ভাবতে পারছেন ব্যাপারটা? ফরাসিরা, যাঁরা খাবার ব্যাপারে এই অ্যাত্তটা নাক উঁচু, যাঁদের তৈরি খাবারই আসলে সেরা বলে অহরহ দাবি করেন যাঁরা, সেই তাঁরাই কিনা মেনে নিলেন, বঙ্গসন্তান প্রিয়মের হাতের গুণ! ১২ অগস্ট, দিল্লিতে ভারতের ফরাসি রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রে জিগলের কলকাতার ছেলে প্রিয়ম চট্টোপাধ্যায়কে (Priyam Chatterjee) ফরাসি সরকারের পক্ষ থেকে Chevalier de l”Ordre du Merite Agricoleto সম্মানে (French Honour) ভূষিত করেছেন! প্রিয়মই প্রথম ভারতীয় শেফ (chef), যিনি এই সম্মান পেলেন।
কিন্তু কী কারণে দেওয়া হয় এই সম্মান? গোদা বাংলায় এই সম্মানের অর্থ হল, অর্ডার অফ এগ্রিকালচারাল মেরিট। প্রিয়ম এই সম্মান পেয়েছেন ভারতীয় রান্নায় এক নতুন ধারা আবিষ্কারের জন্য! কী সেই নতুন ধারা জানতে ইচ্ছে করছে নিশ্চয়ই! ইনি বাঙালি ডিশে ফরাসি ফোড়ন দেন! মানে, খাঁটি বাঙালি রান্না যদি ফরাসি কায়দায় করা যায়, তা হলে যে নতুন একটা রান্নার স্টাইল তৈরি হবে, সেই স্টাইলে রেঁধেই প্রিয়ম তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ফরাসিদের!
কলকাতার ছেলে প্রিয়ম হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, কলকাতারই এনআইপিএস ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট থেকে। তারপর হায়দরাবাদের পার্ক হায়াত হোটেলে ফরাসি শেফ জঁ ক্লদ ফুজিয়ের কাছে শিক্ষানবিশি করেছেন তিনি। সেখান থেকেই তাঁর ফরাসি রান্না এবং ফরাসি রান্নাশৈলীর উপর ভালবাসা শুরু। তারপর কাজের সূত্রে কখনও দুবাই, কখনও ফ্রান্সে গিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিখ্যাত শেফদের সঙ্গে গা ঘষাঘষি করে শিখে নিয়েছেন রান্নার নানা কায়দা। কিন্তু দেশবিদেশে ঘুরে বেড়ালেও প্রিয়মের বাংলা প্রেম যায়নি! তাঁর পরিবারের সকলেই নাকি দুর্দান্ত রান্না করেন। ছোটবেলা থেকে সেসব দেখে এবং খেয়ে প্রিয়ম একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যান যে, বাঙালি রান্নার কোনও জবাব নেই। প্লাস দুর্দান্ত সব ডিশও তৈরি করে ফেলা যায় বাঙালি রান্নার সঙ্গে অন্য রান্নাশৈলী পাঞ্চ করে। সেটাই করে সম্মান পেয়েছেন প্রিয়ম! তাঁর কথায়, “বাঙালি আর ফরাসি খাবারের মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য। স্বাদে, গন্ধে, রান্নার ধরনে এই দুটো কুইজিনের কোনও তুলনাই হয় না! কিন্তু দুটোই আমাকে ভীষণ টানে। তবে আমি ফিউশন রান্নার ঘোরতর বিপক্ষে! তাতে দু ধরনের রান্নারই অথেন্টিসিটি নষ্ট হয়ে যায় বলে আমার মনে হয়। বরং ফরাসি কায়দায় বাঙালি রান্না পরিবেশন করেই সকলকে চমকে দিতে চাই আমি!” শুধু ভাল রান্নার জন্যই নয়। ফরাসিরা বিখ্যাত তাঁদের পরিবেশেনের কায়দায় জন্যও। প্রিয়মের ফুড প্লেটিং তাঁদের চমকে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত! ইন ফ্যাক্ট, এই প্রথম নাকি ফ্রান্সের বাইরের কারও ফুড প্লেটিং এত পছন্দ হয়েছে তাঁদের!
এই সম্মান পাওয়ার প্রায় পরপরই প্রিয়ম পাড়ি দিয়েছেন সুদূর ফ্রান্সে। জান রেস্তরাঁ ইয়টের প্রধান শেফ হিসেবে কাজে যোগ দিতে। তবে প্রিয়ম চিরকাল চাকরি করে কাটাতে চান না। তাঁর স্বপ্ন ফ্রান্সে, প্যারিসে নিজের রেস্তরাঁ খোলার। যেখানে খাঁটি বাঙালি ডিশ পরিবেশন করবেন তিনি! তা ফরাসি কায়দায় রাঁধবেন কিনা, এখনও অবশ্য খোলসা করেননি প্রিয়ম। আমাদের তরফ থেকে তাঁর জন্য রইল শুভেচ্ছা।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!