স্বামী বিবেকানন্দ তখন সারা ভারতবর্ষ ভ্রমণ করছেন। হেঁটে হেঁটে চিনে নিচ্ছেন তাঁর দেশমাতৃকাকে। এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে তিনি এসে পৌঁছলেন কাশ্মীর। সেখানে এক মুসলমান মাঝির নয় বছরের মেয়ের মধ্যে দেখলেন দিব্যশক্তির আভাস। সেই বালিকাকেই মা দুর্গারূপে পুজো করলেন স্বামিজি। ঠিক করলেন বেলুড় মঠে পুজো হলে সেখানেও থাকবে কুমারী পুজোর প্রথা। রামকৃষ্ণ মিশনের দুর্গা পুজো (puja) নিয়ে এরকম নানা কাহিনি প্রচলিত আছে। স্বামীজির দেখানো পথ ধরে এখনও কলকাতার বহু বাড়িতে অন্ত্যজ এবং ভিন্ন ধর্মের কুমারী মেয়েদের দেবী জ্ঞানে পুজো করা হয়। কুমারী পুজোর এই প্রথা জড়িয়ে আছে তন্ত্র সাধনার সঙ্গে। এক থেকে ষোল বছরের কন্যা এবং যাঁরা এখনও রজঃস্বলা হননি তাঁদেরকে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়। তন্ত্র মতে এই বালিকাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে অসীম শক্তির আধার। দুই থেকে দশ বছর পর্যন্ত বালিকাদের সবচেয়ে নিখুঁত কুমারী রূপে গণ্য করা হয়। একেকটি বয়সে একেকটি কুমারীর (kumari) নাম হয় ভিন্ন। সেগুলো জেনে নেওয়ার আগে আরও একটি বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজোর ছাড়াও হয় সন্ধিপুজো (sandhi)। এই বিশেষ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় একটি সন্ধিক্ষণে। যখন অষ্টমী তিথি শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং নবমী শুরু হচ্ছে। তাই একে সন্ধিপুজো বলা হয়। হিন্দুধর্ম বলে এই সময় মৃন্ময়ী মা চিন্ময়ী হয়ে ওঠেন, অর্থাৎ তাঁর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়। আসুন দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িত এই দুটি প্রথার মাহাত্ম্য জেনে নেওয়া যাক।
ভিন্ন নামের ভিন্ন কুমারী
আগেই বলেছি দুই বছর বয়স থেকে দশ বছরের বালিকাদের কুমারী হিসেবে পুজো করা হয়। এক থেকে ষোল পর্যন্ত তাঁদের নাম হয় যথাক্রমে সন্ধ্যা, সরস্বতী বা কুমারী, কালিকা বা ত্রিমূর্তি, কল্যাণী, সুভগা বা রোহিণী, উমা বা কালিকা, মালিনী বা চণ্ডিকা, কুব্জিকা বা গৌরী, অপরাজিতা বা দুর্গা, কালসন্ধর্ভা বা সুভদ্রা, রুদ্রাণী, ভৈরবী, মহালক্ষ্মী, পীঠনায়িকা, ক্ষেত্রজ্ঞা ও অম্বিকা। নামের মতো তাঁদের কাজও হয় ভিন্ন ভিন্ন। কারও পুজো হয় ধনসম্পত্তি বৃদ্ধি ও রক্ষা করার জন্য, কারও পুজো হয় সর্ব রোগ নিরাময়ের জন্য, কারও আশীর্বাদে পুত্রলাভ হয় আবার কেউ রক্ষা করেন অশুভ শক্তির হাত থেকে।
কেন শুরু হল কুমারী পুজো
বৃহৎধর্মপুরাণ বলছে দেবতাদের নিদ্রা যাওয়ার সময় অর্থাৎ আশ্বিন মাসে রামচন্দ্র বসলেন দুর্গার পুজো করতে। তাঁকে সাহায্য করতে দেবীর স্তব করলেন ব্রহ্মা। দেবী এক কুমারী মেয়ের বেশে প্রজাপিতাকে বললেন একটি বেলগাছের মূলে তিনি অধিষ্ঠিত আছেন। দেবতারা সবাই মিলে সেই বেলগাছের খোঁজ করতে করতে এক অতি দুর্গম স্থানে এসে পৌঁছলেন। দেখলেন সেই বেলগাছের সবুজ পাতার মধ্যে ঘুমিয়ে আছে এক অতীব সুন্দরী বালিকা। ব্রহ্মা বুঝলেন ইনিই জগজ্জননী দুর্গা। ব্রহ্মার স্তবে সেই ছোট্ট মেয়েটি চণ্ডীর রূপ ধারণ করলেন। তখন থেকেই কুমারী পুজোর চল হয়েছে বলে মনে করা হয়।
সন্ধিপুজোর তাৎপর্য
অষ্টমী শেষ হচ্ছে এবং নবমী শুরু হচ্ছে ঠিক এইরকম একটি মাহেন্দ্রক্ষণে সন্ধিপুজো হয়ে থাকে। হিন্দুশাস্ত্র বলে সন্ধিপুজোর সময় নাকি দেবী স্বয়ং চামুণ্ডারূপে আবির্ভূতা হন। কারণ এই বিশেষ সময়েই তিনি চণ্ড এবং মুণ্ড নামক দুই ভয়ানক শক্তিশালী অসুরকে বধ করেছিলেন। রামচন্দ্রের অকালবোধনের যে কাহিনি বিভিন্ন পুঁথিতে পাওয়া যায় সেখানেও ১০৮টি পদ্ম দিয়ে সন্ধিপুজোর উল্লেখ আছে।তবে সন্ধিপুজো সফলভাবে নিষ্পন্ন করার বেশ কিছু নিয়ম আছে। বলা হয় অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট অর্থাৎ মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে এই পুজো। বলা হয় যে পরাক্রমশালী অসুর রক্তবীজকে হত্যা করতে দেবীর তৃতীয় নয়ন থেকে জন্মেছিলেন দেবী চামুণ্ডা। যিনি করালবদনী, নৃশংস। তাই বলা হয় এই সময় স্নেহময়ী জগজ্জননী মায়ের হৃদয় থেকে স্নেহ,মায়া, মমতা সব দূর হয়ে যায়। আর তাই সন্ধিপুজোর সময় দিবির দৃষ্টি যেদিকে গেছে সেই পথ পরিষ্কার রাখা হয়, তাঁর সামনে তখন আসতে নেই।
Featured Images: iamjeetd, pj_wale_babu,aniruddhaneogi
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এসে গেল #POPxoEverydayBeauty – POPxo Shop-এর স্কিন, বাথ, বডি এবং হেয়ার প্রোডাক্টস নিয়ে, যা ব্যবহার করা ১০০% সহজ, ব্যবহার করতে মজাও লাগবে আবার উপকারও পাবেন! এই নতুন লঞ্চ সেলিব্রেট করতে প্রি অর্ডারের উপর এখন পাবেন ২৫% ছাড়ও। সুতরাং দেরি না করে শিগগিরই ক্লিক করুন POPxo.com/beautyshop-এ এবার আপনার রোজকার বিউটি রুটিন POP আপ করুন এক ধাক্কায়…