিবোর্ডে (keyboard) বেশি মাত্রায় ব্যাকটেরিয়া (bacteria) এসে বাসা বাঁধে, যা নানাভাবে শরীরের যে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে, তা তো বলাই বাহুল্য!
কেমন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মেলে কিবোর্ডে:
শিকাগো শহরের নর্থওয়েস্টার্ন মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি দুটি ভয়ঙ্কর ড্রাগ রেজিস্টেন্স জীবাণুর সন্ধান মেলে কিবোর্ডে, যার একটি হল ভিআরই (VRE) এবং অন্যটি হল এমআরএসএ (MRSA)। আর সবথেকে ভয়ের বিষয় হল এই দুটি ব্যাকটেরিয়া প্রায় ২৪ ঘন্টা জীবিত থাকে। আর একদিনে আমরা কতবার যে কিবোর্ড ব্যবহার করি, তার তো কোনও হিসেবই নেই। তাই এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো, বাথরুম এবং রান্না ঘর পরিষ্কারের পাশাপাশি নিয়মিত কিবোর্ড পরিষ্কার করারও প্রয়োজন কতটা!
সন্ধান মেলে নিউমোনিয়া রোগের জীবাণুর:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অনেক সময় কিবোর্ডে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া (bacteria) এসে ঘর বাঁধে, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বড়ে। তাই সাবধান!
কিবোর্ডে জীবাণুর আগমন ঘটে কীভাবে?
নিয়মিত স্নান না করলে এবং ঠিক মতো সাবান দিয়ে হাত না ধুলে আমাদের সারা শরীরে এবং হাতের তালুতে নানাবিধ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারা (bacteria) এসে ভিড় জমায়, যা হাত হয়ে পৌঁছে যায় কিবোর্ডে। সেখানে দিনে দিনে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করে (bacterial growth)। তারপর সেই সব জীবাণু পুনারায় হাত হয়ে পৌঁছে যায় আমাদের মুখে বা চোখে। আর এমনটা হওয়া মাত্র মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে নানান রোগ।
আরও নানাভাবে জীবাণুরা কিবোর্ড পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। যেমন এক স্টাডিতে দেখা গেছে টাকা, খেলনা, টয়লেট সিট, পেন এবং দরজার হাতলেও প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া (bacteria) থাকে, যা খুব সহজেই আমাদের হাতে লেগে যায়। আর সেখানে থেকে পৌঁছে যায় কিবোর্ডে। এই কারণেই তো কিবোর্ড ব্যবহারের আগে এবং পরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ এমনটা করলে একদিকে যেমন ক্ষতিকর জীবাণুরা কোবোর্ডে পৌঁছাতে পারে না, তেমনি শরীরের ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগও আর পায় না।
কিবোর্ড জীবাণুমুক্ত রাখা যায় কীভাবে (how to prevent the spread of diseases)?
এক্ষেত্রে কিবোর্ড ব্য়বহারের আগে এবং পরে হাত ধুয়ে নেওয়ার অভ্যাস করাটা যেমন জরুরি, তেমনি নিয়মিত কিবোর্ড এবং ল্যাপটপ পরিষ্কার করারও প্রয়োজন রয়েছে। আর তার জন্য যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে, সেগুলি হল…
ক. কম্পিউটার বন্ধ করে নিয়ে কিবোর্ডটা আনপ্লাগ করতে হবে। তারপর সেটা উল্টো করে ভালো করে ঝেরে নিতে হবে।
খ. এরপরে একটা পরিষ্কার সুতির কাপড় নিয়ে কিবোর্ডের প্রতিটি কিয়ের মাঝের অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ এইসব জায়গাতেই সবথেকে বেশি পরিমাণে জীবাণু এসে জমা হয়।
গ. এবার একটা কটন বার্ড নিয়ে আরেকবার কিয়ের ফাঁকগুলি পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ঘ. সবশেষে হলকা ভেজা একটা কাপড় দিয়ে কম্পিউটার স্ক্রিন এবং কিবোর্ডটা মুছে নিতে হবে। এইভাবে সপ্তাহে ৩-৪ দিন কিবোর্ড পরিষ্কার করলেই ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার ভয় আর থাকবে না।
আর যে যে জিনিস থেকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে:
কিবোর্ডে যেমন প্রচুর মাত্রায় জীবাণুরা এসে ভিড় জমায়, তেমনি মোবাইল ফোনের প্রতি স্কয়ার ইঞ্চিতে প্রায় ১,৩৭০,০৬৮ ব্যাকটেরিয়া এবং মাউসের প্রতি স্কয়ার ইঞ্চিতে প্রায় ১,৩৭০,০৬৮ জীবাণুর সন্ধান মেলে, যা প্রতি মুহূর্তে আপেক্ষা করে থাকে আমাদের শরীরের ক্ষতি করার। তাই নিয়মিত কিবোর্ডের পাশাপাশি মোবাইল ফোন এবং মাউস পরিষ্কার না করলে কিন্তু বিপদ!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!