অনেক অনেক দিন আগে, মানে সেই ডাইনোসরের বিকট চিৎকারের আমলে আমাদের জীবনে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। যেদিন থেকে এই আমাদের নিজেদের হাতে তৈরি করা দানব মাথা তুলে সব গিলে খেতে শুরু করল, সেদিন থেকে লাইফ শুধুই মিডিয়া হয়ে গেল, সোশ্যাল থাকল না। মানে খুব সহজ করে বলতে গেলে, সবই ওপেন হয়ে গেল, গোপেন আর কিছুই রইল না। নদী যেমন মানুষকে সভ্যতা উপহার দিয়েছে, ঠিক সেরকম সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের অসভ্যতা… থুড়ি, ট্রোল (trolling) উপহার দিয়েছে। যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপারস্যাপার খুব একটা বোঝেন না, তাঁরা হয়তো জানতে চাইবেন এই ট্রোল আসলে কী? আপনি যদি না জানেন ট্রোল কী, তা হলে আপনি অপরাধী! আপানাকেই উল্টে ট্রোল করা উচিত! আর আপনি যদি এর উত্তর জানেন, তা হলেও আপনাকে ট্রোলড (trolling) হতে হবে।
অভিধানে এর কী মানে আছে, আমি জানি না। তবে যখন-তখন, যাকে খুশি, যা খুশি বলার অধিকারই হল ট্রোল! বিশেষ করে তারকাদের জীবন নিয়ে এমনিতেই মানুষের অগাধ কৌতূহল। মা ষষ্ঠীর কৃপায় তারকারাও দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কিছু না কিছু নিজেরাই আগ বাড়িয়ে পোস্ট করে যান। আর সিটিজেনের ছোট ভাই বোনেরা মানে নেটিজেনরা চোখ রাঙিয়ে যান। এটা তুমি কেন বললে? ওই জামাটা তুমি কেন পরলে? মেয়েকে কোলে নিয়েছ কেন? ছেলেকে কোলে নাওনি কেন? বয়সে বড় মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছ কেন?
উফ, বাপ রে বাপ! এত প্রশ্ন তো মাধ্যমিকেও আসে না। বুঝতে পারি না এই উপযাজক হয়ে গায়ে পড়ে এত কথা বলার অধিকার আমাদের কে দিয়েছে? সবার উপরে সোশ্যাল মিডিয়াই তা হলে সত্য? ভাবনা-চিন্তা করার যুগ কি তা হলে শেষ? শুধুই বিচার করার পালা? আর তা-ও কাঁদের বিচার? না, যাঁদের সঙ্গে আমাদের জম্মেও দেখা হবে না। আর হলেও আমাদের মতামতের তাঁরা মোটেও ধার ধার ধারেন না!
সম্প্রতি ট্রোলড হয়েছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। তাঁর এই ব্লাউজহীন শাড়ি দেখে সবাই কী কমেন্ট করেছে দেখুন।
এখানেই শেষ নয়। শ্রীদেবীর বড় মেয়ে জাহ্নবী কপূর প্রায় প্রতিদিন ট্রোলড হন! আজ পর্যন্ত যে-যে কারণে জাহ্নবী ট্রোলড হয়েছেন সেগুলি হল ১) জিমে ছোট জামা পরার জন্য ২) একই জামা দুবার পরার জন্য ৩) বাজে দেখতে জুতো পরার জন্য! অবাক লাগছে? দেখুন, জাহ্নবীর জুতো নিয়ে কমেন্টের বন্যা।
আজই কিছুক্ষণ আগে ট্রোলড হয়েছেন সোনম কপূর। আলিগড়ের শিশু টুইঙ্কল শর্মার মৃত্যু নিয়ে তিনি কিছু বক্তব্য রেখেছিলেন। নেটিজেনদের বক্তব্য, সোনম ইচ্ছে করেই এসব করেন যাতে তাঁর ছবির প্রচার হয়!
What has happened to baby twinkle is. Heartbreaking and horrific. I pray for her and her family. I also urge people to not make this into a selfish agenda. This is a little girls death, not a reason to spread your hate.
— Sonam K Ahuja (@sonamakapoor) June 7, 2019
কখনও মৌনী রায় ট্রোলড হন প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন বলে, কখনও ঐশ্বর্য রাই ট্রোলড হন মেয়ে আরাধ্যাকে সব জায়গায় নিয়ে যান বলে! ছোট-বড় কোনও তারকাই এই তালিকা থেকে বাদ পড়েন না। তারা সুতারিয়া বলেছেন, স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার ছবিতে তিনি সই করার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে ট্রোল করা হয়েছে! নাইসা দেবগণ? সে তো একটা বাচ্চা মেয়ে। এবং সে তারকা সন্তান হতে পারে, কিন্তু নিজে তো তারকা নয়। ছাড় পায়নি সেও। একই ঘটনা ঘটেছে মীরা রাজপুতের ক্ষেত্রেও।
কিন্তু এভাবে আর কত দিন? আমাদের দেশে এখনও বহু জায়গায় বিদ্যুতের আলো পৌঁছয়নি, শিক্ষা পৌঁছয়নি, জল পৌঁছয়নি। প্রতিদিন হাজার-হাজার গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, ধর্ষণ হচ্ছে, বধূহত্যা হচ্ছে, জাতপাতের নামে ছড়াচ্ছে হিংসা। আপনাদের হাতে যদি এতই সময় থাকে এগুলো নিয়ে রুখে দাঁড়ান। সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার হিসেবে সেভাবেও তো ব্যবহার করা যায় নাকি? একটু ভেবে দেখবেন প্লিজ!
POPxo এখন ৬টা ভাষায়! ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মারাঠি আর বাংলাতেও!
আপনি যদি রংচঙে, মিষ্টি জিনিস কিনতে পছন্দ করেন, তা হলে POPxo Shop-এর কালেকশনে ঢুঁ মারুন। এখানে পাবেন মজার-মজার সব কফি মগ, মোবাইল কভার, কুশন, ল্যাপটপ স্লিভ ও আরও অনেক কিছু!