ADVERTISEMENT
home / Festival
মহালয়া থেকে সিঁদুর খেলা, নতুন শাড়ি থেকে ম্যাডক্সে ঝাড়ি, বাঙালির পুজো মানেই জিয়ানস্টাল

মহালয়া থেকে সিঁদুর খেলা, নতুন শাড়ি থেকে ম্যাডক্সে ঝাড়ি, বাঙালির পুজো মানেই জিয়ানস্টাল

আপনি কি ঘুড়ি ওড়ান? উত্তর হ্যাঁ হোক বা না, সেটা জরুরি নয়। বিশ্বকর্মা পুজো হওয়া মানেই বাঙালির ‘’পুজো এসে গেছে পুজো এসে গেছে” বাতিক শুরু। হ্যাঁ, হ্যাঁ, বাতিক! ম্যাডনেস বলুন, বাতিক বলুন, পাগলামো বলুন, নস্টালজিয়া (nostalgia) বলুন, সে আপনার যা ইচ্ছে, তাই বলুন। কিন্তু এর চেয়ে বড় নির্জলা এবং নির্ভেজাল সত্যি আর হয় না! আপনি আপিসের ডেস্কে বসে-বসে জরুরি ফাইল দেখেন আর মন চলে যায় আকাশের দিকে! ক’টা ঘুড়ি উড়ছে যেন? তিনটে না পাঁচটা? মহালয়া আর কদ্দিন পরে? তাপসরা এবার আন্দামান যাচ্ছে, আমি বাবা পুজোর সময় কোথাও যাব না, এবার আর শাড়ি কিনব না, অনেক আছে, টুনু বলছিল আমাকে নাকি ওয়েস্টার্নে মানায় না? ইস ওকে যেন খুব মানায়…!!! বুকে হাত দিয়ে বলুন দেখি, এই সব হাবিজাবি কথা আপনি ওই অত কাজের মধ্যেও ভাবেন কিনা? আরে না না, আমরা আপনার বসকে কিচ্ছু বলব না! আসলে পুজোর এই পাঁচটা দিন সারা বিশ্বের বাঙালিদের এক সুতোয় বেঁধে ফেলে আর সেই সুতোর নাম হল নস্টালজিয়া। তা সেই রোগে তো বাঙালি চিরকালই আক্রান্ত। শুধু পুজোর (puja) সময় যত এগিয়ে আসে তত সেই রোগ চাগাড় দিয়ে ওঠে। তারপর আবার সেই থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড় জীবন। এই আবেগ (memories) আর নস্টালজিয়া বাদ দিলে তাই বাঙালির পুজো নেহাতই পানসে। সেগুলো একবার দেখে নেওয়া যাক তা হলে। 

আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ

rshweta

ঝকঝকে নীল আকাশ আর তার মধ্যে ভেসে যাচ্ছে টুকরো-টুকরো সাদা মেঘ। এইটা দেখার পর কোন আহাম্মক কাজ করে বলুন দেখি? তখন মনে হয় পালিয়ে যাই। আর না হয় চোখ আটকে যায় ক্যালেন্ডারের দিকে। কবে আসবেন উমা? শরৎকালের মহিমাই এরকম। 

ADVERTISEMENT

কাশ আর শিউলি

hootingbluebird

সব ষড়যন্ত্র, জানেন তো চক্রান্ত এই সব। নাহলে অমন সুন্দর দুটো ফুল, অমন মন কেমন করা ফুল কেন শুধু পুজোর সময়ই ফোটে? দোষ হয় বাঙালিদের। বাড়ির সামনের শিউলি গাছটায় যখন থোকা-থোকা সাদা ফুল ধরে চোখের কোণে যে জল আসে! আর কাশফুল? এই শহর যতই কংক্রিট জঙ্গলে ভরা হোক না কেন, তার মধ্যেই সাদা লম্বা ফুলের আঁকিবুঁকি। 

মহালয়ার সকাল ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্রপাঠ

এই নিয়ে তো বস কিছু বলবই না! এযে কীরকম অনুভূতি আর কীরকমের নস্টালজিয়া, বাঙালি না হলে বাপু এজন্মে বোঝা সম্ভব নয়। আমার বাবার খাঁটি বিলিতি বসও মহালয়ার সকালে মহিষাসুরমর্দিনী শুনে হাপুস নয়নে কেঁদে ভাসাতেন। তাহলে বুঝুন একবার। একে ওইরকম একটা শীত-শীত ভোর, তার মধ্যে সেই অদ্ভুত, আশ্চর্য লোকটার মন নিংড়ে দেওয়া কণ্ঠস্বর। ধুস, এসব ছেড়ে কেউ আমেরিকা যায়! 

ADVERTISEMENT

নতুন জামাজুতো

কেউ আগের দিন করে আর কেউ এক মাস আগে থেকে। কখনও একা, কখনও সদলবলে। গড়িয়াহাট থেকে হাতিবাগান, সেখান থেকে নিউ মার্কেট। শপিং করার সময় বাদ পড়ে না ছোট-বড় কোনও জায়গা। যারা কোমর বেঁধে দামদর করতে পারে, তারা তো মুখিয়ে থাকে এই সময়টার জন্য। শপিং করা তার পরে ক্লান্ত হয়ে রেস্তরাঁয় কবজি ডুবিয়ে খাওয়া…উফ, টোটাল বাঙালিয়ানা। আর এই কেনাকাটার সবচেয়ে ভাল দিক কোনটা বলুন তো? পেয়ে যতটা আনন্দ হয়, দিয়ে হয় তার চেয়ে দশগুণ। 

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা

saheli sen

যাঁদের বাড়িতে বা পাড়ায় বড় পুজো হয় তাঁরা তো সৌভাগ্যবান। সকালটা শুধু হওয়ার অপেক্ষা তারপরেই সোজা প্রতিমার সামনে। আর শুধু কি গল্প? আড্ডা, গান বাজনা, ঝগড়া খুনসুটি কত কী যে হয় এইসময়। সব স্মৃতির মণিমুক্তো হয়ে জমা হয়ে যায় মনের মধ্যে। হয়তো কেই বেঙ্গালুরু থেকে এসেছে, কেউ দিল্লি…পুজো হয়ে গেলে আবার ফিরে যাবে কাজের জায়গায়। মধ্যে এই ক’দিন জমিয়ে গল্প আর আড্ডা, এ কি ছাড়া যায়? 

ADVERTISEMENT

পুজোর প্রেম

husn_e_shabnam

একসঙ্গে এত হ্যান্ডসাম ছেলে আর এত সুন্দরী মেয়ে ঝাঁকে-ঝাঁকে শুধু পুজোর সময়ই দেখা যায়। তাই একটুআধটু প্রেম হবে না সেটা কি হতে পারে? না সব প্রেমই যে ভয়ানক সিরিয়াস হবে তা নয়। ওই আর কী! একটুআধটু তাকানো, সুযোগ পেলে ফোন নাম্বার হাতানো, টুকটাক হোয়াটসআপ, তারপর কপালে থাকলে ব্যাপারটা এগোবে আর না হলে আসছে বছর আবার হবে! আর এই পুজোর প্রেম প্রেম খেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় লীলাক্ষেত্র হল ম্যাডক্স স্কোয়্যার। ও, আপনি তো সেটা জানেন দেখছি! 

জমিয়ে খাওয়া দাওয়া

ADVERTISEMENT

saheli sen

পেটপুজো বাদ দিয়ে বাঙালির কোনও পুজোই হয়না। সে দুর্গা পুজো হোক আর ঘেঁটু পুজোই হোক। মা যদি বলে “আজ বাড়িতে খাস, কদিন ধরে তো বাইরে খাচ্ছিস!” বিশ্বাস করুন ব্রহ্মতালু জ্বলে যায়! আমার বন্ধুরা সিরাজে বিরিয়ানি সাঁটাবে আর আমি খাব পাতলা মাছের ঝোল? কভি নহি। পুজোর ভোগ তো কোনও মতেই ছাড়া যাবে না। 

পুষ্পাঞ্জলি

ওসব আসলে বাহানা। এত ভক্তি আহা মরে যাই আর কী! আসলে আপনি ওই হলুদ পাঞ্জাবি পরা ছেলেটার পাশে দাঁড়াতে চান। আর আপনিও চান ওই নীল শাড়ি পরা মেয়েটার মাথায় গিয়ে সব ফুল পড়ুক। ধ্যাত! প্রেম, পুজো, অঞ্জলি সব এক্কেবারে মিলে মিশে একাকার। মিষ্টি ব্যাপার কিন্তু, তাই না? একটা সেলফি তুলে নিতে ভুলে যাবেন না কিন্তু! পুজোয় ওটা মাস্ট। 

প্রবাসীদের বাড়ি ফেরা

শুধু পুজোর কটা দিন বাড়ি ফিরবে বলে অন্য দেশে অন্য শহরে প্রানপাত করে কাজ করে বাঙালি। মা দুর্গাকে ডাকে আর বলে হে মা মাঝখানে ঝপাং করে একটা উইকেন্ড ফেলে দাও। আরে মা আমাদের অমন জব্বর অসুরকে কুপোকাত করে দিল আর এটুকু পারবে না? আর উইকেন্ড হোক ছাই না হোক, এই সময় সব্বাই বাড়ি আসতে চায়। আর আপনিও চান আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব, বাপ মা বেয়াই বোনাই জগাই মাধাই যে যেখানে থাক না কেন, পুজোর কটা দিন যেন আওনার চোখের সামনে থাকে।  

ADVERTISEMENT

সিঁদুর খেলা

বড় বড় পণ্ডিতরা বলেন এই সিঁদুর খেলার সঙ্গে নাকি আসলে পুজোর কোনও যোগ নেই। মানে ওই যে কীসব পুঁথি পত্তর আছে তাতে এসব লেখা নেই। নেই তো নেই। ওসব নাকি বাঙালিরা জোর করে মোচ্ছব করবে বলে যোগ করেছে। বেশ করেছে। এত মজা আর এত আনন্দ কোথায় আছে বলুন তো? 

ভাসানের নাচ

নাচতে পারেন কি পারেন না সেটা বড় কথা নয়। আসল ব্যাপার হল গঙ্গার ঘাটে যাওয়া, ছবি তোলা আনন্দ করা আর মাকে বিদায় জানানো। নাচতে নাচতে ঠাকুর ভাসান দিতে যাওয়ার যে কী মজা সেটা আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না। 

বিজয়ার প্রণাম, কোলাকুলি ও মিষ্টিমুখ

এক সময় বাঙালি বাড়িতে মায়েরা নিজে হাতে বিজয়ার মিষ্টি, নিমকি, নাড়ু সমস্ত তৈরি করতেন। এখন সেসব পাট প্রায় চুকে গেছে। বাঙালি যেদিন থেকে বং সেজে সং হয়েছে সেদিন থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রণাম আর কোলাকুলির রেওয়াজও বিশেষ একটা চোখে পড়ে না। এখন ওই ‘এসএমএসেই বিজয়া সারা” গোছের যান্ত্রিক ব্যাপারই সুপারহিট। তবে যাই হোক না কেন, এই দিনটার একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে সেকথা অস্বীকার করে লাভ নেই। 

মন খারাপ আর অপেক্ষা

ঝপ করে আসে আর ঝপ করে চলে যায়। দুঃখ বলতে এটাই। ফাঁকা প্যান্ডেল দেখলে মনটা কেমন জানি হুহু করে ওঠে। তারপর আবার এক বছরের অপেক্ষা। নস্টালজিয়ার খাতার পাতাগুলো উড়তে থাক তদ্দিন! 

ADVERTISEMENT

Featured Images: barirpujo, nyra banerjee, no.fancy.username

 

POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!

01 Oct 2019

Read More

read more articles like this
good points

Read More

read more articles like this
ADVERTISEMENT