মুলতানি মাটিতে (Multani Mitti) রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকা এবং ক্যালসিয়াম, সেই সঙ্গে মজুত রয়েছে আয়রন, ক্যালসাইট এবং ডলোমাইট, যা ত্বকের ভিতরে পুষ্টির ঘাটতি যেমন দূর করে, তেমনি টক্সিক উপাদানের মাত্রাও কমায়। ফলে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। আর একবার ভিতর থেকে ত্বক যখন সুন্দর হয়ে ওঠে, তখন স্কিনের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি আরও নানা ধরনের ত্বকের সমস্যার প্রকোপও নিমেষে কমে যায়। ফলে স্কিনকে নিয়ে আরও চিন্তাই থাকে না। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির খারাপ প্রভাব এবং বায়ু দূষণের মার সহ্য করার পরেও যদি ত্বক ও চুলকে সুন্দর এবং মোলায়েম করে তুলতে হয়, তাহলে ত্বকের যত্নে (Multani Mitti Packs) মুলতানি মাটির ব্যবহার মাস্ট। কিন্তু প্রশ্ন হল ত্বকের পরিচর্যায় এই প্রাকৃতিক উপাদানটিকে কীভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে (Multani Mitti Face Pack In Bengali)? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে এই লেখায় যে একবার চোখ রাখতে হবে।
ফেসপ্যাক ও হেয়ারপ্যাক এ মুলতানি মাটির ব্যবহার (Multani Mitti Face Pack and Hair Pack)
এই প্রবন্ধে ত্বকের ও চুলের ছোট-বড় নানান সমস্যা মেটাতে কীভাবে মুলতানি মাটিকে (Multani Mitti) কাজে লাগানো যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাহলে আর আপেক্ষা কিসের, চটজলদি পড়ে ফেলা যাক এই লেখাটা, আর তৈরি করে ফেলা যাক নানা রকমের হোম মেড ফেসপ্যাক।
১| মৃত কোষের স্তর সরিয়ে ফেলতে (Removes Dead Cells):
একথা নিশ্চয় অনেকেরই জানা আছে যে প্রতিনিয়ত মৃত কোষেরা আমাদের ত্বকের উপরি অংশে জমতে থাকে। আর এমনটা হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের সৌন্দর্য যেমন কমতে শুরু করে, তেমনি লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ব্রণর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এই কারণেই তো ডার্মাটোলজিস্টরা সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন ত্বকের মৃত কোষ ধুয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর এই কাজটি খুব সুন্দর ভাবে করে থাকে মুলতানি মাটি (Multani Mitti)। মৃত কোষের আবরণ সরে গিয়ে ত্বকের জেল্লা বাড়ুক, এমনটা যদি চাও, তাহলে ১ টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ১ চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে একটা পেস্ট (Multani Mitti Face Pack) বানিয়ে নাও। তারপর মুখটা ধুয়ে নিয়ে এই মিশ্রনটি (Face Pack) সারা মুখে লাগিয়ে নাও। কিন্তু ভুলেও চোখের নিচে বা মুখের আশেপাশে এই পেস্টটি লাগিও না যেন। এরপর ধীরে ধীরে কয়েক মিনিট মাসাজ করার পর ৫ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলো সারা মুখটা। সপ্তাহে ২-৩ দিন এইভাবে ত্বকের যত্ন করলেই দেখবে ফল মিলবে একেবারে হাতে-নাতে!
২| স্কিন টোনের উন্নতি ঘটবে (Improves Skin Tone):
অল্প সময়েই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি স্কিন টোনের উন্নতি ঘটুক, এমনটা যদি চাও, তাহলে ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটিকে (Multani Mitti) কাজে লাগাতে ভুলো না যেন! কারণ এমনটা করলে ত্বকের ভিতরে জমতে থাকা টক্সিক উপাদানেরা যেমন বেরিয়ে যায়, তেমনি বন্ধ হয়ে যাওয়া সব লোমকূপ খুলতে শুরু করে। ফলে ত্বক যেমন নরম এবং তুলতুলে হয়ে ওঠে, তেমনি স্কিনের জেল্লাও বাড়ে চোখে পড়ার মতো।
এমন সব উপকার পেতে ১ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ১ চামচ টমেটোর রস, ১ চামচ চন্দন গুঁড়ো এবং হাফ চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একটা ফেসপ্যাক বানিয়ে নিতে হবে। তারপর মুখটা ভালো করে ধুয়ে নিয়ে পেস্টটা (Multani Mitti Face Pack) সারা মুখে লাগিয়ে কম করে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। যখন দেখবে ফেসপ্যাক টা ড্রাই হতে শুরু করেছে, তখন ভেজা টাওয়েল দিয়ে সারা মুখটা ভালো করে মুছে ফেলতে হবে। তারপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা। এইভাবে সপ্তাহে ১-২ দিন এই বিশেষ ফেসপ্যাকটিকে কাজে লাগালেই দেখবে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে একেবারেই সময় লাগবে না।
৩| ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমায় (Cure Oily Skin):
গরমের সময় অনেকেরই ত্বক বেজায় তেল তেলে হয়ে যায়। ফলে একদিকে স্কিনের সৌন্দর্য যেমন কমতে শুরু করে, তেমনি ব্রণ বা অ্যাকনের মতো সমস্যাও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার ভয় থাকে। যারা প্রতি বছরই এমন সমস্যায় ভুগে থাকো, তারা ত্বকের পরিচর্যায় মুলতানি মাটিকে (Multani Mitti) কাজে লাগাও না কেন! আসলে ত্বকের ভিতরে প্রয়োজন অতিরিক্ত তেলের উৎপাদন যাতে না হয়, সেদিকে যেমন এই প্রাকৃতিক উপাদানটি নজর রাখে, তেমনি নানাবিধ স্কিন ডিজিজকে দূরে রাখতেও মুলতানি মাটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, তা হল তৈলাক্ত এবং ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ফেসপ্যাক কে কাজে লাগাতে হবে। না হলে কিন্তু কোনও উপকারই মিলবে না।
তৈলাক্ত ত্বক যাদের, তাদের ১ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে পরিমাণ মতো গোলাপ জল মিশিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক মুখে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে পেস্টটা (Multani Mitti Face Pack) লাগানোর পরে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে প্রথমে একটা ভেজা টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছে নিতে হবে, তারপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা। এই পেস্টটি সপ্তাহে ১-২ দিন মুখে লাগালেই দেখবে ত্বকের তেলতেলে ভাব কমে যেতে শুরু করেছে।
ড্রাই স্কিন। তবু ত্বকের তৈলাক্ত ভাব ক্রমে বেড়ে চলেছে? তাহলে ১ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে পরিমাণ মতো দই মিশিয়ে তৈরি পেস্ট (Face Pack) সপ্তাহে ১-২ মুখে লাগাতে হবে। এমনটা করলে দেখবে সমস্যা কমতে সময় লাগবে না। সেই সঙ্গে ড্রাই স্কিনের মতো ত্বকের সমস্যাও দূরে পালাবে। এক্ষেত্রে মুখটা ভালো করে ধুয়ে নেওয়ার পর পেস্টটা (ফেসপ্যাক) সারা মুখে লাগিয়ে কম করে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে পেস্টটা।
৪| ব্রণর প্রকোপ কমবে (Reduce Acne):
মুলতানি মাটিতে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান একদিকে যেমন ত্বকের অতিরিক্ত তেলকে শুষে নেয়, তেমনি অন্যদিকে লোমকূপও খুলতে শুরু করে। সেই সঙ্গে স্কিনের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানগুলির খারাপ প্রভাবও কমে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রণর প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। এখন প্রশ্ন হল এমন ধরনের ত্বকের রোগ থেকে নিস্তার পেতে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে মুলতানি মাটিকে? এক্ষেত্রে ১ চামচ মুলতানি মাটির (Multani Mitti) সঙ্গে ২ চামচ গোলাপ জল এবং ৪-৫ ড্রপ লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রন বানিয়ে ফেলতে হবে। তারপর সেই পেস্টটি (ফেসপ্যাক) মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ভেজা গামছা দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে হলকা গরম জল দিয়ে পুনরায় ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা। এমনভাবে সপ্তাহে ১-২ দিন ত্বকের পরিচর্যা করলেই দেখবে ফল মিলতে শুরু করেছে।
৫| ছোপ ছোপ দাগ সব মিলিয়ে যাবে (Clear Spots):
কালো কালো ছোপ ছোপ দাগের কারণে কি চিন্তায় রয়েছো? তাহলে তো সপ্তাহে ২-৩ দিন ত্বকের পরিচর্যায় মুলতানি মাটিকে কাজে লাগাতেই হবে! কারণ এমনটা করলে শুধু ত্বকের দাগ মিলিয়ে যাবে না। সেই সঙ্গে ব্রণর ক্ষতও উধাও হতে শুরু করবে। শুধু তাই নয়, স্কিনের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে চোখে পড়ার মতো।
এত সব উপকার পেতে ১ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ২ চামচ আলুর রস মিশিয়ে একটা মিশ্রন (Multani Mitti Face Pack) বানিয়ে নিতে হবে। তারপর মুখটা ধুয়ে নিয়ে ঝটপট লাগিয়ে ফেলতে হবে এই পেস্টটা। ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ভেজা গামছা দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে হালকা গরম জল দিয়ে আরকবার ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা।
৬| পুড়ে যাওয়া ত্বককে পুনরায় সুন্দর করে তোলে (Helps In Treating Burning Skin):
গরমকালে যারাই বাড়ির বাইরে বেরোয়, তাদের মধ্যে কম-বেশি সবারই ত্বক পুড়ে যায়। আর স্কিন এমন ট্যান হয়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের সৌন্দর্য কমে চোখে পড়ার মতো। তাই তো বছরের এই বিশেষ সময় স্কিন ট্যানের খপ্পর থেকে মুক্তি পেতে মুলতানি মাটির ব্যবহার (Multani Mitti) মাস্ট! এক্ষেত্রে ১ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ১ চামচ পেঁপের পেস্ট মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্টটা সপ্তাহে ২-৩ দিন নিয়ম করে হাতে এবং মুখে লাগালেই দেখবে কেল্লা ফতে! তবে খেয়াল রাখতে হবে মিশ্রনটি লাগানোর পর কম করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। আর সময় হয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে পেস্টটা (Face Pack)।
৭| ড্রাই হেয়ারের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে (Get Rid Of Dry Hair):
মুলতানি মাটি (Multani Mitti) যে শুধু ত্বকের পরিচর্যাতেই কাজে আসে এমন নয়। বরং চুলের যত্নেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি। যেমন ড্রাই হেয়ারের সমস্যা দূর করতে মুলতানি মাটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে ৪ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে হাফ কাপ দই এবং অর্ধেক লেবু থেকে সংগ্রহ করা রস মিশিয়ে একটি হেয়ারপ্যাক (Hair Pack) বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রনটি ধীরে ধীরে স্ক্যাল্প এবং চুলে লাগিয়ে কম করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হব। তারপর সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে চুল। এইভাবে সপ্তাহে ২-৩ দিন চুলের যত্ন নিলেই দেখবে ফল মিলবে একেবারে হাতে-নাতে!
৮| খুশকি দূরে পালাবে (Clear Dandruff):
একেবারে ঠিক শুনেছো! বাস্তবিকই খুশকির মতো ত্বকের রোগের প্রকোপ কমাতে মুলতানি মাটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে কিন্তু সরাসরি এই মাটিটা স্ক্যাল্পে লাগালে কিন্তু চলবে না। বরং ৪ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ৬ চামচ মেথি বীজ এবং ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে (Multani Mitti Hair Pack) নিতে হবে। তারপর সেই পেস্টটা স্ক্যাল্পে এবং চুলে লাগিয়ে কম করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে চুল। এইভাবে সপ্তাহে একবার এই বিশেষ হেয়ারপ্যাক টি কে (Hair Pack) কাজে লাগালেই দেখবে খুশকির প্রকোপ কমতে শুরু করেছে।
৯| চুল পড়ার হার কমবে (Reduce Hair Fall):
মাত্রাতিরিক্ত হারে চুল পড়ার কারণে কি চিন্তায় রয়েছো, তাহলে ঝটপট ২ চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ গোলমরিচ এবং ২ চামচ দই অথবা অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে সেই হেয়ারপ্যাক টি স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ফেলো (Multani Mitti Hair Pack)। তারপর ৩০ মিনিট হয়ে গেলে ভালো করে ধুয়ে ফলো চুল।
এই পেস্টটি নিয়মিত কাজে লাগালে চুলের গোড়ায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তে প্রবাহ বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পুষ্টির ঘাটতি দূর হওয়ার কারণে চুল এতটাই শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে যে হেয়ার ফলের আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন