তিনি আপ্পা! সবার আপ্পা। তামিল ভাষায় বাবাকে এই নামেই ডাকা হয়। আমরা যাঁর কথা বলছি, তাঁর নাম সলোমন রাজা। অথচ যে ৪৫টি শিশু তাঁকে এই অন্তরের ডাক ডাকে, তাদের সঙ্গে রক্তের কোনও সম্পর্ক নেই সলোমন রাজার (Solomon Raja)! চেন্নাইয়ের এই বাসিন্দা এবং তাঁর স্ত্রী প্রথম থেকেই একটি শিশুকে দত্তক নেওয়ার কথা ভেবে রেখেছিলেন। তবে আট বছরের মধ্যে তাঁরা সত্যিকারের বাবা-মা হন। জন্ম নেয় দুই ছেলে। তা স্বত্তেও সলোমনের মন থেকে দত্তক নেওয়ার ভাবনা একেবারে মুছে যায়নি। ২০০৫ সাল নাগাদ সলোমনের এক ট্রান্সজেন্ডার সমাজকর্মী বন্ধু তাঁকে জানান যে, তিনি একটি সাত বছরের শিশুর (children) সন্ধান পেয়েছেন, যার কেউ নেই। তবে সে এইচআইভি (HIV) দ্বারা ক্রান্ত। এই খবর পাওয়ার পর সলোমন ও তাঁর স্ত্রী দ্বিতীয়বার কিছু ভাবেননি। তাঁরা সঙ্গে-সঙ্গে ছেলেটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ছেলেটিকে একা রেখেই অফিসে যেতে হত রাজা দম্পতিকে। সমাজ থেকে আলাদা, পিতৃমাতৃহীন এই ছেলেটি এই একাকীত্ব মেনে নিতে পারত না প্রথমে। সবাই যাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, তাকে এঁরা কেন কাছে টেনে নিয়েছেন, সেটা তার ছোট্ট আহত হৃদয় বুঝতে পারত না। তাই সে প্রথমদিকে তার সমস্ত রাগ, বিরক্তি, ঘৃণা, ভয় সব উগড়ে দিত সলোমনের উপর। সলোমন অফিস থেকে দিনে ৪৫ মিনিটের একটি ব্রেক নিয়ে বাড়ি এসে দেখে যেতেন ছেলেটি ঠিক আছে কিনা। তাতেও কাজ হচ্ছে না দেখে তিনি ছেলেটিকে অফিসে নিয়ে যেতে শুরু করেন। প্রথম দিকে সলোমনের সহকর্মীরা ছেলেটির সঙ্গে ভাল ভাবেই কথা বলতেন, মিশতেন। তারপর যখন তাঁরা একদিন জানতে পারলেন যে, ছেলেটি এইচ আই ভি পজিটিভ, তারপর থেকে তাঁরা শুধু শিশুটিকে নয়, এড়িয়ে চলতে শুরু করেন সলোমন রাজাকেও!
সহকর্মীদের বিদ্রূপ আর বাঁকা মন্তব্য, আড়ালে মুখ টিপে হাসাহাসি কোনওটাই রাজাকে টলাতে পারেনি। বরং তাঁর সদিচ্ছা এবং তাঁর জেদকে আরও দৃঢ় করেছে। মূলত সহকর্মীদের এই বিরূপ আচরণেই সলোমন সিদ্ধান্ত নেন, তিনি এরকম আরও শিশু, যারা এইচআইভি পজিটিভ, যাদের হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায় বাড়ির লোক, যাদের মেলায় রেখে চলে যায় তাদের আপনজন, সেই সব শিশুকে তিনি নিজের করে নেবেন। এভাবে দেখতে-দেখতে ৪৫টি শিশু হয়ে গেল। চেন্নাইয়ে তিনি শেল্টার ট্রাস্ট বলে একটি আশ্রম করলেন। আশ্রমটি চালান এইচআইভি আক্রান্ত কয়েকজন মানুষ। রাজা জানিয়েছেন, প্রথমে এতগুলি শিশুর জন্য একটি আশ্রয় খুঁজে বের করা খুব কঠিন ছিল। কারণ এখনও অনেকে মনে করেন, স্পর্শ করলে এই রোগ ছড়ায়। অবশেষে ইংল্যান্ডের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রাইটনাউ ফাউন্ডেশন তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। সাহায্য করেছে ‘মিলাপ’ও। তাঁরা সলোমনকে দশ লাখ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এতগুলো শিশুর দেখাশোনা করা রাজা বা তাঁর স্ত্রীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই তাঁরা কয়েকজন যৌনকর্মীকে নিয়োগ করেন। এঁদেরও কেউ দেখার নেই আর এঁরাও এইচআইভি পজিটিভ! কিন্তু এঁরাই এখন এই শিশুদের ‘মা’ হয়ে উঠেছেন!
রাজার কাছে সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত সেটাই যখন এই শিশুদের মধ্যে কেউ এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। ইতিমধ্যেই মারা গেছে ছয় জন। তবে বাকিরা লড়ছে। অনেকেই সাফল্যের সঙ্গে পাশ করেছে উচ্চ মাধ্যমিক। একজন বি কমও পড়ছে। রাজার দুই সন্তান পাগলের মতো ভালবাসে এই শিশুদের। তারা চায়, এরা শেল্টারে কেন থাকবে? তাদের বাড়িতে কেন নয়? এই প্রশ্নের উত্তর রাজার কাছে নেই! এর মধ্যে আইন আছে, সমাজের দেওয়াল আছে। আর এসব উপেক্ষা করেই একজন সত্যিকারের রাজার মতো এগিয়ে চলেছেন সলোমন।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!