এটা আবার কী জিনিস মশাই? ধরুন, হঠাৎ করে আপনি ঠিক করলেন আগামী দু’দিন আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারবেন না। এই যে সিদ্ধান্ত, একেই ‘টেক’ গুরুরা বলবেন ‘সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স’। সহজ কথায় বললে, আমাদের রক্তে জমে থাকা টক্সিক উপাদানগুলি যদি ঠিক-ঠিক সময়ে শরীরে থেকে বেরিয়ে না যায়, তা হলে যেমন নানা ধরনের রোগ-ব্যাধির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি করলে শরীর এবং মনের উপরে নেতিবাচক চাপ পরে। বিশেষ করে অনিদ্রা এবং মানসিক অবসাদের মতো সমস্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। American Psychological Association-এর করা এক স্টাডিতে একথা প্রমাণিতও হয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে কমবয়সিদের মধ্যে অ্যাংজাইটি, স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের মতো রোগের প্রকোপ লাপিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, যার পিছনে মূল কারণ হল সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি। তাই তো সাবধান হওয়ার সময় এসেছে বই কী! এখন প্রশ্ন হল, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকলে কী-কী উপকার মিলবে?
১. অনিদ্রার সমস্যা দূর হবে
বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে আমাদের মধ্যে সিংহভাগই ঘুমানোর সময় মাথার কাছে ফোন রেখে শোন, তাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু ফোনের সঙ্গে ঘুমের কি সম্পর্ক? National Sleep Foundation-এর করা একটা স্টাডি অনুসারে যারা ফোনকে সঙ্গী করে ঘুমতে যান, তাঁরা ঘুমানোর আগে কম করে মিনিট কুড়ি সোশ্যাল মিডিয়ায় চিটচ্য়াট করেন, তাতে অনিদ্রার মতো সমস্যা ঘাড়ে চেপে বসার আশঙ্কা বাড়ে। কারণ, অন্ধকারে ফোন ঘাঁটলে স্ক্রিনের নীল আলোর প্রভাবে melatonin হরমোনের ক্ষরণ ঠিক মতো হয় না, যে কারণে সহজে ঘুম আসতে চায় না। আর যদি দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটে, তা হলে তো চিন্তার বিষয়। কারণ, ঠিক মতো ঘুম না হলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা তো থাকেই, সেই সঙ্গে ব্রেনের ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও বহু গুণে বেড়ে যায়। তাই বুঝতেই পারছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ না মারলে শরীর এবং ব্রেন, দুই চাঙ্গা থাকবে।
২. স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমবে
সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে স্ট্রেস-অ্যাংজাইটির সম্পর্কটা ঠিক কোথায়? খেয়াল করে দেখবেন, ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে ঘুরঘুর করার সময় বন্ধু-বান্ধব বা চেনা-পরিচিতদের ছবি বা স্টেটাস দেখে মাঝে-মধ্যেই মনে হয়, ওদের কাছ থেকে আমরা কত দুঃখে রয়েছি। বিশেষ করে কাছের কোনও বন্ধু ভাল চাকরি পেলে বা কোথাও ঘুরতে গেলে তো দুখি মন আরও দুঃখ পায়। এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তার কারণে স্ট্রেস লেভেল বাড়তে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে না পাওয়ার যন্ত্রণার লেজুড় হয়ে এসে হাজির হয় অ্যাংজাইটিও। ফলে যেটুকু সুখ-শান্তি ছিল, তাও লাটে ওঠে। তাই তো প্রতিদিন যাঁরা কম-বেশি ঘণ্টাখানেক সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটান, তাঁদের প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্সের (Detox) পরামর্শ দিচ্ছেন সাইকোলজিস্টরা। তাতে স্ট্রেস-অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমে নিমেষেই।
৩. পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ মিলবে
যে-কোনও প্রতিবেশির বাড়িতে গিয়ে ঘণ্টাখানেক একটু লক্ষ করুন, দেখবেন, বাবা এক ঘরে বসে ফেসবুক স্ক্রোলিং, ওদিকে মা-ও খুন্তি নাড়াতে-নাড়াতে হোয়াটসঅ্যাপের স্টেটাস কী রাখা যায়, সেই নিয়ে মশগুল। অন্যদিকে, মা-বাবার নজর এড়িয়ে ছেলে-মেয়ে আবার ইনস্টাগ্রামের নানা পেজে লাইক মারতে ব্যস্ত। ফলে সোশ্যাল হওয়ার চক্করে কারও কাছেই সময় নেই একসঙ্গে বসে আড্ডা মারার। দিনের পর দিন এমনটা হতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের সঙ্গে সংযোগ কেটে যাওয়ার কারণে কোনও না কোনও সময় সবাই একাকিত্বে ভুগতে শুরু করেন, সঙ্গী হয় অবসাদও। ফলে ছোট-ছোট কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অশান্তি-মনোমালিন্য বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তো আজকের সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্সের প্রয়োজন বেড়েছে বই কী! বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে সময় নষ্ট না করে যদি দিনের শেষে ঘণ্টাখানেক স্বামী-স্ত্রী এবং বাচ্চারা মিলে গল্প করেন, তা হলে ছোট-বড় সব দুশ্চিন্তা যেমন দূর হয়, তেমনই পারিবারিক বন্ডিংও জোরদার হয়। ফলে একাকিত্ব এবং মাবসিক অবসাদের মতো সমস্যা ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৪. শরীরের দিকে নজর ফেরানোর সময় মিলবে
সম্প্রতি কয়েকটি স্টাডিতে একথা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, যুবসমাজের প্রায় ৭০ শতাংশই দৈনিক দেড় থেকে দু’ ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ার পিছনে ব্যয় করে থাকেন। এই ঘণ্টাখানেক সময় সোশ্যাল মিডিয়া না করে যদি শরীরচর্চা করা যায়, তা হলে একবার ভাবুন তো শরীর এবং ব্রেনের কত উন্নতি ঘটবে! সঙ্গে ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাওয়ার কারণে মানসিক অবসাদ এবং স্ট্রেস-অ্যাংজাটির প্রকোপও কমবে। তবে একান্তই যদি শরীরচর্চা করতে মন না চায়, তাহলে নিয়ম করে মিনিটতিরিশেক হাঁটতে পারেন, তাতেও কিন্তু অনেক উপকার মিলবে। আর যদি কিছুই করতে ইচ্ছে না করে, তা হলে বই পড়তে পারেন অথবা ড্রয়িং বা কুকিংয়ের মতো কাজ করলেও কিন্তু শরীর-মন চাঙ্গা থাকবে। মোট কথা মাসে বারদু’য়েক, দিনদশেকের জন্য যদি সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স করা যায়, তা হলে শরীর এবং মন, উভয়ের জন্যই যে মঙ্গল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!