আমাদের মর্ত্যবাসীর মতো দেবতাদেরও যে নানারকম ডিপার্টমেন্ট আছে, সেটা কখনও ভেবে দেখেছেন কি? মানে এটাই বলতে চাইছি যে, আমাদের মধ্যে কেউ-কেউ যেমন ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক, মানে নানা জন নানা পেশায় যুক্ত, ঠিক তেমনই দেবতারাও কিন্তু বাপু কেউ বসে খান না! তাঁদেরও নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্ট আছে, তাঁদেরও কাজকম্মো আছে। আশ্চর্য ব্যাপার হল দেবতাদের মধ্যেও ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এমনকী, আবহাওয়াবিদও আছেন! দেবতাদের একমাত্র ইঞ্জিনিয়ার হলেন আমাদের শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা ঠাকুর। আজ যাঁর পুজো এবং যাঁর সম্মানে রং বেরঙের ঘুড়ি দেখা যাচ্ছে আকাশে। সত্যি কথা বলতে কী, বিশ্বকর্মা (Vishwakarma) পুজো হওয়া মানেই বাঙালির দুর্গা পুজো শুরু। আর মাহাত্ম্যের দিক দিয়ে এই ইঞ্জিনিয়ার দেবতাও কিছু কম যান না। আসুন, শুনে নেওয়া যাক বিশ্বকর্মার নানা কাহিনি (story)।
যতই তাঁকে ইঞ্জিনিয়ার আখ্যা দেওয়া হোক না কেন, দেবতাদের কাছে বিশ্বকর্মা হলেন এক যথার্থ শিল্পী। তাই তাঁর ধ্যানমন্ত্রে বলা হয়েছে “দেবশিল্পী মহাভাগ দেবানাং কার্যসাধক, বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভিষ্টপ্রদায়ক।” এর অর্থ হল অষ্টগুণ সম্পন্ন এক মহাশিল্পীকে দেবতাদের প্রণাম। ঋক বেদের দশম সূক্তে বিশ্বকর্মার কাহিনি বর্ণিত আছে। বলা হয়েছে, এক সময় পৃথিবীতে জলভাগ আর স্থলভাগ একসঙ্গে মিশে ছিল। যত দিন যেতে লাগল, আস্তে-আস্তে দু’টি আলাদা হতে থাকল। বিশ্বকর্মা তাঁর জ্ঞানচক্ষু দিয়ে দেখলেন আর নিজের সৃষ্টিশক্তি দিয়ে ধীরে-ধীরে সব কিছু গঠন করতে থাকলেন। এই বিশ্ব আসলে তাঁরই কর্মযজ্ঞের একটি অংশ, তাই তিনি বিশ্বকর্মা। পুরাণে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া আছে কীভাবে বিশ্বকর্মার উৎপত্তি হল। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ বলছে, ব্রহ্মার নাভি থেকে জন্ম এই দেবতার। আবার অন্য পুরাণ বলে, দেবগুরু বৃহস্পতির বোন বরবর্ণিনী দেবী ও অষ্টবসুর মধ্যে একজন প্রভাস, এঁদের দু’জনের সন্তানই হলেন বিশ্বকর্মা। বিশ্বকর্মা ও তাঁর স্ত্রী ঘৃতাচীর নয় সন্তান। যাঁরা প্রত্যেকেই কোনও না-কোনও শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
যদি খুব ভাল করে বিশ্বকর্মার মূর্তি পর্যবেক্ষণ করেন, দেখবেন যে দেবতার হাতে রয়েছে দাঁড়িপাল্লা আর হাতুরি, ছেনি আর কুঠার। হাতুরি, ছেনি আর কুঠার কেন থাকে সেটা আলাদা করে বলতে হবে না। তিনি নানা রকম জিনিস তৈরি করেন আর সেগুলো বানাতে এই অস্ত্রগুলোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু দাঁড়িপাল্লা কেন থাকে ভেবে দেখেছেন কখনও? দাঁড়িপাল্লার একদিকে থাকে জ্ঞান আর অপরদিকে থাকে কর্ম। বিশ্বকর্মা চান, মানব জীবনে এই দুটোই যেন সমানভাবে থাকে। কোনওটা বেশি বা কোনওটা কম হলে মুশকিল! বিশ্বকর্মার বাহন হল হস্তী বা হাতি। অনুমান করা হয়, দেবতার প্রবল শক্তি বোঝাতে গিয়ে এই বাহন যোগ করা হয়েছে।
মহিষাসুরকে বধ করতে দেবী দুর্গার হাতে ধারালো বল্লম, কবচ আর মারণাস্ত্র তুলে দিয়েছেন বিশ্বকর্মা। এগুলো সবই তাঁর নিজের সৃষ্টি। পরশুরামের কাঁধে শোভা পায় যে ধনুক সেটাও তাঁর সৃষ্টি। আবার বৃত্রাসুরকে বধ করতে দধীচি ঋষির হাড় দিয়ে যে বজ্র নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটাও বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেছিলেন। পুরীর জগন্নাথ দেবের মূর্তি তৈরিতেও তিনিই হাত দিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। কিন্তু রাজার অতিরিক্ত ঔৎসুক্যের কারণে সেই মূর্তি অর্ধসমাপ্ত রাখতে হয় তাঁকে।
এছাড়াও আরও অসংখ্য জিনিস তিনি তৈরি করেছেন। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর মতো গুণী দেবতা দেবলোকে প্রায় বিরল!
Featured Image: tuhinarsenal, nilima_sasmal
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!