সেই গানটা (song) মনে আছে আপনাদের,” কালো যদি মন্দ তবে/কেশ পাকিলে কান্দ কেনে?” অর্থাৎ, সে আপনি যাই বলুন না কেন, মেঘের মতো একঢাল কালো (black) চুলের (hair) কোনও তুলনা হয় না।এখন অবশ্য কেশ পেকে গেলে তাকে কালো করার হরেক উপায় আছে। কিন্তু সেই সব উপায় অনুসরণ করার একটা বড় সমস্যা হল চুলের ব্যাপক ক্ষতি। কারণ এই সব রাসায়নিকে থাকে এমন কিছু পদার্থ যা চুলকে রুক্ষ এবং শুষ্ক করে দেয়, ফলত ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় চুলের জেল্লা।অথচ কোনও রাসায়নিক ছাড়াই (how to maintain) বাড়িতে আপনার (your) কালো চুলের যত্ন নেওয়ার অনেক উপায় আছে। আজ আমরা সেই নিয়েই আমাদের ঝাঁপি খুলব। দেখুন তো একবার পড়ে। আপনাদের (your) মতো কুঁচবরণ কন্যার মেঘবরণ চুলকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ত্ব আমরাই নিলাম (how to maintain your black hair naturally)।
আরো পড়ুনঃ চুল কালো করার ঘরোয়া টোটকা
চুল কেন পাকে?
আমাদের চুলের ফলিকলের (follicle) চারপাশে থাকে মেলানোসাইটিস বলে একটি গ্রন্থি থাকে যা উৎপাদন করে মেলানিন (melanin) বলে একটি বস্তু উৎপাদন করে।আমাদের মাথার চুল আসলে কেরাটিন (keratin) বলে একটি প্রোটিনের (protein) সমষ্টি। মেলানোসাইটিস চুলের বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্টেক্সে (cortex) মেলানিন ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু মেলানিন ছাড়া কেরাটিন হলদেটে বা ধূসর লাগে।তাই মেলানিন উৎপাদন কমে গেলে চুলও তার আসল রঙ (colour) হারিয়ে ফেলে। যার পোশাকি নাম চুল পেকে যাওয়া।
কখন চুল পাকে?
বয়সের সাথে সাথে আমরা জানি সবার চুলেই পাক ধরে। কারণ ধীরে ধীরে মেলানিনের উৎপাদন কমে যায়।জেনেটিক (genetic) গঠনের উপর নির্ভর করে কারও চুল আগে এবং কারও চুল পরে পাকে। তবে চুল পাকার কিছু বাহ্যিক কারণও আছে। যেমন স্ট্রেস (stress), ডায়েট (diet) এবং দূষণ (pollution)। তাছাড়া রাসায়নিক (chemical) যুক্ত হেয়ার ডাই (hair dye), শ্যাম্পু(shampoo), তেল (oil) সব কিছুই চুল সময়ের আগে পাকিয়ে দেয়।অনেক চিকিৎসক এবং গবেষক বলেন, যারা নিয়মিত জাঙ্ক খাবার বা ভাজাভুজি খান তাদের চুল সময়ের অনেক আগে পেকে যাওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। যদিও এই মন্তব্য বৈজ্ঞানিক (scientific) ভাবে প্রমাণিত নয়, তবুও শরীর সুস্থ রাখতে জাঙ্ক (junk) ফুড (food) যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই মঙ্গল।
ঘরোয়া পদ্ধতি
বাহ্যিক কারণগুলির মধ্যে একটি অবশ্যই রাসায়নিক যুক্ত কৃত্রিম (artificial) ডাইয়ের (dye) ব্যবহার। আগেই বলেছি এই রাসায়নিক বা অ্যামোনিয়া (ammonia) চুল নষ্ট করে দেয়। তার চেয়ে বাড়িতে প্রাকৃতিক উপায়ে আপনার চুলের যত্ন নিন। দেখে নিন কীভাবে সেটা সম্ভব।
চা পাতা দিয়ে (tea leaves)
কালো (black) চায়ের পাতার লিকার চুলের জন্য খুব ভালো। তাছাড়া এটা এমন একটা উপাদান যা সবার বাড়িতেই থাকে।২ টেবিল চামচ কালো চায়ের পাতা আর জল নিন। জলে চায়ের পাতা ফুটিয়ে নিন। তারপর সেটা ঠাণ্ডা হতে দিন। এবার চা পাতা ছেঁকে ফেলে দিন। চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।যদি আপনার চুল খুব লম্বা হয় তাহলে একটা স্প্রে বোতলে চায়ের লিকার ঢেলে নিয়ে স্প্রে করুন। এই লিকার জয়েন আপনার চুলে ১ থেকে ২ ঘণ্টা থাকে। তারপর ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু করবেন না।
সেজ পাতার জল (sage leaves)
সেজ হচ্ছে একটি ভেষজ (herbs)। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি কালো সেজের পাতা ব্যবহার করেন। চায়ের লিকারের মতো এই পাতাও জলে ফুটিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা করতে দিন। এবার এই জল দিয়ে মাথায় স্প্রে করুন। ঘণ্টা দুয়েক রেখে ধুয়ে ফেলুন। হাল্কা শ্যাম্পু (shampoo) ব্যবহার করতে পারেন। দু সপ্তাহ অন্তর এই জল দিয়ে চুল ধুলে দেখবেন ধীরে ধীরে সেখানে রঙ ধরছে।
নারকেল তেল ও লেবুর রস (coconut oil and lemon juice)
নারকেল তেল আর লেবুর রসের মিশ্রনে চুলের স্বাভাবিক রঙ শুধু বজায় থাকে না, চুল হয় নরম ও উজ্জ্বল। তার জন্য বেশ অনেকটা পরিমাণে নারকেল তেল নিন, মানে যতটা আপনার চুলের দৈর্ঘ্য (length) তার উপর ভিত্তি করে তেল নিন। আর লাগবে ৩ টেবিল চামচ তাজা লেবুর রস। তেল আর লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর সেই মিশ্রণ চুলের গোড়ায় ভালো করে মাসাজ (message) করুন। এক ঘণ্টা রেখে হাল্কা ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
নারকেল তেল ও কারিপাতা (coconut oil and curry leaves)
বয়সের আগেই যাদের চুল পেকে গেছে অর্থাৎ যারা অকালপক্কতার শিকার তারা এই পদ্ধতি ট্রাই করে দেখতে পারেন। কারী পাতায় আছে ভিটামিন বি (Bhitamin B), যা অকালপক্কতা (grey hair) রোধ করে (stop)। তেলের মধ্যে এক মুঠো কারিপাতা (curry leaves) দিয়ে ফুটিয়ে (boil) নিন। তেল সবুজ হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে ঠাণ্ডা হতে দিন। পাতাগুলো ছেঁকে ফেলে দিন। তারপর ওই তেল চুলের গোড়ায় ভালো করে মাসাজ করুন। এক ঘণ্টা রেখে হাল্কা শ্যাম্পু (shampoo) দিয়ে ধুয়ে (wash) ফেলুন।
লাউ (gourd) ছেঁচা পদ্ধতি
লাউয়ের (gourd) মধ্যে আছে এমন কিছু উপাদান যা আপনার চুলের (hair) হারিয়ে যাওয়া মেলানিন (melanin) উদ্ধার করতে সক্ষম। এটা করতে গেলে আপনার প্রয়োজন টুকরো করে কাটা লাউ (gourd) আর নারকেল তেল।লাউয়ের টুকরোগুলো আগে রোদ্দুরে শুকিয়ে নিন। তারপর নারকেল তেলের মধ্যে ওই লাউয়ের শুকনো টুকরোগুলো তিন দিন ধরে ডুবিয়ে রাখুন। তিন দিন পর ওই তেল ফোটান। দেখবেন নারকেল তেল আস্তে আস্তে কালো হতে শুরু করেছে। ঘন কালো হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন।ঠাণ্ডা হলে ওই তেল মাথায় মাসাজ করুন।এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
হেনা (hena) ও বাবলার (acacia) মিশ্রণ
চুল ভালো রাখতে এবং চুলে রঙ করতে অনেকেই হেনা ব্যবহার করেন। হেনা একটি প্রাকৃতিক রঙ তাই এটি ব্যবহার করলে চুলের কোনও ক্ষতি হয়না। এক কাপ হেনা পাউডার নিন। আর নিন কফি পাউডার, ১ টেবিল চামচ দই, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ বাবলা গাছের ফল বা আঠা (ভেষজ বিক্রি করে এমন যে কোনও জায়গায় পাবেন), ১ টেবিল চামচ কুচনো ব্রাম্ভি শাক, ১ টেবিল চামচ আমলা কুচি, ১ টেবিল পুদিনার গুঁড়ো আর ভিনিগার (vinegar)।প্লাস্টিক (plastic), কাঠ (wooden) বা স্টেনলেস স্টিলের পাত্রে হেনা রাখুন। অন্য ধাতুর পাত্রে হেনার বিক্রিয়া হতে পারে। তাই আগে থেকে সাবধান থাকা ভালো। এর মধ্যে কফি (coffee) পাউডার (powder) সহ অন্যান্য উপাদানগুলো মেশান। এবার যতক্ষণ না ঘন প্রলেপ তৈরি হচ্ছে ততক্ষণ ভিনিগার মেশান। এবার এই প্রলেপ মাথায় মাখুন। এক ঘণ্টা রেখে বা পুরো শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। পরের দিন শ্যাম্পু করলে ভালো হয়।
যদি এতগুলো উপাদান মাথায় মাখতে আপনার অস্বস্তি হয়, তাহলে হেনার সঙ্গে আমলা (amla) মিশিয়ে মাখতে পারেন। চুলের কালো রঙ ধরে রাখতে আমলা ও হেনার মিশ্রণ খুব কার্যকরী। তবে হেনা পাউডারের বদলে হেনার পাতা কিনে এনে পেস্ট করলে কাজ দেবে অনেক বেশি। হেনার পেস্টের সঙ্গে আমলা পাউডার মেশান আর মেশান কফি পাউডার আর অল্প একটু জল।প্রলেপ তৈরি করে মাথায় মেখে দু ঘণ্টা রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
শরীর সুস্থ রাখুন ভিতর থেকে
কালো চুলের যত্নে শুধু বাইরের যত্নই যথেষ্ট নয়। আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে ভিতর থেকে। তার জন্য আপনাকে পান করতে হবে ত্রিফলা ও ভৃঙ্গরাজের পানীয়। ত্রিফলা (trifala) ও ভৃঙ্গরাজ (bhringaraj) যে কোনও ভেষজের (herbs) দোকানে পাওয়া যায়। ভৃঙ্গরাজের জুসে (juice) সারারাত ত্রিফলা ও আমলা ভিজিয়ে রাখুন।পরের দিন এই জল (water) পান করুন খালি পেটে। এটি একটি ডিটক্স জল (detox water)। এটি পান করলে আপনার শরীর ভিতর থেকে বিষমুক্ত হবে। আর এর প্রভাব শুধু আপনার চুলে নয় প্রভাব পড়বে গোটা শরীরে।
ঘি (ghee) ও মুলেঠির (mulethi) মিশ্রণ
এই প্রলেপ আপনি তৈরি করে বাড়িতে রেখে দিতে পারেন। তাই একটু বেশি করে তৈরি করাই ভালো। তার জন্য আপনার প্রয়োজন ১ কেজি দেশি ঘি, ১ লিটার আমলার রস এবং ২৫০ গ্রাম মুলেঠি। মুলেঠি হল এক ধরণের ভেষজ যা আপনি যে কোনও ভেষজের দোকানে পেয়ে যাবেন। তিনটে উপাদান মিশিয়ে অল্প আঁচে বসান। যখন সব উপাদান মিশে গিয়ে শুধু ঘি থকথকে হয়ে পড়ে তখন এই প্রলেপ নামিয়ে নিন। একটা কাচের পাত্রে (glass jar) রেখে দিন। আপনি এই প্রলেপ (paste) প্রতিদিন স্নানের (bath) আগে মাথায় লাগাতে পারেন। কালো চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে খুব কাজে দেয় এই প্রলেপ।
আম (mango) দিয়ে চুলের যত্ন
আর কিছুদিনের মধ্যে বেশ ভালোই গরম (summer) পড়ে যাবে। আর গরমকালে পাওয়া যায় আম। আপনাকে জানিয়ে রাখি, চুলে কালো রঙ ধরে রাখতে খুব কাজে দেয় আম। হ্যাঁ, সেই আম, যা খেতে সুস্বাদু, সেই আম যা দিয়ে আপনি চাটনি তৈরি করেন। কাঁচা আমের খোসা ছাড়িয়ে কেটে টুকরো করে নিন। এবার আপনার পছন্দের তেলের (oil) সঙ্গে (নারকেল তেল হলে ভালো হয়) মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। চাইলে আমের (mango) পাতাও (leaves) দু একটা দিয়ে দিতে পারেন।আমের পাতারও অনেক গুণ থাকে। ব্লেন্ডারে তৈরি আমের এই মিশ্রণ রোদ্দুরে রেখে দিন একটি কাচের পাত্রে (glass jar)। রোজ এই মিশ্রণ একটু করে চুলে লাগান আর তফাৎ দেখুন। আমের কুসি থেকে এক ধরণের তেল (oil) বেরোয়, যাকে আমের তেল বলে। এই তেল বাজারেও (market) কিনতে পাওয়া যায়। একটা দুটো পাকা চুল দেখা দিলেই এই তেল লাগাতে শুরু করুন। তাহলে অকালপক্কতা রোধ করা যাবে। তাছাড়া এই তেল খুশকিও (dandruff) কম করে।
আমের (mango) মতো কাজ দেয় কমলালেবুও (oranges)। শীতে (winter) তো কমলালেবু পাওয়া যায়ই। এখন সারাবছরই কমলালেবু পাওয়া যায়। তাই এই ফল (fruit) পেতে আপনার অসুবিধে হবে না। আপনি এই ফলের তেল তৈরি করে কাচের পাত্রে রেখে দিতে পারেন। কমলালেবুর কোয়া ছাড়িয়ে ব্লেন্ডারে ভালো করে পেস্ট করে নিন। তার মধ্যে চাইলে আমলা (amla) পাউডার (powder) বা আমলা (amla) ফল কুচি করে দিয়ে দিতে পারেন। এবার এই মিশ্রণ কাচের বয়ামে (glass jar) রেখে দিন। রোজ একটু করে এই তেল মাথায় মাসাজ করতে পারেন।
পেঁয়াজের (onion) ব্যবহার
পেঁয়াজ (onion) হল এমন একটা সব্জি (vegetable) যা সব সময় আপনার রান্নাঘরে (kitchen) মজুত থাকে। পেঁয়াজ বেটে বা পেঁয়াজের রস করে পুরো চুলে মাখুন। মাথায় একটা শাওয়ার ক্যাপ (shower cap) পরে নিন। স্নানের সময় চুল ধুয়ে নিন বা শ্যাম্পু করে নিন।মনে রাখবেন ৩০ মিনিটের বেশি এই প্যাক মাথায় রাখবেন না। পেঁয়াজের (onion) গন্ধে (smell) আপনার খুব একটা আপত্তি না থাকলে সপ্তাহে (week) তিন (three) দিন (day) এই প্যাক অনায়াসে চুলে লাগানো যায়। দেখবেন আপনার চুলের রঙ আস্তে আস্তে (slowly) ফিরে আসছে। পুরোপুরি ফল (result) পেতে মোটামুটি এক (one) মাস (month) লাগবে।
ছবি সৌজন্যঃ পেক্সেলস ডট কম, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, পিনটারেস্ট
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
এগুলোও আপনি পড়তে পারেন