ছোট থেকে মাছ-মাংস খেয়ে বড় হয়ে ওঠা বাঙালিকে যদি হঠাৎ করে মাংস ছাড়ার কথা বলেন, তাহলে তাঁর যে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার জোগাড় হবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, বাঙালির রক্তে মিশে রয়েছে আমিষ খাবার। তাই তো হাই কোলেস্টেরল হোক, কী হার্টের রোগ, বাঙালি মাংস ছাড়াতে নারাজ! এমনকী, ওজন কমানোর ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই ডায়াটেশিয়ান চেম্বারের গণ্ডি পেরোতে চান না, পাছে মাংস ছাড়তে হয়! তাই তো আম বাঙালির স্লোগান হল, ‘ওজন বাড়লে বাড়ুক, ক্ষতি নেই! কিন্তু রেওয়াজি মটনে কামড় না বসালে জীবন বৃথা।’
মজার বিষয় হল, ওজন কমাতে ডায়েটিং করতে হবে ঠিকই। কিন্তু তাই বলে মাংস খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে, এমন নয়। বলেন কী! মাংস খেলেও ওজন কমবে? আলবাত কমবে! তবে মুরগি না মটন, কোন মাংসটা খাওয়া চলতে পারে, আর কোনটা নয়, সে সম্পর্কে জেনে নিন এই প্রতিবেদনটি পড়ে।
মাংস খেয়েই ওজন কমান
দেহের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে হলে শরীরে যাতে আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি না হয়, সেদিকে যেমন নজর রাখতে হবে, তেমনই মাত্রাতিরিক্ত ক্যালরি রয়েছে, এমন খাবার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। কারণ, যত বেশি পরিমাণে ক্যালরির প্রবেশ ঘটবে শরীরে, ততই ওজন বাড়বে। তাই এই বিষয়গুলি মাথা রেখে এবার তুল্যমূল্য বিচার করে দেখা হবে ওজন কমাতে মটন না চিকেন, কোন ধরনের মাংস খাওয়া চলতে পারে, আর কোনটা নয়।
১. আয়রন
১০০ গ্রাম রেড মিটে প্রায় ২.৭ এম জি আয়রন থাকে, যেখানে সম পরিমাণ মুরগির মাংসে কম-বেশি ১.৩ এমজি আয়রনের সন্ধান মেলে। তাই প্রথম রাউন্ডের মুরগির মাংসকে ‘নক আউট’ করে জয়ী যে রেড মিট (Mutton), সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং নানা রোগ-ব্যাধিকে দূরে রাখতে এই খনিজটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
২. ফ্যাট
চটজলদি ওজন কমিয়ে ফেলতে চান তো ফ্যাটজাতীয় খাবার না খাওয়াই উচিত। তাই যতটা সম্ভব রেড মিট এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ, একশো গ্রাম রেড মিটে প্রায় কুড়ি গ্রাম ফ্যাট রেয়েছে, যেখানে একশো গ্রাম মুরগির মাংসে মাত্র ১৪ গ্রাম ফ্যাট থাকে। সঙ্গে রয়েছে উপকারী ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও। তাই ডায়েটিং করার সময় মুরগির মাংস খেলে কোনও ক্ষতি নেই। বরং নানা উপকার মিলবে। কিন্তু ভুলেও রেড মিট খাওয়া চলবে না।
৩. প্রোটিন
শরীরের গঠনে প্রোটিনের কোনও বিকল্প নেই। তাই দেহে যাতে কোনওভাবেই এই উপকারী উপাদানটির ঘাটতি না হয়, সেদিকে নজর রাখা একান্ত প্রয়োজন। আর ঠিক এই কারণেই রোজের ডায়েট থেকে মাংসকে বাদ দিলে চলবে না। কিন্তু কোন ধরনের মাংস খেলে বেশি উপকার মিলবে? ১০০ গ্রাম মটন এবং চিকেনে সম পরিমাণ প্রেটিন থাকে, ২৫-৩০ গ্রাম। তবে প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি যদি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তা হলে মুরগির মাংসই (chicken) সেরা চয়েস।
৪. ক্যালরি
চটজলদি ওজন কমিয়ে ফেলার ইচ্ছে রয়েছে? তা হলে ভুলেও মটন খাওয়া চলবে না। কিন্তু ইচ্ছা হলে মুরগির মাংস খেতে পারেন। কেন এমন উপদেশ তাই ভাবছেন? কারণ, ১০০ গ্রাম মুরগির মাংসে যেখানে ১৬৫ ক্যালরি রয়েছে, সেখানে সম পরিমাণ রেড মিটে প্রায় ২০৪ ক্যালরি মজুত থাকে। তাই রেড মিট খেলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
৫. ভিটামিন
মটন এবং চিকেন, দুয়েই রয়েছে সম পরিমাণে ভিটামিন বি২, বি৩,বি৫ এবং বি৬। সঙ্গে মজুত রয়েছে বি১২, যা ব্লাড সেলের দেখভালে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ছোট-বড় নানা রোগ-ব্যাধিকে দূরে রাখতেও এই ভিটামিনগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ভিটামিনের ঘাটতি মেটাতে মুরগির মাংসের পাশাপাশি অল্প করে মটন খাওয়া চলতেই পারে। কিন্তু বেশি পরিমাণে খাবেন না যেন!
হার্টের খেয়াল রাখে কোন মাংস?
একাধিক স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, রেড মিটে উপস্থিত saturated fat নানাভাবে হার্টের ক্ষতি করে থাকে। তাই তো বেশি পরিমাণে রেড মিট খেলে নানা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। অন্যদিকে মুরগির মাংসে রয়েছে Selenium নামে একটি উপাদান, যা ব্রেনের পাওয়ার বাড়ানোর পাশাপাশি, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই হার্টের রোগকে যদি দূরে রাখতে হয়, তা হলে মটন ছেড়ে মুরগির মাংস খেতে হবে বেশি করে।
সবশেষে জিতল কে?
মটনে নানা উপকারী ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে ঠিকই। কিন্তু ওজন কমাতে চাইলে ভুলেও রেড মিট খাওয়া চলবে না। বরং বেশি করে মুরগির মাংস খেলে উপকার মিলবে। তবে এই বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না যেন! তাতে শরীরের কোনও ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকবে না।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!