রাত পোহালেই সরস্বতী পুজো। আর সরস্বতী পুজো মানেই শাড়ি-পাঞ্জাবি। সরস্বতী পুজো মানেই তো সকাল সকাল অঞ্জলি দিয়ে পাটভাঙা শাড়ি পরে স্কুলের পথে রওনা হওয়া! সরস্বতী পুজো মানেই প্রথম বার মায়ের শাড়িতে নিজের নারীসত্তার প্রথম আভাস পাওয়া। সরস্বতী পুজো মানেই নির্ভেজাল প্রেম। প্রথম প্রেমের প্রথম অনুভূতি। আসলে বাঙালি ও সব ভ্যালেন্টাইন-ফ্যালেন্টাইন নিয়ে ভাবে না। তবে ভ্যালেন্টাইনস ডে বলতে যেটা বোঝায়, সেটা এই সরস্বতী পুজোই! আর সরস্বতী পুজো হল বাঙালিদের ইমোশন!
সরস্বতী পুজোর সাজগোজ ও ফ্যাশন টিপস (Makeup and Dressing Tips for Saraswati Puja)
সরস্বতী পুজোটা বরাবরই মেয়েদের কাছে অন্য রকম ভাবে স্পেশ্যাল। কারণ অনেক আগে থেকেই কী শাড়ি পরব, কী রকম সাজব- তা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে প্ল্যান হয়ে যায়। ছোট থেকে দেখে আসছি, সরস্বতী পুজো মানেই হলুদ শাড়ি মাস্ট। এমনকি কচিকাঁচারাও এই দিনটায় লাল পাড় হলুদ ছোট ছোট শাড়ি পরে সাজুগুজু করে টলমল পায়ে হেঁটে বাবা-মা অথবা দাদা-দিদিদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। ফলে বুঝতেই পারছেন, সরস্বতী পুজোর সকলের কাছে সমান ভাবে স্পেশ্যাল! তবে যুগ পাল্টেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফ্যাশনের কনসেপ্টও বদলাচ্ছে। এখন সরস্বতী পুজোয় অনেকেই এক্সপেরিমেন্ট করছেন। শাড়ির বদলে ব্রাইট কালারের লেহঙ্গা বা এথনিক কুর্তি, ইন্দো-ওয়েস্টার্ন স্টাইলের ড্রেস বেছে নিচ্ছেন। তবে হালফ্যাশনে প্যান্ট স্টাইল শাড়ি খুব ইন। বিভিন্ন অনলাইন বিপণিতে পেয়ে যাবেন প্যান্ট স্টাইল শাড়ির কালেকশন। চট করে দেখে নিন, সরস্বতী পুজোয় কী পরতে পারেন-
আরো পড়ুনঃ বাঙালি শাড়ি নানা ভাবে পরার কায়দা
১| শাড়ি (Saree for Saraswati Puja)
সরস্বতী পুজোয় প্রথম থেকে যেটা চলে আসছে, সেটা হল হলুদ শাড়ি। আরও স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে বাসন্তীরঙা শাড়ি। লাল পাড় বা সবুজ পেড়ে হলুদ শাড়ি বাঙালি মেয়েদের কাছে একটা আলাদা জায়গা করে রেখেছে। যুগ বদলালেও অনেকের কাছে হলুদ শাড়ি ছাড়া সরস্বতী পুজো কমপ্লিট হয় না। আসলে সরস্বতী পুজোতেই থাকে বসন্তের আগমন বার্তা। তাই হলুদ শাড়ি মাস্ট। হলুদ সিল্ক থেকে সুতি- সব এই দিনটার জন্য স্পেশ্যালি তুলে রাখা থাকে। সকালের দিকে ভারি কিছু ক্যারি করতে না চাইলে হলুদ সুতি, খাদি, লিনেন পরতে পারেন। সঙ্গে কনট্রাস্ট কালারের স্টাইলিশ ব্লাউজ। সঙ্গে হালকা মেকআপ। আর রাতের কোনও আড্ডা বা রেস্তরাঁয় খেতে যেতে চাইলে হলুদ ভারী সিল্কটা আলমারি থেকে বার করে নিতেই পারেন। তবে হলুদ যাঁদের একঘেয়ে লাগে, তাঁরা বাছতে পারেন সাদা শাড়ি। কারণ সাদা শাড়ির একটা আলাদাই অ্যাপিল। সে চওড়া বা সরু লাল পাড়ের হোক বা ব্রাইট লেমন ইয়েলো পাড়ের হোক! অনেকেই কেরল কটন অথবা সাদা সেল্ফ কাজের ঢাকাই বেছে নেন। সরু বা মাঝারি পাড়ের কেরল কটনও সরস্বতী পুজোর জন্য একদম পারফেক্ট। আর হলুদ বা সাদা খুবই ক্লিশে লাগলে বেছে নিতে পারেন সবুজের যে কোনও শেড, কমলা অথবা ম্য়াজেন্টা রঙের শাড়িও।
২| লেহঙ্গা-ডিজাইনার কুর্তি (Lehenga or Designer Kurti)
অনেকেই শাড়ি পছন্দ করেন না বা ক্যারি করতে পারেন না। তাঁরা এই দিন ব্রাইট ইয়েলো অথবা ব্রাইট কোনও কালারের লেহঙ্গা বেছে নিতে পারেন। মানানসই ক্রপ টপের সঙ্গে পরুন লেহঙ্গা বা জমকালো একটা ঘেরওয়ালা স্কার্ট। আর এক দিকে করে নিন দোপাট্টা। একটা স্টাইলিশ লুক এনে দেবে। আর শাড়ি বা লেহঙ্গা থেকে সরে এসে একটু অন্য রকম সাজতে চান, তা হলে ট্রাই করুন ডিজাইনার কুর্তি বা গাউন। এথনিক মিড লেংথ ড্রেসও পরতে পারেন। সুন্দর উজ্জ্বল রঙের এ-লাইন কুর্তির সঙ্গে কনট্রাস্ট করে পরতে পারেন স্লিম-ফিট এথনিক প্যান্টস। বা হাঁটুর অল্প নীচে পর্যন্ত ঝুলওয়ালা আনারকলি বা কলিদার কুর্তির সঙ্গে পরতে পারেন পালাজোও। অথবা একটা ঘেরওয়ালা গাউন পরে নিয়ে তার সঙ্গে এক দিকে পিন আপ করে একটা দোপাট্টাও ট্রাই করা যায়।
৩| প্যান্ট-শাড়ি (Pant Style Saree)
যাঁরা শাড়ি পরতে ভালবাসেন, অথচ সামলানোর ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যান, তাঁদের জন্য এই শাড়ি পারফেক্ট। নর্ম্যাল শাড়িকে প্যান্ট স্টাইলে পরা যায়। কিন্তু সেটা না করে কিনে ফেলতে পারেন প্যান্ট-শাড়ি। আজকাল অনেক বিপণিতেই পাওয়া যাচ্ছে এই ধরনের প্যান্ট স্টাইল সেট শাড়ি। অল্প ফ্লেয়ারড বা ধুতি প্যান্টের সঙ্গেই সেট করা থাকছে শাড়ির আঁচল। তার সঙ্গে একটা ক্রপ টপ বা ওই প্যান্ট-শাড়ির সঙ্গে দেওয়া টপ পরে নিন।
৪| সাজসজ্জা (Makeup For Saraswati Puja)
আপনার ড্রেসের সঙ্গে মানানসই সাজ চাই। আর সকালের দিকে যে হেতু বেশি প্ল্যান, সে হেতু হালকা মেকআপ চাই। আর রাতের দিকে বেরোনোর প্ল্যান থাকলে ভারী মেকআপ চলতে পারে। আর চুল খোলা রাখতে চাইলে তা রাখতেই পারেন। এই দিনের জন্য স্পেশ্যালি টেম্পোরারি স্মুদনিং বা কার্ল করাতেই পারেন। আর খোঁপা করলে তার মধ্যে পছন্দ মতো ফুল লাগাতে পারেন। সব থেকে ভাল হয়, যদি পলাশ ফুলের মালা পাওয়া যায়। সরস্বতী পুজোর সাজ একেবারে জমে যাবে!
ছবি সৌজন্যে: ইউটিউব, পিন্টরেস্ট
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলাতেও!