বাঙালির মিষ্টি প্রীতির কথা তো সবারই জানা। তাই তো আজ কলকাতা শহরের ঐতিহ্যের সঙ্গে যে সব মিষ্টির দোকান এর যোগ রয়েছে, তাদের কথা বলতে চলেছি এই লেখায়, যে সব দোকানে একবার ঢুঁ না মারলে এই জীবনটাই কিন্তু বৃথা (Legendary Sweet Shops of Kolkata You Must Visit)!
১. বলরাম মল্লিক এবং রাধারাম মল্লিক:
সেই ১৮৮৫ সাল থেকে নানা স্বাদের মিষ্টি পরিবশন করে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান। এমনকী আজকের দিনেও যুগের সঙ্গে তার মিলিয়ে চিরাচরিত বাঙালি মিষ্টির পাশাপাশি নানা ফিউশন মিষ্টিও রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে এই দোকানে, যার অন্যতম চকোলেট মিষ্টি যেমন ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে (best sweet shop in kolkata)।
ঠিকানা:
২, পদ্মপুকুর রোড, ভবানীপুর, কলকাতা। ফোন নং- ০৩৩-২৪৮৬-৯৪৯০। ভবানীপুর ছাড়াও কসবা, নিউ আলিপুর, প্রিন্স আনওয়ারশাহ রোড, পার্ক স্ট্রিট এবং বালিগঞ্জেও এই প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে।
মাস্ট ট্রাই:
এই দোকানের প্রায় সব মিষ্টিই বেশ সুস্বাদু। তবে জল ভরা সন্দেশ না খেলেই নয়! সেই সঙ্গে চেখে দেখতে পারেন আম সন্দেশও।
দুজনের খরচ: ৩০০ টাকর মতো।
২. কামধেনু:
১৯৯৫ সালে পথ চলা শুরু এই মিষ্টির দোকানের (sweets shops)। তারপর থেকে দুই দশক কেটে গেছে। কিন্তু এদের মিষ্টির জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। বরং দিনে দিনে আরও কলেবর বাড়ছে এই মিষ্টির দোকানের। এমনকি কলকাতা শহরের নানা প্রান্তে ইতিমধ্যেই খুলে গেছে এদের বেশ কয়েকটি শাখা।
ঠিকানা:
৫৫, যাদবপুর সেন্ট্রাল রোড, বিধান পল্লি, কলকাতা। ফোন নং- ০৯২৩১৫৫১৮৯১। যাদবপুর ছাড়াও গড়িয়া, নেতাজী নগর এবং ব্রাহ্ম সমাজ রোডেও এদের শাখা রয়েছে।
মাস্ট ট্রাই:
এখনকার কাঁচা গোল্লা বেশ জনপ্রিয়। তাই এই মিষ্টিটি চেখে দেখা মাস্ট! সেই সঙ্গে স্বাদ নিতে পারেন আম সন্দেশ এবং কাজু পিস্তা সন্দেশেরও। রয়েছে আরও নানান স্বাদের মিষ্টি।
দুজনের খরচ: ১৫০ টাকার মতো।
৩. নলিন চন্দ্র দাস অ্যান্ড সন্স:
নানান স্বাদের সন্দেশ খেতে যদি মন চায়, তাহলে একবার পৌঁছে যেতেই হবে এই মিষ্টির দোকানে। শুধু তাই নয়, ১৮৪১ সালে স্থাপিত এই মিষ্টির দোকানে আরও নানান স্বাদের মুখরোচক সব মিষ্টিও পাওয়া যায়, বিশেষত, বাটারস্কচ জলভরা সন্দেশের জনপ্রিয়তা তো আকাশ ছোঁয়া (best sweet shop in kolkata)।
ঠিকানা:
৩১৩, রবীন্দ্র সরণী, নতুন বাজার, কলকাতা। ফোন নং- ০৩৩-২৫৫৫৮৪০৭। এছারাও এদের রাসবিহারী, হেদুয়া, নিউ টাউন এবং ইকো পার্কের বাংলা মিষ্টি হাবেও শাখা রয়েছে।
মাস্ট ট্রাই:
আগেই বলেছি এখানকার বাটারস্কচ জলভরা সন্দেশ বেশ সুস্বাদু। তবে ইচ্ছা হলে চেখে দেখতে পারেন মালাই রোল।
দুজনের খরচ: ১০০-১৫০ টাকার মতো।
৪. সেন মহাশয়:
বাঙালির নস্টালজিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই মিষ্টির দোকানের নাম।আর কেন থাকবে নাই বা বলুন, সেই ১৮৬৬ সাল থেকে বাঙালিদের নানা স্বাদের মিষ্টি খাইয়ে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান। তবে মিষ্টির পাশাপাশি এখনকার কচুরি-অলুরদমও যে একবার খেয়েছে, সে তার স্বাদ কোনও দিন যে ভুলতে পারবে না, তা হলফ করে বলতে পারি।
ঠিকানা:
১/১সি শিবদাস ভাদুরী স্ট্রিট, শ্যামবাজার, কলকাতা। ফোন নং: ০৩৩-২৫৫৫৫০২২। শ্যামবাজার ছাড়াও লেক মার্কেট, গোড়িয়াহাট, সল্টলেক সেক্টার-১ এবং ভবানিপুরেও শাখা রয়েছে এদের।
মাস্ট ট্রাই:
এখনকার মনহরা, মিহিদানা এবং সিতাভোগ বেজায় জনপ্রিয়।
দুজনের খরচ: ১০০-১৫০ টাকার মতো।
৫. গিরিশ চন্দ্র দে অ্যান্ড নকুর চন্দ্র নন্দী:
কলকাতার প্রথম সারির মিষ্টির দোকানগুলির মধ্যে অন্যতম হল এটি। আজ থেকে প্রায় ১৭৫ বছর আগে স্থাপিত এই মিষ্টির দোকান আজও সমান জনপ্রিয়। শুধু তাই নয়, এখন তো কলকাতার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য শহরেও এদের মিষ্টি পৌঁছে যাচ্ছে। আর এমন জনপ্রিয়তার পিছনে মূল কারণ হল মিষ্টির মান এবং স্বাদ।
ঠিকানা:
৫৬, রামদুলাল সরকার স্ট্রিট, হেদুয়া, হাতিবাগান, কলকাতা। বেথুন কলেজের কাছেই এই মিষ্টির দোকান। ফোন নং: ৯৪৩২৪৯৪৪২৩।
মাস্ট ট্রাই:
এখানকার ছানার সন্দেশ এবং জল ভরা সন্দেশ একবার চেখে দেখতেই হবে।
দুজনের জন্য খরচ: কম-বেশি ১০০-১৫০ টাকার মতো।
৬. ভীম চন্দ্র নাগের মিষ্টির দোকান:
মিষ্টি প্রেমীদের কাছে এই দোকান স্বর্গের থেকে কম নয়। কারণ বাঙালি মিষ্টির ট্রেডিশনকে ফলো করে আজও এরা একের পর সুস্বাদু সব মিষ্টি পরিবেশন করে চলেছে। বিশেষত, এদের লেডিকেনি তো সেই ইংরেজ আমল থেকেই তুমুল জনপ্রিয়। সেই সঙ্গে এখন তো আইসক্রিম সন্দেশ, রোজ ক্রিম সন্দেশ এবং পিস্তা সন্দেশও বেশ জনপ্রিয়তা পয়েছে। তাই আপনি যদি “সুইট টুথ” এর অধিকারী হন, তাহলে একবার এই মিষ্টির দোকানে আসা চাইই চাই!
ঠিকানা:
৫, নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট, বউ বাজার মার্কেটের কাছেই। ফোন নং- ০৩৩-২২১২০৪৬৫।
মাস্ট ট্রাই:
এদের চকলেট সন্দশ, রসগোল্লা এবং আম দই চেখে দেখতেই পারেন। তবে এদের “আবার খাবো সন্দেশ”ও কিন্তু বেশ জনপ্রিয়।
দুজনের জন্য খরচ হবে: ১৫০-২০০ টাকার মতো।
৭. কে সি দাস:
কলকাতার মিষ্টির দেকান নিয়ে যখন আলোচনা, তখন কে সি দাসকে বাদ দেওয়া যায় কীভাবে বলুন! কারণ মিষ্টির দুনিয়ায় বিপ্লব এসেছে যে এই মিষ্টির দোকানের হাত ধরেই। সেই ১৮৬৬ সালে পথ চলা শুরু। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই প্রতিষ্ঠানকে। আর এখন তো শুধু এই রাজ্যেই নয়, দেশের অন্যান্য প্রান্তেও কেসি দাসের মিষ্টি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে (best rasgulla in kolkata)।
ঠিকানা:
১১ এ, এসপ্লেনেড ইস্ট, নিফ মার্কেটের সিগনালের কাছেই। ফোন নং: ০৩৩-২২৪৮৫৯২০।
মাস্ট ট্রাই:
এখনে এলে প্রথমেই চেখে দেখবেন এদের নানান স্বাদের রসগোল্লা। তারপর ইচ্ছা হলে ক্ষীর কদম বা সন্দেশও খেতে পারেন। এদের রসমলাইও কিন্তু বেশ জনপ্রিয়।
দুজনের খরচ: ১৫০-২০০ টাকার মতো।
৮. বাঞ্ছারাম:
১৯৭৬ সালে মধ্য কলকাতায় একটা ছোট্ট দোকান নেন বাঞ্ছারাম ঘোষ। আর সেখানেই শুরু করেন এক মিষ্টির দোকান। শুরুর দিকে সেই ভাবে লাভের মুখ না দেখলেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে বাঞ্ছারামের মিষ্টি। আর এখন তো কলকাতাবাসীদের মুখে মুখে ফেরে এই মিষ্টির দোকানের নাম (bancharam sweet shop in kolkata)।
ঠিকানা:
বি/৪, বাঘাযতীন মার্কেট কমপ্লেক্স, যাদবপুর, কলকাতা। তবে কলকাতার আরও ১৫ টি জায়গায় এদের শাখা রয়েছে।
মাস্ট ট্রাই:
এখনকার মষ্টি দই, রসগোল্লা এবং রাধাবল্লভি বেজায় জনপ্রিয়।
দুজনের জন্য খরচ: ১৫০-২০০ টাকা।
৯. পুঁটীরাম:
কলেজ স্কোয়ারের পাশেই এই শতাব্দী প্রাচীন মিষ্টির দোকান। এখনকার মিষ্টির স্বাদ যেমন না ভোলার মতো, তেমনি পুঁটীরামের রাধাবল্লভী আর ছোলার ডালের জনপ্রিয়তা তো সারা উত্তর কোলকাতা জুড়ে। তাই এই দোকানে এসে একবার মিষ্টিমুখ না করলে হয় বলুন!
ঠিকানা:
১২ এ, সূর্য সেন স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, কলকাতা।
মাস্ট ট্রাই:
রাধাবল্লভী, ছোলার ডাল আর কচুরি তো খেতেই হবে। সেই সঙ্গে চেখে দেখতে পারেন এখনকার রসগোল্লা এবং গুলাব জামুনও।
দুজনের জন্য খরচ: ১০০-১৫০ টাকার মতো।
ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকার: youtube, wikipedia
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!