সুন্দর সুন্দর মেহেন্দি এর ডিজাইন (Mehendi Design) করতে আমাদের সবারই ভালো লাগে, আর যদি বিয়ের জন্য মেহেন্দি লাগানো হয় তাহলে তো সেটা একটা বিশেষ ব্যাপার। শুধু অবাঙালি নয়, আজকাল তো বাঙালি বিয়েতেও মেহেন্দির অনুষ্ঠান করা হয় যেখানে কনের সাথে সাথে তার পরিবারের মহিলারা এবং বান্ধবীরাও মেহেদি পরেন। আর তো কদিন পর থেকেই আরম্ভ হয়ে যাবে বিয়ের মরসুম, তাই রইল কয়েকটা ভালো ভালো মেহেন্দি পরার ডিজাইন (Bridal Mehendi Design) এর হদিশ –
বিয়ের সময়ে কীরকম মেহেন্দির ডিজাইন পরবেন সেটা নিয়ে চিন্তিত? নানা রকম ডিজাইনের মধ্যে থেকে কোনটা বাছবেন যদি বুঝতে না পারেন, তাহলে নিচে দেওয়া এই ২৭ রকমের সুন্দর বিয়ের মেহেদি ডিজাইন (Mehndi Art) থেকে যে কোনও একটা বেছে নিন –
মুঘল যুগের নানা রাজকীয় আচার-অনুষ্ঠান, রিতি-রেওয়াজ অথবা ঘটনা বর্ণনা করে এই মেহেদি ডিজাইন আঁকা হয়। নবাব এবং তাঁর বেগমদের প্রেমের গাথা এঁকে দেওয়া হয় কনের হাতে যাতে তাঁর বিবাহিত জীবনও সুখের হয় এবং সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে। বেগমরা আগে অনেকটা সময় কাটাতেন মেহেদী লাগাতে। এই ধরণের ডিজাইন খুবই সুন্দর দেখতে লাগে।
যেকোনো হিন্দু অনুষ্ঠান কিন্তু আরম্ভ হয় কোনও না কোনও পুজো দিয়ে। আর বিয়ের ক্ষেত্রেও তাঁর ব্যতিক্রম হয়না। বাঙালি বিয়েতে নান্দীমুখ থেকে আরম্ভ হয় অনুষ্ঠান এবং বিয়ের সময়েও অগ্নিদেবতাকে সাক্ষী করে মিলন হয় দুটি হৃদয়ের। কাজেই যদি মেহেন্দির ডিজাইনেও দেব-দেবীর ছবি আঁকা যায়, তাহলে তো সেটা ভালই, তাই না? রাধাকৃষ্ণ কিংবা গণেশ – যেকোনো একটা ডিজাইন কনে পছন্দ করতেই পারেন বিয়ের মেহেদি ডিজাইন এর জন্য।
যদি আপনার ট্র্যাডিশনাল ডিজাইন পছন্দ না হয়, তাহলে আপনি কিন্তু সার্কুলার মেহেন্দি ডিজাইন (Mehndi Art) করাতে পারেন। পায়ে এবং হাতে এই ধরণের ডিজাইন খুবই সুন্দর দেখতে লাগে। সবার মতোও না আবার দেখতেও সুন্দর – বিয়ের কনের আর কি চাই ফ্লন্ট করার জন্য?
আরও একটা মডার্ন মেহেদির ডিজাইন হল জ্যামিতিক আকারের ডিজাইন। যারা কল্কা পছন্দ করেন না, তাঁরা কিন্তু বিয়েতে সোজা সোজা রেখা দিয়ে এই ধরণের জ্যামিতিক ডিজাইন হাতে এবং পায়ে আঁকাতে পারেন। এই ধরণের বিয়ের মেহেদি ডিজাইন (Bridal Mehendi Design) পরলে কিন্তু তাঁর সাথে মানানসইভাবে মেকআপ এবং গয়না রাখতে হবে।
অনেক কনের কাছেই তাঁর বিয়েটা তাঁর জীবনে একটা স্বপ্নের দিন। আর তার জন্য কিন্তু ট্র্যাডিশনাল মেহেদি ডিজাইন একদম পারফেক্ট। নানা রকমের কল্কা কিংবা চেক প্যাটার্ন দিয়ে এই মেহেদী ডিজাইন আঁকা হয়। শুধু কনে না, কনের বাড়ির আত্মিয়ারাও কিন্তু এই ধরণের ডিজাইন বেছে নিতে পারেন। সত্যি কথা বলতে কি এটাই খুব বেশি চলে।
আপনি চাইলে একটু অন্য রকমের ডিজাইনও ট্রাই করতে পারেন। এক হাতে বরের ছবি অন্য হাতে কনের ছবি দিয়ে সুন্দর ডিজাইন হয়। এটি কিন্তু একটি ক্লাসিক ডিজাইন আর সত্যি বলতে এই ডিজাইন পুরনো হবার নয়। শুধু বর বা কনের ছবি না, বিয়ের কোনও অনুষ্ঠান বা নিয়ম আচারের ছবিও কিন্তু আপনি মেহেদীর ডিজাইন (Mehndi Design) এ রাখতে পারেন, যেমন ধরুন সিঁদুরদান বা মালাবদল।
অ্যারোবিক স্টাইল মেহেদির ডিজাইন আর ভারতীয় ট্র্যাডিশনাল মেহেদি ডিজাইনের (Henna Art) মধ্যে পার্থক্যটা অনেকেই বুঝতে পারেননা। ভারতীয় ডিজাইনগুলি অনেক বেশি ভরাট হয় আর সেখানেই অ্যারোবিক ডিজাইনে অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা ভাবে আঁকা হয় মেহেন্দি। সাধারণত কনের বোনেরা বাঁ বান্ধবীরা এই ধরণের ডিজাইন করে মেহেন্দি পরেন, তবে আপনি যদি কনে হন আর আপনি যদি অ্যারোবিক ডিজাইনের মেহেন্দিই পরতে চান বিয়েতে তাহলে পরতেই পারেন।
আমার যেমন মেহেন্দির গন্ধ খুব ভালো লাগে, কিন্তু তার মানে এটা নয় যে সবারই তা ভালো লাগবে। অনেকেই মেহেন্দির গন্ধ পছন্দ করেন না কিন্তু বিয়েতে মেহেদী না পরলেও নয়। তাঁরা কিন্তু মিনিমালিস্টিক ডিজাইন করাতে পারেন। এই হাল্কা-ফুল্কা ডিজাইন আপনাকে কিন্তু ‘জেন ওয়াই ব্রাইড’ করে তুলবে।
এখন কিন্তু সব কিছুতেই নতুনত্ব। আর বিয়েই বা কেন বাদ যায় এর থেকে? সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ‘হ্যাসট্যাগ’ ব্যাপারটা আমরা সবাই জানি। কোনও কিছু পোস্ট করলেই সাথে সাথে কয়েকটা হ্যাসট্যাগ জুড়ে দিন, ব্যাস আপনি কিন্তু ট্রেন্ডিং। সেই ট্রেন্ড যদি বিয়েতেও ধরে রাখতে চান তাহলে নিজের বিয়ের জন্য একটা হ্যাসট্যাগ তৈরি করুন, হ্যাঁ অনেকটাই ‘নিকিয়াঙ্কা’ বা ‘দিপভীর’ অথবা ‘বিরুস্কা’-র মতো। আর মেহেন্দি আর্টিস্টকে বলুন যে আপনার হাতে যখন ডিজাইন আঁকবেন, তখন যেন আপনার বিয়ের হ্যাসট্যাগটাও এঁকে দেন।
বর আর কনের ছবি তো না হয় আঁকা হল মেহেন্দির ডিজাইনে (Mehendi Design), কিন্তু তাতে তো কোনও নিজস্ব ছোঁয়া নেই। তাহলে? আপনার বিয়েতে যিনি মেহেদি পরাবেন তাকে আগে থেকেই নিজের আর নিজের বরের ছবি দিয়ে রাখুন আর বলুন যে আপনার হাতে আপনার হবু বরের পোট্রেট এঁকে দিতে আর আপনার হবু বরের হাতে আপনার পোট্রেট এঁকে দিতে, অবশ্যই মেহেদি দিয়ে।
যদি চান যে আপনাদের প্রেমের কাহিনী সবাই জানুক, তাহলে মেহেন্দির ডিজাইনের মধ্য দিয়ে তা আঁকিয়ে নিতে পারেন। প্রথম দেখা থেকে আরম্ভ করে বাগদান পর্যন্ত যেকোনো বিশেষ মুহূর্ত যা আপনাদের দুজনের জীবনেই গুরুত্বপূর্ণ – মেহেদী আর্টিস্টকে বলুন, তিনি নিশ্চই আপনার বিয়ের মেহেন্দির ডিজাইন (Bridal Mehendi Design) সেভাবেই এঁকে দেবেন।
মেহেন্দিও কিন্তু এক ধরণের ট্যাটুই বলতে পারেন। যেরকম নিজের পছন্দের সিম্বল অনেকে ট্যাটু হিসেবে আঁকিয়ে রাখেন, আপনিও কিন্তু এরকম একটা কিছু করতে পারেন বিয়েতে। তবে হ্যাঁ সেটা হবে মেহেন্দি দিয়ে। আপনি চাইলে নিজের পোষ্যের ছবিও কিন্তু মেহেদি ডিজাইনে আঁকাতে (Henna Art) পারেন। বিয়েতে এটা বেশ একটা নতুনত্ব হবে।
আগেকার দিনে যখন বরযাত্রী আসতেন তখন রাজারা হাতিতে চড়ে বিয়ে করতে আসতেন। আবার বিয়ে শেষে কনে পালকি চড়ে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যেতেন। মেহেন্দির এই ডিজাইন (Mehndi Art) খানিকটা এরকম করতে পারেন। এই মেহেন্দির ডিজাইনে বর-কনেকে একান্তে সময় কাটাতেও দেখা যাচ্ছে।
বিয়ের পর আপনারা দুজন কি কি করতে চান, কোথায় কোথায় বেড়াতে যেতে চান কিংবা আপনাদের দুজনের লাইফ গোল (Bridal Mehendi Design) কীরকম সেটা মেহেন্দির ডিজাইনে যদি ফুটিয়ে তোলা যায় তাহলে ব্যাপারটা কীরকম হয়? বেশ অন্যরকম কিন্তু তাই না? সেটাই যদি হয় তাহলে বিয়ের আগে বা যখন আপনার মেহেন্দির অনুষ্ঠান হবে তখন মেহেদী আর্টিস্টকে (Mehendi Artist) সে কথা জানান এবং বলুন যে আপনি ঠিক কীরকম ভাবে মেহেদী পরতে চান।
রূপকথা ভালবাসেনা এরকম মেয়ে কিন্তু খুব কম আছে। নিজেকে রূপকথার রাজকুমারি আমরা সবাই কোনও না কোনও সময়ে ভেবেছি, আর বিয়ের দিন তো আপনি সত্যিই রূপকথার রাজকুমারির মতই ট্রিটমেন্ট পান। আপনার পছন্দের রূপকথার গল্পের চরিত্রদের ছবি যদি মেহেন্দির ডিজাইনে আঁকা (Henna Art) হয় তাহলে সেটা একটু অন্যরকমও হবে আবার আপনারও নিশ্চই ভালই লাগবে।
আপনার যদি লাভ ম্যারেজ হয়, তাহলে আপনার হবু বর যখন আপনাকে প্রপোজ করেছিলেন সেই সময়কার বিশেষ মুহূর্তের কথা আপনি মেহেন্দির ডিজাইনের মধ্য দিয়ে সবাইকে জানাতে পারেন। আর যদি সবাইকে নাও জানাতে চান তাহলেও কোনও অসুবিধে নেই। অন্তত আপনার বরের জন্য কিন্তু এটা খুব ভালো একটা সারপ্রাইজ গিফট হবে।
বহুজুগ ধরেই হাতে ময়ূরের ডিজাইনের মেহেন্দি আঁকানোর প্রথা চলে আসছে। তবে মজার ব্যাপার হল, এই ডিজাইন এখনও সমানভাবে পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকেই বিরাজ করছে। বিয়ের কনের হাতে ময়ূরের মেহেন্দি ডিজাইন বেশ ভালো দেখতে লাগে।
ফুলের থেকেও নরম হাত তো সবাই পছন্দ করে, কিন্তু ফুলের থেকেও নরম যে হাত সে হাতে যদি ফুলের ডিজাইনের মেহেন্দি পরানো হয় তাহলে তো ব্যাপারটাই একদম অন্যরকম হয়ে যায়, তাই না? গোলাপ বা অন্য যেকোনো পছন্দসই ডিজাইন বিয়ের দিন মেহেন্দি হিসেবে কিন্তু বেশ ভালো লাগবে।
বিয়ের কনের হাতে যদি ভরাট করে মেহেন্দি না পরানো হয় কেমন একটা খালি খালি দেখতে লাগে। আঙুলের ডগা থেকে কনুই পর্যন্ত সুন্দর ডিজাইনের ভরাট মেহেন্দি বহুকাল ধরেই চলে আসছে ঠিকই, তবে এখনও তা চিরনতুন।
যদি আপনি বেশি জবরজং ডিজাইন পছন্দ না করেন আর বেশ ছিমছাম ডিজাইনের মেহেন্দি লাগাতে চান নিজের বিয়েতে, তাহলে আপনি বেল প্যাটার্ন ট্রাই (Mehndi Art) করতে পারেন। অবশ্য শুধু কনে না, কনের দিদি, বোন, বান্ধবী যে কেউই কিন্তু এভাবে মেহেন্দি লাগাতে পারেন।
বর্ডার মেহেন্দি ডিজাইন কিন্তু সহজ এবং যে কারও নজর আপনার হাতের দিকে ফেলতে সাহায্য করে। এই ডিজাইনের ক্ষেত্রে মেহেন্দি পরানোর সময়ে বর্ডারের ওপরে বেশি জোর দেওয়া হয় অর্থাৎ হাইলাইট করা হয়।
অনেকটাই রাজস্থানি এবং মুঘল ডিজাইনের মতো এটি। তবে আপনি চাইলে নিজের ইচ্ছেমত একটু কাস্টমাইজড করেই নিতে পারেন।
এরকম ভাবে যখন মেহেদী ডিজাইন (মেহেদী ডিজাইন ছবি) পরানো হয় দেখে মনে হয় যেন চুড়ি পরা রয়েছে। এই ডিজাইনে হাত বেশ ভরাট দেখতে লাগে তবে জবরজং লাগে না।
দু’হাতে একরকম প্যাটার্ন তো দেখতে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু মিরর এফেক্ট ডিজাইনও কিন্তু বেশ দেখতে লাগে। অর্থাৎ এক হাতে যেরকম ডিজাইন করা হয়েছে অন্য হাতের মেহেদী ডিজাইনটা জাস্ট উলটো।
মিরর এফেক্ট যদি পছন্দ না হয় তাহলে দু হাতে দু’রকমের ডিজাইনও করতে পারেন। বিবাহিত জীবনের সব সখ-আহ্লাদ মেহেন্দির ডিজাইনের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে পারেন।
এই ডিজাইনটিকে নতুন যুগের ডিজাইন (হাতের মেহেন্দির ছবি) বলতে পারেন। কম বয়সি মেয়েরা এই ধরণের মেহেন্দি ডিজাইন খুবই পছন্দ করে। থ্রি-ডি স্টাইল মেহেন্দি ডিজাইনে এমনভাবে মেহেদি পরানো হয় যাতে একটা থ্রি-ডি এফেক্ট আসে। তবে আপনি চাইলে কিন্তু বিয়ের দিন এই ডিজাইনটা ট্রাই করতেই পারেন।
এটা অনেকটা অ্যারোবিক ডিজাইনের অন্য সংস্করণ বলতে পারেন। ফাঁকা ফাঁকা কিন্তু চওড়া করে ডিজাইন করা হয় এক্ষেত্রে। এতে হাত ভরাট লাগে আবার জবরজংও লাগে না।
তাহলে আর দেরি কিসের? আজই বুক করে ফেলুন মেহেদি আর্টিস্ট আর নিজের পছন্দমতো মেহেদীর ডিজাইন করিয়ে নিন বিয়েতে 😉
ছবি সৌজন্যেঃ ইন্সটাগ্রাম
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!