চাকরি করার দরুণ বাড়ি ফিরতে রাত হয় স্বাতী আর সুতীর্থর। ফলে বাবা-মা দু’জনকেই খুব মিস করে ওদের পাঁচ বছরের মেয়ে বৃষ্টি। আর বাড়িতে থাকলেও ল্যাপটপে কী যেন করে ওরা! ফলে ওর কথা শোনার কেউ নেই। ওর জন্য সারা দিনের ন্যানি থাকলেও বাবা-মায়ের ভালবাসার পরশটুকুও পায় না ও। ফলে ছোট্টবেলা থেকেই বড্ড একলা ও। স্কুলে গিয়ে যখন দেখে মিটিংয়ে প্রায় সকলের বাবা-মা এসেছে, কিন্তু ওর বাবা-মায়ের বদলে ঠাকুরমা এসেছেন, তখন ওর মন আরও খারাপ হয়ে যায়। স্বাতী আর সুতীর্থ সবটা বোঝে। কিন্তু দু’জন চাকরি না করলেও তো উপায় নেই। কারণ সন্তানকে বড় করা, তাকে অভিজাত স্কুলে পড়ানো, অভিজাত এই এলাকার ফ্ল্যাটের ইএমআই, গাড়ির ইএমআই দেওয়া- এই বাজারে চাট্টিখানি কথা নয়! এ ভাবেই একাকীত্বকে (loneliness) আঁকড়েই বড় হতে থাকে বৃষ্টি। স্কুলেও কারও সঙ্গে মেলামেশা করে না আর বড্ড জেদি আর একগুঁয়ে ও। সে দিন আচমকা স্কুল থেকে ফোন। স্বাতী তড়িঘড়ি ছুটে গিয়ে দেখেছিল, কার সঙ্গে মনোমালিন্য। তাতে সেই বন্ধুকে প্রচণ্ড মারধর করেছে বৃষ্টি। এ সব শুনে তো থ স্বাতী। শেষমেশ স্কুলের হেডমিস্ট্রেসের কথায় মেয়েকে মনোবিদের (psychiatrist) কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তখন জেনেছিল, বৃষ্টি ডিপ্রেশনের (depression) শিকার।
শুধু বৃষ্টিই নয়। এ রকম বহু উদাহরণ রয়েছে। খবরের কাগজ বা নিউজ চ্যানেল খুললেই দেখতে পাবেন, সারা বিশ্বে বহু শিশু-কিশোরী-সদ্য টিনএজার ডিপ্রেশনের (depression) শিকার। আজকাল নিউক্লিয়ার পরিবার, বাবা-মা (parents) সময় দিতে পারেন না। যার ফলে খুব সহজেই একাকীত্বে ভুগতে শুরু করে শিশুরা (child)। আবার অনেক সময় বাবা-মায়ের (parents) তিক্ত সম্পর্ক, ঘরে বাবা-মায়ের (parents) ঝগড়া, বিবাহবিচ্ছেদ- এই সব কিছুই শিশুমনে প্রভাব ফেলে। যা মাঝেমধ্যে চরমে পৌঁছয়। বহু সময় আমরা খবরে দেখি যে, অনেক শিশু (child) -টিনএজার আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। তার পিছনেও ভিলেন অবশ্য সেই ডিপ্রেশনই (depression)!
আরো পড়ুনঃ দাদু-ঠাকুরমা হলো পরিবারের বটবৃক্ষ
কী ভাবে বুঝবেন যে, আপনার সন্তান ডিপ্রেশনের (depression) শিকার
১। আপনার সন্তান (child) কি সব সময় একা থাকতে পছন্দ করছে? মানে সব কিছুর থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখছে? তা হলে কিন্তু গণ্ডগোল রয়েছে।
২। আবার অনেক সময় দেখবেন, কোনও কাজেই আপনার সন্তান আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আত্মবিশ্বাসও তলানিতে। তা হলেই বুঝতে হবে, যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
৩। আপনার সন্তান কি একটুতেই রেগে যাচ্ছে বা জেদ করছে? কখনও কখনও বিষণ্ণ হয়ে থাকছে, তা হলে বুঝতে হবে ডিপ্রেশনের (depression) শিকার ও।
৪। লক্ষ্য রাখবেন, আপনার সন্তানের খাওয়াদাওয়ার উপরও। যদি দেখেন, কখনও খাচ্ছে না আবার কখনও বেশি খাচ্ছে, তা হলে চিন্তার বিষয়। ওর ঘুমের উপরেও নজর দিন। গভীর রাত পর্যন্তও যদি ঘুমোতে না পারে, বুঝতে হবে সমস্যা রয়েছে।
৫। আপনার সন্তান ডিপ্রেশনের শিকার হলে দেখবেন, নেগেটিভ কথাবার্তা বলছে। অথবা আত্মহত্যা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশি কথা বলছে। সে ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে।
৬। অনেক সময় কাছের মানুষ যেমন-দাদু-দিদিমা-ঠাকুরমা এঁদের মৃত্যুও ওদের মনে প্রভাব ফেলে।
বাবা-মা (parents) হিসেবে আপনার করণীয়
১। বাবা-মা(parents) হিসেবে সবার আগে সন্তানের দিকে আপনাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সন্তানকে সময় দিন আর ওর সঙ্গে বন্ধুর মতো গল্প করে, সময় কাটিয়ে ওর মনের কথা জানুন। স্কুলে কী হচ্ছে জানতে চান। সন্তানের আগ্রহের জায়গাকে গুরুত্ব দিন। আপনার মেয়ে যদি নাচতে ভালবাসে, সেটায় উত্সাহ দিন।
২। তবে পরীক্ষায় রেজাল্ট বেরোলে বকাঝকা করলে চলবে না। বুঝিয়ে বলুন। আত্মবিশ্বাস তৈরি হতে সাহায্য করুন। আর হ্য়াঁ আর একটা জিনিস, অন্য বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা টানলে পরিস্থিতি কিন্তু হাতের বাইরে চলে যাবে। ক্রমশ ডিপ্রেশনে (depression) তলিয়ে যেতে থাকবে আপনার সন্তান।
৩। স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে বেরোনোর পরেই অনেক বাবা-মাকে দেখি, জেরা করতে শুরু করে, এটা কী লিখেছিস, ওটা কেন ভুল করলি। এটা করবেন না। পরীক্ষাতে এমনিই ওদের উপর দিয়ে চাপ যায়, তার উপর আপনি যদি পরীক্ষার পরেই কোনটা ঠিক লিখল আর কোনটা ভুল লিখল, তা জানতে চান, তা হলে কিন্তু মুশকিল!
৪। আর ছেলেমেয়ে বয়ঃসন্ধিতে পা রাখার সময়টা সব থেকে সেনসিটিভ। এই সময়টা ওর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে ওর মনের হদিস পেতে হবে। লক্ষ্য রাখবেন, ইন্টারনেটে কী সার্চ করছে। আত্মহত্যা সংক্রান্ত গেম বা আর্টিকলে আপনার সন্তান মজে থাকছে, কি না সে দিকে নজর দিন।
৫। আর আপনার সন্তান ডিপ্রেশনে (depression) ভুগলে তাকে সবার আগে মনোবিদের (psychiatrist) কাছে নিয়ে যান। এতে কোনও সমস্যা নেই। আর সন্তানের সঙ্গে আপনারাও কাউন্সেলিং করিয়ে নিতে পারেন!
ছবি সৌজন্যে: পিন্টরেস্ট ও পেক্সেলস
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলাতেও!