দার্জিলিংয়ে তো ঘুরতে যান, দার্জিলিং শহরটা খুব ভালবাসেন। কখনও ভেবে দেখেছেন, দূর থেকে যদি সম্পূর্ণ দার্জিলিং শহরটাকে আপনি দেখতে পেতেন? পাহাড়ের কোলে ছায়াপথের মতো উজ্জ্বল কুইন অফ হিলস দার্জিলিং। এই দৃশ্য উপভোগ করার জন্য আপনাকে আসতেই হবে রঙ্গারুন। রঙ্গারুনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখতে পাবেন সারিসারি পাহাড়, উত্তরের দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা…আর ভোরে পাহাড়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে দার্জিলিং! যাঁরা প্রায়ই দার্জিলিং ঘুরতে আসেন তাঁরা জোড়বাংলো মোড় চেনেন। এই জোড়বাংলো মোড় থেকেই খুব কাছে এই মিষ্টি পাহাড়ি গ্রাম। অল্প জনবসতি, জঙ্গলের মধ্যে আঁকাবাঁকা রাস্তা আর তার মধ্যেই কুয়াশার চাদরে মোড়া রঙ্গারুন (rangaroon)। এক কুঁড়ি, দুই পাতার দেশ!
জোড়বাংলো মোড় থেকে ডান দিকে ঘুরে যায় রাস্তা। সেখানেই রাস্তার এক ধারে রেল লাইন পাতা। তার পাশে সারি সারি দোকান, এক ঘন জনবসতি। এরপর কিন্তু ধীরে ধীরে জনবসতি হাল্কা হয়ে আসে। গাড়ি নিচের দিকে যেতে শুরু করে। দুই পাশে জঙ্গল আর তার মাঝেই এঁকে বেঁকে গিয়েছে রাস্তা। এই জনহীন, নির্জন রাস্তাই কিন্তু চলে গিয়েছে সিঞ্চল স্যাংচুয়ারির অন্তরমহলে। এই জঙ্গল শেষ হতেই এক ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম (rangaroon)চোখে পড়ল। যদিও অনেক বসতি নেই। তবে পাহাড়ের ধারে ছোট ছোট রঙিন বাক্সবাড়ি। আর এক একটি ছোট্ট দোকান। তারই নিচে মোম রঙে আঁকা চা বাগান।
দার্জিলিং থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে এই ছোট্ট হ্যামলেট। ঘুম বা জোড়বাঙলো থেকে খুব সহজেই এখানে আপনি চলে আসতে পারেন। ঘুম থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার। সারাবছরই কুয়াশায় মোড়া থাকে রঙ্গারুন। শীত করে সারা বছরই। তবে শীতকালের রঙ্গারুন একদম অন্যরকম। আপনি সকালে উঠে সূর্যোদয় দেখতে পারেন, কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে দেখতে পারেন সূর্যাস্ত। ৬০০০ ফিট উচ্চতায় এই পাহাড়ি গ্রাম। যেখান থেকে দার্জিলিং আর কাঞ্চনজঙ্ঘা একই ফ্রেমে রাখতে পারেন আপনি।
৯০ হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে চা বাগান। ১৭৭৬ সালে তৎকালীন বাংলার রাজ্যপাল লর্ড অ্যাসলে অ্যাডন-র তৎপরতায় খ্যাতি পায় এই চা-বাগান ৷ এখন যদিও মকাইবাড়ি-দার্জিলিংয়ের চা বেশ বিখ্যাত, কিন্তু এই বাগানের চা’ও পাড়ি দেয় বিদেশে। শোনা যায়, ১৫০ বছরের পুরনো এই চা বাগানের চায়ের নাকি ইংল্যান্ডেও খুব কদর ছিল সে সময়ে। বাকিংহাম প্যালেসে এই চা কিন্তু পৌঁছে যেত! পাহাড়ের গায়ে সরু রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে চা বাগানের দিকে নেমে যাবেন। সরু রাস্তার পাশে ছোট ছোট বাক্স বাড়ি আর আকাশ ছোঁয়া পাইন গাছ। কখনও মনে হয় এখানেই হঠাৎ ঘুম নেমে আসে। এখানেই বছরের পর বছর দাঁড়িয়ে আছে চা কারখানা, মনে হয় অনেকদিন এই ধারে কেউ আসে না।
নিঃসঙ্গ চা ফ্যাক্টরির চিমনি থেকে ধোঁয়া ওড়ে না
চা ফ্যাক্টরির এই চিমনি থেকে ধোঁয়া ওড়ে না। এক নিঃসঙ্গ ফ্যাক্টরি! এই বাগানের গা বেয়েই উপরের রাস্তায় ছোট ছোট সিঁড়ি উঠে গিয়েছে। পাথর কেটে বানানো এই সিঁড়ি। তারই পাশে চার্চ-স্কুলের সামনে বিকেলের খেলায় মত্ত হয়ে রয়েছে স্থানীয় শিশুরা। সিঁড়ি এসে শেষ হয়েছে এক রঙিন বাড়ির উঠোনে। তারই বারান্দা দিয়ে রাস্তায় আসা যায় আবার। রঙিন ফুলের এই রাস্তায় কখনও মনেই হয় না, এই গ্রাম আমার নয়!
আরও একটু নিচে নেমে গেলেই দেখা হয়ে যাবে নদীর সঙ্গে। রুংদাং নদী, দার্জিলিংয়ের পাহাড়ের মধ্যেই হারিয়ে গিয়েছে কোথাও। তবে এই রাস্তায় গাড়ি যায় না। তাই হেঁটেই নিচে নামতে হবে আপনাকে। কখনও কখনও কুয়াশায় ঝাপসা হতে পারে পথ। তবে সেই আবছা পথ ধরে হেঁটে গেলেই রুংদাং নদীর কাছে পৌঁছে যাবেন। এই নদী বা পাহাড়ি ঝোরার জল কাচের মতো ঝকঝকে। আসলে রঙ্গারুনের নামও হয়েছে এই নদীর নাম ধরেই। লেপচা ভাষায়, রাঙ্গেরুন শব্দের অর্থ বড় নদীর বাঁক। এই রুংদাং নদীর পথও কিন্তু এঁকে বেঁকেই গিয়েছে, তাই তো এই হ্যামলেটের নাম হল রঙ্গারুন (rangaroon)। যদিও স্থানীয় ভাষায় এই গ্রামের নাম, ‘রাঙ্গেরুন’।
এইখানে হঠাৎই সন্ধ্যা নামে। চা বাগান থেকে যখন হোমস্টের পথে, তখন দূরে দার্জিলিংয়ে একটা একটা আলো জ্বলে উঠছে। হোমস্টের জানলায় বসে সরু রাস্তা, সারি সারি পাহাড় ও দূরের মিটমিটে আলো দেখা যাচ্ছে। ঠাণ্ডায় হাত জমে আসে, ঘুম জুড়ে আসে দুই চোখ। জোৎস্ন্যায় মোড়া রঙ্গারুন যেন এক মায়াবী স্বপ্নপুরী, যার পাহাড়ের গায়ে তারারা ঘুমিয়ে আছে, যেন একগুচ্ছ সনেট!
১৫০ বছরের বেশি পুরনো চা কারখানা
কোথায় থাকবেন
রঙ্গারুনের বিভিন্ন বাড়িতেই রয়েছে হোমস্টে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের নয়, বিদেশ থেকেও পর্যটকরা এই হোমস্টেতে এসে থেকে যান। এই গ্রামের বিখ্যাত হোমস্টে খালিং হোমস্টে। রাস্তার ধারে এই হোমস্টে। সুন্দর করে সাজানো, তেমনই আতিথেয়তা। উপরি পাওনা ডিনার টেবিলে লাইভ মিউজিক। সুন্দর করে সাজানো ডাইনিং হল, বেডরুম আর ছোট্ট একটুকরো ছাদ। রঙিন ফুলের বসতবাড়ি। শোয়ার ঘরের জানলা দিয়ে দূরের পাহাড় দেখা যায়। জন প্রতি ১৫০০টাকা দিয়ে এই হোমস্টেতে থাকতে পারেন আপনি। দুপুরে ডাল, ভাত, ডিমের ঝোল ও রাতে চিকেন রান্না কিন্তু অনবদ্য! সকালে বাদ যায় না বাঙালি ব্রেকফাস্ট, সন্ধ্যায় চায়ের সঙ্গে পকোড়াও ভেজে দেন! পরিবার নিয়েও আপনি খালিং হোমস্টেতে থাকতে পারেন, আবার একাও ঘুরতে যেতে পারেন, ঘুরতে যেতে পারেন বিশেষ মানুষের সঙ্গেও। নিরিবিলিতে সময় কিন্তু বেশ ভাল কাটবে। হোমস্টেতে রয়েছে ফায়ার প্লেস। পাশেই সাজানো বেশ কয়েকটি বই ও নস্ট্যালজিক ক্যাসেট! যোগাযোগ – ৮১১৬০১৫৫৬। যাওয়ার অন্তত এক থেকে দেড় মাস আগে যোগাযোগ করে নিলে ভাল হয়।
পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট বাক্সবাড়ি
কীভাবে যাবেন
দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে এই গ্রাম। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গাড়ি নিয়ে জোড়বাংলো পৌঁছে যান। সেখানে হোমস্টে থেকেই আপনার জন্য গাড়ি পাঠানো হবে। দার্জিলিংয়ের কাছে গ্রাম থেকে ঘুরে আসুন আপনিও।
মূল ছবি – ইনস্টাগ্রাম
POPxo এখন চারটে ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি আর বাংলাতেও!
বাড়িতে থেকেই অনায়াসে নতুন নতুন বিষয় শিখে ফেলুন। শেখার জন্য জয়েন করুন #POPxoLive, যেখানে আপনি সরাসরি আমাদের অনেক ট্যালেন্ডেট হোস্টের থেকে নতুন নতুন বিষয় চট করে শিখে ফেলতে পারবেন। POPxo App আজই ডাউনলোড করুন আর জীবনকে আরও একটু পপ আপ করে ফেলুন!