কথায় বলে যা ঘটে ভালোর জন্য ঘটে। আর এই আপ্তবাক্যটি যে মোটেও ভুল নয়, তার প্রমাণ মিলেছিল বছর দুয়ের আগে। হঠাৎই ঘটনাচক্রে সুযোগ এসেছিল দেড় মাস ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের পাঁচ রাজ্য (north-eastern india) ঘুরে দেখার। আসলে বাবার দৌলতে সেই ছোটবেলা থেকেই এদিক-সেদিক ঘুরে দেখার ইচ্ছেটা মনে একেবারে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছিল। তাই তো এমন সুযোগ পেয়ে আর দু’বার ভাবিনি। যদিও কারণ আরেকটাও ছিল। সেটা হল নাগাল্যান্ড ঘুরে দেখার স্বপ্ন যে পূরণ হতে চলেছিল। আসলে এ জায়গাটি যে বড়ই অন্যরকম। বাকি সব জায়গার থেকে যেন একেবারে আলাদা। একেবারে স্বতন্ত্র! কারণ প্রকৃতি যে দু’হাত ঢেলে সাজিয়ে তুলেছে এই ভূখন্ডকে। একদিকে খরস্রোতা পাহাড়ি নদী। অন্যদিকে ঘন সবুজের চাদরে ঢাকা পাহাড়ি উপত্যকা। সেই সঙ্গে হর্নবিল পাখির গান, সব মিলিয়ে নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা (kohima) যেন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক টুকরো স্বর্গ। তবু হর্নবিল ফেস্টিভালের সময়টা ছাড়া এ শহরে খুব একটা পর্যটকের আনাগোনা চোখে পড়ে না। কারণ হল দূরত্ব।
কলকাতা থেকে কমবেশি ৫ টা ট্রেন রয়েছে ডিমাপুর পর্যন্ত। তবে ইচ্ছা হলে কলকাতা থেকে ট্রেনে প্রথমে পৌঁছে যাও গুয়াহাটি। সেখান একদিন বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন ট্রেনে ডিমাপুর। তারপর ডিমাপুর থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা পৌঁছে যাও কোহিমা (kohima)। ডিমাপুর থেকে কোহিমা পৌঁছাতে সময় লেগে যাবে প্রায় ৩ ঘন্টা। আর রাস্তার অবস্থা যদি বেহাল থাকে, তাহলে আরও অতিরিক্ত এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগতে পারে। একথা ঠিক যে এ রাস্তার ধকল অনেক। তবে এত ধকলের পরেও এই ট্রিপ যে জীবনের অন্যতম মনে রাখার মতো ট্রিপ হয়ে থাকবে, তা হলফ করে বলতে পারি।
নাগাল্যান্ড ভ্রমণের (kohima tour) জন্য কলকাতার নাগাল্যান্ড ভবন থেকে ইনার লাইন পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। ভবনের ঠিকানা হল, “নিউ নাগাল্য়ান্ড হাউজ “, এল এ ব্লক, সেক্টার-৩, সল্টলেক সিটি, কলকাতা-৭০০০৯৮। এই পারমিট যদি না থাকে, তাহলে কিন্তু নাগাল্যান্ডের কোনও শহরেই প্রবেশাধিকার মিলবে না। এই বিশেষ পারমিট পেতে একটা ফর্ম ভরতে হয়। তার সঙ্গে ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ফটো এবং ভোটার আইডি কার্ডের জেরক্স কপি জমা দিতে হবে। যে দিন ফার্মটা জমা দেবে, হয় সেদিন , নয়তো পরের দিন হাতে এসে যাবে ইনার লাইন পারমিট।
এখন প্রশ্ন হল এত ঝক্কি সামলে জীবনে একবার কোহিমা সফর মাস্ট কেন? তাহলে জেনে রাখো হে ভ্রমণরসিক, ইতিহাস, প্রকৃতি এবং অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ একসঙ্গে মিলবে এই শহরে। সেই সঙ্গে ঝালের দিক থেকে সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থানে থাকা নাগা ঝোলাকিয়া বা ভুত ঝোলাকিয়া লঙ্কার স্বাদ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তো উপরি পাওনা। শুধু তাই নয়, যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে চেখে দেখতে পারো কুকুরের মাংস দিয়ে তৈরি নানান পদও। আর সেই অভিজ্ঞতা যে কম রোমাঞ্চকর হবে না, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে!
এই শৈল শহরে পৌঁছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি আরও যে যে জায়গাগুলি ঢুঁ না মারলেই নয়, সেই টুরিস্ট ডেস্টিনেশনগুলি হল (places to visit in kohima)…
১. কোহিমা মিউজিয়াম:
এই শৈল শহরে এসে প্রথম ডেস্টিনেশন হওয়া চাই এই মিউজিয়াম। শহরের মূল কেন্দ্র থেকে মাত্র আধ ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত এই মিউজিয়ামে এলে নাগাল্যান্ডের ইতিহাস, সেখানকার জনজাতি এবং এই জায়গাটি সম্পর্কিত আরও নানান খুঁটিনাটি বিষয়ে খোঁজ মিলবে। তাই তো সফর শুরুর আগে কোহিমা এবং নাগাল্যান্ড সম্পর্কে এ-টু-জেড জেনে নিতে চাইলে এই জায়গার কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে।
২. কোহিমা ওয়ার সিমেট্রি:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মারা যাওয়া প্রায় ১৪০০ ভারতীয় এবং অন্যান্য দেশের সৈনিকদের কবর রয়েছে এখানে।। গ্যারিসন পাহাড়ের উপর স্থাপিত এই জায়গাটি মাস্ট ভিজিট প্লেসের তালিকায় থাকা জরুরি। কারণ এই পাহাড়ি উপত্যকার সৌন্দর্য যেমন মনকাড়া, তেমনি এখান থেকে কোহিমা শহরের যে প্যানোরমিক ভিউ পাওয়া যায়, তাও এক কথায় অসাধারণ, যা মিস করা চলবে না কিন্তু!
৩. নাগা হেরিটেজ ভিলেজ:
পাহাড়ের খাঁজে, সবুজে ঘেরা এই টুরিস্ট ডেস্টিনেশনটি সত্যিই অপূর্ব। কারণ এখানে এলে নাগা সম্প্রদায়ের মানুষেরা কেমনভাবে থাকেন, সে সম্পর্কে যেমন জানার সুযোগ পাবে, তেমনি তাঁদের ঘর-বাড়ি এবং স্থাপত্য চাক্ষুষ দেখার সুযোগও মিলবে। সেই সঙ্গে উপরি পাওনা হতে পারে জাফু ভ্যালির মনকাড়া সৌন্দর্য। নাগা হেরিটেজ ভিলেজ থেকে ৯ কিমি দূরত্বে অবস্থিত এই জায়গাটি হল নাগাল্যান্ডের দ্বিতীয় হায়েস্ট পিক (Japfu Peak kohima)। এখান থেকে পাহাড়ি ভ্যালির যে সৌন্দর্য উপভোগ করবে, তা জীবনে যে কখনও ভুলতে পারবে না, তা হলফ করে বলতে পারি।
কোহিমা শহরের আশেপাশে অবস্থিত এইসব জায়গাগুলি ঘুরে দেখতে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। খরচ হবে কম-বেশি ২৫০০-৫০০০ টাকা। তবে দরদাম না করলে কিন্তু ঠকতে হবে। আর এই সব জায়গাগুলি ঘুরে দেখতে একদিনের বেশি সময় লাগবে না। তাই ইচ্ছা হলে দিনের দিন ডিমাপুর থেকে কোহিমা শহর ঘুরে আসতে পারো। তাতে একটু ধকল হবে বৈকি। কিন্তু খরচ হবে কম।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!