শরীরকে সুস্থ রাখতে নিরামিষাশী হওয়ার সিদ্ধান্ত যে একেবারে ঠিক, সে বিষয়ে মনে কোনও সন্দেহ রাখবেন না (vegetarian diet benefits)। কারণ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে যে রোজের ডায়েটে নানাবিধ সবজি, ফল, ডাল এবং দুধকে জায়গা করে দিলে শরীরে এত মাত্রায় পুষ্টিকর উপাদানের প্রবেশ ঘটে যে শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। বিশেষত, ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং হাই কোলেস্টেরলের মতো রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা দূরে পালায়। সেই সঙ্গে স্ট্রোক এবং কিডনিতে স্টোন হওয়ার মতো শারীরিক সমস্যাও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
নিরামিষ খাবার (Vegetarian food) খাওয়া শুরু করলে শরীরের য়ে নানাবিধ উপকার হয়, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সম্পূর্ণরূপে নিরামিষাশী হওয়ার আগে কতগুলি বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন (These things you should know before going veggie), যেমন ধরো…
মাছ-মাংস ছাড়ার আগে যে যে বিষয়গুলি জেনে নেওয়া জরুরি:
১. প্রোটিনের ঘাটতি যেন না হয়:
শরীরকে সুস্থ রাখতে বাকি সব মিনারেল এবং ভিটামিনের পাশাপাশি প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ হওয়াও একান্ত প্রয়োজন। আর এই কারণেই রোজের ডায়েটে যাতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার থাকে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। আর তার জন্যই বেশি করে খাওয়া খেতে হবে বাদাম, বিশেষত কাজু, সেই সঙ্গে টফু এবং সবুজ শাক-সবজি। এমনটা করলেই প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আর থাকবে না।
২. ধীরে চলার নীতিই সেরা:
আসলে হঠাৎ করে মাছ-মাংস বন্ধ করে দেওয়াটা একেবারেই উচিত নয়। তাতে উপকারের থেকে অপকার হওয়ার আশঙ্কা যাবে বেড়ে। তাই ধীরে ধীরে রোজের ডয়েট থেকে মাছ-মাংসকে বাদ দিতে হবে। আর তার জায়গায় বেশি করে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারকে জায়গা করে দিতে হবে। এমনটা করলে শরীর যেমন ধীরে ধীরে ভেজিটেরিয়ান খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করবে, তেমনি হঠাৎ স্বাদ বদলের কারণে খাবার ইচ্ছা চলে যাওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
৩. জুসের পাশাপাশি খাওয়া শুরু করো স্মুদি:
তাজা ফল থেকে রস বানিয়ে খেলে শরীরের নানা উপকার হয় ঠিকই। কিন্তু জুসের পাশাপাশি যদি স্মুদিও খাওয়া যায়, বিশেষত, পিনাট বাটার, নারকেলের দুধ, তিসি বীজ, ওটস, কুমড়োর বীজ এবং বাদাম যোগ করে তৈরি স্মুদি নিয়মিত খেলে ভিটামিন এবং ফাইবারের চাহিদা তো মেটেই, সেই সঙ্গে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হতেও সময় লাগে না। এবার বুঝেছেন তো ভেজিটেরিয়ানদের ফলের রসের জয়গায় এমন পানীয় খাওয়াটা জরুরি কেন!
৪. আয়রনের চাহিদা যাতে পূরণ হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে:
শরীরকে চালাতে আয়রনের ভূমিকাও কম নেই। তাই তো ভেজিটেরিয়ানদের (vegetarian) নিয়মিত বিনস, ডাল, পালং শাক, নয়তো সয়া খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কারণ এই সব প্রাকৃতিক উপাদানে এত মাত্রায় আয়রন রয়েছে যে শরীরে চাহিদা মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এক্ষেত্রে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখাও একান্ত প্রয়োজন, তা হল শরীর তখনই ঠিক মতো আয়রন শোষণ করতে পারে, যখন ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণ হয়। তাই তো নিয়মিত লেবু, টমেটো, জাম, ব্রকলি, নয়তো বাঁধাকোপি খেতে হবে। কারণ এই সব খাবারে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি রয়েছে, যা নিমেষেই শরীরের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
৫. নিয়মিত খেতে হবে দুধ-দই:
রোজের ডায়েটে দই-দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবারকে জায়গা করে দিলে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হতে সময় লাগে না। তাই তো প্রতিদিন একবাটি দই এবং এক গ্লাস করে দুধ খাওয়া মাস্ট। কিন্তু যদি এমন খাবার খেতে মন না চায়, তাহলে হয় পনির, নয়তো ব্রকলি অথবা পালং শাকের মতো সবজি খেতে ভুলবেন না যেন! কারণ হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন পরে। তাই তো এই উপাদানটির ঘাটতি দেখা দিলে নানা ধরনের হাড়ের রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা যায় বেড়ে।
৬. ডিমে এখনও অরুচি হয়নি তো?
নিরামিষ খাবার খেলেও ডিমকে যদি এখনও ডায়েট থেকে বাদ দিয়ে না থাকেন, তাহলে তা ভালো খবর! কারণ প্রোটিন সহ একাধিক পুষ্টিকর উপাদানের চাহিদা মেটাতে ডিম নানাভাবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু যারা ইতিমধ্যেই ডিম খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন, তারা কী করবেন? সেক্ষেত্রে সয়া, কলা, বাদাম, পিনাট বাটার এবং চিয়া বীজ বেশি করে খেতে হবে, তাহলেই আর কোনও চিন্তা থাকবে না।
৭. ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট:
মাছ-মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিলে অনেক সময় ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়, যা শরীরের পক্ষে একেবারেই ভালো খবর নয়। তাই তো ভেজিটেরিয়ান খাবার খাওয়া শুরু করলে চিকিৎসকের সঙ্গে একবার কথা বলে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া শুরু করতে পারেন, তাতে উপকার মিলবে বৈকি!
নিরামিষাশীদের নিয়ে কিছু ভুল ধারণা (vegetarian myths):
১. নিরামিষ খাবার খেলে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয়:
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে মাংসই যে প্রোটিনের একমাত্র সোর্স, তা কিন্তু নয়। তাই এই ধরণা একেবারেই ভিত্তিহীন যে মাংস না খেলে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেবে। বরং নানাবিধ প্রাকৃতিক উপাদান থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন এবং ফাইবার কিন্তু নানাভাবে শরীরের উপকার করে থাকে।
২. নিরামিষাশীরা বেজায় দুর্বল হন:
এই ধরণারও কোনও ভিত্তি নেই বললেই চলে। কারণ নিরামিষ ডায়েটে প্রচুর মাত্রায় শাক-সবজি, ফল এবং ডাল উপস্থিত থাকে, যা শরীরের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিকর উপাদানের যোগান দেয়। তাই মাংস না খেলেই শরীর দুর্বল হয়ে যাবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই! তাছাড়া নরেন্দ্র মোদি থেকে বিরাট কোহলি, এমনকি আলিয়া ভাটও আজকাল নিরামিষ খাবার খান (vegetarian)। কই তাদের দেখে তো একেবারেই দুর্বল মনে হয় না। বরং নিয়মিত নিরামিষ খাবার খেলে শরীরের ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়।
৩. নিরামিষ খাবার খেলে পেট ভরে না:
না, একেবারেই এমনটা হয় না। কারণ যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে নিরামিষ খাবার (Vegetarian food) মানেই তাতে থাকবে শাক-সবজি, ফল, ডাল, বাদাম, ওটস এবং আরও নানা ধরনের সবজি, যাতে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রোটিন, যা বহুক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। তাই মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দিলে বারে বারে খিদে পাবে, এমনটা ভেবে নেওয়াটা বোকামি!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!