ষাট-সত্তরের দশকে রুপোলি পর্দায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। অথচ খ্যাতির শিখরে থাকাকালীন আচমকাই এক দিন স্বেচ্ছায় লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন। কারণটা আজও অজানা। তবে অন্তরালে চলে গেলেও চর্চায় তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেনও। কারণ তিনি যে সুচিত্রা সেন (suchitra sen)! বাংলা ছবির জগতের এক সময়ের অধিশ্বরী! গ্ল্যামার কুইন! মহানায়িকা (mahanayika)!
আজ পাঁচ বছর হল তিনি নেই। তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর অন্তরালবর্তিনী হওয়ার রহস্যটা একই ভাবে ধরে রেখেছিলেন কিংবদন্তী নায়িকা।
প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ব, প্রখর সম্ভ্রম আর দাপুটে অভিনয়- এই সব কিছু দিয়ে সুচিত্রা সেন (suchitra sen) জিতে নিয়েছিলেন প্রতিটা বাঙালির মন। ভীষণ ভার্সেটাইল (versatile) ছিলেন তিনি। এক দিকে স্নিগ্ধ আবার অন্য দিকে দৃঢ়। আর তাঁর সেই ভীষণ রকম বাঙ্ময় দু’টো চোখ আর গভীর চাহনি, যার জন্য উথালপাথাল হতো প্রত্যেকটা বাঙালির মন! আজও একই ভাবে বাঙালির ইমোশনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন মহানায়িকা (mahanayika)। অভিনয় জগতেই কি শুধু তাঁর অবদান? তা কিন্তু নয়! অভিনয় জগতের সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাশন দুনিয়াতেও তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। তাঁর ফ্যাশন সেন্স (fashion sense) আর স্টাইল স্টেটমেন্ট (style statement) নিয়ে আজও চর্চা হয়। এমনকি সুচিত্রা সেনের (suchitra sen) তৈরি ফ্যাশন ট্রেন্ড আজও আমরা ফলো করে চলেছি।
তবে তাঁর ফ্যাশন সেন্স আর স্টাইল স্টেটমেন্ট (style statement) নিয়ে বলতে গেলে যেটা সবার আগে বলতে হয়, সেটা হল- নিজের সময়ের থেকেও অনেকটা এগিয়েছিলেন তিনি! কারণ ইন্ডিয়ান থেকে ওয়েস্টার্ন আউটফিট, শাড়ি থেকে সুইম স্যুট, স্লিভলেস ব্লাউজ থেকে থ্রি-কোয়ার্টার হাতা ব্লাউজ- সব কিছুতেই তিনি সমান ভাবে সাবলীল ছিলেন। আর শাড়ির সঙ্গে শ্রাগ, স্টোল অথবা স্কার্ফের স্টাইলেও স্বতন্ত্র তিনি। আজও প্রতিটা মেয়ের কাছে স্টাইল আইকন (style icon) সুচিত্রা সেন (suchitra sen)!
কখনও দেবদাসের ‘পারো’, কখনও বা সপ্তপদীতে ‘রিনা ব্রাউন’- প্রতিটা চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ঠিক সে ভাবেই প্রত্যেকটা ছবিতে তাঁর পোশাক-আশাক, চলন-বলন, স্টাইল- এই সব কিছুর মধ্যেই ছিল স্বাতন্ত্র্য। আর এ ভাবেই যেন রুপোলি পর্দা শাসন করে গিয়েছেন সুচিত্রা সেন (suchitra sen)।
লম্বাটে ভরাট মুখ, ছোট কপাল, কথা বলা-দু’টো গভীর চোখ, সুগঠিত নাক, একঢাল চুল আর সেই মোহময়ী হাসি- এটাই এখনও বাঙালির নস্টালজিয়া। অথচ সুচিত্রা সেনের মুখের গড়ন কিন্তু গড়পরতা বাঙালি মেয়েদের মতো ছিল না। আর যে হেতু তাঁর ওভাল শেপ ফেস ছিল, তাই সব রকম মেক আপেই তাঁকে মানিয়ে যেত। তাঁর মোটা করে আঁকা ভুরু আর গাঢ় করে আঁকা ঠোঁট। সব থেকে ইন্টারেস্টিং পার্ট হল তাঁর বিউটি স্পট। কারণ মহানায়িকার (mahanayika) মেক আপ আর্টিস্টের হাতের জাদুতেই প্রাণ পেত ওই বিউটি স্পটটি। অথচ বছরের পর বছর একটুও এ দিক ও দিক হয়নি মহানায়িকার (mahanayika) বিউটি স্পট!
সেই সময় জনপ্রিয় হয়েছিল তাঁর হেয়ারস্টাইলও। কখনও বা খোলা চুলে তো কখনও বুফোঁ স্টাইল আর ফ্রেঞ্চ রোল স্টাইলে নিজের স্বকীয়তার ছাপ রেখে গিয়েছেন। সানগ্লাসের স্টাইলেও ছিল তাঁর নিজস্বতার ছোঁয়া। এই যেমন, হাল ফ্যাশনের ক্য়াট আই গ্লাসেস। এটাও কিন্তু মহানায়িকারই (mahanayika) স্টাইল স্টেটমেন্ট (style statement)! আবার তাঁর অভিনয় জীবনের শেষের দিকে কালো সানগ্লাসে চোখ ঢেকেই তাঁকে বেশির ভাগই দেখা যেত।
শুধু কি মেকআপ বা হেয়ারস্টাইল? পোশাক আশাকেও তিনি ছিলেন সময়ের থেকে এগিয়ে এবং সাহসীও। পোশাক-আশাক নিয়ে এক্সপেরিমেন্টও করেছেন। আর মহানায়িকার (mahanayika) সেই সময়কার স্টাইলই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। কেমন ছিল সেই সময়ে তাঁর স্টাইল? পশ্চিমি পোশাক ক্যারি করতেন অনায়াসে। এই যেমন- জাম্পস্যুট। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে বেশ ফ্যাশনে ইন জাম্পস্যুট। মনে হতেই পারে, এটা নতুন ট্রেন্ড। কিন্তু না! সুচিত্রা সেনও সেই সময় পরেছিলেন জাম্পস্যুট! শিমারি জাম্পস্যুট, কিটেন হিলস আর ডায়মন্ড ইয়াররিংসে মোহময়ী মহানায়িকা (suchitra sen)।
তা হলে থাই হাই স্লিটই বা বাদ যাবে কেন? থাই হাই স্লিট স্কার্ট বা ড্রেস অথবা কুর্তিও আজকাল বেশ দেখা যাচ্ছে। হালের নায়িকারাও বেশ পরছেন। কিন্তু এই স্টাইলটাও এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন (suchitra sen)! থাই হাই স্লিট স্কার্ট, ওভারসাইজড সানগ্লাস আর মাথায় হ্যাট- যার আবেদনই আলাদা! এ তো নয় গেল সাহসী ওয়েস্টার্ন ড্রেসের কথা।
ইন্ডিয়ান ড্রেসেও রেখেছিলেন নিজের সিগনেচার মার্ক। যেমন- শাড়ি উইথ শ্রাগ অ্যান্ড স্কার্ফ। এটাও ছিল তাঁর তৈরি স্টাইল স্টেটমেন্ট। সুতি-শিফন-কাঞ্জিভরম সব কিছুই অনায়াসে ক্যারি করতেন মহানায়িকা (mahanayika)। হাকোবা শাড়ি তাঁর অত্যন্ত পছন্দের। সাদা বেনারসির প্রতিও টান ছিল তাঁর! আর দুর্দান্ত ভাবে ক্যারি করতেন নেট শাড়ি। নেট শাড়ির সঙ্গে কানে হীরের ড্যাঙ্গলার, আঙুলে স্টেটমেন্ট রিং, চোখে উইঙ্গড আইলাইনার আর সেই ভুবনভোলানো হাসি! শুধু কি তা-ই? ফ্যাশনে ফিউশনও ছিল অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয়। শাড়ির উপর শ্রাগ, গলায় স্কার্ফ আর চুলে ফ্যাশনেবল একটা খোঁপা- এ ভাবেই স্টাইলে নিজস্বতার ছাপ রেখেছিলেন মহানায়িকা (mahanayika)। আবার অন্য দিকে, তাঁর শাড়ির সঙ্গে পাম্পস আর সুপারসাইজড ক্লাচের স্টাইল সব সময়েই ফ্যাশনে ইন! পাশাপাশি, ব্লাউজের কাট নিয়েও এক্সপেরিমেন্ট চালাতেন সুচিত্রা সেন (suchitra sen)। কখনও স্লিভলেস তো কখনও থ্রি-কোয়ার্টার ব্লাউজে সৌন্দর্যকে একটা আলাদা মাত্রা দিয়েছিলেন।
ছবি সৌজন্যে: পিন্টরেস্ট
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলাতেও!