থাম্বস আপঃ কঙ্গনার অভিনয় ও তার প্রয়াস, বিগ বির ভয়েস ওভার
থাম্বস ডাউনঃ সংলাপ, চিত্রনাট্য এবং অতিনাটকীয়তা
বহুদিন ধরেই চলছিল ছবির শুটিং। মধ্যে মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় টুকটুক করে ঝাঁসির (Jhansi) রানি (Queen) লক্ষ্মীবাঈ রূপে নিজের ছবি পোস্ট করছিলেন কঙ্গনা রানাউত (Kangana Ranaut)। ছবির শুটিং নিয়ে সমস্যাও কম হয়নি। মাঝপথে রাধাকৃষ্ণ জগলারমুদির সঙ্গে সহ-পরিচালকের আসনে বসলেন অভিনেত্রী স্বয়ং। সোনু সুদ ওয়াক আউট করলেন। আর তারপর করনানি সেনার রোষের মুখে পড়ল কঙ্গনার (Kangana) ড্রিম প্রজেক্ট। তবে হিমাচলের এই মেয়ে তো যে সে মেয়ে নয়। সে জোর গলায় বলে দিয়েছিল, তার ছবির কোনও কলাকুশলীর গায়ে যদি একটা আঁচড় পড়ে তো কুরুক্ষেত্র হবে। জাতিতে তিনিও রাজপুত। তাই বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী! কঙ্গনার এই লড়াই সফল। রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের চরিত্রে তিনি কাচ কাটা হিরের মতো উজ্জ্বল।
তাঁতিয়া টোপের চরিত্রে অতুল কুলকার্নি
ছবির গল্প স্কুলে পড়া ইতিহাসের দৌলতে আমাদের সবারই জানা। তাই মণিকর্ণিকাঃ দা কুইন অফ ঝাঁসি (Manikarnika: The Queen of Jhansi) নিয়ে বেশি কথা বললাম না। ছবির শুরুতে অমিতাভ বচ্চনের ভয়েস ওভারে রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেয়। ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ আর ‘লাগান’-এর পরে ব্যারিটোন কণ্ঠ আজও যেন মাসাইদের ড্রামের মতো কম্পন তোলে। এবার সরাসরি সিনেমার প্রসঙ্গে আসা যাক। মণিকর্ণিকার (Manikarnika) সিনেম্যাটোগ্রাফি, সেট ও কস্টিউম ডিজাইন এবং মেকআপ মোটামুটি । আরও একটু ডিটেল গবেষণার প্রয়োজন ছিল। ভিএফএক্সগুলোও আর একটু উন্নত হলে ভালো লাগত। ছবির শুরুতে দেখানো হয়েছে মনু বা মণিকর্ণিকা কত সাহসী এবং কতটা শারীরিকভাবে সক্ষম।ঘোড়ায় চড়া, তলোয়ার চালানো ইত্যাদিতে কঙ্গনা উতরে গেছেন। বোঝাই যাচ্ছে তিনি এগুলো সময় নিয়ে শিখেছেন। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় Queen কে এই মর্দানি দেখানোর প্রয়াস একটু বেশি বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। রানির বেশে যদিও কঙ্গনাকে ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছিল।ছবির প্রথমার্ধ মোটামুটি ঠিকঠাক এগোলেও গোল বাঁধল দ্বিতীয়ার্ধে। রানির (Queen) প্রথম সন্তান ও স্বামী গঙ্গাধর রাও মারা গেলেন। তার আগে কঙ্গনার শাশুড়ি তেজিয়াল পুত্রবধূকে গোল্লা গোল্লা চোখ করে খুব ধমকালেন। বোঝালেন যে মেয়েদের এত বেশি ধিঙ্গিপনা করতে নেই। গঙ্গাধরের ভূমিকায় যিশু সেনগুপ্ত অভিব্যক্তিহীন। তিনি কেন ওই চরিত্রটা করলেন, যেখানে তার কণ্ঠস্বরটাও নিজের নয় এটা একটা বড় প্রশ্ন। কঙ্গনার উজ্জ্বল উপস্থিতির পাশে ভীষণই ফ্যাকাসে যিশু। নড়বড়ে চিত্রনাট্য পুরো মাটিতে মিশে যেতে থাকল ছবি এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে। সম্ভবত অভিনয়, নির্দেশনা সহ আরও নানাবিধ বিষয় নিয়ে কঙ্গনা (Kangana) ঈষৎ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই প্রথমদিকে তার অভিনয়ে যে বৈচিত্র ছিল সেটা পরের দিকে বেমালুম উধাও। তখন নয় তিনি বিষণ্ণ নয়তো বা ইংরেজদের বিরুদ্ধে দাঁত কিড়মিড় করছেন। ঠিকঠাক ব্যবহার হয়নি অতুল কুলকার্নি ও ড্যানি ডেনজোংপার অভিনয়।
রাজা গঙ্গাধর রাওয়ের চরিত্রে যিশু সেনগুপ্ত
এই হিন্দি সিনেমায় ইংরেজদ বা ব্রিটিশদের চরিত্র নিয়ে আমার কিছু বলার আছে। তারা সব সময় এরকম ভাঁড় কেন হয়? আরও একটু সুন্দর করে কি ব্রিটিশদের দেখানো যেত না? তার উপরে ঝাঁসির মেয়ে যখন বান্ধবী ঝলকারিবাঈকে বাঁচাতে গেলেন, গড়গড় করে চোস্ত ইংরিজি বলে এলেন। এত ইংরিজি রানি শিখলেন কখন? এরকম অনেক প্রশ্ন আছে যা আপনার মনের কোনে উঁকি দিতে বাধ্য।
এই ছবিতে ডেবিউ করেছেন অঙ্কিতা লোখান্ডে। স্ক্রিনে দেখতে তাকে ভারী সুন্দর লেগেছে বটে। কিন্তু তার ক্ষেত্রেও ওই একই প্রশ্ন। সব ছেড়ে তিনি খামোখা এই ছবি দিয়ে ডেবিউ করতে গেলেন কেন? এমনিতেও অঙ্কিতাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি ডেলি সোপের হ্যাংওভার এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ছবির গান বাজনা নিয়ে কিছু বললাম না কারণ বলার মতো কিছু নেই!
তবে আগা থেকে গোড়া, যার কাঁধের উপর এই ছবি দাঁড়িয়ে তিনি স্বয়ং রানি লক্ষ্মীবাঈ অর্থাৎ কঙ্গনা। সুতরাং আপনি যদি কুইনের ভক্ত হন বা পিরিয়ড ড্রামার উপর আপনার বিশেষ আকর্ষণ থাকে তাহলে একবার দেখেই আসুন রানির লড়াই।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!