আচ্ছা, ধনতেরাস, বিবাহবার্ষিকী কিংবা কোনও অনুষ্ঠানে যখন আপনি গয়না কিনতে যান, তখন ঠিক কী-কী দেখে কেনেন বলুন তো? নামী ব্র্যান্ড, ভরসার দোকান, পুরনো জুয়েলার, সোনার দাম, ডিজাইন, বাজেট ইত্যাদি ইত্যাদি…তাই তো? ও আচ্ছা, আপনি আরও হুঁশিয়ার? স্রেফ যখন ভাল অফার আসে, তখনই গয়না কিনতে যান, যাতে গয়নার সঙ্গে ফাউটাও মেলে? কিন্তু একবার ভেবে বলুন তো, গয়না কিনতে যাওয়ার সময় একবারও মনে হয়েছে, বিলটা ভাল করে দেখে নিই? বা অফারের ঘোষণার নীচে ছোট-ছোট করে যে শর্তাবলী লেখা রয়েছে, সেগুলো একবার দেখে নিয়ে তারপর না হয় শপিংয়ে বেরোব? আসলে গয়না কেনা মোটেও সহজ কাজ নয়। অনেক কিছু দেখে, ভেবেচিন্তে, তারপর সোনা-রুপোর (Gold and Silver) গয়না কেনা উচিত, কারণ এগুলো কিনতে অনেক টাকা খরচ করতে হয় এবং এই ধরনের গয়না আসলে লক্ষ্মী বলেও মানি আমরা! অথচ আমরা অনেকেই সব দিক খেয়াল না করেই গয়না কিনে ফেলি বেশিরভাগ সময়েই। হয়তো বিয়েতে কনের গয়না (Jewellery) কেনার সময় তবুও কিছুটা ভেবেচিন্তে এগোলাম, কিন্তু ছোটখাটো গয়না কেনার সময় যেহেতু টাকার পরিমাণটা কম, তাই ভাবনাটাও কম হয়ে গেল। আমরা বলছি, সব ধরনের দামি গয়না কেনার সময়ই একটু হোমওয়র্ক করে নিন এবং গয়না কেনার সময় কতগুলো ব্যাপারের দিকে (things to remember) খেয়ালও রাখুন।
১. সোনা-রুপো কতটা খাঁটি সে সম্বন্ধে জেনে নিন
২২ আর ২৪, আমরা যে ধরনের সোনার গয়না কিনি, তাতে এই দুই ক্যারাটের সোনাই ব্যবহৃত হয়। ২২ ক্যারাট সোনা মানে, সেই সোনা ৯২ শতাংশ খাঁটি আর ২৪ ক্যারাট মানে সেই সোনা ৯৯.৯ শতাংশ খাঁটি। সাধারণত সোনার গয়না তৈরি হয় ২২ ক্যারাটে আর সোনার কয়েন কিংবা গোল্ড বার তৈরি হয় ২৪ ক্যারাট দিয়ে। এ ছাড়া জড়োয়া বা পাথরসেটিং জুয়েলারি তৈরি হয় ২০ কিংবা ১৮ ক্যারাট দিয়ে। সোনার ক্যারাট যত বেশি, সেই সোনা তত শক্ত। গয়না তৈরি করতে যেহেতু সোনা নরম হওয়া প্রয়োজনীয়, তাই ২২ ক্যারাট বা তার চেয়েও কম ক্যারাটের সোনা দিয়ে গয়না তৈরি করা হয়। সোনার ক্যারাটের উপর নির্ভর করে সোনার দাম। কাজেই গয়না পছন্দ করার সময় সেটা কত ক্যারাটের তৈরি, তা জেনে নেওয়াটা প্রয়োজন। অনেক জুয়েলারের কাছে ক্যারাট মিটার থাকে। সেখানেও দেখে নিতে পারেন সোনা কতটা খাঁটি। আজকাল হলমার্ক গোল্ডের খুব চল হয়েছে। হলমার্ক থাকলে, সেই সোনা আপনি চোখ বন্ধ করে কিনতে পারেন! কারণ, তার খাঁটিত্ব সম্বন্ধে কোনও সংশয় নেই!
রুপোর ক্ষেত্রেও দেখতে হবে তার পিওরিটি। খাঁটি রুপো খুবই নরম ধাতু। তাই তা দিয়ে গয়না তৈরি হয় না। এমনকী, রুপোর বাসনপত্রও খাঁটি রুপো দিয়ে তৈরি হয় না। সব তৈরি হয় স্টার্লিং সিলভার দিয়ে, যা ৯২.৫ শতাংশ রুপোর সঙ্গে ৭.৫ শতাংশ অন্য কোনও ধাতু (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তামা) মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এই রুপো দিয়েই তৈরি হয় গয়না, বাসন ও অন্যান্য নানা শৌখিন জিনিস। রুপো যত শক্ত হবে, তত তার পিওরিটি কমবে!
২. সোনা-রুপোর বাজারদর
সরকার থেকে সোনা এবং রুপোর দাম প্রতিদিন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। পাকা সোনার গ্রাম প্রতি দাম, গয়নার সোনার গ্রাম প্রতি দাম, খাঁটি রুপোর দাম ইত্যাদি সম্বন্ধে দোকানে যাওয়ার আগেই সঠিক ধারণা করে নিন। দোকানে গিয়ে গয়না পছন্দ করার আগে দেখে নিন, সরকারি দামেই সেখানে সোনা-রুপো বিক্রি করা হচ্ছে কিনা। দামের কোনও তারতম্য হলে দোকানিকে জানান এবং সঠিক দামেই গয়না কিনুন।
৩. মেকিং চার্জ
সোনা বা রুপোর গয়নার ক্ষেত্রে মেকিং চার্জ ধরা হয় প্রতি গ্রাম হিসেবে। থোক মেকিং চার্জ সাধারণতই থাকে না। যদি কোনও জুয়েলার এই বলে আপনাকে বিভ্রান্ত করতেও চান, তা হলে সাবধান হোন। গয়না পছন্দ করার আগেই মেকিং চার্জ গ্রামপ্রতি কত, সেটি জেনেবুঝে নিন। সাধারণত হাতে তৈরি গয়নার মেকিং চার্জ বেশি হয় এবং মেশিনমেড গয়নার মেকিং চার্জ কম হয়। কাজেই গয়না কেনার সময় দোকানিকে জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না যে, গয়নাটি হাতে তৈরি নাকি মেশিনমেড!
৪. ওজন দেখে নিন
সোনাই হোক কিংবা রুপো, গয়নার দাম মূলত নির্ভর করে তার ওজনের উপর। সুতরাং, ওজন আগে ঠিক করে দেখে নিন। নেকলেস হলে, তার টাসেল বাদ দিয়ে ওজন করতে হবে। কানের দুলের ক্ষেত্রে গুঁজি বাদ দিন। পাথরবসানো দুল বা নেকলেসের ক্ষেত্রে সতর্কতা আরও বেশি হতে হবে। সেখানে পাথরের একটা আলাদা ওজন থাকবে। এক্ষেত্রে জুয়েলারের উপর ভরসা করা ছাড়া আপনার হাতে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই। পাথরের কোয়ালিটি, সেগুলো প্রেশাস নাকি সেমি প্রেশাস, তা অবশ্য জেনে নিতে পারেন। আর হ্যাঁ, যতই আমরা ভরি-ভরি বলে লাফাই না কেন, সোনা-রুপো, দুটোরই দাম জানতে পারবেন গ্রামে।
৫. বিল দেখে, বুঝে নিন
এই বিল ব্যাপারটা হচ্ছে ভারী গম্ভীর একটা ঘোটালা কেস! কী-কী থাকা উচিত পরিষ্কার, পাকা বিলে? থাকবে কতটা সোনা বা রুপো কিনলেন, তার ওজন, সেদিনের বাজারদর অনুযায়ী তার গ্রামপ্রতি দাম ও মোট দাম, সেটির ক্যারাট বা পিওরিটির উল্লেখ, সেটিতে কোনও স্টোন ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, হয়ে থাকলে তার কোয়ালিটি ও দামের উল্লেখ, মেকিং চার্জ গ্রামপ্রতি কত ধার্য করা হয়েছে, GST হিসেবে কত টাকা নেওয়া হয়েছে ইত্যাদি। এই সবগুলো দেখে, বুঝে, মিলিয়ে তারপরই টাকা মেটাবেন।
৬. অফার ও বাই ব্যাক পলিসি
এই দুটো বিষয়ে আগে থেকেই সাবধান হোন। কোনও অফার দেখে সোনা-রুপো কিনতে গেলে আগে থেকে অফারের ব্যাপারে দোকানে গিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিন। সোনার উপর ছাড় থাকলে সেটা কোন ধরনের সোনার উপর, মেকিং চার্জের উপর ছাড় নাকি সোনার মূল্যের উপর, কতটা কোন ক্যারাটের সোনা কিনলে এই ছাড় পাওয়া যাবে ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে তার সন্তোষজনক উত্তর পেলে তবেই গয়না দেখা শুরু করবেন।
বাই ব্যাক পলিসি, অর্থাৎ সোনা বেচতে গেলে কী নিয়ম, তা জুয়েলারের কাছ থেকে কেনার সময়ই জেনে নিন। তারা কতটা সোনা বাদ দেবেন বা আদৌ বাদ দেবেন কিনা, বিল রেখে দিতে হবে কিনা নাকি গয়নার উপর দোকানের মনোগ্রামটাই যথেষ্ট, জেনে নিন সেটাও। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল, যে দোকানের গয়না, সেই দোকানেই বেচতে বা বদল করতে যাবেন, তা হলেই কিন্তু সেরা দাম পাবেন।
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!