করোনা আতঙ্ক গ্রাস করেছে গোটা বিশ্বকে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুমিছিল। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন চিকিৎসকেরাও। কোথাও বেড নেই। প্রিয়জন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ন্যুনতম চিকিৎসা দেওয়ারও পরিকাঠামো নেই। এভাবে আর কতদিন? একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে চারপাশের চেনা পরিবেশ। যদি একে একে সকলে চলে যায়? যদি জনশূন্য হয়ে পড়ে পৃথিবী?
২০২৫ এর মে। পাঁচ বছর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাক টাইম ফ্রেম। টেবিলে মোবাইল বাজছে। হত্তদন্ত হয়ে এসে ধরলেন যিনি তিনি পরিচিত মুখ। অভিনেত্রী। ফোনের ওপারে যিনি তাঁর মুখে মাস্ক। বাড়িতেই মাস্ক পরে রয়েছেন দেখে অভিনেত্রী বিস্মিত। কিন্তু সরকার এমনই নির্দেশ দিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে চারপাশে আর কেউ বেঁচে নেই এই দুজন ছাড়া। ২০২০ থেকে যে লকডাউন শুরু হয়েছিল করোনা আতঙ্কে তা চলছে পাঁচ বছর ধরে।
যাঁদের কথা বলা হচ্ছে, তাঁদের হাতে রয়েছে প্রচুর টাকা। কিন্তু টাকা দিয়ে কিছুই আর কিনতে হচ্ছে না। যা কিছু প্রয়োজন, যা কিছু ইচ্ছে দোকানে গিয়ে এমনিই নিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু সেই কেনার ইচ্ছেটাই আর নেই। স্বপ্নগুলো সব মরে গিয়েছে। ফোনের ওপারে থাকা মানুষটির মুখ দেখার জন্য, মাস্ক খুলে ফেলার জন্য অনুনয়-বিনয় করছেন অভিনেত্রী। গত পাঁচ মাস ধরে কোনও জীবিতের মুখ দেখেননি তিনি। কিন্তু একটা সময় এই যুবকই ওই অভিনেত্রীর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কোনও একটা ইভেন্টে। তখন তিনি ফিরেও তাকাননি।
দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে তো? ঠিকই। দুঃস্বপ্নই বটে। দেখছেন অভিনেত্রী পায়েল (Payel) সরকার। তাঁর আরবানার ফ্ল্যাটে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে বাইরে তাকান। পরিচিত জীবন দেখে স্বস্তি ফেরে। এই দুঃস্বপ্ন আপনাকে, আমাকে দেখালেন পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক। তাঁর পরিচালিক শর্ট ফিল্ম ‘একটি তারা’র (ekti tara) মাধ্যমে।
টিভিওয়ালা মিডিয়ার প্রযোজনায় শিলাদিত্যর এই শর্টফিল্মে পায়েল ছাড়াও অভিনয় করেছেন শুভ্র দাস। মিউজিকের দায়িত্বে ছিলেন রণজয় ভট্টাচার্য। সম্পাদনা করেছেন সংলাপ ভৌমিক। বলা বাহুল্য সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রেখেই তৈরি হয়েছে এই শর্ট ফিল্ম।
শিলাদিত্যর কথায়, “মানুষ দীর্ঘ সময় একা থাকলে তার মধ্যে মানসিকভাবে অনেক পরিবর্তন আসে । এখন আমরা গৃহবন্দী , করোনার প্রকপে। নাহলে কিন্তু এটা কোনওদিন উপলব্ধি করতাম না । পৃথিবীটা হঠাৎ করে ছোটো হয়ে গেছে, অনেক রকম মানসিক বিকৃতি হতে পারে। আমরা সেই প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়তে পারি কিনা , সেই উত্তর অনুসন্ধান করছি । আরও একটি বিষয় অনেক কিছুই তার মূল্য হারিয়েছে আমাদের কাছে। সে গুলোর মূল্য এখন বেড়ে গেছে । হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে মনে পড়ে আজ । মনুষ্যত্বের গুরুত্ব আজ আবার বেড়ে গেছে।”
আসলে এ এক অদ্ভুত সময়। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে বদলে যাচ্ছে সম্পর্কও। বিনোদন এখন মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়। তবুও এই সময়টা ঘরে বসে দর্শককে নতুন কনটেন্ট উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকেই। ‘একটি তারা’ তেমনই একটি প্রয়াস। সত্যিই পরিস্থিতি কতটা খারাপ হবে তা জানা নেই কারও। কিন্তু ‘একটি তারা’র দুঃস্বপ্ন তাড়া করবে। আসলে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকা উচিত। তবে সব খারাপের মধ্যেও বাঁচার লড়াইটা চালিয়ে যেতেই হবে। বাড়িতে বসেই দেখুন এই ছবি। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।