ঘটনা ১ – মোহর একজন আধুনিক চাকুরিতা মেয়ে, বয়স ২৫-২৬, স্বাধীন এবং স্ট্রং. ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল চাকরি করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে, নিজের স্বপ্ন পূরণ করবে. অফিসেও তার কাজের যথেষ্ট সুনাম. কিন্তু ইদানিং মন দিয়ে কাজ করতে পারছে না. সারাক্ষন খুব ক্লান্ত লাগে, ঘুম পায়. ভাবছে যে চাকরিটা ছেড়ে দেবে.
ঘটনা ২ – রিজু ক্লাস টেন-এ পরে, সামনে মাধ্যমিক. এমনিতে রিজু পড়াশোনায় খুব একটা ফাঁকিবাজ না, কিন্তু আজকাল পড়তে বসলেই ঘুম পায় আজকাল. সামনে একটা বড় পরীক্ষা আর ওর এরকম অবস্থা!
ঘটনা ৩ – সঞ্জয় রায় দেশের একটি অন্যতম কোম্পানিতে উঁচু পদে কাজ করেন. তার কাছে কাজই জীবনের সবকিছু. নাওয়া-খাওয়া ভুলে তিনি সারাদিন কাজেই ডুবে থাকেন. কিন্তু তার সমস্যা হলো, রাতে বাড়ি ফিরেও তার ঘুম আসেনা.
ওপরের এই ঘটনাগুলো কি আপনারও খুব চেনা বলে মনে হচ্ছে? আপনারও কি এরকম কোনো সমস্যা আছে ঘুম (Sleep) নিয়ে? আসলে আজকের এই ব্যস্ততায় ঘুম নিয়ে সমস্যা কম-বেশি আমাদের সবারই আছে. মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত চাপ (Stress) এবং টেনশন থেকে এরকম সমস্যার শুরু হয়. সত্যি কথা বলতে কি আম-জনতার মধ্যেও ঘুম নিয়ে অনেক রকমের ভুল ধারণা (Myth) আছে.
রাতে রিচ খাবার খেলে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে
ঘুমের সাথে নাক ডাকার সম্পর্ক নেই
রাতে ঘুম না হলে দিনের বেলা তা পুষিয়ে নেওয়া যায়
রাতে ঘুম না এলে চুপচাপ শুয়ে থাকলেই ঘুম এসে যাবে
আপনিও হয়তো অনেকের কাছেই শুনে থাকবেন যে বেশি রিচ খাবার খেলে ঘুম ভালো হয়. আবার অনেকের মতে ঘুমোতে যাবার আগে ব্যায়াম করলে ঘুম গাঢ় হয়. যখন আমরা ঘুমোই, তখন নাকি আমাদের মস্তিস্ক (Brain) বিশ্রাম পায়. কিন্তু এর মধ্যে একটা ধারণাও ঠিক না. শুধু এগুলো না, আরো অনেক ভুল ধারণা (Myth) রয়েছে আমাদের মনে ঘুম (Sleep) সম্পর্কে.
আজ আমরা সেরকমই কয়েকটা ভুল ধারণা ভাঙার চেষ্টা করবো.
মিথ (Myth) ১: রাতে রিচ খাবার (Rich) খেলে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে
ফ্যাক্ট (Fact): এই ধারণাটি সম্পূর্ণ একটি ভ্রান্ত ধারণা. রাতে খাবার পরে আমাদের হজম হতে প্রায় তিন ঘন্টার মতো সময় লাগে. আর সত্যি কথা বলতে কি এটা খুব একটা কম সময় নয়. তার ওপর যদি আপনি রাতে রিচ খাবার (rich food) খান তাহলে সেটা হজম হতে আরো অনেক বেশি সময় লাগে. ফলস্বরূপ, ঘুম আসতেও দেরি হয়.
মিথ (Myth) ২: ঘুমের (Sleep) সাথে নাক ডাকার (Snoring) সম্পর্ক নেই
ফ্যাক্ট (Fact): আমরা অনেকেই নাক ডাকা (Snoring) ব্যাপারটা নিয়ে হাসাহাসি করি কিংবা বিরক্ত হয়. কিন্তু এটা মোটেও হেলাফেলা করার বিষয় নয়. স্লিপ এপনিয়া (Sleep Apnea) যদি থেকে থাকে, তাহলে নাক ডাকাটা (Snoring) খুব স্বাভাবিক. স্লিপ এপনিয়া (Sleep Apnea) কিন্তু একটি সিরিয়াস সমস্যা. এর সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন. দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত. সাধারণত ভারী চেহারার মানুষদের স্লিপ এপনিয়া (Sleep Apnea) সমস্যা দেখা যায়. এছাড়া নাক ডাকার (Snoring) সময় আমাদের মস্তিষ্কে (Brain) অক্সিজেন পৌঁছোয় না কিংবা পৌঁছোলেও কম পৌঁছোয়, ফলে নানারকম হার্ট প্রব্লেম দেখা দিতে পারে.
মিথ (Myth) ৩: রাতে ঘুম (Sleep) না হলে দিনের বেলা তা পুষিয়ে (Cover Up) নেওয়া যায়.
ফ্যাক্ট (Fact): না, একেবারে ভুল ধারণা! আমাদের শরীরের পিনিয়াল গ্ল্যান্ড থেকে মেলাটোনিন হরমোন রিলিজ হবার ফলে আমাদের ঘুম (Sleep) পায়. আর এই হরমোন দিনের বেলা রিলিজ হয় না. ফলে রাতের ঘুমের ঘাটতি (Sleep Deficiency), দিনের বেলা পূরণ (Cover Up) করা সম্ভব নয়.
মিথ (Myth) ৪: রাতে ঘুম না এলে চুপচাপ শুয়ে থাকলেই ঘুম এসে যাবে
ফ্যাক্ট (Fact): আজ্ঞে না! রাতে ঘুম (Sleep) না এলে চুপচাপ শুয়ে থাকলেও, আমাদের মস্তিস্ক (Brain) কিন্তু সচল থাকে. সত্যি কথা বলতে কি অন্য সময়ের তুলনায় বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে. যদি রাতে ঘুম (Sleep) না আসে, তাহলে সব থেকে ভালো হয় যদি বিছানা ছেড়ে একটু খোলা জায়গায় পায়চারি করেন, কিংবা অন্য ঘরে গিয়ে একটু রিলাক্স করে বসতেও পারেন. টিভি দেখবেন না বা সিগারেট খাবেন না. এতে ঘুম (Sleep) চলে যাবে. ভালো কিছু চিন্তা করুন. এরপর ঘুম (Sleep) এলে বিছানায় যান. টিভি দেখতে দেখতে বা সোফায় বসে ঘুমবেননা. নির্দিষ্ট বিছানাতেই ঘুমোতে যান. রাতে ঘুমোনোর সময় ঘর অন্ধকার করে ঘুমোন.
মিথ (Myth) ৫: এলকোহল (Alcohol) ঘুম (Sleep) আসতে সাহায্য করে.
ফ্যাক্ট (Fact): ভুল ধারণা. মাঝে মাঝে এলকোহল (Alcohol) পান করলে হয়তো ঘুম তাড়াতাড়ি ঘুম আসে, কিন্তু যদি সেটা অভ্যেস হয়ে যায়, তাহলে সমস্যা. তখন ঘুম (Sleep) আসবে না. অনেকেই বলবেন যে, কোনো কোনো ডাক্তার পরামর্শ দেন যে প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা মাত্রায় এলকোহল (alcohol) পান করলে নার্ভ রিলাক্সড (Relaxed) থাকে, এটা সত্যি. কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত এলকোহল (Alcohol) ঘুমে রেশ কেটে যায় এবং ঘুম আসা সমস্যা হয়ে পড়ে. কারণ এলকোহল (Alcohol) হলো এক্সটার্নাল ফোর্স (External Force) এবং এর ফলে আপনার শরীরে যে প্রতিক্রিয়া (Reaction) হয়, তা আপনাকে জাগিয়ে (Sleepless) রাখার জন্য যথেষ্ট.
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলাতেও!
আরও পড়ুন –