প্রয়াত হলেন কিংবদন্তী নৃত্যশিল্পী (dancer) অমলাশঙ্কর (Amala Shankar)। শুক্রবার ভোরে ঘুমের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন অমলার নাতনি শ্রীনন্দা শঙ্কর। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০১ বছর।
এই মুহূর্তে শ্রীনন্দা মুম্বইতে রয়েছেন। ঠাকুমার মৃত্যুর খবর শুনেও লকডাউন পরিস্থিতি এবং মুম্বই থেকে সরাসরি কলকাতায় বিমান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে কলকাতায় আসতে পারছেন না। তিনি সোশ্যাল ওয়ালে লিখেছেন, ‘১০১ বছর বয়সে আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ঠাম্মা। গত মাসেই ওঁর জন্মদিন পালন করেছিলাম আমরা। খুব অস্থির বোধ করছি, কারণ মুম্বই থেকে কলকাতা যাওয়ার বিমান চলছে না। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। একটা যুগের অবসান হল। ঠাম্মা, তোমাকে খুব ভালবাসি। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ।’
অমলা শঙ্করের মৃত্যুতে কার্যত একটি যুগের অবসান হল। ১৯১৯ সালের ২৭ জুন অবিভক্ত বাংলাদেশের যশোরে জন্ম তাঁর। ছোট বয়স থেকেই নাচ ভালবেসেছিলেন। ১৯৩১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে প্যারিসের ইন্টারন্যাশনাল কলোনিয়াল এগজিবিশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখানেই শঙ্কর পরিবার তথা স্বামী ও গুরু উদয়শঙ্করের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল অমলার। তার পরেই উদয়শঙ্করের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন। উদয়শঙ্করের নাচের দলের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে শুরু করেন।
Today my Thamma left us at the age of 101. We just celebrated her birthday last month.
— Sreenanda Shankar (@Sreenanda) July 24, 2020
Feeling so restless that there is no flight from Mumbai to Kolkata. Heartbroken 💔
May her soul Rest in peace. This is an end of an era. Love you Thamma. Thank you everything. #AmalaShankar pic.twitter.com/tDh2dkdRhn
এর কয়েক বছর পরে ১৯৪২-এর মাত্র ১৯ বছর বয়সে উদয়শঙ্করের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন অমলা। বিয়ের পর আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে উদয়-অমলা জুটি। বিশ্বের বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী জুটিদের মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠেন তাঁরা।
উদয়শঙ্কর পরিচালিত ছবি ‘কল্পনা’য় উমার চরিত্রে অমলার নৃত্যাভিনয় দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়। কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় সেটি। সেইসময় কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়া কনিষ্ঠতম তারকা ছিলেন অমলাশঙ্কর। তার ৮১ বছর পর ২০১২ সালে ফের কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেন তিনি।
১৯৭৭ সালে উদয়শঙ্করের মৃত্যু হয়। তারপরও অমলাশঙ্কর দেশে-বিদেশে পারফর্ম করেছেন। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর অজস্র ছাত্র-ছাত্রী। উদয়-অমলার দুই সন্তান, প্রয়াত সুরকার আনন্দ এবং মমতাশঙ্কর। মেয়ে এবং বউমা তনুশ্রীশঙ্করের সঙ্গে মিলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শঙ্কর ঘরানাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন অমলাশঙ্কর।
গত ২৭ জুন ১০১ বছর পূর্ণ করেন অমলাশঙ্কর। বাড়ির সদস্যরাই সেলিব্রেট করেছিলেন। গত বছর অমলাশঙ্করের ১০০ বছরের জন্মদিনে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন মমতা। আত্মীয়, বন্ধু সমাগমে ভরে উঠেছিল বাড়ি। মালা পরিয়ে বসানো হয়েছিল অমলাশঙ্করকে। অতিথিদের চেনার চেষ্টা করছিলেন। সেই স্মৃতিই এখনও উজ্জ্বল সকলের মনে।
অমলার চলে যাওয়ার খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পী মহলে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, বিদেশ থেকেও তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছেন অনেকে। করোনার আতঙ্কে তাঁকে শেষ বারের জন্য প্রণাম করতে যাওয়া হল না অনেকের।