মেট্রো, চ্যাপলিন, মালঞ্চ, এলিট। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল মিত্রা (Mitra)। বন্ধ হয়ে গেল শহরের (Kolkata) ঐতিহ্যবাহী ৮৮ বছরের পুরনো এই প্রেক্ষাগৃহ। আধুনিকতার কাছে হার মানল আভিজাত্য। মাল্টিপ্লেক্সের (Multiplex) কাছে হার মানল সিঙ্গল স্ক্রিন (Single screen)। থমকে গেল মহানগরীর এক উজ্জ্বল ইতিহাস!
কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত? রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যা, খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা- এই কারণেই মিত্রা (Mitra) সিনেমা (Cinema) বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিক কর্তৃপক্ষ।
উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার-হাতিবাগান এলাকার বহু পুরনো প্রেক্ষাগৃহ মিত্রা (Mitra)৷ ১৯৩১ সালে এই সিনেমার হল তৈরি হয়েছিল মহানগরীর (Kolkata) বুকে। প্রথমে এই প্রেক্ষাগৃহটির (Cinema) নাম ছিল চিত্রা৷ স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে হলটি কিনে নিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার জমিদার বংশের সদস্য হেমন্তকৃষ্ণ মিত্র৷ তিনিই নাম পাল্টে রাখেন মিত্রা৷ সেই সময় অর্থাৎ ষাটের দশক থেকেই মিত্রার পথ চলা শুরু৷ প্রায় ৯০ বছরের কাছাকাছি সময় ধরে বহু পরিবর্তনের সাক্ষী এই প্রেক্ষাগৃহ (Cinema)৷ উত্তর কলকাতার (Kolkata) সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে মিত্রা সিনেমা হলের নাম। বাণিজ্যিক বাংলা ছবিই হোক কিংবা মূল ধারার বিদেশি ছবি- সব ধরনের ছবির জন্যই এত দিন দরজা খুলে রেখেছিল মিত্রা (Mitra)।
আজকের দিনে মাল্টিপ্লেক্সের (Multiplex) যুগেও বহু বাংলা ছবির নির্মাতারা এই প্রেক্ষাগৃহকেই (Cinema) বেছে নিতেন আর সেই সব বাংলা ছবির (Movie) জন্য সব সময় দরজা খোলা রেখেছিল মিত্রা (Cinema) ৷ পাশাপাশি, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে বেশ কয়েক বার সংস্কারও করা হয়েছে প্রাচীন এই প্রেক্ষাগৃহের৷ বিলাসবহুলও হয়েছিল বেশ! কিন্তু ঐতিহ্য বজায় রেখে সিঙ্গল স্ক্রিনই রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মাল্টিপ্লেক্স আর করা হয়নি৷ সেটাই বোধহয় কাল হয়েছে৷ আক্ষেপ ঝরে পড়ে মালিক দীপেন্দ্রকৃষ্ণ মিত্রের কথায়৷ তিনি জানালেন, মাল্টিপ্লেক্সের যুগে যত ভাল ছবিই (Film) চলুক না কেন, হল ভরছে না দর্শকে৷ তাই লাভ তো হচ্ছেই না, এমনকী কখনও কখনও প্রেক্ষাগৃহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় খরচটুকুও উঠছে না৷ এই সমস্যা বেশ কয়েক দিন ধরেই হচ্ছিল৷ তা সত্ত্বেও ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলটি চালানোর চেষ্টা করে যাওয়া হয়েছে৷ কিন্তু ব্যবসায়িক দিক থেকে শেষ পর্যন্ত হার মানতেই হল৷ শনিবারই শেষ বারের মতো ছবি প্রদর্শন হয়েছে এই প্রেক্ষাগৃহে। মালিক দীপেন্দ্রকৃষ্ণ মিত্র আরও জানিয়েছেন, মিত্রা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে সেখানে একটি শপিং মল তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে৷
যে হেতু শুধু উত্তর কলকাতাই নয়, গোটা কলকাতার (Kolkata) সিনেমাপ্রেমীদের মনে একটা আলাদা জায়গা করে রেখেছিল মিত্রা, তাই এই হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মন খারাপ বহু সিনেপ্রেমীর। যাঁরা ওই অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন, তাঁরা ভাবতেও পারছেন না মিত্রার বন্ধ হয়ে যাওয়া। কারণ তাঁদের ছোটবেলার বহু স্মৃতিই এই প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে জড়িয়ে। তাঁদের আক্ষেপ, মাল্টিপ্লেক্স (Multiplex) কালচারই আজ শেষ করে দিল মিত্রাকে। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্ম আজকাল মজেছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমে। ফলে এ সবের দাপটে কমে আসছে সিঙ্গল স্ক্রিনের চাহিদা।
ঠিক যেমন হয়েছিল ধর্মতলার মেট্রো সিনেমার ক্ষেত্রেও। প্রাচীন এই প্রেক্ষাগৃহ ভেঙে ফেলা হয়েছিল। তার পরে সেখানে তৈরি হয়েছে শপিং মল। কিন্তু অনেকেই আশা করেছিলেন, সেখানে হয়তো প্রেক্ষাগৃহও থাকবে। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হয়নি। হয়তো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে মিত্রার ক্ষেত্রেও!
ছবি সৌজন্যে: মিত্রা সিনেমা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ইনস্টাগ্রাম
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলাতেও!