বাংলা (bengali) ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের ছবির ভাল-মন্দ নিয়ে দুটি দল আছে। একটি দল মনে করেন এঁদের ছবি ভাল। কারণ এটি বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের মতো পারিবারিক ছবি বা গল্প সুন্দর করে উপস্থাপনা করেন। আবার একদল বলেন যে এঁরা ‘সুচিত্রা ভট্টাচার্য’ দোষে দুষ্ট, যার অন্যতম লক্ষণ হল অতিমাত্রায় আবেগ।আবেগের আধিক্য যদি থেকেও থাকে ‘গোত্র’ (gotro) ছবিটি এই দোষে আক্রান্ত নয়। একা বৃদ্ধা এখানে ছেলে দেখে না বলে কাঁদতে বসেন না, বরং নিজের শ্বশুরের একশো বছরের পুরনো ভিটে আগলে তিনি দিব্যি হেসে খেলে থাকেন। ছেলে বিদেশে থাকে বলে মাকে ভুলে যায়নি, সে নিয়মিত আসে ও মায়ের খোঁজ নেয়। অর্থাৎ যে সুতোগুলো ধরে টানলে বাঙালি খুশি হয় এবং হলে ফ্যাচফোচ কান্নার শব্দ শোনা যেতে পারে সেই বিপজ্জনক রাস্তাগুলো তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ভালই করেছেন। বেশি ‘পোস্ত’ খাওয়া যে ভাল নয় এটা তাঁরা বুঝেছেন। যাকগে, ছবির গল্পে আসা যাক। সত্তর বছরের বৃদ্ধা মুক্তিদেবী ( অনুসূয়া মজুমদার ) একা থাকেন। বাড়ির নাম গোবিন্দধাম। কারণ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত রাধা-মাধব আছে। মুক্তিদেবীকে দেখাশোনার জন্য আসে তারেক আলি। যে নাম গোপন করে তারক নাম নিয়ে থাকতে শুরু করে। তারেকের ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে। সুতরাং তাঁকে কতটা ভরসা করতে পারেন মুক্তিদেবী? উত্তর পেতে গেলে আপনাকে হলে গিয়ে এই ছবি দেখতে হবে। গোঁড়া হিন্দু ব্রাহ্মণ বিধবা আর মুসলমানের সম্পর্ক নিয়ে কালজয়ী গল্প লিখে গেছেন মতি নন্দী। ‘বিজলিবালার মুক্তি’ যারা পড়েছেন তাঁদের এই ছবি দেখতে দেখতে কিছু কিছু জায়গা চেনা লাগতে পারে। এই যেমন ধরুন মুসলমান (religion) হয়ে প্রতিষ্ঠা করা কূলদেবতাকে স্পর্শ করা। যদিও মুক্তিদেবী বিজলিবালার মতো অতটা গোঁড়া নয়। একা বিধবার বড় বাড়ি থাকলে সেখানে প্রোমোটারের কুনজর পড়তে বাধ্য। আর এই প্রোমোটারের চরিত্রে ফাটিয়ে অভিনয় করেছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়। পর্দায় যার নাম ‘শকুন বাপি’। চোখে খুনির মতো রক্তজল করা দৃষ্টি আর মুখে মোলায়েম হাসি নিয়ে শকুন বাপি দুর্দান্ত। খরাজ মুখোপাধ্যায় এই ছবির বড় প্রাপ্তি। সিরিয়াস অভিনয়ের সঙ্গে কমেডির সঠিক মেলবন্ধন ঘটিয়ে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন তিনি। ভাল অভিনয় করেছেন অনুসূয়া মজুমদারও। তবে তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড থিয়েটার। তাই কোথাও কোথাও অভিনয় একটু চড়া দাগের লেগেছে। তারেক আলির চরিত্রে নাইজেলের কাজ প্রশংসনীয়। তবে এবার ওর জেল খাটা কয়েদির চরিত্রের বাইরে কিছু করা উচিত। নইলে স্টেরিওটাইপ হয়ে যাবেন।
instagram ‘গোত্র’র কলাকুশলীদের সঙ্গে পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
পর্দায় খুব মিষ্টি করে মানালি আর নাইজেলের প্রেম দেখানো হয়েছে। মানালি একটু বেশিই উচ্ছ্বলতা দেখিয়েছেন তবে অভিনয়টা মোটামুটি সামলে নিয়েছেন। পুরোহিতের ছোট্ট চরিত্রে অম্বরিশ ভট্টাচার্য নজর কাড়েন। বিশেষ করে উড়িয়া পাণ্ডার মতো তাঁর পা টিপে টিপে হাঁটা সত্যিই মনে রাখার মতো। অন্যান্য চরিত্রে বাদশা মৈত্র আর সন্তু মুখোপাধ্যায় যথাযথ। রঙ্গবতী ছাড়া, অরিজিত সিংহের কণ্ঠে গাওয়া ‘মা’ গানটি মনে গেঁথে গেল। দুটো বিষয়ে পরিচালকদ্বয়ের প্রশংসা না করে পারছিনা। এক হল অনুসূয়া মজুমদারের মতো বয়স্কা কিন্তু বলিষ্ঠ অভিনেত্রীকে মাথায় রেখে তাঁরা গল্প বুনেছেন আর দ্বিতীয়ত খুব সুন্দর কৌশলে ছবিটি জন্মাষ্টমীর দিন রিলিজ করেছেন। দ্বিতীয় কারণটি কেন বললাম সেটা আপনি হলে গেলে টের পাবেন। সিনেমাটা যে আদতে বিনোদন ছাড়াও একটা ব্যাবসা এবং ব্যাবসা ফেল করলে ভাল বিনোদনও হয় না সেটা তাঁরা বোঝেন আর সেইজন্য বাড়তি হাততালি প্রাপ্য তাঁদের।
গোত্র মানবতার কথা বলে। বিশ্বপ্রেমের কথা বলে। এই অস্থির সময়ে যার খুব প্রয়োজন। ছবির চিত্রনাট্যগত সামান্য কিছু খুঁত আছে, সেগুলো ভুলে যান। একবার ‘গোত্র’ দেখে আসুন। তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন, “মানবতা আগে না আপনার গোত্র আগে?”
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!